মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব তূন রাজাক,সম্প্রতি প্রেস ইনিস্টিটিউট পুরস্কার প্রদানের সময় এক ঘোষণায় বলেন যে, শীঘ্রই সংসদে প্রিন্টিং প্রেস এন্ড পাবলিকেশন এ্যাক্ট (পিপিপিএ) –এর সংশোধনী উত্থাপন করা হবে। এছাড়াও তিনি সংবাদ, অনলাইন প্রচার মাধ্যমে উপর নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে তার ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেন, যেহেতু সরকার প্রিন্ট এবং অনলাইন প্রচার মাধ্যম নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে দ্বৈত নীতি গ্রহণ করতে পারে না।
তার এই ঘোষণা, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১১-এ মালয়েশিয়া দিবসে প্রদান করা ভাষণের সাথে যুক্ত করা হয়েছে, যেখানে তিনি সংস্কারের কথা ঘোষণা প্রদান করে, উক্ত ভাষণে তিনি প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছিলেন যে আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা আইন ১৯৬০ ( ইন্টারনাল সিকিউরটি এ্যাক্ট বা আইএসএ), নির্বাসন আইন (১৯৫৯) এবং পিপিপিএ নামক আইনের সংস্কার, আর একই সাথে সীমাবদ্ধ আবাসন আইন ১৯৩৩ নামক সংস্কার সাধন করবেন।:
Kajian semula komprehensif ini akan melibatkan Akta Kediaman Terhad 1933 dan Akta Mesin Cetak dan Penerbitan 1984 di mana prinsip pembaharuan tahunan akan dihapuskan dan digantikan dengan pengeluaran lesen sehingga dibatalkan.
তবে, এই ঘোষণা এক হতাশা তৈরী করে, সেন্টার ফর ইনডিপেন্ডন্ট জার্নালিজম যেমনটা নির্দেশ করছে, পিপিপিএর এই সংস্কার মানে এই নয় যে তা মালয়েশিয়ার প্রচার মাধ্যমের স্বাধীনতার পরিমাণ বাড়াচ্ছে:
যখন বিষয়টি মত প্রকাশের স্বাধীনতার তখন সরকারের সংস্কার না করার এই অবস্থান, তখন সেটি মালয়সিয়াকিনি আদালতের প্রকাশনার অনুমোদন বিষয়ক আবেদনকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাতিল করার ঘটনায় তার প্রতি আদালতের যে চ্যালেঞ্জ প্রতিক্রিয়ার প্রতিফলন। উপ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবু সেমান ইউসোপ-এর পাল্টা আবেদনে বলেছেন যে অনুমোদন ছিল এক “বিশেষ সুবিধা”, এবং কাউকে অনুমোদন না দেওয়ার বিষয়টি সাথে মুক্ত ভাবে কথা বলার অধিকার হরণের সাথে তুলনীয় হতে পারে না। এই অবস্থানটি জনতার তথ্য অধিকারের দাবীকে অস্বীকার করে, বিশেষ করে তাদের, যাদের ইন্টারনেটে প্রবেশের সুযোগ নেই এবং যারা বিকল্প কিছু পাওয়া থেকে বঞ্চিত, একটি মুক্ত প্রচার মাধ্যম অনেক বেশী আরো অনেক বেশী জটিল দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে পারে।
একই সাথে প্রধানমন্ত্রীর এই বিষয়টি পরিষ্কার করে দেওয়া উচিত যে এখনো সরকারের পিপিপিএ–এর পরিধি আরো বিস্তৃত করে, তার মধ্যে অনলাইন অন্তর্ভুক্ত করার ইচ্ছে আছে কিনা, বিষয়টি, অনেকবার ইন্টারনেটের স্বাধীনতার প্রতিশ্রুত প্রদান করার এক বাস্তবতায় এক বৈপরিত্যের প্রদর্শন করে।
বাক এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করে, পিপিপিএ-তে এরকম কিছু বিষয় অর্ন্তভুক্ত রয়েছে:
১.পিপিপিএ-এর ৫ নম্বর ধারা অনুসারে, মালয়েশীয় সরকার এখনো সংবাদপত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে অনুমতির ক্ষমতা ধারণ করে। যে কোন আবেদন গ্রহণ বা বাতিল করার একমাত্র ক্ষমতা হচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের, বাতিলযোগ্য যে পারমিটের অনুমোদন/ ইসু করা হয়েছে (যা প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা মতে বছর বছর নবায়ন করতে হবে না), এবং তা ব্যবহার করার আগে কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এই পারমিটের/ অনুমতিপত্রের ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়-এর সিদ্ধান্তের বিষয়ে বিচার বিভাগীয় কোন মূল্যায়নের আশ্রয় গ্রহণ করা হয়নি।
২. পিপিপিএ-এর তিন নম্বর ধারা অনুসারে, প্রকাশনার লাইসেন্স প্রদানের বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণ করে।
৩. পিপিপিএ ৭ নম্বর ধারা অনুসারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশের সকল প্রকার প্রকাশনা নিয়ন্ত্রণ করে ( যার মধ্যে রয়েছে বই, প্রবন্ধ, সঙ্গীত, ছবি, ব্যঙ্গচিত্র, সংবাদ, নোট ইত্যাদি ) এবং যদি তাদের মনে হয় যে উক্ত প্রকাশনা “অগ্রহণযোগ্য” তাহলে তারা তা নিষিদ্ধ করে দিতে পারে।
বর্তমান আইনের ধারায়, অনলাইন প্রচার মাধ্যম পিপিপিএর মাঝে অন্তর্ভুক্ত নয়। আর এ কারণে অনলাইন প্রচার মাধ্যমকে আরো বেশী স্বাধীনতা প্রদান করলে তা জটিল আকার ধারণ করবে এবং সরকারের নীতি এবং ঘোষণার প্রতি বিশ্লেষণ করবে, বেশীর ভাগ সময় তা মন্ত্রী এবং রাজনীতিবিদদের প্রতি অভিযোগ তৈরী করবে।
ফ্রি মালয়েশিয়া টুডের সাংবাদিক আনেসা আলফন্সুস, লিখেছে যে, সরকারে যে ভাবে প্রচলিত প্রচার মাধ্যমের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে ঠিক সে ভাবে অনলাইন প্রচার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা একেবারে অসম্ভব।
বিভ্রান্ত ব্যক্তি সবসময় ভাবতে থাকবে, এখনো ইন্টারনেট হচ্ছে একটা প্রযুক্তি মাত্র, আরেকটা চ্যানেল যাকে অবশ্যই নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা উচিত।
মজার বিষয় হচ্ছে, এবং এই বিষয়ে রোমান্টিক না হয়ে বলতে পারি, অনলাইন প্রচার মাধ্যম হচ্ছে নিয়ন্ত্রণহীন, অথবা সম্ভবত গতানুগতিক প্রচার মাধ্যমের উপর পুনরায় নিয়ন্ত্রণ আরোপের বিষয়।
কেউ যদি তার মাথা থেকে ক্ষমতা কাঠামোয় গণ মানুষের বর্তমান প্রতিনিধিত্বের বিষয় পাল্টে ফেলে- তাহলে দেখা যাবে- যার ইন্টারনেট আছে তারই একটা কণ্ঠস্বর আছে- অনলাইন প্রচার মাধ্যম গণ মানুষের ভূমিকাকে উপলব্ধি করতে পেরেছে, প্রচলিত প্রচার মাধ্যম যেটিকে উপেক্ষা করেছে।
এটা কি সব সময়ের জন্য ভালো? সব সময় এমন কিছু মানুষ আছে , যারা নতুন পাওয়া স্বাধীনতাকে নিশ্চয়তা হিসেবে গ্রহণ করে।
কিন্তু এই সমস্ত বিচ্ছিন্ন ঘটনার উপর আমাদের আইনের মনোযোগ প্রদান করার ফলে তারা অনলাইন প্রচার মাধ্যমের সামগ্রিক চিত্রটি তারা দেখতে পায় না- গণ মানুষের প্রতিনিধিত্বের বেলায় আধুনিক সমাজ ইন্টারনেট যে পুনরায় ভারসাম্য তৈরী করছে সেই বিষয়টি তারা উপলব্ধি করতে পারে না।
অনলাইন প্রচার মাধ্যম নিয়ন্ত্রণের সংবাদে নিজদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরার জন্য অনেকে টুইটারের আশ্রয় গ্রহণ করেছে:
@এনআপিয়েজ প্রিয় @নাজিবরাজাক, অনলাইন প্রচার মাধ্যমের উপর নিয়ন্ত্রণের কোন প্রয়োজন নেই। বরঞ্চ মূলধারার প্রচার মাধ্যম যাদের উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ উঠিয়ে নেওয়া উচিত
@আনুয়ারখারি আসুন আমরা দেখি এই বিষয়ে তুন এম-এর কি বলার আছে। এমএসসির (মালয়েশিয়ার সাইবার এলাকা) সময়গুলোতে তিনি আমাদের এক ভাবে নিয়ন্ত্রণহীন অনলাইন প্রচার মাধ্যমের বিষয়টির নিশ্চয়তা প্রদান করেছিলেন।
@ক্রাইবেবে অনলাইন প্রচার মাধ্যম ছাড়াও, এমএসএম আরো কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে যাচ্ছে, স্বয়ং-নিয়ন্ত্রণ, নৈতিকতার নীতিমালা, এমপিসি। এখন পিপিপিএ বিলুপ্ত করণ। ইতোমধ্যে তাদেরকে হুমকি প্রদান বন্ধ করুন
@হানিমোমো হয়ত অনলাইন প্রচার মাধ্যমের উপর আরোপিত নিয়ন্ত্রণ অযাচিত দাবী এবং নোংরাভাবে অপমান করার ঘটনা কমিয়ে আনবে?
@এসসাথায়া০১ আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সমস্যা কি, যিনি অনলাইন প্রচার মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছেন, যাতে তিনি শেষে প্রচার মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। বাক স্বাধীনতার মত বিষয় এখন কেবল অনলাইনে দেখা যাবে
@জোবোয়ে @স্মেলিক্যাটেমোস তারা যা চায় তার সকল কিছু তারা নিয়ন্ত্রিত করবে, কিন্তু অনলাইন প্রচার মাধ্যম চারপাশে থাকবে এবং এর ব্যবহারকারীরা সব সময় নিয়ন্ত্রণ পাশ কাটানোর উপায় খুঁজে বের করবে!
@ভন হাজরুল কেউ যদি ভাবে যে অনলাইন প্রচার মাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করা একটা অসাধারণ চিন্তা, তাহলে তার পিঠ গাইতি দিয়ে চাপড় দেওয়া উচিত।
কিন্তু সংসদের বর্তমান চলতি অধিবেশনে যতদিন না পিপিপিএ-এর প্রস্তাবিত নতুন সংশোধনী আইন সংসদে উপস্থাপন হচ্ছে, ততদিন কেবল এই ধারনা চলতে থাকবে যে মালয়েশিয়ার প্রচার মাধ্যম জগতে এই নিয়ন্ত্রণ কি অগ্রগতি না পশ্চাৎপদতার লক্ষণ।