মিশরঃ রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রতিযোগিতার নাটক

এ পোস্টটি আমাদের মিশর বিপ্লব ২০১১ সংক্রান্ত বিশেষ কাভারেজের অংশ

২৫ জানুয়ারি, ২০১১ এর পর থেকে মিশরীয় চলচ্চিত্র শিল্পের মন্দাভাব চলছে বলে প্রতিবেদনে জানা গেছে, এর মূল কারন হল ঐ সময় থেকে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে যে নাটক চলছে তা যে কোন চলচ্চিত্রকেই হার মানাবে। সম্প্রতি উত্তেজনা তুঙ্গে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনী দৌড়কে ধন্যবাদ।

হাজেম সালাহর মা:

সালাফি ধর্মগুরু হাজেম সালাহ আবু- ইসমাইল হলেন অন্যতম একজন প্রার্থী-যার নির্বাচনে জয়লাভের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। তাঁর আছে ব্যপক সংখ্যক সমর্থক আর দেশব্যাপী অফুরন্ত পোস্টার। যদিও কয়েক সপ্তাহ আগে খবর পাওয়া গেছে যে তাঁর মায়ের সম্ভবতঃ মার্কিন নাগরিকত্ব রয়েছে, গত বছরে সংবিধানের সর্বশেষ সংশোধনীতে বলা হয়েছে যে, যাদের পিতামাতার মধ্যে কমপক্ষে এক জনের অথবা স্বামী কিংবা স্ত্রীর মধ্যে কোন একজন যদি বিদেশী নাগরিকত্ব গ্রহণ করে থাকেন তাহলে তাঁরা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রার্থী হতে পারবেননা, অভিযোগ প্রমানিত হলে আবু ইসমাইলের প্রার্থিতা বাতিল হতে পারে।

১৩ এপ্রিল, ২০১২ তারিখে তাহরির চত্বরে র‍্যালী।

১৩ এপ্রিল, ২০১২ তারিখে তাহরির চত্বরে র‍্যালী। ছবি- ফ্লিকার ব্যবহারকারী মোসাআব এলশামীর সৌজন্যে (সিসি বাই- এনসি-এস এ ২.০)।

গত সপ্তাহ থেকে এটা খুবই স্বাভাবিক ছিল যে মানুষ নির্বাচন সংক্রান্ত আপডেট চাচ্ছে, যদিও প্রতিদিনই বিভ্রান্তিকর সংবাদ পাওয়া যাচ্ছেঃ

@AmrEzzat: هو إيه آخر أخبار مسلسل السيدة الفاضلة والدة حازم صلاح أبو إسماعيل؟

@আমরইজ্জত: হাজেম সালাহ আবু ইসমাইলের মায়ের নাটকের সর্বশেষ সংবাদ কি?

এটা একটা শ্লেষাত্মক পরিস্থিতি কারন সালাফি সংবিধান সংশোধন চেয়েছিলেন:

@Mohamed_Habib_T: ما يثير الضحك والبكاء هو أن السلفيين الذين أيدوا التعديلات الدستورية بقوة هم أول من اصطلى بنارها فى أزمة الجنسية الأمريكية لوالدة حازم صلاح

@ মোহাম্মদ_ হাবিব_ টি: একই ঘটনায় কেউ কাঁদে কেউ হাসে, সংবিধান সংশোধন সমর্থনকারীদের মধ্যে  হাজেম সালাহর মায়ের মার্কিন নাগরিকত্ব বিতর্কে সালাফিই প্রথম আত্মাহুতি দিবেন।

অন্য আরেকটি দেশের নাগরিকত্ব নিয়ে কথা বলা এবং সেই অনুসারে কাজ করতে ব্যর্থ হওয়ার মানে হচ্ছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ নাগরিকদের দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়ে সচেতন নয়। আবু ইসমাইল যে নিজে একজন আইনজীবী, এই বিষয়টি জানার পর- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে তার মায়ের মার্কিন নাগরিকত্ব প্রমাণ করার দাবী জানিয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যা করতে ব্যর্থ হয়।  এই পরিবর্তনের বিষয়ে যে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে তা হচ্ছে, আদতে হাজেম-এর মাতা কি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক, অথবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে এর প্রমাণ আছে কি নেই, এবং গত বুধবার আদালত এক আদেশ প্রদান করে তাতে হাজেম সালেহ-এর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের স্বপ্নকে জীবিত রইল, এখন সর্বোচ্চ নির্বাচন কমিটির সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়।

