গত বছর থেকে মিশরের প্রথম গবেষণা নির্ভর নাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাগ্য অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। ১৯৯৯ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী স্বনামধন্য মিশরীয়- মার্কিন বংশদ্ভূত আহমেদ জেওয়াইল-এর উদ্যোগে যে জিওয়াল সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি প্রতিষ্ঠা হওয়ার কথা তার সাথে নাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংঘর্শিক অবস্থান তৈরি হয়েছে।
২০১১ সালের শুরুতে নাইল বিশ্ববিদ্যালয় নতুন ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত হওয়ার কথা ছিল কিন্তু ক্ষমতা থেকে মুবারকের পতনের পর ভূমি ও স্থাপনা নাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবর্তে জেওয়াইল সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি কে প্রদানের সিদ্ধান্ত ঘোষিত হয়। আহমেদ নাজিফ-এর সাথে সম্পর্ক থাকার কারনে নাইল বিশ্ববিদ্যালয়কে ভূগতে হচ্ছে। আহমেদ নাজির হলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী যাকে গত বছর দুর্নীতির দায়ে এক বছরের স্থগিত সাজা প্রদান করা হয়েছে। দাবি করা হয় যে ভুমির পুনঃবরাদ্দ প্রদান এ পরিস্থিতিকে সংশোধন করেছে। যদিও মিশরের নেটিজনরা এ স্থানান্তরের বিপক্ষে প্রায় একমত।
সাম্প্রতিক পোস্টে ব্লগার জয়নাব মহামেদ পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেনঃ
২০০০ সালের ৬ অক্টোবর তারিখে জেওয়াইল সিটি অব সায়েন্স এন্ড রিসার্চ কর্নারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় এবং এ প্রকল্পে ৩০০ একর ভূমি বরাদ্দ প্রদান করা হয়। বাস্তবতা হল এ প্রকল্পটিকে অনেক লাল ফিতা ও আমলাতন্ত্রের দৌরাত্ম্য পোহাতে হয় এবং পরিশেষে জেওয়াইল প্রকল্পটি রাস্ট্রের কাছে হস্তান্তর করা হয়। […] মুবারকের পতনের পর এবং প্রধানমন্ত্রী এসসাম শারাফের শাসনামলে আমরা দেখি পুরনো এ জেওয়াইল প্রকল্পটিকে আবারও উত্থাপন করা হয়, উদ্যোগটি নিঃসন্দেহে ভালো যদিও এর জন্য চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে। নাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জনকে অস্বীকার করে, নাইল বিশ্ববিদ্যালয় (এন ইউ) কে মুছে ফেলে একে জেওয়াইল সিটির সাথে একীভূত করা হচ্ছে। জেওয়াইল, এন ইউ কে অধিগ্রহণ করবে। এর ছাত্রদের, গবেষকদের কি আদৌ কোনই মূল্য নেই!! এন ইউ-এর নামে বরাদ্দকৃত ১২৭ একর ভূমি পুনঃ বরাদ্দকৃত হয়ে এখন জেওয়াইল সিটির অংশ। শুধু তাই নয় এন ইউ- এর ছাত্র ও গবেষকদের প্রতি কোন শ্রদ্ধা না দেখিয়েই স্থাপনা ও এন ইউ- এর পরিষেবা গুলোকে কয়েক মাস ধরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে!!
নাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহমুদ আলম মন্তব্য করেনঃ
সাংবাদিক সালামাহ আব্দুলহামিদ বলেন ঃ
সবচাইতে বাজে বিষয় হল জেওয়াইল, নাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষকদের যে প্রচারনার সম্মুখীন হচ্ছেন সে বিষয়ে তিনি এখন পর্যন্ত কোন সন্তোষজনক সদুত্তর দিতে পারেননি। তিনি আমাকে বিশ্বাস করাতে পারেননি যে তিনি পাঁচ বছর ধরে পরিচালিত বৈজ্ঞানিক স্থাপনা এবং এর উল্লেখযোগ্য অবদানকে স্তিমিত করতে চান না[…]।
তিনি আসলে এটাকে [নাইল বিশ্ববিদ্যালয়] ধ্বংস করতে চান। “ বিব্রত” হওয়ার আগেই তিনি (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তার নাগরিকত্ব আছে) যেখান থেকে এসেছেন সেখানে তাঁর ফেরত যাওয়া উচিত।
মিসরীয় কবি ফারুক গয়েদা জেওয়াইল সিটিকে সমর্থন করেন। তিনি লিখেছেন:
নাইল বিশ্ববিদ্যালয় ও টেলি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের বিশ্বাস যে নাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি, স্থাপনা ও পরিষেবাগুলো জেওয়াইল সিটি জোরপূর্বক অধিগ্রহণ করেছে, সত্য হল এই যে শুরু থেকেই ভূমি জেওয়াইল প্রকল্পের ছিল, সেখানকার ভিত্তিপ্রস্তর সে কথাই প্রমান করে…
অনলাইন প্রচারনাকে জয়নাব মহামেদ লিঙ্ক করেছেনঃ
ছাত্র ও গবেষকেরা এন ইউ রক্ষা কর নামের বড় পরিসরে প্রচারনা চালিয়ে অনলাইন অথবা অফলাইন প্রতিবাদ ও অবস্থান ধর্মঘট করছেন। এখানে এন ইউ রক্ষা কর – এর প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট এবং এর প্রাতিষ্ঠানিক ফেসবুক পাতা। তাঁরা জেওইয়াল সিটির অংশ হতে চান না।
সহকারী গবেষক হেবা শালাবি নাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, এবং তিনি তাঁর অনুষদ ও ছাত্রদের উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেনঃ
@হেবাশালাবি: যতক্ষন পর্যন্ত তোমাদের দাবি ন্যায় সঙ্গত ততক্ষন পর্যন্ত তোমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবে, তোমাদের ভয়ের কিছু নেই।