সিঙ্গাপুরঃ অত্যন্ত কম দূর্নীতিগ্রস্ত একটি দেশে দূর্নীতির কেলেঙ্কারি

চৈনিক নববর্ষের পুরোটা সময় জুড়ে, সারা দেশ জুড়ে এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে যে, সিঙ্গাপুরের সামরিক নিরাপত্তা অধিদপ্তর ( সিভিল ডিফেন্স ফোর্স বা এস সিডিএফ] এবং কেন্দ্রীয় মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে (সেন্ট্রাল নারকোটিকস বুরো বা সিএনবি) কেন্দ্রীয় দূর্নীতি দমন অধিদপ্তর ( করাপ্ট প্র্যাকটিস ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন সিপিআইবি) দূর্নীতি অনুসন্ধানে এক তদন্ত চালায়। তাদের এই তদন্ত এমন এক দেশে দূর্নীতি নিয়ে আলোচনার সৃষ্টি করেছে, যে দেশটি ধারাবাহিকভাবে বিশ্বের সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকার মধ্যে অবস্থান করছে।

১৯ ডিসেম্বর তারিখে সিএনবির ডিরেক্টর নগ বোন গাইকে ( ডানদিকের ছবিতে যাকে দেখা যাচ্ছে) গ্রেফতার করা হয় , অন্যদিকে এসসিডিএফ-এর মহাপরিচালক ( বামের ছবিতে যাকে দেখা যাচ্ছে) ৪ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে গ্রেফতার করা হয়েছে। উভয়ে এখন জামিনে মুক্ত রয়েছেন। এ বিষয়ে আগামীতে আরো অনুসন্ধান করা হবে। পুলিশের সহকারী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নগ সের সং বর্তমানে নগ বোন গাই-এর এবং সহকারী প্রতিরক্ষা প্রধান এরিক ইয়াপ, পিটার লিমের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন।

@স্কাইলাইন ২৫২৭#এসসিডিএফএবং #সিএনবি#সিএনবি-এর প্রধানকে তদন্তের প্রেক্ষাপটে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করা হয়েছে । এই দুইজনকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা। #সিঙ্গাপুর #এসজি

অকুপাই সিঙ্গাপুর পর্যবেক্ষন করেছেন যে এই সংবাদ, সরকারী কর্মচারীদের উচ্চ বেতন প্রদানের যৌক্তিকতাকে একেবারে অর্থহীন করে ফেলেছে:

@অকুপাইএসজি: অনেক বেশী বেতন দিয়ে দূর্নীতি রোধ করার সরকারী নীতি এখন অর্থহীন হয়ে পড়ল। #এসসিডিএফ #সিএনবি

সংবাদে জানা গেছে যে, “ব্যক্তিগত আচরণবিধি ভয়াবহভাবে লঙ্ঘনের” ঘটনায় এই দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এর সাথে এক নারী জড়িত, যে পেশায় ঊর্ধ্বতন তথ্য প্রযুক্তি কর্মকর্তা। তবে তার পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি এবং এই বিষয়ে পরস্পর বিপরীত কিছু সংবাদ রয়েছে। যেমনটা জিউই লি সুই ফেসবুকে পর্যবেক্ষণ করেছেন:

কি ভাবে 联合晚报 এবং দি স্ট্রেইট টাইমস–এর সংবাদের মধ্যে সমন্বয় করা যায়, [১] দুজন নারীকে পাওয়া যাচ্ছে, যারা তথ্য প্রযুক্তি কর্মকর্তা, [২] এই নারী তথ্য প্রযুক্তি কর্মকর্তা ছিমছাম, নম্র, মিষ্টি চেহারার মেয়ে। সে এখন ৪০-এ পা দিয়েছে। তার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে গেছে, তবে সে প্রাণোচ্ছল নারী। সে হাইহিল পড়ে এবং এই কারণে তাকে লম্বা দেখায় [৩] তার একটি বা উভয় অ্যাকাউন্টই সন্দেহজনক।

মাইক লোহ, কর্তৃপক্ষ এবং তদন্ত কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যেন তারা জনতার কাছে পরিষ্কার থাকে এবং সবাইকে জানায় আসলে সেখানে কি ঘটেছে:

আমি জানি পিতা কি বলবে, “এক নাম্বার আইনঃ তোমার দেশের নাগরিকদের সাথে কখনো এমন ব্যবহার করবে না, যাতে মনে হয় তারা গর্দভ। কখনো তাদের সাথে মাশরুম ম্যানেজমেন্ট নামক আচরণের প্রয়োগ করবে না।

হাহ? মাশরুম ম্যানেজমেন্ট, এটা কি জিনিস?

পিতা বলবেন “ওহ” , “এর মানে হচ্ছে তাদেরকে অন্ধকারে রেখে দেওয়া এবং উল্টাপাল্টা তথ্য প্রদান করা।

লাকি ট্যান, নিত্য নতুন এবং সূক্ষ্ম দূর্নীতির বিষয়ে উল্লেখ করেছে, যা হয়ত তদন্ত এবং পর্যবেক্ষন করা সহজ নয়, কারণ তা সরাসরি এক দুর্নীতি:

সাম্প্রতিক ঘটনায়, এই সব উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা নারীদের প্রলুব্ধ করেছে এবং স্থানীয় এক তথ্য প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি সামগ্রী সরবরাহকারীকে নিম্নমানের যন্ত্রপাতি সরবরাহ করার সুযোগ করে দিয়েছে। যদি একটি অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তাহলে এই একই বিষয়টি ঘটতে পারে। যেমন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নিয়মিতভাবে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ভাড়া করে আনতে থাকে, তাহলে তা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ে। বর্তমান ঘটনার ক্ষেত্রে, এখনো জানা যায়নি সরবরাহকারীরাকে, কিন্তু একবার যদি তা জানা যায় তারা কাকে ভাড়া করেছে, তাহলে- জানা যাবে, তার নিয়মিতভাবে সরকারের কোন উচ্চপদস্থ কর্মচারীকে ভাড়া করেছিল কিনা?

ডি গিগামোল ডায়রি, সিপিআইবি-এর তদন্তের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে:

ভয়াবহ রকমের দুর্নীতিকে দুর করার জন্য সবচেয়ে কার্যকর উপায় স্বাধীন, স্বচ্ছ, কার্যকরী, এক সিপিআইবি প্রতিষ্ঠান এবং এক গণ পরিদর্শক দল, যারা আওয়াজ তোলার কাজ করে যাবে। যতদুর দেখা যাচ্ছে, আমাদের সিপিআইবি চমৎকার কাজ করেছে, তাদের ধন্যবাদ, কিন্তু যদি আমরা আমাদের রাজনীতিবিদদের দূর্নীতি মুক্ত হিসেবে দেখতে চাই, তাহলে সিআইপিবি-এর, সকল সরকারি কর্মচারী, সংসদ এবং এমনকি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধেও জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ থাকতে হবে। সিআইপিবি নামক প্রতিষ্ঠান, সংবাদ প্রদান করেছে যে, এই জটিল ঘটনার তদন্তে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় তাদের সম্পুর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেয়নি। সম্ভবত এই সংবাদটির পুনরায় পর্যালোচনা করা হবে। যখন আমাদের একটি নির্বাচিত সংসদ রয়েছে, সেক্ষেত্রে সিপিআইবিকে প্রধানমন্ত্রীর বদলে রাষ্ট্রপতির কাছে রিপোর্ট প্রদান করা উচিত নয় কি?

তবে সম্প্রতি, সিঙ্গাপুরে বেশ কয়েকটি কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। অভিযোগে প্রকাশ পেয়েছে যে বিরোধী ওয়ার্কাস পার্টির সদস্য ইয়াও শিন লেয়ং, এক রমণীর সাথে বিবাহ-বর্হিভুত সম্পর্ক বজায় রেখেছেন, যে রমনী নিজেও উক্ত দলের সদস্য। এই সময়ে এই সংবাদ ফাঁস হওয়ার ঘটনা, এ রকম ধারণার জন্ম দিয়েছে যে, দূর্নীতির সংবাদ থেকে মানুষের মনোযোগ সরিয়ে দেওয়ার জন্য তা প্রকাশ করা হয়েছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .