চীনে আবার ফেসবুক চালু?

ফেসবুকের সিইও মার্ক জুকারবার্গ আবার চীনে এসেছেন। বেশ কয়েকজন স্থানীয় সাংবাদিক ও নেটনাগরিকেরা তাকে এবং তার বান্ধবী প্রিসিলা চ্যানকে গত ২৭শে মার্চ মঙ্গলবার সাংহাইতে সনাক্ত করেছেন এবং আরো একবার  ইন্টারনেটে আগুনের মতো গুজব ছড়িয়ে পড়ে: সামাজিক মিডিয়ার রাজা চীনে এর পুনরাবির্ভাবের জন্যে কাজ শুরু করছেন?

জুকারবার্গ একে একটি অবকাশ ভ্রমণ বললেও চীন এবং বিশ্বজুড়ে নেটনাগরিকদের এ নিয়ে সন্দেহ আছে।

তারকা চ্যান তার ব্লগ এম.আই.সি. গেজেট  মঙ্গলবারে পোস্ট করেছেন::

এই বিকেলে কিছু চীনা পাপারাজ্জি ফেসবুকের সিইও মার্ক জুকারবার্গ এবং তার চীনা বাগদত্তা’কে সাংহাইতে আবিষ্কার করেছেন, তাই মার্ক জুকারবার্গ চীনে আবার ফিরে এসেছেন! ছুটির ভ্রমণ নাকি ব্যবসায়িক সফর?  ভিতরের গুজব অনুসারে, মার্ক জুকারবার্গ এবং অ্যাপল সিইও টিম কুক (হ্যাঁ! কুকও চীনে!) একটি ব্যক্তিগত জেট বিমানে করে চীনে একসঙ্গে উড়ে এসেছেন।

পশ্চিমের প্রদেশ জিনজিয়াং–এ সংঘটিত দাঙ্গায় অংশ নেয়া জনগণ বিক্ষোভ সংগঠনের জন্যে সামাজিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেছে বলে দেশের কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয়ার পর ২০০৯ সালের মাঝামাঝি থেকে চীনে নিষিদ্ধ হয় ফেসবুকে প্রবেশ।

ফেব্রুয়ারিতে ফেসবুক প্রকাশ করে যে তারা বিশ্বের বৃহত্তম ইন্টারনেট বাজার চীনে আবার শুরু করার সম্ভাবনা পর্যবেক্ষণ করছেন আর তাই বর্তমানে সরকারীভাবে “ছুটির মাঝে” জুকারবার্গ দেশটি পরিদর্শন করেছেন।

সাংহাইবাদী, তোফু মন্ত্রণালয়  এবং টেকনোড–এর মতো অন্যান্য ব্লগও জুকারবার্গের সফর নিয়ে আলোচনা করেছে।

টেকনোড-এ গ্যাং লু লিখেছেন:

এটি সত্যিই মজার। বিশ্বের দু’টি সেরা কারিগরি কোম্পানির প্রতিনিধিত্বকারী দুই মহান ব্যক্তি। দু’জনেই একই সময়ে চীন দেখতে এসেছেন। একজন বেইজিং-এ অন্যজন সাংহাই্তে। একজন ব্যবসার জন্যে, অন্যজন ছুটিতে; একজন  চীনে প্রথমবার, অন্যজন তার দ্বিতীয় ভ্রমণে এবং এমনকি কিছুটা চীনা বুঝেন; একজন বিস্ময়কর দ্রুতগতিতে চী্নে ব্যবসা বাড়াচ্ছেন, অন্যজন প্রায় পুরো সাইবার জগৎ জয় করলেও চীনে অনুপস্থিত। কিন্তু আমি বাজি ধরতে পারি তাদের মনের মধ্যে শুধু একটি শব্দ: চীন, চীন!

বুধবারে চীনে পপক্যাপ গেমস [চীনা ভাষায়] ব্যবস্থাপক লিউ কুন [চীনা ভাষায়] সামাজিক নেটওয়ার্ক সিনা ওয়েইবোতে বলেছেন যে তিনি জুকারবার্গকে বেইজিং-এ আবিষ্কার করেছেন এবং তার কর্মকান্ডে তাকে ছুটির মধ্য রয়েছেন বলে মনে হয়নি:

বেইজিং-এ মার্ক জুকারবার্গ চিহ্নিত।

বেইজিং-এ মার্ক জুকারবার্গ চিহ্নিত। ছবি, লিউ কুন

@Liu KunFacebook CEO 马克.扎克伯格!他离我仅3米的距离。现场实拍。Mark Elliot Zuckerberg!他来北京是解决VPN么?@李菁rekin9 @植物大战僵尸 @赵迅PopCap @ANDY田行智 @蒋涛CSDN @龙伟-大众点评 @宋炜

@ লিউ কুন ফেসবুক সিইও মার্ক জুকারবার্গ! তিনি আমার থেকে মাত্র ৩ মিটার দূরে। দৃশ্যটি থেকে ছবি। মার্ক এলিয়ট জুকারবার্গ! তিনি কী ভিপিএন (ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক)সমস্যা সমাধানের জন্যে বেইজিং এসেছেন? [জিজ্ঞেস করেছেন]: @李菁রেকিন৯ @植物大战僵尸 @赵迅পপক্যাপ@এন্ডি田行智 @蒋涛সি এসডিএন @龙伟-大众点评 @宋炜

চীনে জুকারবার্গের সর্বশেষ সফরটি ঘটেছিলো ২০১০ সালের ডিসেম্বরে এবং সেটাও একটি অবকাশ ভ্রমণ হিসেবে দেখানো হয়েছিল। এছাড়াও তিনি বাইদু, সিনা এবং আলিবাবা’র মতো শীর্ষ বিভিন্ন চীনা ইন্টারনেট কোম্পানি কয়েকবার সফর করেছিলেন

ফেসবুককে বন্ধনমুক্ত হতে দেখার সম্ভাবনা যারা এশিয়ান দৈত্যের মাঝে সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তন দেখতে চান তাদের অনেকের মনে আশা জাগিয়েছে। অনেকেই ধারণা করেন যে চীনের জনগণকে সামাজিক মিডিয়া স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয়ভাবেই এমন ক্ষমতা দিতে পারে যা চীনা কমিউনিষ্ট পার্টি তাদের দিতে অস্বীকার করে। স্থানীয় সামাজিক মিডিয়া ইতোমধ্যে সরকারের তথ্যের উপর নিয়ন্ত্রণকে চ্যালেঞ্জ করতে শুরু করেছে এবং অনেক চীনা নেটনাগরিক বৈশ্বিক সামাজিক নেটওয়ার্কে প্রবেশে আগ্রহী। জুকারবার্গ নিজে বলেছেন যে মিশর বা তিউনিশিয়ায় যেমন হয়েছে তেমনি চীনে ফেসবুক পরিবর্তনের একটি বাহক হতে পারে

১৯শে মার্চ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্ভাবন বিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা  এলেক রস হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ে তার একটি বক্তৃতায় চীন সম্পর্কে কথা বলেছেন। একজন ছাত্র সেন্সরশিপ এবং নিপীড়ন থেকে দূরে থাকার জন্যে চীনা কর্তৃপক্ষের উপর মার্কিন সরকারের চাপ সৃষ্টির চীনা নেটনাগরকদের দাবি প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে রস পুরোপুরি কূটনৈতিকভাবে উত্তর দেন যে ইতিহাস বলে যে চীনে পরিবর্তন আসতে পারে শুধুমাত্র এর নিজস্ব নাগরিকদের থেকে এবং সামাজিক নেটওয়ার্ক সেক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করতে পারে।

জুকারবার্গের চীন সফরে উস্কে দেয়া অনলাইন আলোচনার মনযোগ ইন্টারনেট শিল্প ছাড়াও সেন্সরশিপ, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং ফেসবুককে বন্ধনমুক্ত হতে দেখা বা না দেখার উপরও নিবদ্ধ।

নতুন সম্মিলিত ব্লগ সংশোধিত.নাম-এর উইলিয়াম মস চীনে ফেসবুক পুনঃপ্রবেশের সম্ভাব্য দৃশ্যপট এবং নিয়ামকগুলো কল্পনা করেন এবং একটি টেবিল তৈরী করে তিনি দেখান যে চীন সম্পর্কে কথা বলার মানে হলো রাজনীতি এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা বিষয়ে কথা বলা:

সাধারণ হিসাবটি হলো এখানে শুধু চালানোর একটা সুযোগ পেতে হলে ফেসবুককে হয় শুধু চীনের মূল পরিষেবা ব্যবহারকারীদের জন্যে অথবা মূল পরিষেবা থেকে আলাদা করা পরিবর্তিত একটি পরিষেবার জন্যে বাধ্যতামূলক সেন্সরশীপ নীতি প্রয়োগ করতে হবে। একেও আবার কর্তৃপক্ষের কাছে চীনা ব্যবহারকারীদের তথ্য সমর্পণে প্রস্তুত থাকতে হবে, যদি অনুরোধ করা হয়।

এম.আই.সি. গেজেট-এ তারকা চ্যান-এর পোস্ট আরো বলেছে:

এবং ধন্যবাদ সব চীনা মাইক্রো ব্লগ সিনা ওয়েইবো [চীনা ভাষায়] ব্যবহারকারীদের যারা সমস্ত ছবিগুলো বন্দী করেছেন![…] উল্লেখ করা দরকার যে সাংহাইতে থাকাকালে জুকারবার্গ তার ফেসবুক একাউন্ট আপডেট করতে পারবেন না যদি না তিনি একটি ভিপিএন ব্যবহার না করেন। ধন্যবাদ চীনের মহা অগ্নি প্রাচীর (ফায়ারওয়াল)

ফেসবুক অবরোধ করা হলেও – সোশালবেকার-এর তথ্য অনুসারে – চীনের প্রায় ৪ লক্ষ ৫০ হাজার ইন্টারনেট ব্যবহারকারী প্রক্সি, টানেল অথবা ভিপিএন সফটওয়ার দিয়ে অগ্নিপ্রাচীরটি (ফায়ারওয়াল) অতিক্রম করে সামাজিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেন। সম্ভবত অভ্যাসটি খুব তাড়াতাড়ি বা আদৌ পরিবর্তন হবে না।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .