জানুয়ারি ২০১২ সালে বাংলাদেশী গবাদিপশু ব্যবসায়ীর উপর ভারতীয় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) বর্বরতার একটি ১২ মিনিট দীর্ঘ সেন্সরবিহীন ভিডিও (সতর্কীকরণ: গ্রাফিক উপাদান) ইন্টারনেটে ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমে এই ভিডিওটি আপলোড করে মাসুম নামের একটি ভারতীয় মানবাধিকার সংস্থা। এই ভিডিওটি বাংলাদেশীদের দ্বারা ব্যাপকভাবে নিন্দিত হয়।
বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার রিপোর্ট অনুসারে গত দশ বছরে ভারতীয় বিএসএফের হাতে এক হাজারের বেশি বাংলাদেশী নিহত হয়েছে যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্বারা নিন্দিত হয়েছে।
ভিডিওটি প্রকাশের ব্যাপারে ভারতীয় প্রচার মাধ্যম দ্রুত পাকিস্তানের দিকে আঙ্গুল তুললে উত্তাপ আরো বেশি ছড়িয়ে পড়ে। সচলায়তনের হিমু বক্রোক্তি করেন [বাংলা ভাষায়]:
কিন্তু আনন্দবাজারের রিপোর্টে বিএসএফের এই মারধরের সমালোচনার কোনো গন্ধ নেই, তার ভিডিও ছড়িয়ে পড়া নিয়েই তাদের যত মাথাব্যথা।
তিনি [বাংলা ভাষায়] বলেছেন:
আমাদের দেশের লোককে বিএসএফ এভাবে পেটায় বাংলাদেশীদের ব্যাপারে তাদের সামাজিক ধারণা, প্রশিক্ষণ, নির্দেশনা আর অভিজ্ঞতার ওপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে। বিএসএফ বাংলাদেশীদের সমপর্যায়ের মানুষ জ্ঞান করে না। পৃথিবীতে বহু বড় দেশের সাথে ছোটো গরীব দেশের সীমান্ত রয়েছে, সেখানে সীমান্ত রক্ষীরা কিশোরদের গুলি করে মারে না, যুবকদের ন্যাংটা করে পিটায় না। এই মার বিএসএফ গরুচালানীদের দিচ্ছে না, এই মার ভারতের আমলাযন্ত্র দিচ্ছে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নাগরিককে। [..] এই পীড়নের পেছনে সবচেয়ে বড় যে চালিকাশক্তি, সেটা যত না ঘৃণা, তারচেয়ে বেশি তাচ্ছিল্য।
ব্লগার ধূসর গোধুলি [বাংলা ভাষায়] একটি আর্কাইভ সম্পর্কে বলেন যেখানে বিএসএফের সকল নৃশংসতা ক্রমিকভাবে নথিবদ্ধ হচ্ছে। ব্লগার উল্লেখ করেন যে ভারতীয় এবং বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষের দাবিকৃত মৃতের সংখ্যা ভিন্ন ভিন্ন। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর উদ্ধৃত প্রকৃত সংখ্যা আরো অনেক বেশি।
গুলি বন্ধ হবে না-সাম্প্রতিককালে বিএসএফ প্রধানের মন্তব্য বাংলাদেশীদের মধ্যে অনেক ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। তাই নেট নাগরিকরা সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বন্ধে একটি প্রচারণা আরম্ভ করবে বলে ঠিক করেছে। ব্লগার হিমু লিখেছেন [বাংলা ভাষায়]:
মার্চ ১ হোক আমাদের ভারত বনধের দিন। এই দিন আমরা ভারতের কোনো জিনিস কিনবো না, ভারতের কোনো সেবা নেবো না, ভারতের কোনো চ্যানেল দেখবো না। আগের আটত্রিশ দিন আসুন আমরা এই ডাক ছড়িয়ে দিই, সবাইকে জানাই। পরিচিত সবাইকে বলি, নিজেদের আত্মসম্মানের কথা স্মরণ করিয়ে দিই। আমরা কুকুর নই, আমরা মানুষ। আমাদের মানুষের মর্যাদা দিতে হবে।
অন্য একটি পোস্টে হিমু ব্যাখ্যা করেন [বাংলা ভাষায়] বর্জনটি কেন প্রয়োজন:
এই কর্মসূচি সীমান্তে বাংলাদেশী নাগরিকদের ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী কর্তৃক নির্বিচার হত্যা ও নির্যাতনের প্রতিবাদ হিসেবে পালিত হচ্ছে।
[..] প্রশ্ন উঠতে পারে, আমরা অল্প কয়েকজন মানুষ এই কর্মসূচি পালন করলে ভারতের কী এসে যাবে? [..] এর উত্তর হচ্ছে, এই বর্জন কর্মসূচিতে আমরা যেন একদিনেই অভীষ্ট লাভের স্বপ্ন না দেখি।[..] এই বর্জন আমাদের হাতে একটি শান্তিপূর্ণ কিন্তু শক্তিশালী অস্ত্র, এর নিয়মিত চর্চা এবং প্রচার আমাদের শক্তিবৃদ্ধি করবে, এবং ভারতের রাজনীতিক ও আমলাযন্ত্রের কাছে ক্রমশ শক্তিশালী বার্তা পৌঁছাবে।
মুক্তি ব্লগ মনে করেন না যে এই ধরনের বয়কট সত্যিই ভারতীয় ব্যবসায়ীদের দ্বারা বিএসএফকে শৃঙ্খলায় আনার ব্যাপারে ভারতীয় সরকারকে সত্যিকারভাবে যথেষ্ট প্রভাবিত করতে পারে। তারপরও এই ব্লগার বলেন:
হুম্ম্, আমি মনে করি অন্যান্যদের মতো কিছু মানুষ এখনও বিশ্বাস করতে থাকবে যে ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতি প্রতিষ্ঠানটি সবসময়ই বাংলাদেশকে অধস্তন করে রাখার ষড়যন্ত্র করে। কিন্তু আরো বেশি বাস্তববাদী মানুষের কাছে এই ভারতীয় পণ্য বর্জনটির প্রতীকি ছাড়া অন্য কোন প্রভাব সীমিত।
কিন্তু তাই বলে এই সক্রিয়তার পিছনের শক্তি এবং আবেগকে খাটো করে দেখা উচিত নয়। ব্লগারদের শুরু করা এই ধরনের নাগরিক সক্রিয়তা প্রকৃতপক্ষেই একটি পার্থক্য সূচিত করতে পারে।
উপরের পোস্টটির একটি মন্তব্যে [১২] দিগন্ত তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন:
বিএসএফ যা তৈরী করেছে তাকে আমি বিশ্বের বৃহত্তম চাঁদাবাজির র্যাকেট বলতে পারি। এটা বন্ধ করার একমাত্র উপায় হল ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে গবাদি পশুর ব্যবসাকে বৈধ করে দেয়া। [..]
ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন সামহয়ারইনব্লগ.নেট-এ বয়কটের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেছেন উগ্র জাতীয়তাবাদী চেতনার কারণে নয়, মানবতার কারণেই মানুষের এত যোগ দেয়া উচিৎ। তিনি ভারতীয়দের আহ্বান জানান: :
ভারতীয় নাগরিক বন্ধুদের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি, অবিলম্বে মানবতাবিরোধী এইসকল কর্মকান্ড বন্ধ করতে আপনারা সোচ্চার হন। আপনারা আমাদের বুকে গুলি চালাতে আপনার ট্যাক্সের টাকা দেবেন না। আপনাদের সরকারকে বলুন অবিলম্বে এসব বন্ধ করতে। আমরা জানি আপনারা কখনই আপনাদের বিএসএফ এর পৈশাচিক বর্বরতার পক্ষের নন, কিন্তু সেটা পরিষ্কার ভাষায় আমরা শুনতে চাই।