নিঃসন্দেহে গত সপ্তাহে কিরগিজস্তান-ভিত্তিক নেট নাগরিকদের গল্পটি ছিল গত ৩ ফেব্রুয়ারি, তারিখে ২০১২ একটি উচ্চ স্তরের সরকার-দাতা সংস্থার গোল টেবিল বৈঠকে বিশ্ব ব্যাংকের বিশকেক অফিস প্রধান আলেকজান্ডার ক্রেমারের আকস্মিক এবং ভয়ানকভাবে রেগে যাওয়া।
আইএমএফে তার সমপদমর্যাদার কোবা জেভনেতাজের এক বক্তৃতার সময় ক্রেমার চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে কির্গিজ উপ-প্রধানমন্ত্রী জোমার্ট ওতোরবায়েভ দিকে একটি পানির গ্লাস ছুঁড়ে মেরে সভা থেকে ঝড়ো বেগে বেরিয়ে যান।
যারা প্রথম এই খবরটি ব্লগে পাঠিয়েছেন তাদের মধ্যে একজন ইউরেশিয়ানেটের মধ্যএশিয়া সম্পাদক ডেভিড ট্রিলিং:
বিশকেকে হোয়াইট হাউস নামের একটি সরকারি সদর দপ্তরে দাতাদের সভা চলার সময় ঘটনাটি ঘটেছে। এক প্রত্যক্ষদর্শীর মতে, সাম্প্রতিক সরকারি উদ্যোগের জন্যে প্রশংসা এবং বিশকেককে মেধা অনুসারে কর্মকর্তাদের নির্বাচিত করার জন্য উৎসাহিত করে ক্রেমার মাত্র কয়েক মিনিট বক্তব্য দেন। উন্নয়ন “দ্রুত ছোটা নয় বরং একটি ম্যারাথন,” একথা বলে তিনি দেশে বিশ্ব ব্যাংকের মাঝে মাঝে ধীরে চলা নীতির সমর্থন করেন- জানিয়েছেন ইউরেশিয়ানেটের তথ্যদাতা। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের কান্ট্রি ডিরেক্টরের পরিবর্তী মন্তব্যের সময় ক্রেমার হঠাৎ দাঁড়িয়ে “এই সবই বাজে কথা!” বলে পানির গ্লাসটি ছুঁড়ে মারেন যা ওতোরবায়েভের সামনের মেঝেতে পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।
কিরগিজ সরকার এবং বিশ্বব্যাংক আলেকজান্ডার ক্রেমারের “একেবারে খামখেয়ালী” হয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্ন পরিস্থিতির কথা বলে। একটি অনলাইন সংবাদ সংস্থার মতে, তারা উভয়ে একমত যে এটা আসলে (তার) রক্তের ব্যাপার।
নাগরিক মিডিয়া পোর্টাল ক্লুপ.কেজি অনুসারে [রুশ ভাষায়]:
বিশ্বব্যাংকের যুক্তি, অফিসের প্রধান ঘটনাটি ঘটিয়েছে শুধুমাত্র তার দ্রুত অবনতিশীল স্বাস্থ্যের কারণে। তাদের মতে, ভুলবশতঃ পানির গ্লাসটি ছুঁড়ে মারা হয়েছে এবং ক্রেমার এখন হাসপাতালে।
“স্বাস্থ্য পরিস্থিতির কারণেই আলেকজান্ডার ক্রেমারের এই ঘটনাটি ঘটেছিল: মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালনে আকস্মিক একটা সমস্যা সৃষ্টি হয়, যে কারণে ক্রেমার এরকম অসাধারণ এবং অস্বাভাবিক আচরণ করেন, বিশ্বব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই কথা বলা হয়।
সরকারি সংবাদ সংস্থাও একইভাবে উল্লেখ করে যে ক্রেমার আচরণ ছিল একটি “হার্ট অ্যাটাক”-এর ফলাফল।
ক্লুপ জোরালোভাবে আরো রিপোর্ট করে:
বিশ্বব্যাংক, এর অফিস প্রধানের আচরণের জন্যে ক্ষমা চেয়ে বলেছে, এই ঘটনার সাথে সেসময় বক্তব্যরত কিরগিজস্তানে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের প্রধান কোবা জেভনাতেজের কোন সম্পর্ক নেই।
তহবিল এবং ব্যাংকের কর্মকর্তাদের পরস্পরকে প্রায়শ:ই সন্দেহ এবং কখনো কখনো এমনকি শত্রুতার চোখে দেখার বিষয়টি গোপণীয় কিছু নয়। বস্তুতঃ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার খারাপ এবং ভালো মাতবরদের মধ্যে ক্রিয়াহীন সম্পর্ক ছিল, বিশ্বব্যাংকের প্রাক্তন প্রধান অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিৎজের ২০০২ সালে আলোড়ন সৃষ্টিকারী সবচেয়ে বেশি বিক্রীত “বিশ্বায়ন এবং এর অসন্তোষ” পুস্তকের একটি আকর্ষণীয় অধ্যায়ের বিষয়বস্তু। কিন্তু আইএমএফের কঠোরতায় উন্নয়নশীল বিশ্বের রাজস্বনীতিতে বন্দীদশা সৃষ্টি যদি ক্রেমারের রাগের উৎস নাই হবে, তবে কেন গেলাসটি উপ-প্রধানমন্ত্রী ওতোরবায়েভের সবচেয়ে কাছের এলাকায় অবতরণ করলো?
টুইটার ব্যবহারকারী @আহমাদনের এই বিষয়ে রয়েছে [রুশ ভাষায়] অন্য তত্ত্ব:
হা হা হা, আলেকজান্ডার ক্রেমার – নায়ক, পুরুষ, বাইকে [কিরগিজ ভাষায় দাদা], দেখতেই তো পাচ্ছেন, তাকে আমাদের সরকারি কর্মকর্তাদের অন্ত:সার শূণ্য কথা শোনার জন্যে বলাৎকার করা সম্ভব হয়নি।
গ্লোবাল ভয়েসেসের এই সাম্প্রতিক পোস্টের বিষয়বস্তু ক্রেমারকে আরেক টুইটার ব্যবহারকারী @আজ্জ্জিক তুলনা করেন [রুশ ভাষায়] প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী থেকে উন্মাদ ভবিষ্যৎবক্তায় পরিণত হওয়া আরস্তানবেক আব্দিলায়েভের সাথে। এদিকে গেলাস-কাণ্ড পরবর্তী আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলাসম্পর্কিত আব্দিলায়েভের ভবিষ্যদ্বাণী হঠাৎ যখন ফলে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে, তখন এই সেবা ব্যবহারকারী তৃতীয় একজন, উড়তে পারে বলে দাবি করা সাবরি বে নামের এক তুর্কীর সাথে তুলনা অধিক সঙ্গত বলে মনে করেন।
এই কেলেংকারির কয়েকদিন পর থেকে বিশকেকের টুইটার ব্যবহারকারীদের দৃষ্টি পড়েছে ক্রেমারের ভবিষ্যতের উপর:
@আজুরেভ: এটা কী সত্য, আলেকজান্ডার ক্রেমার ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাংক কিরগিজস্তান এবং [ইতোমধ্যে] বহির্বিশ্বেরও প্রাক্তন প্রধান হয়ে গেছেন?
অবশ্য এই সাবেকের তা নিশ্চিত করা এখনও বাকি রয়ে গেছে। বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদন মতে তিনি বর্তমানে লন্ডনে আরোগ্য লাভ করছেন।
ভবিষ্যতে আলেকজান্ডার ক্রেমারের যাই হোক না কেন, এটা স্পষ্ট যে বর্শা-ছোঁড়া বানর তার খেলা বন্ধ করবে না। গতকাল বিশ্বব্যাংক ২০১২ সালে কিরগিজস্তানের প্রধান দু‘টি শহর – বিশকেক এবং ওশের জন্যে প্রায় দুই কোটি মার্কিন ডলারের অবকাঠামোগত অর্থসাহায্য ঘোষণা করে। এই প্যাকেজে একটি নির্দিষ্ট কাঁচ ভেঙ্গে যাবার জন্যে ক্ষতিপূরণ থাকবে কিনা নিঃসন্দেহে তা ভবিষ্যতের একটি গোল টেবিলের আলোচনার বিষয়বস্তু হবে।