- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

ভারতঃ উন্নত ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় গতি বৃদ্ধি

বিষয়বস্তু: দক্ষিণ এশিয়া, ভারত, নাগরিক মাধ্যম, পরিবেশ, প্রযুক্তি, সরকার, স্বাস্থ্য

বর্তমানে, ই- বর্জ্য [1], বা ইলেক্ট্রনিক ওয়েস্ট অথবা ইলেক্ট্রনিক আবর্জনা, বিশ্বের অন্যতম দ্রুত এক জঞ্জালের পরিণত হয়েছে এবং সারা বিশ্বের পরিবেশবাদীরা “ বিনষ্ট হবার সময়কালের” যৌক্তিক কারণে উদ্বেগ প্রকাশ করছে।

ভারতেও, বিগত বছর ধরে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে ধীরে ধীরে সচেতনতা গড়ে উঠছে, বিশেষ করে গত সাত বছর ধরে দেশটির ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিশাল গতিশীলতা [2] লাভ করেছে। কেন্দ্রীয় বন এবং পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের (এমওইই) দ্বারা গঠিত এক কমিটির সম্প্রতি প্রকাশিত [3] (পিডিএফ) রিপোর্টে এই তথ্য জানা গেছে:

ই-বর্জ্যকে বিনষ্ট করা, ভারতের জন্য এক প্রধান চ্যালেঞ্জ। দেশটির আমদানিকারকেরা ই-বর্জ্যের অন্যতম এক প্রধান উৎস, যার বেশীর ভাগই অবৈধ ভাবে আসে। এই কারণে দেশটিতে বিশাল পরিমাণ আবর্জনা জমা হয় এবং সেগুলোকে প্রক্রিয়ার কারণ করতে হয়। এই ব্যবসার যে প্রকৃতি, সেই কারণে এই ধরনের ব্যবসায় ঠিক কি পরিমাণ পণ্য আমদানী করা হয়, তার কোন সঠিক তথ্য নেই। তবে সাধারণ এক হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে যে, দেশে যে পরিমাণ বর্জ্য তৈরী হয়, ঠিক সেই পরিমাণ আমদানী করা হয়। ই-বর্জ্য ঠিকমত বিনষ্ট না করা স্বাস্থ্য এবং একই সাথে পরিবেশের জন্য বিশাল হুমকি এবং ফলে তা এক প্রচণ্ড উদ্বেগের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।

[4]

ই-বর্জ্য, প্রযুক্তির অগ্রগতির এক দায়িত্বহীন পরিণতির অবশিষ্ট। ছবি কেরেন চেরনিজন-এর। কপিরাইট ডেমোটিক্স-এর (৯/৯/১১)।

এমন নয় যে, ভারতে “ভুল ভাবে” পণ্য বিনষ্ট ও রিসাইকেল করার বিষয়টি নতুন । বরঞ্চ সাসটেইনেবল স্ফেয়ার-এ অমিত গাঙ্গুলী দেখিয়েছেন [5]:

অ-প্রথাগত খাতে ই-বর্জ্যকে রিসাইকেল করা হয় আদিম আর বিপজ্জনক পদ্ধতিতে।

এই ভাবে রিসাইকেল করা যে বিপজ্জনক তাতে কোন সন্দেহ নেই, বিশেষ করে প্লাষ্টিক/ পিভিসি ইত্যাদি পোড়ানোর ফলে এতে সীসা, পারদ, ক্যাডমিয়াম, ডাইক্সিন-এর মত বিষাক্ত উপাদান পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে। যা কিনা ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকির [6] সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও, এখন পর্যন্ত ভারতের ৯০ শতাংশ ই–বর্জ্য [7] অনানুষ্ঠানিক ভাবে রিসাইকেল করা হয়। ভারতের ই-বর্জ্যের বাজার অর্ধ বিলিয়ন ডলারে [8] (৫০ কোটি ডলার) গিয়ে ঠেকেছে এবং তা বছরে ২৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০০৮-এ, ইউটিউবে আপলোড করা গ্রীনপিসের [9] এই স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে প্রদর্শিত হয়েছে, ভারতে অ-প্রথাগত খাতে কি ভাবে ই-বর্জ্য বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ভারত, যেখানে সম্পূর্ণ অজ্ঞানতার কারণে বা তার চেয়ে বেশী কিছু, পরিবেশ এবং স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির ব্যাপারে পুরোপুরি অজ্ঞ থাকার কারণে এই সমস্ত প্রতিদিনের কার্যকলাপে এই সমস্ত ঝুঁকি ক্রমশ বাড়ছে। বর্জ্য বিষয়ক প্রতিদিনের এই কার্যক্রমের মাধ্যমে অনেক নাগরিক নিজেদের জীবিকা অর্জন করে থাকে।

ক্রমশ বাড়তে থাকা এই সমস্যা মোকাবেলার বিষয়টি উপলব্ধি করার কারণে, পরিবেশ এবং বন মন্ত্রণালয়ের দ্বারা গঠিত উপরোল্লিখিত কমিটি, পরামর্শ প্রদান করেছে যে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তিনটি স্তরে পালন করতে হবে। এগুলো হচ্ছে, আইনগত, প্রশাসনিক, এবং প্রযুক্তিগত পদ্ধতিতে। ই-বর্জ্য বিষয়ক একটি নতুন আইন, মে ২০১২-এ কার্যকর হবে, যার সাথে আইনগতভাবে রিসাইকেল-এর ক্ষেত্রে এক্সটেনডেড প্রডিউসার রেসপন্সিবিলিটি ( উৎপাদকের দায়িত্বশীলতা বা ইআরপি) যুক্ত হবে, এর ফলে মেয়াদোত্তীর্ণ ইলেক্টেনিক যন্ত্রপাতির উপাদান-এর ঝুঁকি কমানোর জন্য এবং এই সমস্ত উপাদান সংগ্রহ করার জন্য এক সংগ্রহশালা নির্মাণ করতে হবে।

ভিনিত নামক ব্লগার গ্রীনআর্থ.কমে, আগামীতে প্রযোজ্য হতে যাওয়া এই নতুন আইন সম্বন্ধে বিস্তারিত বর্ণনা প্রদান করেছেন। তিনি লিখেছেন [10]:

ইলেক্ট্রনিক উপাদান বা যন্ত্রাংশের উৎপাদন, ক্রয় এবং বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সকল উৎপাদনকারী, খুচরা এবং পাইকারি ব্যবহারকারী, এই আইনের আওতায় পড়বে। পর্যবেক্ষণ এবং নজরদারির ক্ষেত্রে, কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে এবং এই সমস্ত আইন প্রয়োগের বিষয়ে (রাজ্য অনুসারে) তাদের এক বার্ষিক প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।

তবে, পরিবেশবাদীরা অনুভব করছে যে এর জন্য আরো অনেক কিছু করা প্রয়োজন [11]। কেবল অবৈধ ই-বর্জ্য আমদানী বন্ধ করার উপায়গুলো যাচাই করে তা শক্তিশালী করা নয়, সাথে যথাযথ ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অ-প্রথাগত খাতকে এই বিষয়ে জ্ঞাত করা ও এই কাজে তাদের যুক্ত করা প্রয়োজন।

ইয়োরস্টোরি.ইন নামক ব্লগে, ব্লাগার জবিন মেহতা, তার পোস্টে বেশ কিছু উদ্যোগের বিষয় সম্বন্ধে জানাচ্ছেন [12], যেগুলো ই-বর্জ্য বিনষ্ট এবং যথাযথ ও বৈজ্ঞানিক ভাবে ই-বর্জ্য রিসাইকেল করার মত সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্য চালু করা হয়েছে।
তিনি লিখেছেন:

এই সব ক্ষেত্রে নতুন কোম্পানী প্রবেশ করেছে এবং তারা পরিস্থিতি উন্নত করার চেষ্টা করছে। তবে যে হারে ই-বর্জ্য উৎপাদন হবার চিত্র চোখে পড়ছে, তা বিরক্তিকর। আট্টেরো [13], রিসাইকেল ট্রেড ইন্ডিয়া [14] এবং ইকোসেন্ট্রিক [15]-এর মত কোম্পানিগুলো ভারতে এই খাতে কাজ শুরু করে দিয়েছে এবং তারা ভালোই করবে, কারণ এখানে এই কাজের ক্ষেত্রে যে বিশাল সুযোগ আছে তা সম্ভবত এর অন্য বাঁধাসমূহ দুর করে দেবে।

২০০৮ সালে, ইনহাবিটাট নামক ব্লগে, ব্লগার মহেশ বাসানতানি, মুম্বাইয়ে গ্রহণ করা এ রকম এক উদ্যোগের কথা বলেছিলেন [16]:

রিসাইকেল বিষয়টি যাতে নিরাপদ এবং আরো পরিবেশ বান্ধব হয় তার জন্য কিছু এনজিও এবং সরকার বেশ কয়েকটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এই সমস্ত উদ্যোগের ক্রমাগত প্রচেষ্টা হিসেবে নতুন চালু করা এক কোম্পানি, ইকো রিকো [17] ( ইকো রিসাইকিলিং লিমিটেড), বেশ প্রতিশ্রুতিশীল। মহারাষ্ট্র নামক রাজ্য-এ এটাই প্রথম এবং সারা ভারতের মধ্যে এটা এ ধরনের চতুর্থ কোম্পানি।

অন্য কয়েকটি কোম্পানি [8], রিভার্স লজিস্টিক [18] বিষয়ে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই রকম কোম্পানি হচ্ছে গ্রীনডাস্ট, রিভার্স লজিস্টিক কোম্পানি, ফিউচার সাপ্লাই চেইন, ইত্যাদি। এই সমস্ত কোম্পানি এই আইনকে স্বাগত জানাবে এবং জানিয়েছে। আশা করা হচ্ছে যে তারা এখন যে খাতে ব্যবসা করছে, আগামীতে তাতে সুযোগ বৃদ্ধি পাবে।

[19]

ই-বর্জ্য। ছবির কপিরাইট রিচার্ড ডোরেলের। সিসি-বাই-এসএ ২.০-এর অধীনে তা ব্যবহার করা হয়েছে

তবে অন্যদিকে ইলেক্টনিক্স যন্ত্রপাতির উৎপাদকের এই আইনের ব্যাপারে সতর্ক, বিশেষ করে যখন এই আইনের উদ্দেশ্য হচ্ছে এই সমস্ত কোম্পানির ঘাড়ে দায়িত্ব এবং জবাবদিহিতা অর্পণ করা। এই আইনের ফলে রিভার্স লজিস্টিক (বিক্রয় পরবর্তী কার্যক্রম) তাদের দ্বারে এসে দাঁড়াবে। হিওলেট প্যাকার্ড-এর মত কোম্পানিসমূহ দায়িত্বগ্রহণে চাপ অনুভব করছে [20]। যেখানে এই সমস্ত ইলেক্ট্রনিক পণ্য যে ভাবে বিনষ্ট করা হয়, তার জন্য চুড়ান্ত ভোক্তা এবং সরকার সমান ভাবে দায়ী, বিশেষ করে সরকার যে অবকাঠামো সরবরাহ করে, তার জন্য।

যেখানে পরিবেশ বিষয়ক আইন প্রয়োগে ভারতের সফলতার কোন রেকর্ড নেই, তখন এটা দেখার বিষয় যে কিভাবে বিভিন্ন স্টকহোল্ডার এই বিষয়ে এবং একই সাথে ক্রমশ বাড়তে থাকা ই-বর্জ্য-এর হুমকি মোকাবেলায় সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে মনোযোগ সহকারে কাজ করে।