- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

ভারতঃ ইন্টারনেট কোম্পানীগুলো সেন্সারশিপ দাবীর কাছে মাথা নত করেছে

বিষয়বস্তু: দক্ষিণ এশিয়া, ভারত, আইন, ডিজিটাল অ্যাক্টিভিজম, নাগরিক মাধ্যম, প্রযুক্তি, বাক স্বাধীনতা

ভারত সময়ের প্রেক্ষাপটে বিশাল পশ্চাৎপদ এক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যখন, তার সরকার, গুগল [1], ফেসবুক, এবং টুইটার সহ ২০ টি কোম্পানীর কাছে দাবী করে [2] , যেন তারা “ধর্ম বিরোধী” অথবা “সমাজ বিরোধী” যে সব উপাদান ভারতীয় নাগরিকদের জন্য সহজলভ্য, সেগুলো বর্তমান পরিকল্পনায় সরিয়ে ফেলতে হবে।

সরকারে সূত্রানুসারে রাজনৈতিক নেতা, যার মধ্যে সোনিয়া গান্ধী, তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী কপিল সিবাল এবং প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-ও রয়েছেন, তারা ইন্টারনেট কোম্পানিগুলোর দাবী আপত্তিজনক” উপাদানের প্রাক যাচাইয়ের বিরুদ্ধে এক মামলা দায়ের করে। এই সব আপত্তিকর উপাদানের মধ্যে রয়েছে ঈশ্বর নিন্দার মত লেখা এবং ধর্মীয় অপবাদ, কিন্তু এই সমস্ত উপাদানের মধ্যে একই সাথে সোনিয়া গান্ধী সহ ভারতের অনেক শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সমালোচনামূলক এবং স্তুতি না গেয়ে লেখা উপাদানও রয়েছে। এ সব তথ্য পাওয়া গেছে ফিনান্সিয়াল টাইমসের ব্লগ বিয়ন্ডব্রিকস [3]-এর সূত্রানুসারে পাওয়া।

Cartoon by Bryant Arnold, CartoonADay.com. Used under a Creative Commons 2.5 license (BY-NC) [4]

ব্রায়ান্ট আর্ন্ডল–এর কার্টুন, কার্টুনডে.কম-এ প্রকাশিত। ক্রিয়েটিভ কমন্স ২.৫ লাইসেন্স-এর অধীনে ব্যবহার করা হয়েছে (বাই-এনডি)।

প্রাথমিক প্রতিরোধের পর ইন্টারনেট কোম্পানিগুলো অবশেষে ভারতীয় সরকারে প্রবল চাওয়া এবং ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১২-এর মধ্যে আক্রমণাত্মক উপাদান সরিয়ে ফেলার বর্তমান দাবীর কাছে নত হয়। আদালতের পরবর্তী শুনানীর তারিখ ১ মার্চ নির্ধারণ করেছে। চীন, রাশিয়া এবং মিশরের মত রাষ্ট্রের সরকারগুলো একই রকম দাবী করেছে কিন্তু ভারত হচ্ছে প্রথম বৃহৎ কোন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, যার অভ্যন্তরীণ প্রচার মাধ্যমে অত্যন্ত শক্তিশালী, তারা এ রকম ভিন্ন এক দাবী করল।

ভারত কি বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক অবস্থান ত্যাগ করতে যাচ্ছে? ভারতের নেট নাগরিকদের মতে তা নয়। ব্লগার আদিত্য ব্লগ পোস্ট আইজ্ঞান.ইন [5] –এ গুগল এ্যাডভোকেটের একটি বক্তব্য উদ্ধৃত করেছে

এই বিষয়টি সংবিধানের বাক এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার সাথে যুক্ত, এবং গণতান্ত্রিক ভারতে বাক স্বাধীনতা দমনের মত বিষয়টি সম্ভব নয়, যে বিষয়টি চীনের মত কর্তৃত্বপরায়ন রাষ্ট্রের সাথে ভারতকে আলাদা করেছে।

হোয়াট টু ডু বাবা [6] মনে করেন:

ভারতে, গুগল এবং ফেসবুককে পূরোপুরি নিষিদ্ধ করে দেওয়া একেবারে অসম্ভব [..] আমি আশাবাদী এবং বিশ্বাস করি যে সমাজ এবং ওয়েব, উভয়ের বাস্তবতায় এই বিষয়টি নির্ধারণ করতে হবে। আসুন আমরা অপরাধীদের শাস্তি দেই এবং অন্য কাউকে যেন বলির পাঠা না বানাই।

নাগরিকদের ক্ষোভ খানিকটা দেরীতে প্রদর্শিত হয়েছে, গুগল ইতোমধ্যে ব্যবহারকারীদের ব্লগপোস্ট.কম ডোমেইনে সরাসরি সংযুক্ত করা থেকে বিরত রাখা শুরু করেছে এবং তাদের সেন্সর করা ব্লগস্পট.ইন-এ সংযুক্ত করছে, যা কিনা সাইটের ভারতীয় সংস্করণ। ভারতীয় সাইট এবং একই সংস্করণের সার্চ ইঞ্জিনের উপাদান সমূহ যা সেন্সর করা হচ্ছে, তা ভারতের বাইরে সহজলভ্য। ইয়াহু এবং ফেসবুক তাদের উপাদান সমূহ সেন্সর করার বিবেচনার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছে, কারণ তারা দাবী করেছে যে আপত্তিকর উপাদানের সাথে তাদের কোন কিছু করার নেই, সম্পৃক্ততা নেই। এই সব সংবাদ পাওয়া গেছে জয়পুর.কো [7]সংবাদ অনুসারে।

যখনই সরকারের ক্ষোভ প্রশমনের বিষয় দেখা দেয়, তখনই গুগল নিজেদের পিছিয়ে যাওয়ার বেশ লম্বা ইতিহাস রয়েছে। যাত্রা শুরুতে গুগলের মোটো ছিল “ অসৎ কিছু করব না”,,গুগল এখন তা জনসম্মুখে ব্যবহার করা বন্ধ রেখেছে [8]। যা প্রায়শই লাভের কথা বিবেচনা করে উপেক্ষা করা হয়, এই কারণে জনগণকে সর্বোচ্চ সেবা দেবার বদলে তা এই নীতিতে চলে।

আন্তর্জাতিক বিশাল প্রতিষ্ঠান গুগল, ফেসবুক এবং টুইটার-এর যে নীতিমালা রয়েছে, তাতে আভ্যন্তরীণ আইনের সাথে যুক্ত থাকার বিষয় রয়েছে, যার মানে হচ্ছে কোন উপাদান যদি রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ আইন লঙ্ঘন করে তাহলে তা সরিয়ে ফেলতে হবে। তিনটি কোম্পানী নিজের আত্মরক্ষার জন্য এই বিষয়টি যুক্ত করেছে, যা মূলত মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সাম্প্রতিক সময়ে অসংখ্যবার তাদের বিরদ্ধে আনা অভিযোগের ভিত্তি, প্রথমে চীনে, তারপর মিশরে এবং এখন ভারতে।

তবে, সরকার যাতে মুক্ত তথ্য প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়, তার জন্য সেই অনুসারে সব কিছু করা হয় না। ভারতে, গুগল নামক কোম্পানী সরকারে কোন ব্যবস্থার শিকার হয়নি, এটি সরকারকে সেন্সরশিপের অনুমতি প্রদান করে, যেন সরকার তার কর্যক্রম বন্ধ না করে দেয়, এতে তার ১২১ মিলিয়ন গ্রাহক হারাবার ভয় রয়েছে,এবং তা আগামীতে সম্ভাব্য আরো ৯০০ মিলিয়ন গ্রাহক হারাবার কারণ হতে পারে। প্রতি বছর ভারতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা তিনগুন হচ্ছে।

এখন গুগল সরকারের সেন্সরশিপ নীতির সমানে নত হচ্ছে জনতাকে অন্তত তথ্য প্রযুক্তিতে প্রবেশের কিছুটা সুযোগ করে দেবার জন্য নয়, তারা আসলে প্রতিযোগিতার এই যুগে লক্ষ লক্ষ গ্রাহক হারাবার ভয়ে শঙ্কিত।

গুগলের এই চাল সম্প্রতি তার চীন থেকে সরে আসার সাথে সুস্পষ্ট বৈপরীত্য প্রকাশ করে, যদিও নিঃসন্দেহে তা সেরা কোন ব্যবসায়িক চাল নয়। সেন্সরশিপের বিরুদ্ধে নেওয়ায় গুগলের একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ছিল চীন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া। নিউইয়র্ক টাইমসের রুম ফ্রম ডিবেট ব্লগে টিমথি বি. লি এই কথা গুলো লিখেছেন [9]

চীন থেকে গুগলের নিজের সরে আসার এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতীকী মূল্য আছে। গুগল বিশ্বের অন্যতম এক সম্মানজনক ব্রান্ড-এ পরিণত হয়েছে এবং বিগত চার বছরে, এটি সরকারী সেন্সরশিপের প্রচেষ্টাকে বৈধতা দেবার সুযোগ করে দিয়েছে, যা তাঁর নিজের যোগ্য নয়।

এটা মানসিক উত্তেজনার মত এক বিষয় যে গুগল ভারত সরকারের সেন্সরশিপ-এর দাবীর প্রেক্ষাপটে অর্জিত বিশাল সাফল্যকে অনুসরণ করতে থাকব।

যার ফলে আমরা প্রথম ডিজিটাল যুদ্ধের যুগে প্রবেশ করলাম। এটা সরকার বনাম ইন্টারনেটের যুদ্ধ, এমনি তারচেয়েও খারাপ। এটা হচ্ছে ইন্টারনেট কোম্পানী বনাম ইন্টারনেটে কর্তৃত্ব বজায় রাখতে চাওয়ার যুদ্ধ। ইন্টারনেট কোম্পানিগুলোর অধিকার নেই গ্রাহকদের ক্ষতি করার এবং ভারতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই-এ, সরকারের সেন্সরশিপ বা ইন্টারনেট বন্ধ করে দেবার নীতিতে কোম্পানিগুলো ক্রমশ বশীভূত হয়ে যাচ্ছে।

নিসন্দেহে, এতে গুগল হয়ত সামাজিক প্রচার মাধ্যমে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে এক উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গ্রাহক হারাবে, ফেসবুকের ক্ষেত্রেও হয়ত একই ঘটনা ঘটবে, কিন্তু ডিজিটাল বিশ্বের আঞ্চলিক শ্রেষ্ঠত্বের এই লড়াইয়ে একে অন্যকে হারানোর এই চেষ্টায়, তারা ধীরে ধীরে তাদের সেই ভিত্তিকে ধ্বংস করে ফেলছে, যা তারা নিজেরা গড়েছিল: স্বাধীনতা, ক্ষমতা, এবং “ অসৎ না হওয়ার” প্রতিজ্ঞা। রয়টারের মিডিয়াফাইল ব্লগে কেভিন কালাহার [8] যখন গুগলের স্লোগান নিয়ে লেখেন তখন তিনি সঠিক ভাবেই উল্লেখ করেন “ “অসৎ না হওয়া” নামক নীতি এখন পরিণত হয়েছে “আসুন সকলে অসৎ হই”-এ ।

এখন গুগল জনসম্মুখে এই স্লোগান ব্যবহার করা বন্ধ করে দিয়েছে। এখন তাদের তা ফিরিয়ে নেবার সময় এসেছে।