এসসিএফ এবং মুসলিম ব্রাদারহুডের মধ্যে দাবা খেলা

পরবর্তী দুজন শক্তিশালী প্রার্থী হলেন খায়রাত এল সাতের এবং ওমর সুলেইমান রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিশ্রুত প্রার্থী প্রদান করবে না মর্মে ঘোষণা দেওয়ার পরেও মুসলিম ব্রাদারহুড খায়রাত এল সাতের-কে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। ব্রাদারহুডের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থিতায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আব্দেল-মোনেমআবুল- ফুতহ- কে তাঁরা দল থেকে বহিষ্কার করে। ওমর সুলাইমান রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থিতায় প্রবেশের পরেই এ ঘটনা ঘটে।

 রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থিতায় ওমর সুলেইমানের অংশগ্রহণ সম্পর্কে জেইনোবিয়া লিখেন:

সামরিকবাহিনী ইসলামপন্থীদের ভয়কে কাজে লাগাচ্ছে যা মধ্যবিত্তের মধ্যে ক্রমশঃ বেড়ে চলছে সে বিষয়ে এস সি এ এফ  সমর্থিত এল সাতের এর পদ প্রার্থিতা একটি জবাব হতে পারে বলে অনেকে বিশ্বাস করেন।

সুলেইমান মুবারকের উপ- রাষ্ট্রপতি ছিলেন, জেইনোবিয়া সুলেইমানের নিচের বক্তব্য তুলে ধরেন:

২৫ জানুয়ারির বিপ্লবের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে অর্জনের জন্য আমি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সিদ্ধান্ত নিয়েছি!

মুসলিম ব্রাদারহুড খায়রাত এল সাতের যিনি মুবারক শাসনামলে অন্তরীণ ছিলেন- তাঁকে নবী ইউসুফের সাথে তুলনা করেন। নবী ইউসুফ কারাগার থেকে বেরিয়ে মিশর শাসন করেন। জেইনোবিয়া মন্তব্য করেন:

মুসলিম ব্রাদারহুডের ছেলেরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তিনি ২০১২ সালের ইউসুফ নবী যিনি মিশরের অর্থনীতিকে রক্ষা করবেন!! নিশ্চয়ই প্রকৃত নবী ইউসুফ জল ও বিদ্যুতের বেসরকারিকরণের কথা বলেননি এবং গত ৩০ বছর ধরে তৃতীয় বিশ্বের  দুর্নীতিতে আক্রান্ত একটি দেশ মিশরের অবকাঠামোর নিয়ন্ত্রণ বেসরকারি সেক্টরে দিয়ে দেওয়ার কথাও বলেননি!

তিনি আরও বর্ণনা করেন যে কিভাবে ওমর সুলেইমানের সমর্থকেরা তাঁকে রাজা সুলেইমানের সাথে তুলনা করে তাঁর প্রতিপক্ষদের পিঁপড়ার সাথে তুলনা করে বলেছেন যে প্রতিপক্ষরা হয় পিঁপড়ার মত গর্তে লুকাবে নয়তো তাঁরা ধ্বংস হয়ে যাবে:

মজার বিষয় হল এল সাতেরের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদপ্রার্থিতার নাম ওমর সুলেইমানকে তাঁর সমর্থকরা রাজা সুলেইমান নামে নামকরণ করেছে!!!

