৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১২ তারিখে ওয়ালিদ বাহমেন মরোক্কোর রাজধানী রাবাতের একটি আদালতে হাজির হন। এই ১৮ বছর বয়েসী এই নাগরিককে ফেসবুকে মরোক্কোর রাজা ষষ্ঠ মোহাম্মদকে বিদ্রুপ করে ছবি ও ভিডিও পোস্টের মাধ্যমে “মরোক্কোর পবিত্র মূল্যবোধের অবমাননার” অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়।
মরোক্কোর কোন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর এধরনের অভিযোগের সম্মুখীন হওয়া এই প্রথম নয়। ২০০৮ সালে ফেসবুকে রাজার ভাই হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেয়ার জন্যে তরুণ প্রকৌশলী ফুয়াদ মুরতাদাকে তিন বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছিল। মুরতাদার সমর্থনে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ ও প্রচারণার ফলে গ্রেফতারের এক মাসের মধ্যেই কর্তৃপক্ষ তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
গত গ্রীষ্মে (তাত্ত্বিকভাবে) সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে রাজার “পবিত্র” চরিত্র পরিবর্তনের পর ওয়ালিদ বাহমেনের গ্রেফতারই এ জাতীয় প্রথম ঘটনা। তবে দেশে রাজা এখনো অনেক ভক্তির কেন্দ্রবিন্দু।
ইন্টারনেটে জনাব বাহমেনের বিরুদ্ধে দায়ের করা পুলিশি প্রতিবেদনের একটি অনুলিপি প্রকাশিত হয়, যাতে: নথি অনুসারে পুলিশের জব্দকৃত আইটেম হল “পবিত্র মূল্যবোধের অবমাননাকারী বাক্যাংশ ও আলোকচিত্রসহ ফেসবুকের দুটি পাতা (এসআইসি) এবং একটি আইবিএম কম্পিউটার।”
মুক্তির আহ্বান সত্ত্বেও বিচারক ওয়ালিদের বিচার মুলতবী করে তাকে রাজধানীর কাছাকাছি একটি কিশোর সংশোধনী কারাগারে পাঠিয়ে দেন। জনাব বাহমেনের গ্রেফতারের প্রতিক্রিয়া জানাতে একদল নেটিনাগরিক ফেসবুকে “ষষ্ঠ মোহাম্মদ, আমার স্বাধীনতা আপনার চেয়ে বেশি পবিত্র!” নামে একটি সমর্থক দল তৈরি করে, যেখানে সদস্যদের রাজার কার্টুন প্রকাশ এবং প্রদর্শন করার আমন্ত্রণ জানানো হয়।
দলটির প্রস্তাবনা [আরবী ভাষায়] বলছে:
هذه مجموعة تضامنية مع الشاب وليد بحمان، 18 سنة، معتقل بسجن الأحداث بسلا بتهمة إهانة قداسة محمد السادس على الفيسبوك. فلنثبت لمحمد السادس أن حريتنا أقدس منه
জয়নেব এল ঘাজুই, একটি দলের অন্যতম-প্রতিষ্ঠাতা,তিনি তার ব্লগে লিখেছেন [ফরাসি ভাষায়]:
[cette arrestation bat] en brèche la propagande de l'Etat marocain autour du changement et des prétendues avancées démocratiques.
টুইটারে অনেকে সতর্কভাবে মামলাটির উপর নজর রাখছে। মিউজিক এ্যারাবে টুইট [ফরাসি ভাষায়] করছে:
@MusiqueArabe Opération soutien à Walid Bahomane – publions tous sur nos profils la caricature de notre choix.
সাম্প্রতিক সাংবিধানিক সংস্কার সত্ত্বেও মরোক্কোর শাসক তার লাল সীমারেখার কোন প্রকার লঙ্ঘন সহ্য করতে প্রস্তুত নয় বলে মনে হচ্ছে। জুলাই ২০১১-তে একটি নতুন সংবিধান গ্রহণের কয়েকদিন পর রাজার একটি উগ্র ব্যঙ্গচিত্র থাকার কারণে মরোক্কো এক ফরাসি সংবাদপত্র লে কুরিয়ার ইন্টারন্যাশনালকে সেন্সর [ফরাসি ভাষায়] করা হয়।
রাজতন্ত্রের প্রতি সংবেদনশীল নানা বিষয় সামলাতে গিয়ে স্বাধীন সংবাদমাধ্যম প্রায়শই শাসকের রোষানল সহ্য করেছে। এতসবের পরও আজ মনে হচ্ছে ইন্টারনেটই শেষ যুদ্ধক্ষেত্র, যেখানে মরোক্কার অধিকাংশ নাগরিক এখনও তাদের স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার চর্চা করতে পারে।
আরব বসন্তে অনুপ্রাণিত মরোক্কোর নেট নাগরিকরা কিছু ব্যাপারে সম্পূর্ণ সচেতন বলে মনে হচ্ছে, তারা জনাব বাহমেনের আরো কাছে আসতে এবং তার সাথে সংহতি প্রদর্শনে সংকল্পবদ্ধ।
এর ফলে শাসকদের জন্যে সেন্সরশীপ নামক বিষয়টির চর্চা আরো অনেক কঠিন হয়ে যাবে।