কেনিয়ার সামরিক বাহিনী সোমালিয়া গিয়ে সেখানকার বিদ্রোহী গ্রুপকে দমন করার যে অভিযান পরিচালনা করছে, তাকে তারা “অপারেশন লিন্ডা নিশ” (সোওয়াহিলি ভাষায় –এর নাম “ দেশ রক্ষা অভিযান”) অভিহিত করছে। এখন এই অভিযান টুইটার যুদ্ধে পরিণত হয়েছে। এই ঘটনার সূত্রপাত ঘটে তখন, যখন এই অভিযানের মুখপাত্র মেজর ই চিরচির, তার টুইটারে একাউন্ট @মেজরইচিরচির,এ, একটি পুরোনো ছবি পোস্ট করেন, এই ছবি দেখিয়ে দাবী করা হয় যে, আল শাবাবের এক অনুসারীকে (রিক্রুট) ভিন্নমত প্রকাশ করায়, পাথর ছুঁড়ে তাঁর একদল সহকর্মীরা হত্যা করেছে। মুছে ফেলা এই টুইটের ছবিটি এখন আপনারা এখানে দেখতে পাবেন।
পরবর্তীতে এটি জানা যায় যে, আসলে ২০০৯ সালে এক সোমালীয় সাংবাদিক এই ছবিটি তুলেছিল এবং তা আদতে কেনিয়ার কোন আল শাবাবের দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তির ছবি ছিল না। কেনিয়ার সামরিক বাহিনীর দায়িত্বশীলতার অর্থ নিজেদের দায়িত্বশীলতার প্রমান দিয়ে বুঝিয়ে দেয় এবং যা একটি টুইটে তারা এক বিবৃতি হিসেবে প্রদান করে:
@মেজরইচিরচির: #পিকচারপোস্টিং একটি পুরোনো ছবি প্রকাশ করার দায়িত্ব আমি নিজে গ্রহণ করছি। কিন্তু মঙ্গলবারে এক হত্যার ঘটনা ঘটেছে। যা অনেকটা শুক্রবারের মত।
@মেজরইচিরচির-এর টুইটের প্রতিক্রিয়ায়, @সেলফমেডআবদি প্রশ্ন করেছে:
@সেলফমেডআবদি: এখন কি আর আমরা আপনার কথা বিশ্বাস করব?
@দানমানুএফসি লিখেছে:
@দানমানুএফসি:আপনার প্রদান করা তাজা সংবাদের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলছি।
@কেইথেম্বে বলছে
@কেইথেম্বে:@মেজরইচিরচির #পিকচার পোস্টিং, এটা বেদনাদায়ক, কিন্তু দয়া করে পুরোনো ছবি পোস্ট করা বন্ধ করুন।
তার পোস্ট অনলাইনে এক ক্রোধের সঞ্চার কারণ বেশ কয়েকজন টুইটার ব্যবহারকারী এর প্রতি তাদের ক্ষোভ, অবিশ্বাস প্রকাশ করে এবং তারা #পিকচারপোস্টিং নামক হ্যাশট্যাগের অধীনে, এর উপর তাদের মতামত প্রদান করে। @মামাইয়ামানি তার টুইটে লিখেছে
@মামাইয়ামানি:@মেজরইচিরচির # আপনি কি উপলব্ধি করতে পেরেছেন, আপনার গ্রহণযোগ্যতা কোথায় গিয়ে ঠেকেছে, পারছেন কি? আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন প্রতিপক্ষের জন্য তা কি বয়ে এনেছে?
টুইটার ব্যবহারকারী @জিওফ্রিইয়র্ক, @ @মেজরইচিরচির-এর প্রতি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ, যা সে উক্ত ঘটনা উন্মোচনের মধ্যে প্রকাশ করেছে। :
@জিওফ্রিইয়র্ক: এখানে ২০০৯ সালে বৃটিশ সংবাদপত্রে এক প্রকাশিত ছবিঃ http://bit.ly/yDYRn4 যা মেজর সি এর টুইট-এর ছবির সাথে মিলিয়ে দেখছি, একেবারে হুবহু এক।
কেনিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির উপরে হারকাত আল শাবাব মুজাহিদিনের টুইটার পাতা @এইচএমএসপ্রেস বেশ কিছু টুইট করেছে:
@এইচএমএসপ্রেস: যারা এই ঘটনা সম্বন্ধে জানতে আগ্রহী। এটি ২০০৯ সালের ঘটনা। এখানে যে মানুষটিকে খুন করা হয়েছে, এমনকি সে #কেনিয়ার নাগরিক নয়। এটা কিসমায়োর ঘটনা নয় এবং এবং এটি এইচএসএম-এর (আল শাবাবের) ঘটনা নয়, http://www.dhanbaal.com/main/index.php?module=News&func=display&sid=272
@এইচএমএসপ্রেস: তাদেরকে অগোছালো মনে হচ্ছে, এমনকি তাদের প্রচারণা চালানোর সময়ও। এমনকি খুব সাধারণ এক গুগুল অনুসন্ধানও, তাদেরকে এ রকম এক অস্বস্থীকর অবস্থা থেকে রক্ষা করতে পারত।
এই ঘটনার উপর আগ্রহী কেনীয় এবং অন্য সব নাগরিকরা পুরো ঘটনার ক্ষেত্রে সাড়া প্রদান করেছে এবং এখানে তাদের কিছু টুইটের নমুনা প্রদান করা হল।:
প্রযুক্তি ব্লগার @রবার্টআলিয়া মন্তব্য করেছে:
@রবার্টআলিয়া: @মেজরইচিরচির, আমরা আপনার উত্তরের অপেক্ষায় রয়েছি। আপনি আমাদের বোকা বানানোর চেষ্টা করেছেন। আমাদের বাস্তব ঘটনা জানা প্রয়োজন, ভুয়া ধারনা নয়।
এই ঘটনায় ওকাওয়ারাহ বিবৃতি প্রদান করেছে :
@ওকাওয়ারাহ: @মেজরইচিরচির এবং কোন মাত্রা পর্যন্ত আপনার এই ভুলকে মেনে নিতে হবে। এই বিষয়টি আপনার বিবৃতির গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে অজস্র প্রশ্নের সৃষ্টি করছে।
ভুল ঘটনার ছবি উপস্থাপন করার ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া একজন কেনীয় নাগরিক টুইটার ব্যবহারকারী @জেকিশো একটি নতুন শব্দ ‘টুইসাইড’ উদ্ভাবন করেছে এবং প্রশ্ন করেছে :
@জেকিশো:@মেজরইচিরচির কি টুইসাইড বা টুইটারে অত্মহত্যা করতে যাচ্ছে?
কেনিয়ার সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র সম্ভবত ভেবেছিলেন যে তার এই টুইট, সন্দেহমুক্ত নেট নাগরিকরা সহজেই হজম করে নেবে এবং একে যীশুর গল্পের (গসপেল) এর মত একে সত্য বলে মেনে নেবে। তাঁর বিবৃতির সত্যতা কেবল আল শাবাব এবং এই সংগঠনের প্রতি সহানুভূতিশীল নাগরিকরাও যাচাই করে দেখেনি, তাদের সাথে কেনিয়ার নেট নাগরিকরাও তা যাচাই করে দেখেছে, বিশেষ করে যখন “টুইটার যুদ্ধ” এবং সামাজিক প্রচার মাধ্যমে এই নিয়ে যুদ্ধ চলছে।
গত বছরে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবীতে দুটি প্রাণঘাতী গ্রেনেড হামলা সংঘঠিত হয়, যার সাথে আল শাবাব যুক্ত ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। এর মধ্যে একটি এক জনপ্রিয় বিনোদন কেন্দ্রে এবং অপরটি নাইরোবীর উপশহরের এক জনাকীর্ণ বাস থামার এলাকায় সংঘঠিত হয়।