সুলেইমানের নির্বাচনী প্রচারক সামাউল আল আশাই আজ এক সংবাদ বিবৃতি প্রদান করে, মোহাম্মদ আনাতার সেখান থেকে একটি উদ্ধৃতি তুলে ধরেন। […] কুরআন থেকে উদ্ধৃত করে আনাতার তাঁর বক্তবের শেষে মুসলিম ব্রাদারহুডকে সতর্ক করেন। কুরআন থেকে তিনি বলেন: “ হে পিপীলিকার দল, তোমরা তোমাদের গৃহে প্রবেশ কর। অন্যথায় সুলায়মান ও তাঁর বাহিনী অজ্ঞাতসারে তোমাদেরকে পিষ্ট করে ফেলবে।”

বিপ্লবীরা এবং মুসলিম ব্রাদারহুড যৌথভাবে সুলেইমানকে প্রত্যাখান করেছে। রাফাতলজি লিখেছেন যে মুসলিম ব্রাদারহুড থেকে বিপ্লবীদের রক্ষা পাওয়ার জন্য বিপ্লবীরা সুলেইমানকে সমর্থন করবেন বলে সুলেইমান বিশ্বাস করলেও সে ধারনাটা পুরোপুরি মিথ্যাঃ

ظن الرجل أننا سنرحب بمخططه الشيطانى ونهلل له كمنقذ على حصان أبيض حتى يخلصنا من الإخوان و السلفين ومن على شاكلتهم
ظن وظنه الخطأ. فنحن رغم ما عانيناه من الإخوان ومن تلونهم والعمل على مصلحتهم فقط فلن نقبل يوماً بعمر سليمان رئيساً للخلاص من الإخوان وكذبهم ونفاقهم السياسى
তিনি ভাবছেন যে তাঁর দুষ্ট পরিকল্পনাকে আমরা স্বাগত জানাব এবং মুসলিম ব্রাদারহুড ও সালাফিদের থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য তাঁকে শ্বেত অশ্বে আরোহণকারী পরিত্রাণ কর্তা ভেবে উৎফুল্ল হব। তিনি আসলে তাই ভেবেছেন, তিনি পুরোপুরি ভুল ভেবেছেন। অবস্থান পরিবর্তনের কারনে এবং তাঁরা  কেবল তাঁদের ব্যক্তিগত স্বার্থে কাজ করায় যদিও আমরা মুসলিম ব্রাদারহুডের বিষয়ে দুর্ভোগে আছি, তবুও মিথ্যা ও রাজনৈতিক তঞ্চকতা থেকে আমাদের রক্ষার জন্য আমরা কখনই ওমর সুলেইমানকে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থিতায় সমর্থন জানাবো না।

ইসলামিক সংখ্যাগরিষ্ঠের সংসদ “অবশিস্ট” (বিগত শাসনামলের সংস্কারবিহীন অনুগতদের) রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রতিযোগিতায় যাতে অংশ নিতে না পারে সে বিষয়ে একটি আইন পাশ করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে:

@alaa: دلوقتي مجلس الشغب اصدر قانون العزل و بصياغة يبدوا انها جيدة، يتبقى ان يصدق عليه المجلس العسكري. نزول الاخوان غدا لضمان التصديق
@আলা: এখন সংসদে রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নকরন আইনের খসড়া প্রণয়নের কাজ চলছে, মনে হচ্ছে এটা ভালই হবে। এটা অনুমোদনের বিষয়টি এখন এস সি এ এফ এর হাতে, মুসলিম ব্রাদারহুড অনুমোদন নিশ্চিত করার জন্য আগামীকাল মিছিল করবে।

মুসলিম ব্রাদারহুড ও এস সি এ এফ এর মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনা এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে উভয় দলের গৃহীত পদক্ষেপকে মোহাম্মদ ইব্রাহিম দাবা খেলা বলে উল্লেখ করেছেন:

@M_I_A_H: نحن مجرد متفرجين على لعبه شطرنج تلعب على اعلى مستوى ما بين القوى السياسه و المجلس العسكرى
@এম_আই_এ_এইচ: রাজনৈতিক শক্তি ও সামরিক শক্তির সুপ্রিম কাউন্সিলের উচ্চতম পর্যায়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত দাবা খেলায় আমরা কেবল দর্শক মাত্র

খেলা পরিবর্তনকারী

১৪ এপ্রিল, রবিবারের খবরে সবকিছু উলটপালট হয়ে গেছে। আহরামঅনলাইন এর প্রতিবেদনে বলা হয়ঃ

মিশরের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পরিদর্শন কমিটি গত শনিবার দশজন রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করেছেন, এঁদের মধ্যে মুসলিম ব্রাদারহুডের খায়রাত আল- সাতের, প্রাক্তন গোয়েন্দা প্রধান ওমর সুলেইমান, সালাফি শেখ হাজেম সালাহ আবু-ইসমাইল, আইমান নুর এবং মোরতাদা মনসুর রয়েছেন।

সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপীল করার জন্য প্রার্থীদের হাতে ৪৮ ঘন্টা সময় আছে; উপরে বর্ণিত তিনজন প্রার্থীর অযোগ্যতার বিষয়ে টুইটার ও ব্লগে আলোচনা হয়েছে।

প্রার্থীরা প্রত্যেকেই কেন অযোগ্য ঘোষিত হয়েছেন সে বিষয়ে বাসীম সাব্রি বিস্তারিত কারন উল্লেখ করেছেন

হঠাৎ করে সকল প্রার্থীর অযোগ্যতার প্রকৃত কারন নিয়ে আহমাদ মাহমুদ আলি ঠাট্টা করেনঃ

@Ahmadmahmoudali: انباء عن استبعاد جميع مرشحين الرئاسة و إلغاء منصب رئيس الجمهورية

@আহমেদমাহমুদআলি: সংবাদে জানা গেছে সকল প্রার্থীই অযোগ্য এবং রাষ্ট্রপতি পদটি বাতিল করা হবে।

ফরিদ সালেম আশা প্রকাশ করেন যে বাকী প্রার্থীরা খুব খুশি হবে, বিশেষত আবুল ফতুহ এবং আমর মুসাঃ

@farid56: النهاردة سهرة سعيدة لابو الفتوح ، ولعمرو موسي

@ফরিদ৫৬: আবুল ফতুহ এবং আমর মুসার জন্য আজকের রাত হবে আনন্দের রাত।

আহমাদ শোকর বলেন:

@আহমাদশোকর: ১৫ জন গভর্নরের নিকট থেকে স্বাক্ষর সংগ্রহে ব্যর্থতার কারনে ওমর সুলেইমান অযোগ্য ঘোষিত হয়েছেন। গভীর বিষয়গুলো আদৌ অত গভীর নয় # মিশর

অন্যদিকে তারেক শালাবি নির্বাচন নিয়ে চিন্তিত:

@তারেকশালাবি: এই নির্বাচনগুলো পুরপুরিই বিনোদন এবং নৃতাত্বিক উদ্দেশ্যে- আমাদের বিপ্লবের বিষয়ে তাঁরা কিছুই করবে না। #জানু২৫

সবশেষে আহমেদ আব্দ রাবো আরও গভীরে প্রবেশ করে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পেয়েছেনঃ

@3bdrabo25: استبعاد 10 مرشحين هل كان لدفع انصارهم للشارع مع ازدياد الازمات هل لفرض صراع بينهم او مع الدولة كمبرر لفرض احكام عرفية.هل هناك انتخابات

@৩বিদ্রাবো২৫: ১০ জনের অযোগ্যতা  কি তাঁদের সমর্থকদের রাস্তার দিকে ঠেলে দেবে না? বর্তমান সঙ্কটের বৃদ্ধি তাঁদের নিজেদের মধ্যে সংঘাত এবং তাঁদের ও রাষ্ট্রের মধ্যে সংঘাতের মাধ্যমে পরিসমাপ্তি ঘটাতে পারে, এর ফলে  কি সামরিক শাসন জারীর যৌক্তিকতা তৈরি হবে না? নির্বাচন কি হবে?

এ পোস্টটি আমাদের  মিশর বিপ্লব ২০১১  সংক্রান্ত বিশেষ কাভারেজের অংশ

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .