এই পোস্টটি তিউনিশিয়া বিপ্লব ২০১১ –এর উপর করা আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ।
২০১১ সালটি ছিল তিউনিশিয়ার জন্য এক অবিস্মরণীয় বছর- এক ঐতিহাসিক বছর যা তিউনিশিয়ার প্রতিটি নাগরিকের স্মৃতিতে গ্রথিত থাকবে। যার শুরুটা হয়েছিল প্রায় বিস্মৃত এবং প্রান্তিক এক প্রদেশের এক এক স্বতঃস্ফূর্ত হতাশার বাস্তবতায়, যা পরে এক জনপ্রিয় গণ জাগরণে পরিণত হয়ে সারা দেশকে এক গণজোয়ারে সৃষ্টির মাধ্যমে দেশটির ২৩ বছরের শাসক জিনে এল আবেদিন বেন আলীর শাসনকে উৎখাত করে ফেলে এবং পুরো এলাকার চেহারা পাল্টে ফেলে, একটি আরব রাষ্ট্রে বিপ্লব জ্বরে আক্রান্ত হবার মাধ্যমে।
বছরের এক রক্তাক্ত প্রারম্ভ
বছরটার শুরু হয়েছিল রক্তপাত এবং সংঘর্ষের মধ্যে দিয়ে। বিক্ষোভকারীদের চাকুরির স্বাধীনতা এবং জাতীয় মর্যাদার দাবীর প্রতি কর্তৃপক্ষ সাড়া দিয়েছিল তাজা বুলেট এবং কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে, ৩০০ জন বিক্ষোভকারীকে নিহত এবং আরো অনেককে আহত করে।
যেদিন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি সৌদি আরবে পালিয়ে গেলেন
১৪ জানুযারি, ২০১১ তারিখে দেশটির রাজধানী তিউনিশের স্বারাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভবনের সামনে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী সমাবেত হয়। এই সমস্ত বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিতে থাকে; “স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সন্ত্রাসী মন্ত্রণালয়” এবং “বেন আলি কেটে পড়” ( বেন আলি দেগেদে)। । এই বিক্ষোভ যা শান্তিপূর্ণ ভাবে শুরু হয়, তা শেষ হয় পুলিশের ভায়াবহ হামলার মধ্যে দিয়ে, যারা বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করেছিল। পরে একই দিনে বেন আলি সৌদি আরবের জেদ্দায় পালিয়ে যায়।
স্বৈরশাসক চলে গেছে, কিন্তু স্বৈরতন্ত্রের কি হবে?
তিউনিশিয়া, অতীতের সাথে তার সকল সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য অধীর হয়ে ছিল এবং বেন আলীর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পরেও গণতন্ত্রের জন্য তাদের আন্দোলন থেমে যায়নি। সংসদ ভবন যেখানে অবস্থিত ছিল, সেই কাসবা স্কোয়ার ছিল অবস্থান ধর্মঘট এবং বিক্ষোভের প্রাণকেন্দ্র, যা সংসদের এই অতি ঘৃণিত প্রাক্তন শাসক দলকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করার উপায় বের করা উচিত ছিল ( এই দলটিকে বর্তমানে বিলুপ্ত হয়ে গেছে)। সেই দলটির নাম ছিল আরসিডি ( ফরাসী ভাষায় এর নাম ছিল লে রাজম্বলেমেন্ত, কনস্টিটিউশনালে ডেমোক্রেটিক, নামের আদ্যক্ষর নিয়ে তাকে আরসিডি নামে ডাকা হত, এর অর্থ সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক শোভাযাত্রাকারীর দল)। দূর্নীতি এবং দমনের সাথে সে দলটি যুক্ত ছিল।
প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচন
২৩ অক্টোবর, ২০১১ দিবসটি ছিল তিউনিশিয়ার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ দিন, নিজ নিজ সংসদীয় প্রতিনিধি নির্বাচন করার জন্য ভোটাররা লম্বা সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল। এই নির্বাচন ছিল তথাকথিত আরব বসন্তের পর এক মুক্ত এবং স্বাধীন নির্বাচন।
ইসলামপন্থী দলের উত্থান
ইসলামপন্থী দল এননাহাদা প্রাপ্ত ভোটের ৪১ শতাংশ লাভ করে এবং তারা সংসদের সর্বমোট ২১৭ টি আসনের মধ্যে ৮৯টি আসন লাভ করে। আরব অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা একটি রাষ্ট্র হিসেবে, দেশটির উদারনৈতিকদের মতে, তিউনিশয়ায় ইসলামপন্থীদের উত্থান, দেশটির ধর্ম নিরপেক্ষ মূল্যবোধ এবং নারী অধিকারে জন্য এক হুমকি।
মনচেফ মারজোকি– প্রজাতন্ত্রের নতুন রাষ্ট্রপতি।
১২ ডিসেম্বর, ২০১১-এ জাতীয় সংসদ, মানবাধিকার কর্মী মনচেফ মারজোকিকে প্রজাতন্ত্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত করে। যিনি এর আগে বেন আলীর শাসনের সময়, প্রথম কারাগারে এবং পরে নির্বাসনে কাটিয়েছে।
বছর যত শেষের দিকে গড়িয়ে আসতে, গণতন্ত্র এবং চাকুরীর জন্য প্রতিবাদ এবং অবস্থান ঘর্মঘট বাড়তে থাকে, এবং তিউনিশিয়ার ভাবগম্ভীর অবস্থা চলতে থাকে, যখন উত্তপ্ত বিতর্ক জাতীয় সংসদে শুরু হয়, এবং (এননাহাদা দলের ) হামাদি জেবালি অর্ন্তবর্তীকালীন প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে।
২০১২ সালে তিউনিশিয়ার ঘটনাবলী জানতে আমাদের সাথে থাকুন।
এই পোস্টটি তিউনিশিয়া বিপ্লব ২০১১ –এর উপর করা আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ।