মায়ানমারের অতিরিক্ত আগ্রহের নির্বাচন?

মায়ানমারে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে কর্মকর্তারা গণতন্ত্রের প্রতীক অং সাং সু কি এবং তার দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসিকে বিজয়ী ঘোষণা করার পর সারাবিশ্ব উল্লসিত। যদিও সংসদে এনএলডি (ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি) নামক দলটি সংখ্যালঘু, কিন্তু এবারে নির্বাচনে দলটি নিরঙ্কুশ বিজয় দেশটির অনেক নাগরিকের মনে প্রেরণা তৈরী করেছে, যারা দেশটির পরিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রূপান্তরের আশা করছে।

কিন্তু কিছু কিছু নেটনাগরিক এবং রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে এনএলডির বিজয়ে যে উল্লাস তা এই বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে স্থিমিত হয়ে যেতে বাধ্য যে স্থানীয় রাজনীতিতে জান্তার মদদপুষ্ট দলটি এখনো প্রভাবশালী শক্তি। ফিফটি ভিস-এর লেখাতেও বিষয়টি উঠে এসেছে:

নির্বাচন, সংস্কারের পরিকল্পনা বা গতি স্থিমিত করেনি। সম্ভবত সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হচ্ছে এনএলডি ও সু কির পুনর্বাসন, যাতে তারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে (আইন সংশোধনের মাধ্যমে তাদের নির্বাচনে অংশ নেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে)। আমি যতখানি ভেবেছিলাম তার থেকেও অনেক দ্রুত ইউনিয়ন নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী ফলাফল প্রকাশ করেছে। বেশীর ভাগ কেন্দ্রের ফলাফল একদিনের মাঝে প্রকাশ করা হয়েছে।

নির্বাচনে এনএলডিকে সাফল্য লাভের সুযোগ করে দেওয়ার ঘটনায় লেখক বিস্মিত নয়:

এলএলডির নামক দলটির যে পরিমাণ সাংসদ নির্বাচিত হয়েছে, তা এক পাত্র পানিতে একটি বিন্দুর সমান। মূলত এই উপ নির্বাচনটি সুষ্ঠু ভাবে সম্পাদিত হয়েছে, কারণ এই বিশেষ নির্বাচন থেকে বেশ কিছু প্রাপ্তির বিষয় রয়েছে, বিশেষ করে পশ্চিমের বাতিল হয়ে যাওয়া বরাদ্দকৃত সাহায্যে পুরস্কার হিসেবে আবার পাওয়ার আশা। যদি এনএলডি নির্বাচিত না হোত, তা হলে এটি হোত একটি বাজে ঘটনা এবং তা নিয়ে অনেক সমালোচনা হোত। এনএলডির বিজয় নিশ্চিত করাই ছিল সরকারের সবথেকে বড় স্বার্থ।

এমন কি, কিছু কিছু নেটনাগরিক মনে করেন যে সামরিক সরকারের শাসনকে বিধিসম্মত করার জন্য সু কি-কে ব্যবহার করা হচ্ছে:

বেশ কিছু প্রবাসী বার্মিজ সম্প্রদায়ের অনুভূতি হচ্ছে এ রকম যে বর্তমান সরকারকে আইনসম্মত করার কাজে সু কি-কে দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, বিষয়টি খুব সহজ এবং সাধারণ”।

সামরিক সরকারের পরিকল্পনার বিষয়ে ওয়াগাউং মন্তব্য করেছে:

আমাদের কেউ কেউ শুরু থেকে তাদের পরিকল্পনা বিষয়ে অনুধাবন করতে পরেছিলাম। কেউ কেউ পুরোপুরি এর বিরোধিতা করেছে, ক্ষুদ্র এক জয় তাদের তীব্র আশাবাদের ক্ষেত্রে নতুন করে আস্থা জোগায়। আবার আরেকদল লোক রয়েছে যারা পশ্চিমের এই নিষেধাজ্ঞাকে ভালভাবে গ্রহণ করেনি। আন্তর্জাতিক ব্যাবসায়িক ব্যাংক শ্রেণী এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণভাবে দেশটিকে প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ এবং স্বল্প মূল্যের শ্রমিকের অপ্রসারিত বাজার হিসেবে দেখেছে। পুরস্কার এবং তিরস্কার নীতিতে চলা পশ্চিম কখনো তার পুরোনো আগ্রহের জায়গা থেকে নজর সরিয়ে নেয়নি।

শান হেরাল্ড ব্যাখ্যা করছে, কিছু মানুষ কেন সদ্য অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনকে ‘ নির্বাচন বিক্রি’ বলে অভিহিত করছে:

এই উপ-নির্বাচনকে সবাই “নির্বাচন বিক্রি” করা হয়েছে বলে অভিহিত করছে। যার মানে হল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এই চিন্তা বিক্রি করা যে বার্মা এক নতুন চেহারায় রূপান্তরিত হয়েছে (উত্তম যে, হঠাৎ করে বাঘ নিরামিষভোজী-তে পরিণত হয়েছে), আর এই ঘটনায় দেশে ও বিদেশে যারা বার্মাকে নিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে, তারা দ্রুত বেশ কিছু মন্তব্য করেছে।

এর বাইরে, তাদের থামানোর জন্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে এপ্রিল ফুল নামক বোকাদের দিনকে বেছে নেবার বেলায়, স্বাভাবিকভাবে যে প্রশ্নটি অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়, তা হচ্ছে, এবার মায়ানমার কাকে বোকা বানাচ্ছে? এমন কিছু তথ্য আছে যেগুলোকে আমি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করি।

এই কথিত উপ-নির্বাচনে, নাগরিকরা কার নীতি সমর্থন করে বা কোন প্রার্থীকে পছন্দ করে তার উপর নয়, বরং এটি ছিল তিনটি পবিত্র প্রতিষ্ঠান, সেই পুরোনো প্রহরী, এক প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব এবং জাতিগত বিষয়ের মধ্যকার এক লড়াই।

এখানে পুরোনো প্রহরী মানে সরকারী-মদদপুষ্ট দল; প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব মানে অং সান সু কি; এবং ‘জাতিগত’ বিষয় দিয়ে শান নামক দলটিকে উল্লেখ করা হচ্ছে।

Street celebration after Opposition candidates were declared winners in the by-elections. Photo from dawn-1o9

উপ-নির্বাচনে বিরোধীদলের প্রার্থীকে জয়ী ঘোষণার পর পরে রাস্তায় উদযাপন। ছবি ডাউন-১০৯ থেকে নেওয়া।

ডাউন_ ১০৯ নামক ভদ্রমহিলা, তার নির্বাচনী দিনের পর্যবেক্ষণ আমাদের জানাচ্ছে:

গতকাল,আমি আমার কিছু বন্ধুদের সাথে ভোট-গণনা দেখতে মিঙ্গালার তাউং নিইয়ান্ত-এ গিয়েছিলাম। মিঙ্গালার তাউং নিইয়ান্ত-এ হচ্ছে ইয়াঙ্গন-এর একটি এলাকা যেখানে এক উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আমার এলাকায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে না, তাই আমি নির্বাচনী প্রক্রিয়া দেখার জন্য অন্য এলাকায় গিয়েছিলাম ।

ভোটকেন্দ্রের সামনে প্রচণ্ড ভীড় ছিল। দেখে মনে হচ্ছিল যেন এক উৎসব পালন হচ্ছে!

ক্লাইম্বআপট্রিজটুলুকফরফিশ নামক ব্লগার, নির্বাচনের ফলাফলে খুশী:

সেই সমস্ত নাগরিকদের মনে আজ উপচে পড়া আশা এবং ভালবাসা, যারা দীর্ঘ দিন ধরে এই রকম একটা দিনের আগমনে বুক বেঁধে ছিল। আমি মনে করি যে আমরা সম্ভবত বন থেকে বের হয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি, সঠিক এবং গণতান্ত্রিক এক পথের দিকে এগুচ্ছি।

নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী দল-এর একটি প্রতিবেদন এখানে তুলে ধরা হল:

ল্যাশিও নামক এলাকা থেকে আসা একটি সেনাদলের এক সৈনিক বলছে যে, স্বাধীনতার চর্চা তার অধিকার। সেনাদলের অন্যদের মতই তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তার হয়ে ব্যালট পেপারে ভোট দেওয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করে, তখন সে তার অধিকার হারিয়ে ফেলে।

এসএনডিপির এক পর্যবেক্ষক মন্তব্য করেছেন শান জাতিগোষ্ঠীর নাগরিকদের অনেকের কোন পরিচয় পত্র নেই, কারণ সেটি অনেক ব্যয়সাধ্য এবং অনেক শান নাগরিক মনে করে যে তাদের কখনো ল্যাশিওর বাইরে যাবার প্রয়োজন হবে না। তিনি বলেন “এখন পরিচয়পত্রের মূল্য অনেক কম: ৫০০০ কিয়াত, এবং আমাদের তাদের সমর্থন প্রয়োজন, আর এখন থেকে পরিচয়পত্র গ্রহণ করতে নাগরিকদের উৎসাহ প্রদান করা উচিত। অন্যদিকে চীনা জাতিগোষ্ঠীর নাগরিক, স্থানীয় বা বাইরের হোক, তারা ১০০, ০০০ কিয়াত দিয়ে প্রতিটি পরিচয়পত্র কিনছে। যদি এগুলো যাচাই করা না হয়, তাহলে এই ধারাটি বাড়তেই থাকবে। যদি এই বিষয়টির প্রতিরোধ না করা যায় তাহলে অনেক বড় সমস্যার সৃষ্টি হবে।

এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশন বেশ কিছু নির্বাচনী নীতিমালা সংস্কারের পরামর্শ প্রদান করেছে:

ভোটার তালিকায় যে বিশাল ত্রুটি, তার মাধ্যমে ক্ষমতাসীন দলের কিছু প্রার্থী ‘গ্রাম এবং জেলা” পর্যায়ে সরকারি যন্ত্রপাতির অপব্যবহার করার চেষ্টা করেছে, ভোটারদের শিক্ষার অভাব, এই সকল তাদের সমস্যায় বাড়তি জটিলতা যুক্ত করছে, যা কিনা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার দক্ষতা এবং ব্যবস্থাপনার বিষয়ে প্রশ্নবোধক চিহ্ন একে দিয়েছে।

তবে, আন্তর্জাতিক পরিদর্শক দল থাকা সত্ত্বেও এখনও অনিয়ম ঘটে থাকে। যা একটা সম্পূর্ণ এবং গোছানো “স্বাধীন” ২০১৫ এর আন্তর্জাতিক সাধারণ নির্বাচন পরিকল্পনার গুরুত্বকে নির্দিষ্ট করে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .