ইয়েমেনঃ মর্যাদাপূর্ণ শুক্রবারকে স্মরণ করা

এই প্রবন্ধটি ইয়েমেন বিক্ষোভ ২০১১-এর উপর করা আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ

শুক্রবার, ১৮ মার্চ তারিখটি ইয়েমেনের ইতিহাসে এক বেদনাদায়ক দিন, এটি এমন এক দিন যা ইয়েমেনের নাগরিকদের স্মৃতিতে গেঁথে থাকবে, এই দিনটি ফ্রাইডে অফ কারমা, মানে মর্যাদাপূর্ণ শুক্রবার নামে পরিচিত। এই দিনটিতে নিরাপত্তা বাহিনীর দেশটির রাজধানী সানার চেঞ্জ স্কোয়ারে এক নিরাপত্তা দেওয়াল তৈরী করে এবং সেটিকে গাড়ির চাকা এবং পেট্রোল দিয়ে পূর্ণ করে রাখে এবং শুক্রবারের নামাজের পরপরই বিক্ষোভকারীদের রাস্তা বন্ধ করার জন্য তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়, যেহেতু [প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আলি আবদুল্লাহ] সালেহ-এর সমর্থকরা ছাদে অবস্থান গ্রহণ করে, তাদের সহযোগীরা এবং সমর্থকদের বাড়ী থেকে বিশাল এই বিক্ষোভের উপর গুলি চালানো হয়, যার ফলে এক অভূতপূর্ব ভয়ঙ্কর এবং নির্মম রক্তপাতের ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী প্রচারমাধ্যম এবং চিকিৎসা কর্মীদের মতে, সে দিন ৫২ জন নাগরিক নিহত হয় এবং প্রায় ১০০-এর মত নাগরিক আহত হয়। এই দিনটি ছিল ইয়েমেনের বিপ্লবের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ দিন, যে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অনেক নাগরিক, রাষ্ট্রনায়ক(স্টেটসম্যান), কূটনীতিবিদ এবং সৈনিক, পক্ষ ত্যাগ করে বিক্ষোভকারীদের সাথে যোগ দেয়।

ফ্রাইডে অফ কারমারা এই বেদনাদায়ক ঘটনা ক্যামেরাম্যানদের ক্যামেরা এবং অজস্র প্রত্যক্ষদর্শীর চোখে ধরা পড়েছিল, যা কিনা যথাযথ শিরোনামের একটি শক্তিশালী তথ্যচিত্র “মর্যাদার কোন দেওয়াল” নেই( “ কারমা হ্যাজ নো ওয়াল”) –এ তুলে ধরা হয়েছে। সানা চেঞ্জ স্কোয়ারের যারা প্রাণ ইয়েমেনের সেই তরুণদের এক যৌথ উদ্যোগ, যা কিনা সফল ভাবে দর্শকদের আবেগকে ধারণ করেছে। ইয়েমেনের নারী পরিচালক সারা ইসহাক -@ইয়েমইয়োজিনি, সুন্দর ভাবে এই তথ্যচিত্রের নির্দেশনা প্রমাণ করেছে।
এই তথ্যচিত্রের দুটি খণ্ড আপলোড করেছে, অফিসিয়ালসুহাইয়ালটিভি:
[সতর্কতা: ভয়াবহ গ্রাফিক উপাদান:]
প্রথম খণ্ড
http://www.youtube.com/watch?v=i04i8u_koFM
দ্বিতীয় খণ্ড
http://www.youtube.com/watch?v=BTyxtSemoY0

যেমনটা এই তথ্যচিত্র সম্বন্ধে আমি আমার ব্লগ পোস্টে বর্ণনা করেছিলাম:

এটি একটি অত্যন্ত মানবিক বার্তা প্রদান করা তথ্যচিত্র, যা দুর্দশার অজস্র চিত্র তুলে ধরে, ইয়ামেনী বিপ্লবে নাগরিকদের যন্ত্রণা এবং আত্মত্যাগের বিশালতাকে প্রকাশ করে, বিপ্লব এবং দাবীর প্রতি সকল ইয়েমেনী নাগরিকদের একাগ্রতা এবং দৃঢ় প্রতিজ্ঞাকে স্পষ্ট করে। সর্বোপরি, শাসকের মানবতার বিরুদ্ধে অজস্র নির্মম অত্যাচার এবং অপরাধের ঘটনায় এই ভিডিও অপরাধ প্রমাণের একটি শক্তিশালী প্রমাণপত্র।

মার্চ মাসের শুরুটাই হয়েছে এক মর্যাদার মিছিল দিয়ে, যেখানে পরিবর্তন এবং স্বাধীনতার দাবী জানানো হয়েছিল, সেই মিছিল এক গণহত্যার ঘটনার মধ্যে দিয়ে শেষ হয়, এবং এতে বেদনাদায়ক ভাবে উপসাগরীয় দেশসমূহের সংস্থা জিসিসির উদ্যোগে গ্রহণ করা চুক্তির ইতি টানা হয় এবং বাকিটা ইতিহাসে পরিণত হয়।

এদিকে, ইয়েমেনী নাগরিকরা জীবনহানির জন্য বেদনাদায়ক এই দিনটিকে স্মরণ করছে এবং এই বিপ্লবে যা অর্জিত হবার কথা ছিল, তা হয়নি। ইয়েমেনের নাগরিক টুইটারে সমবেদনা প্রকাশ করছে।

@সামারনাসের টুইট করেছে:

# মার্চ ১৮ নামক তারিখটি ইতিহাসে ধরে রাখা হবে। এই দিনটিকে স্মরণ রাখা হবে এই কারণে যে স্বাধীনতার আহ্বান জানানোর ফলে আমাদের নাগরিকদের অকাতরে জীবন দিতে হল। #ফ্রিডম

ইয়েমেনের ফটোগ্রাফার আবদুল রাহমান জাবের তার ক্যামেরার চোখ দিয়ে ধারণ করা এই বেদনাদায়ক দিনের একগুচ্ছ ছবি টুইট করছে:

@আরজাবের:

১৮ মার্চে সানার ছবি। স্মৃতির ছবি……এমন এক স্মৃতির অংশ যা ভুলে যাওয়া যাবে না। ১৮+http://www.flickr.com/photos/someart/sets/72157627747752035/show/ #ইয়েমেন

@আরাহানাসের টুইট করেছে:

আজ #ইয়েমেনে -৫২ জন নাগরিকের মৃত্যুতে শোকাচ্ছন্ন কারণ তারা স্বাধীনতা রক্ষা করতে এবং পরিবর্তন চেয়েছিল।#ইয়েমেন

সানায় আজ খারাপ আবহাওয়া সত্ত্বেও, তরুণ এবং বৃদ্ধ, নারী এবং শিশু, মার্চ ১৮ কারমা নামক গণহত্যা দিবসের প্রথম বার্ষিকীর স্মরণে ৬০ তম সরণিতে একত্রিত হয়েছিল।

@ ইয়েমেন_আপডেট টুইট করেছে:

#সানায় ভারী বালি/ধুলি ঝড় সত্ত্বেও, কারমা দিবসের স্মরণে হাজার হাজার নাগরিক ৬০ তম সরণিতে এসে জড়ো হয়

@ইসিহামাজাহতাশ হয়ে টুইট করেছে:

# মার্চ ১৮-তে ৫০ জন তরুণকে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে এবং খুনীরা আমাদের চোখে ধরা পড়েছে! কিন্তু এখনো তাদের নাম জানা যায়নি#ইয়েমেন

@আরাহানাসের দুঃখের সাথে জিজ্ঞেস করেছে:

#জিসিসি চুক্তি গ্রহণ করা এবং #সালেহকে দায় মুক্তি প্রদান করায়, নিহত এই ৫২ জনকে আমরা কি জবাব প্রদান করব।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী সালেম বাসেনদাওয়াহ কারমা দিবসে বর্ষপূর্তিতে শহীদদের পরিবারের কল্যাণের জন্য ৫০ মিলিয়ন রিয়াল প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন। (ভিডিও আপলোড করেছে বেলাকুদ)।

এই দিনে এবং সারা বছর ধরে চলতে থাকা বিপ্লবের শহীদরা যে পরিবর্তনের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিল তা অর্জন হয়নি এবং ন্যায় বিচার সাধিত হয়নি, এমনকি কি এক বছর পরেও এই সরকারের আচরণে, ইয়েমেনী নাগরিকরা যে সমাধান চেয়েছিল তা প্রতিফলিত হচ্ছে না।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .