গত দশক থেকে, “গাজা” এবং “সঙ্কট” নামক দুটি শব্দ প্রায় পরস্পরের পরিপূরক হয়ে উঠেছে। সঙ্কটের সীমা যুদ্ধ থেকে শুরু করে সামরিক হামলা এবং অভিযান, থেকে সামরিক দখলদারিত্ব পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে এখন তা বিদ্যুৎ ও জ্বালানী সঙ্কটে এসে ঠেকেছে।
চলতে থাকা ইজরায়েল-এর অবরোধের কারণে গাজা ভূখণ্ড বাড়তি এক সমস্যা যুক্ত হল, সেটি হচ্ছে জ্বালানী তেল সঙ্কট, গাজায় ইজরায়েল কর্তৃক সরবরাহকৃত সীমিত পরিমাণ জ্বালানী তেল পাওয়া যাচ্ছে যা অত্যন্ত চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। জ্বালানী তেলের এই সঙ্কট, বিদ্যুতের সঙ্কট সৃষ্টি করেছে, যেহেতু বিদ্যুৎ কোম্পানী তাদের মূল জেনারেটার জ্বালানী তেলে চালিয়ে থাকে। হাসপাতালের বিকল্প বিদ্যুৎ উৎপন্নকারী জেনারেটার, বেকারী, এবং পাম্প ছাড়াও বাসাতেও জেনারেটার ব্যবহার হয়।
ফিলিস্তিনি নাগরিক জ্বালানী তেলে পাত্র পূর্ণ করার জন্য অপেক্ষা করছে। ছবি মাজদি ফাতহির, কপিরাইট ডেমোটিক্সের (২১/০৩/২০১২)।
গাজার নাগরিকরা তাদের এই পরিস্থিতির বিষয়ে মন্তব্য করেছে (যখন বিদ্যুৎ ছিল তখন তারা এই সব মন্তব্য করে):
@ওমার_গাজা: জ্বালানী সঙ্কটের কারণে গাজা এখন এক প্রচণ্ড অন্ধকারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে! বেকারী, স্কুল, দোকান, গাড়ি, ট্যাক্সি; জীবন শীঘ্রই থেমে যাবে
এই এলাকাটি যে বিদ্যুৎ সঙ্কটের মুখে পতিত হয়েছে তার প্রথম শিকার হচ্ছে মোহাম্মেদ আল হেলুয় নামের সাত মাস বয়সের এক শিশু, জ্বালানী তেল ফুরিয়ে যাওয়ার কারণে তার কৃত্রিম শ্বাস প্রশ্বাস যন্ত্রটি বন্ধ হয়ে গেলে উক্ত শিশুটি মৃত্যু বরণ করে।
@লেইলাযাহরা:জ্বালানীর বিষয়ে আমরা যেমনটা টুইট করেছিলাম, # গাজার হাসপাতাল সমূহকে রোগীদের জীবন বাঁচানোর জন্য জ্বালানী তেল প্রদানে অস্বীকার করা হচ্ছে, যে জ্বালানী তেলের মাধ্যমে তারা তাদের রোগীদের টিকিয়ে রাখতে সক্ষম# গাজা৪(ফর)গাজা
@LuluDeRaven:تخيلوا لو اسرائيل ضربت غزة الان في هاد الوضع؟ لا المستشفيات تقدر تتحمل ولا في وقود لسيارات الاسعاف ولا المطافي ولا اشي !!!
কল্পনা করুন, এই পরিস্থিতিতে ইজরায়েল গাজার উপর হামলা চালালো? হাসপাতালের আর পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ক্ষমতা নেই, অ্যাম্বুলেস বা দমকল বাহিনীর গাড়ি অথবা কোন কিছুর জন্য কোন জ্বালানী নেই!
সামাজিক প্রচার মাধ্যমে বিদ্যুৎ এবং/ অথবা জ্বালানী তেলের সঙ্কট সবচেয়ে জনপ্রিয় বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ফেসবুক স্ট্যাটাসে এর জন্য বিদ্যুৎ কোম্পানিকে অভিশাপ প্রদান করা হচ্ছে, অথবা বিদ্যুৎ আসায় খুশী হয়ে টুইট করা, একটি প্রথায় পরিণত হয়েছে।
@Ibtihal4Gaza: ما في أحلى انك تصحى تلاقي في كهربا في البيت #غزة #أشياء_نادرة
জেগে উঠে খুব ভালো লাগল এবং আবিষ্কার করলাম যে বাড়ীতে বিদ্যুৎ আছে #গাজা #রেয়ারথিং
বিদ্যুৎ কোম্পানী গাজা ভূখণ্ডকে বিভিন্ন এলাকা এবং কেন্দ্রে ভাগ করেছে, এবং প্রতিটি এলাকায় পর্যায়ক্রমে ছয় ঘন্টা করে বিদ্যুৎ প্রদান করা হচ্ছে।
ব্লগার রান্দা আবু রামাদান একটি ব্লগপোস্ট লিখেছেন, যেখানে তিনি গৃহে বিদ্যুৎ পাওয়ার ভিত্তিতে গৃহকর্তার চরিত্র বিশ্লেষণ করেছে:
إذا بتيجي عندك من 12 بالليل لـ 6 الصبح: انت شخص طيب ومضحوك عليك, وبتصدق أي كلمة بحكوهالك, لأنو في ناس تانية بتيجي عندهم الكهربا في مواعيد أحسن من هيك, وانت يا ويلي عليك معطيينك موعد عاطل بنفعش لإشي
যদি আপনি মাঝরাত থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ পান, তাহলে আপনি একজন দয়ালু ব্যক্তি, কিন্তু একসাথে আপনি বোকা এবং আপানাকে ছলনায় সহজে ভোলানো যায়। অন্য নাগরিকরা ভালো সময়ে বিদ্যুত পায়, কিন্তু আপনি খারাপ একটা সময়ে বিদ্যুৎ পান, যে সময়ে এটা কোন কাজে লাগে না!
সবচেয়ে বড় কথা, নাগরিকদের বিদ্যুৎ যাওয়া আসার হিসেবে তাদের দৈনন্দিন কাজ গুছিয়ে নেবার উপায় বের করেছে। আল জাজিরার টক-এর সাংবাদিক ইউসেফ আবু অয়াতফা লিখেছে কি ভাবে তার বন্ধুর মা দৈনন্দিন কাজের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সঙ্কটের দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে:
أما والدته فتضطر إلى أن تؤجل جميع أعمالها المنزلية إلى ما بعد منتصف الليل حتى تقوم بغسيل ملابس العائلة، حتى تتحول في ذات الوقت إلى طهي الطعام الذي يتطلب استخدام بعض الأدوات الكهربائية.
জামা কাপড় ধোয়া এবং রান্নার জন্য আমার বন্ধুর মাকে, তার দৈনন্দিন গৃহস্থালী কাজ মাঝরাত পর্যন্ত স্থগিত রাখতে হচ্ছে, কারণ এই দুটি কাজের জন্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হয়।
জ্বালানী সঙ্কট যত তীব্র হচ্ছে, ততই গাজা ভূখণ্ডে বিপুল পরিমাণ গ্যাসের সিলিন্ডার এসে জমা হচ্ছে। ছবি আহমেদ দীব-এর। কপিরাইট ডেমোটিক্সের (০৫/ ০৩/২০১২)।
একটি টুইটে এর সারাংশ তৈরী করা যায়, যা কিনা ফাদি লিখেছে:
@chefadi90: تويتر بعلمنا نختصر افكارنا في 140 حرف , وغزة علمتنا كيف تختصر كل حياتك في 6 ساعات بتيجي فيهم الكهرباء كل يوم
টুইটার ১৪০টি অক্ষরে আমাদের চিন্তার সারসংক্ষেপ তৈরী করতে বলে, এদিকে গাজা আমাদের শিক্ষা দেয় কি ভাবে আমাদের সারা জীবনকে বিদ্যুৎ-থাকা ছয় ঘন্টার মাঝে নিয়ে আসতে হয়, যে পরিমাণ বিদ্যুৎ আমরা প্রতিদিন পেয়ে থাকি।
নুর আবেদ, এক স্কুল শিক্ষক, তিনি টুইট করেছে:
@NourGaza: أطفالي في المدرسة: أجدُّ على كراستهم المهترئة آثاراَ من الشمع المنسكب, كتبوا واجبهم على ضوء الشمعة!
স্কুলে যারা আমার ছাত্রছাত্রী: যখন আমি তাদের খাতায় গলিত মোম আবিষ্কার করি, আমি উপলব্ধি করি মোমবাতির আলোয় তারা তাদের বাড়ির কাজ করেছে।
এবং সাম্প্রতিক এক জরিপ দেখাচ্ছে যে গাজার ৪৮ শতাংশ নাগরিক জ্বালানী সঙ্কটের জন্য তাদের স্থানীয় সরকারকে দায়ী করছে। টুইটারে ইজ্জ শাওয়া বলছে:
@izzshawa:الحكومة التي يتطلع لها الشعب في غزة هي التي لا تصدر الأزمات الى غيرها ولكن تبذل قصارى جهدها لحلها وان لم تقدر تعمل على تخفيف حدتها
গাজার জনতা এমন এক সরকারে জন্য অপেক্ষা করছে যে কিনা নিজের সমস্যার জন্য অন্যকে দোষারোপ করবে না, তার বদলে তারা সমস্যা সমাধানের সর্বোত্তম চেষ্টা করবে, অথবা যদি তারা তা সমাধান করতে না পারে, তাহলে তারা পরিস্থিতিকে সহজ করবে।
ব্লগার ইয়াসের আসোরও, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের অভিযোগ বিনিময়ের বিষয়টি খেয়াল করেছে, যেমনটা সে তারব্লগে লিখেছে:
لما يعملوا مقابلة مع مسؤل من الشركة ويسألوه عن السبب بيقول : الاحتلال يشدد حصاره ، ولما نسأل قيادي في حكومة غزة ؟ بيقول : سلطة رام الله محتكرة الأموال وبتعمل على قطع الكهربا عن غزة
যখন আমরা বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করলাম কেন এমনটা হচ্ছে, তখন সে বলল: ইজরায়েল, গাজায় তার দখল জোরদার করেছে। যখন আমরা গাজার একজন সরকারি কর্মকর্তা বিষয়টি সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলাম তখন সে বলল: রামাল্লাহর সরকার [ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ] একচেটিয়া ভাবে সব টাকা নিয়ে নিচ্ছে এবং এটাই বিদ্যুৎ সঙ্কটের কারণ।
যদিও গাজার সরকারি কর্মকর্তারা, নিজেদের রক্ষায় বেশ কয়েকটি ঘোষণা প্রদান করেছে, দাবী করেছে তাদের বিরুদ্ধে এক ভয়ানক “ষড়যন্ত্র” পরিচালনা করা হচ্ছে, অনেকে যা বিশ্বাস করতে পারছে না। ব্লগার এবং ফটোগ্রাফার খালেদ শাফি তার ব্লগ পোস্টে লিখেছে:
لا أجد الوقت الكافي لأتابع تصريحات هنا واتهامات هناك، أصلاً لا أجد الكهرباء لأسمع وجهة نظركم الكريمة، معظم يومي خارج بيتي إما في انتظار المواصلات أو في معركة الوقود أو مناظرة المخبز الصباحية
এখানে ও সেখানে যে সমস্ত অভিযোগ করা হচ্ছে, তার হিসেব রাখার সময় আমি পাচ্ছি না। ঘটনা হচ্ছে, [টিভিতে] আপনাদের যুক্তি প্রদর্শনের সময় আমার ঘরে বিদ্যুৎ থাকে না। আমি দিনের বেশীর ভাগ সময় বাইরে কাটাই, হয় আমি পরিবহনের অপেক্ষায় থাকি, নয়তো জ্বালানী সংগ্রহে যুদ্ধ করি (পেট্রোল পাম্পে), অথবা সকাল বেলায় বেকারীতে গিয়ে তর্কে লিপ্ত হই।
জ্বালানী সঙ্কট নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে, (এবং সম্ভবত এক ধরনের থেরাপি দেওয়ার উদ্দেশ্যেও) ফিলিস্তিনি একদল ব্লগার একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যার নাম “ জ্বালানীর জন্য ব্লগ” (আরবী ভাষায়)। আগামীতে এ বিষয়ে আরো তাজা সংবাদ প্রদান করা হবে।