‘আর্থ আওয়ার’ বিশ্বব্যাপী প্রকৃতি তহবিল (ডাব্লিউডাব্লিউএফ) আয়োজিত একটি বিশ্বব্যাপী সচেতনতা অনুষ্ঠান, যা প্রতি বছর মার্চ মাসের শেষ শনিবারে পালিত হয়ে থাকে। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে এই দিনে গৃহস্থালী এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে একঘণ্টার জন্যে তাদের অপ্রয়োজনীয় আলোগুলো নিভিয়ে রাখতে অনুরোধ করা হয়। ২০১১ সালের আর্থ আওয়ারে বিশ্বব্যাপী ১৩৫টি দেশের ৫,২০০-এরও বেশি শহর তাদের আলো নিভিয়ে রেখেছিলো এবং এবছর ঢাকা, বাংলাদেশ–এর মতো আরো অনেক শহর যোগ দিচ্ছে।
দক্ষিণ এশিয়া জ্বালানী বুভুক্ষু অনেকগুলো উন্নয়নশীল দেশের অঞ্চল। ভারতীয় এই উপমহাদেশে কোটি কোটি জনগণের বিদ্যুৎ সংযোগ নেই এবং জ্বালানী ও শক্তি ক্ষেত্রটি দুর্নীতি এবং অদক্ষতা সমস্যায় জর্জরিত। সরবরাহের তুলনায় চাহিদা অনেক বেশি হওয়ায় অনেক দেশই বিদ্যুৎ বিতরণ নিয়ন্ত্রণ করতে লোডশেডিং (পরিকল্পিতভাবে বিদ্যুৎ বন্ধ) ব্যবহার করে।
প্রতিদিনের পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে নেপাল, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে ৪ থেকে ১২ ঘণ্টা লোডশেডিং হয়ে থাকে। আর্থ আওয়ার পালনের বিষয়টি নিয়ে নেটনাগরিকেরা সামাজিক মিডিয়াতে কথা বলেছে। কেউ কেউ আর্থ আওয়ার পালনের অনুরোধ করলেও অন্যেরা একে এটাকে একটা কৌতুক ছাড়া অন্যকিছুই মনে করছেন না। এই অঞ্চল থেকে করা নিচের টুইটগুলোতে তাদের মনের কথার প্রতিফলন ঘটেছে:
বাংলাদেশ:
@কাজীআহাদকাদের (কাজী আ. কাদের): “@ডেইলিষ্টারনিউজ বাংলাদেশ আজ রাতে প্রথমবারের মতো আর্থ আওয়ার পালন করবে…” এরকম গালভরা নাম রাখার অনেক আগে থেকেই আমরা এটা করছি।
@শুভ৬৬৬ (শুভ রশীদ): #বাংলাদেশ যে বিশ্বের অন্যতম একটি পরিবেশ সচেতন দেশ তাতে কোন সন্দেহ নেই। আমরা প্রতিদিন ১২বার আর্থ আওয়ার পালন করি! #ব্ল্যাকআউট
@ইরতেজা (ইরতেজা আলী): আজকে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বাংলাদেশে বিদ্যুতের ১২ঘণ্টা লোড শেডিং করে আর্থ আওয়ার ২০১২ পালন করতে যাচ্ছে।
ভুটান:
@অমচ্যাং (অম চ্যাং): আজকে আমার একটা আর্থ আওয়ার হয়েছে এবং গতকালকেও একটা আর্থ আওয়ার হয়েছিল। এবং গতকালের আগের দিনেও। বিপিসি’র বিদ্যুৎ কর্তনকে ধন্যবাদ, আমি প্রতিদিনই একটা #আর্থআওয়ার উপভোগ করি! #ভূটান
ভারত:
@সুয়োগ (সুয়োগ গাইধানি): ভারতে আর্থ আওয়ার একটা নির্মম কৌতুক।
@মাল্লুজাত (রমেশ মেনন): আর্থ আওয়ার উদযাপন করতে পারার মতো ভারতের ৭২%-এর কোন বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। বাকিদের মধ্যে ১% তাদের আলো বন্ধ রেখে জনসংযোগ এবং অভিনন্দন সূচক বার্তাগুলো পাঠিয়েছেন।
@রিয়েলভারতকুমার (ভারত কুমার): ভারতের বিশেষ করে আমি যেখানে আছি সেখানে আমাদের প্রতিদিনই আর্থ আওয়ার হয়। তাই আপনারা যারা এক ঘণ্টার জন্যে আলো বন্ধ করেছেন, আমরা সেটা করি প্রতিদিন।
@বীরেনবি (বীরেন ভাণ্ডারি): বিশ্বের মানুষকে এক ঘণ্টার আর্থ আওয়ারের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হতে হবে না, ভারত পুরোটাই করে ফেলছে!! এখানে #নোবিজলী।
নেপাল:
@আয়ুশবিস্তা (আরন): দয়া করে আর্থ আওয়ারের জন্যে আপনাদের আলো বন্ধ করে দিন!! চিন্তা করবেন না! আমাদের তো লোডশেডিং আছেই। নেপাল (চিরকালের জন্যে আর্থ আওয়ার)!!
@হার্ডফায়ার (অবিনাশ কুণ্ডালিয়া): নেপালে আমরা প্রতিদিনই আর্থ আওয়ার উদযাপন করি .. : পি
@সিণ্ডারেলাম্যান২৩ (সুমনকে রাজভাণ্ডারি): লোডশেডিং-এর কারণে #নেপাল বোধ হয় সবচেয়ে বড় আর্থ আওয়ার সমর্থক 🙂
@নাজুশ্রেষ্ঠা (নাজু শ্রেষ্ঠা): ঘটনাক্রমে আপনার আজ রাতে যদি লোডশেডিং না থাকে আর্থ আওয়ার সমর্থনে রাত ৮:৩০ থেকে ৯:৩০ পর্যন্ত আপনার আলো এক ঘণ্টার জন্যে বন্ধ রাখুন। #নেপাল @টিএফসিনেপাল #এফবি
পাকিস্তান:
@আদনানরাসুল (আদনান রাসুল): আমাকে বলতে হবে এই… বছরে কিছু নির্দিষ্ট কর্পোরেশন আর্থ আওয়ার উদযাপন করতে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করছে .. আমাদের এটা ঘটছে প্রতি একঘণ্টা পর পর .. #পাকিস্তান
@আজীমউহাসান (আজীমুল্লাহ হাসান): তাহলে #পাকিস্তানে রাত ৮:৩০ থেকে ৯:৩০ পর্যন্ত আর্থ আওয়ার উদযাপিত হবে। ভাগ্যক্রমে সে সময়টাতে #করাচী’তে আমার এলাকায় কোন আলো থাকবে না : পি
@মাহামআলি০৫ (মাহাম আলি): পাকিস্তানও কী আর্থ আওয়ার পালন করবে? ইতোমধ্যে আমরা প্রতিদিন কমপক্ষে ৬-৮ ঘণ্টা আর্থ আওয়ার পালন করছি।
পরিবর্তনেরজন্যেবলুন একটি ব্লগ পোস্টে লিখেছে:
আর্থ আওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং অবশ্যই কারো এর বিরুদ্ধে লেখা উচিৎ নয়। তবে এটা কী সারাদেশে আমাদের ভোগ করা প্রতিদিনের লোডশেডিং-এর চেয়ে বড় কোন বিষয়? এটা কী বিদ্যুতের অনুপস্থিতিতে শিল্পে আমাদের সবার কোটি কোটি টাকা ক্ষতির চেয়ে বড় কোন সমস্যা আরো গভীরতর কোন বিষয়? এটা কী বিদ্যুৎ না পাওয়ার কারণে স্থানীয় কোন হাসপাতালে বিদ্যুতের দেখা না মেলার কারণে আপৎকালীন জেনারেটরে নির্ভর করে রোগীর অপারেশনের চেয়ে গভীরতর কোন বিষয়? আমি মনে করি না এটা এরকম অসংখ্য দৃশ্যের চেয়ে গভীরতর কিছু নয়, কারণ এটা আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে বসবাসকারী জনগণের জন্যে নয়।