বাংলাদেশ: রাজধানীতে বস্তি উচ্ছেদ মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছে

বুধবারে (৪ এপ্রিল, ২০১২), বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অন্যতম এক বৃহৎ বস্তি করাইলের বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করা হয়। গুলশান লেককে অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত করতে কর্তৃপক্ষ এই উচ্ছেদ অভিযান চালায়। এর আগের দিন মাইকিং করে বস্তিবাসীদের স্বল্পসময়ের নোটিশে বস্তি থেকে চলে যেতে বলা হয়, যার ফলে অনেকেই ঠিকমত এই নোটিশ সম্বন্ধে জানতে পারেনি। বিটিসিএল এক দিনের কম সময়ের নোটিশে করাইল এবং অন্যান্য বস্তির হাজার হাজার স্থাপনা, যার মধ্যে বাড়ি এবং দোকান রয়েছে, সেগুলো ভেঙ্গে ফেলে। একজন বস্তিবাসী দাবী করেছেন যে যখন বুলডোজার বস্তির ঘর গুঁড়িয়ে দেয়, তারপর থেকে তার চার বছরের মেয়েটি নিঁখোজ রয়েছে।

দি ইনক্রিমেন্টাল হাউজ এই ব্যয়বহুল বস্তির উপর করা গবেষণা বিষয়ক লেখা পোস্ট করেছে:

পুরো বস্তি যেন এক প্রতিরোধ। এটা অন্য আরেকজনের ভূমিতে গড়ে উঠেছে। দৃশ্যত, গুলশান এবং বনানীর যে সব সম্পদশালী ভবন দ্বারা এটি ঘিরে রয়েছে, তার সাথে এর তেমন একটা পার্থক্য নেই। এর চারপাশে পানি। কাজে যাওয়া-আসার জন্য এর বাসিন্দারা নৌকার বন্দোবস্ত করেছে।

[..] এটা বেশ সুন্দর পরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে, তাহলে কি এটা প্রতিরোধের কোন জায়গা তৈরী করে? কোথা থেকে এই বস্তি পানি এবং বিদ্যুৎ পায়? পানিতে ভাসমান পাইপের সাথে নৌকার সংঘর্ষ ঘটে। এই সমস্ত পাইপ বনানীর মূল পাইপের সাথে যুক্ত। কেউ একজন এসবকে নিয়ন্ত্রণ করে। পানির উপর দিয়ে বিদ্যুত-এর লাইন চলে গেছে, এবং আবার এগুলো মূল লাইনের সাথে গিয়ে মিশেছে।

করাইল বস্তিকে ঘিরে ধনী এবং দরিদ্রের সহাবস্থানের একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিও এখানে প্রদান করা হল (যা আপলোড করেছে লিজস্কার্ফ):

আমি আমার বাংলা ব্লগে এই উচ্ছেদের প্রেক্ষাপট সম্বন্ধে লিখেছিলাম [বাংলা ভাষায়] :

গত বছর ২০শে সেপ্টেম্বর রাজউক এরকম স্বল্প নোটিসে আরেকটি উচ্ছেদ অভিযান চালায় সেখানে। পুলিশ আর পাড়ার মাস্তানদের দ্বারা ১২০টিরও বেশী পরিবার উচ্ছেদ করা হলেও পরে তারা আবার এসে বাসা করে। গত ২০০৮ সালে প্রথম পিডাব্লিউডি উচ্ছেদের নোটিশ পাঠালে আইন ও শালিস কেন্দ্র পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ মানবাধিকার লঙ্ঘন এই বলে হাইকোর্টে একটি স্টে অর্ডার নেয়। সেই মামলার বিভিন্ন শুনানীতে পুনর্বাসনের কথা বলা হয় তবে গত জানুয়ারীতে হাইকোর্ট সরকারকে আদেশ দেয় দুই মাসের মধ্যে এই বেদখলকৃত জমি উদ্ধার করতে – তবে সেখানে পুনর্বাসনের কোন কথা বলা হয় নি।

করাইল এলাকার এইসব ভূমিহীন বস্তিবাসীর ৩০ ভাগ দিনমুজুর, ২০% রিক্সা-ভ্যান চালায়, ১৮% গার্মেন্টস কর্মী ও ১২% ছোট ব্যবসা করে। তাদের মাসিক আয় ২৫০০-৪৫০০ টাকা এবং স্থানীয় মান্তানদের ৮০ স্কয়ার ফিটের ঘর ভাড়া দিতে হয় ৮০০-১২০০ টাকা।

নিজেদের দাবী তুলে ধরার জন্য করাইল বস্তির বাসিন্দারা এক মানববন্ধনে অংশ গ্রহণ করেছে। ছবি ফিরোজ আহমেদের। কপিরাইট ডেমোটিক্সের (১৮/২/২০১২)

বস্তির এই সব বাসিন্দাদের পুর্নবাসনের ব্যবস্থা না করে তাদের উচ্ছেদের এই পরিকল্পনার বিষয়ে জুলকারনাইন প্রশ্ন করেছে [বাংলা ভাষায়] :

আমাদের মানবিক বিবেচনা কী দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে? নাকি বিবেচনার গলা টিপে রোবোটিক হয়ে উঠছি প্রতিনিয়ত আমরা? এমনিতেই শহরে প্রচুর ভাসমান লোক এখানে সেখানে বসবাস করে। তার সাথে যদি এরা যুক্ত হয় তাহলে শহরের না কোনও সৌন্দর্য বর্ধন হবে না আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির কোনও উন্নয়ন সাধন হবে।

বস্তিবাসীরা এর প্রতিবাদে মানববন্ধনের সৃষ্টি করে এবং রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়ক বন্ধ করে দেয়, যার ফলে রাস্তায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বুধবারে গুলশান মহাখালী সংযুক্ত সড়কে তিন ঘণ্টার জন্য যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয় , যার ফলে রাজধানীর অনেক রাস্তায় দীর্ঘ এক যানজটের সৃষ্টি হয়।

এই ঘটনায় টুইটার ব্যবহারকারীও তাদের মতামত ব্যক্ত করেছে।

@এনহাসান৮৯: আমি মনে করি আজকের দিনটা বাংলাদেশের এক অন্ধকার দিন, যা ইতিহাসে এক লজ্জাজনক অধ্যায় হয়ে রইবে। মানুষকে তার চরম সীমার বাইরে ঠেলে দেওয়া হল। #করাইল # ফ্রিবাংলাদেশ।

@ইইপি_শ্রী:৪ এপ্রিল তারিখে এক ভয়াবহ উচ্ছেদের ঘটনায় করাইলের ৪৫,০০০ ঘর ভেঙ্গে ফেলা হল… শহরের এই সব চরম দরিদ্র নাগরিকদের জন্য আমরা কি করতে পারি?

@করভীরাখশান্দ: এই মূহুর্তে বনানী লেকের কাছে করাইল বস্তির হাজার হাজার নাগরিক গৃহহীন এবং তাদের যাবার কোন জায়গা নেই। http://t.co/LpeAmBnk

করাইল বস্তির নাগরিকরা উচ্ছেদের পর টিএন্ডটি কলোনীর মাঠে এসে উপস্থিত হয়েছে। ছবি ফিরোজ আহমেদের ( কপিরাইট ডেমোটিক্সের, ৫/৪/২০১২)

@শাহানাসিদ্দিকি: অবিশ্বাস্য এক অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে-গ্রীষ্মের ঝড় #কালবৈশাখী-শুরু হবে। #করাইলের বস্তির মানুষদের জন্য সত্যই খারাপ লাগছে, যারা এখন খোলা মাঠে অবস্থান করছে।

@মেহরাবসৌরভ: বিছানায় শুয়ে শুয়ে সেই সমস্ত গৃহহীন মানুষদের কথা ভাবছিলাম, যাদের করাইল বস্তি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। নিজেকে অসহায় লাগছে, তাদের কোন সাহায্য করতে পারছি না! #ঢাকা

@শাহানাশিদ্দিকি:শুনুন সকলে, #করাইল বস্তি থেকে উচ্ছেদকৃত নাগরিকদের জন্য @জাগোফাউন্ডেশন খাবার তৈরী করেছে। খাবার বিতরণের জন্য সাহায্যের প্রয়োজন। বেলা ১২টার মধ্যে দয়া করে টিএনটির মাঠে উপস্থিত হোন।

@জাগোফাউন্ডেশন: বিগত ৩৬ ঘন্টায়, করাইল বস্তি থেকে উচ্ছেদকৃতদের মাঝে আমরা খাবার বিতরণ করছি, খুব সামান্য পরিমাণে… http://t.co/NarANbkC

শুক্রবারের ভারী বৃষ্টি, উচ্ছেদকৃত বস্তির বাসিন্দাদের জীবন আরো দুর্বিষহ করে তোলে

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .