পাকিস্তানী অভিনেত্রী বীনা মালিক সব সময় বিতর্কের রাণী হয়ে থাকেন। ভারত এবং পাকিস্তানের উভয় দেশে তার সমর্থক এবং শত্রুদের কেউই বিগ বস নামক টেলিভিশন রিয়ালিটি শো-তে তার অংশগ্রহণের কথা এবং ডানপন্থী এক পাকিস্তানী উপস্থাপক এবং ইসলামিক পণ্ডিত –এর সাথে এক টেলিভিশন অনুষ্ঠানে তার খোলামেলা এবং সাহসী আলোচনার কথা ভুলবে না।
এইবার বীনা আরেক বিতর্ককে উসকে দেয়, যখন এফএইচএম ইন্ডিয়া নামক ভারতের এক ছেলেদের লাইফস্টাইল পত্রিকার প্রচ্ছদে তার নগ্ন ছবি ছাপা হয়। এফএইচএম ইন্ডিয়ার ডিসেম্বর সংখ্যার শিরোনাম “এবার আসিফ, বার্গাস এবং কাজের জন্য ভিসা পাওয়ার বিষয়ে পাকিস্তানী ডাব্লিউ এম ডি ( গণবিধ্বংসী অস্ত্র) বীনা মালিক”। প্রচ্ছদের ছবিতে বীনা মালিকের বাহুর দিকে একটি তীর চিহ্ন রয়েছে যা তার হাত আঁকা আইএসআই-এর একটা ট্যাটুর দিকে নির্দেশ করছে, এর তীর চিহ্নের সাথে লেখা রয়েছে “ বিশ্বের শেষ পর্যন্ত হলেও যে হাত পৌঁছাতে সক্ষম” ।আইএস আইএসআই হচ্ছে পাকিস্তানের বিখ্যাত গোয়েন্দা সংস্থা।
হাতে আইএসাই-এর ট্যাটু নিয়ে বীনা ছবি তোলায়, ভারত এবং পাকিস্তানের ডান, বাম এবং মধ্যপন্থীরা ব্যাপক প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করেছে। যেমনটা ধারণা করা হয়েছিল, বীনা মালিক সাথে সাথে নগ্ন হয়ে ছবি তোলার বিষয়টি অস্বীকার করে। পরে সে এইফএইচএম ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে ছবি বিকৃত করে উপস্থাপন করার অভিযোগে ১০০ মিলিয়ন পাকিস্তানী রুপী ক্ষতিপুরণ হিসেবে দাবি করে মামলা করে।
পাকিস্তানী প্রচার মাধ্যম এই ছবিটাকে একটা সম্পাদিত ছবি হিসাবে ঘোষণা দিয়েছে। পাকিস্তানের প্রায় সকল প্রধান ইংরেজি দৈনিক , সেই প্রচ্ছদের এই ছবির একটি সেন্সরশীপ (খানিকটা ঢেকে) সংস্করণ প্রকাশ করেছে। কোন ধরনের প্রমাণ ছাড়া পাকিস্তানের এক্সপ্রেস ট্রিবিউন এই ছবিটিকে ভুয়া এবং বীনা মালিকের এক প্রচারণা কৌশল বলে উল্লেখ করেছে।
জিও টিভিতে, বীনা নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করে। বীনা বলে, সে এফএইচএম ইন্ডিয়ার জন্য ছবির তুলেছে, কিন্তু নগ্ন হয়ে নয় এবং সে আইএসআই-এর ট্যাটু বাহুতে ধারণ করে ছবি তুলতে রাজি হয়েছিল।
এফএইচএম ইন্ডিয়া পত্রিকার সম্পাদক কবির শর্মা বলেছেন যে ছবিগুলো বিশ্বাসযোগ্য এবং তার কাছে এর প্রমাণ আছে। এখন উক্ত পত্রিকা বীনার বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করতে যাচ্ছে। কবির শর্মা টুইট করেছে:
@কা_বির : আমরা ইন্টারনেটে মিজ. মালিকের করা মামলার নোটিশ দেখতে পেয়েছি এবং এই বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য আমাদের আইন বিভাগের কাছে তা পাঠিয়ে দিয়েছি।
এদিকে নিজ দেশে, বীনা মালিকের ছবি সকল ধরনের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। ব্লগ লেখক জোহাইব নাসির, বীনা মালিককে পর্ন তারকা এবং এই ভাবে তার ছবি তোলাকে এক লজ্জাজনক কাজ বলে উল্লেখ করেছেন:
পাকিস্তান-এর বিতর্কিত এবং সাহসী অভিনেত্রী এবং মডেল বীনা মালিক, সে ভারতের পুরুষদের জন্য প্রকাশিত এক পত্রিকা এফএইচএম-এ্তে আরেকটি কেলেঙ্কারীর জন্ম দিয়েছে এবং উক্ত পত্রিকার জন্য সে খুব অপত্তিকর ছবি তুলেছে, যে সব ছবিতে বীনাকে প্রায় নগ্ন হয়ে ছবি তুলতে দেখা গেছে, তার শরীরের সংবেদনশীল অংশ সে তার বাহু দিয়ে ঢেকে রেখেছে। এমনকি এই বিষয়ে আরো আপত্তিকর বিষয় হচ্ছে, সে তার বাহুতে আইএসআই-এর ট্যাটু এঁকেছে, এবং পত্রিকার প্রচ্ছদে তাকে ডাব্লিউ এম ডি ( সম্ভবত আমরা ধরে নিচ্ছি ডাব্লিউএমডি মানে গণ বিধ্বংসী নারী) বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে পাকিস্তানী ব্লগস্ফেয়ারের অনেকে বীনার এই কর্মকাণ্ডকে রক্ষা করা চেষ্টা করেছে, বীনা যে কর্মের কথা অস্বীকার করেছে। এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের ব্লগার তাহা কাহের বীনা মালিককে রক্ষায় এগিয়ে এসেছে:
বীনার প্রতি অভিযোগ আনার আগে আমাদের অবশ্যই বুঝতে হবে যে, সে বিনোদন ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত। পেশাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যায় এমন যে কোন কোম্পানীর সাথে তাঁর কাজ করার অধিকার রয়েছে। এটা খুব অদ্ভুত একটি বিষয় যে, বীনা মালিকের ভারতীয় কোন প্রকল্প এবং কাজের সুযোগের ব্যাপারে এ দেশের জনতার জোরালো আপত্তি আছে। যে দেশের নিজেদের শিল্পী এবং কবিদের প্রতি ভুল আচরণের পরিষ্কার এক ভয়াবহ ইতিহাস রয়েছে, সে দেশের বীনা মালিকের এই কাজের সমালোচনা করার অধিকার নেই।
পাকিস্তানি ব্লগার রিয়াজ হক তার ব্লগ “হকস মাউজিং” –এ বীনার এই ছবি তোলার বিষয়টিকে এক ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে উপস্থাপন করেছে। সে এটিকে ধর্মীয় গোড়ামী এবং পাকিস্তান ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে এক সংস্কৃতিক প্রতিবাদ এবং চ্যালেঞ্জের অংশ হিসেবে বিবেচনা করছে। ভারতের বিগ বস নামের এক রিয়ালটি শো-তে অংশগ্রহণের পর এ বছরের শুরুতে পাকিস্তানের এক টক শো-তে এক মুফতিকে সে (ইসলামিক পণ্ডিত) চ্যালেঞ্জ করে।
মালিক হচ্ছে পাকিস্তানের ক্রমশ বাড়তে থাকা সেই নতুন এক জনগোষ্ঠীর অংশ যারা সংখ্যায় ক্ষুদ্র, কিন্তু সুনিদৃষ্টি ভাবে দেশটির ধর্মীয় গোড়ামীকে চ্যালেঞ্জ করছে। বীনা এবং তার মত অন্যরা, দেশটিতে ইসলামিক যে চরমপন্থার উত্থান ঘটেছে তার ঠিক বিপরীত এক বাস্তবতা উপস্থাপন করেছে। এই ইসলামিক চরমপন্থাকে যুক্তরাষ্ট্র এবং পাকিস্তানের ধর্ম নিরপেক্ষ-উদার অভিজাত সম্প্রদায় দেশের অস্তিত্বের জন্য এক হুমকি হিসাবে দেখে এবং বিদেশে সুনামের সাথে ভ্রমণ করা অনেক পাকিস্তানী বিদেশ থেকে নতুন চিন্তা নিয়ে আসে, তারা ২১ শতকের পাকিস্তান যেন নিজেকে খুঁজে পায়, সে ব্যাপারে অবদান রাখছে।
বীনা মালিকের ছবি বিতর্ক এমন এক সময় শুরু হল যখন ন্যাটোর বিমান হামলায় পাকিস্তানের ২৪ জন সেনা নিহত হবার ঘটনায় দেশটিতে এক উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনার ফলে পাকিস্তান দ্বিতীয় বন সম্মেলন বয়কট করেছে।পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্রে সম্পর্কে এখন এক উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে এবং হাসান হাক্কানির “মেমেগেট কেলেঙ্কারির” ঘটনায় পদত্যাগ করতে বাধ্য হবার পর, পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রে এক নতুন রাষ্ট্রদূত পাঠাতে বাধ্য হয়েছে।
লেখক, ব্লগার এবং সঙ্গীতপ্রেমি শোয়াইব তাইমুর টুইট করেছে :
@সবজ: মনোযোগ আরেক দিকে নিয়ে যাবার জন্য বীনা মালিক আপনাকে ধন্যবাদ আর এটা এমন এক সময় ঘটল যখন সপ্তাহ শুরু হল। আপনার মঙ্গল হোক#বীনা মালিক
ফরেন পলিসি ব্লগ আইএসআই-এর ট্যাটুর ঘটনায় বিস্মিত:
প্রচ্ছদের ছবির গ্রহণযোগ্যতা ছাড়াও, আরেকটি প্রশ্ন রয়েছে, কেন পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থার নামের ট্যাটু তার শরীরে?… মালিককে , আইএসআই-এর সমালোচনা করতে দেখা যায় না, তবে এর আগে তাকে পাকিস্তানের ক্ষমতা বলয়কে চ্যালেঞ্জ করতে দেখা গেছে। এর আগে জানুয়ারিতে সে শিরোনামের বিষয় হয়ে আসে যখন সে, প্রকাশ্যে এক মুসলমান ধর্মবেত্তার বক্তব্যকে খণ্ডন করে। উক্ত ব্যক্তি, রিয়ালিটি শো বিগ বসে পুরুষদের জড়িয়ে ধরা এবং অশালীন পোশাক পড়ার কারণে তাকে তিরস্কার করেছিল।
কিছু কিছু টুইট প্রদর্শন করেছে যে নেট নাগরিকদের এই বিষয়ে মনোযোগ প্রদান করেছে:
@স্টুপিফাই: এই সব নগ্ন ছবি আসলে ভুয়া। পোশাক না পড়া অবস্থায় বীনা মালিককে ঠিক এ রকম দেখায় না- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রেহমান মালিক।
@ইউমারজাভ:এই ছবির কপি তৈরি করুন এবং সেগুলোকে আপনার বাসার পেছনের খালি জায়গায় কবর দিন। আর এ ভাবে আমাদের নাতি নাতনিরা জানতে পারবে যে, আমাদের মাঝে এমন কেউ কেউ বাস করত যারা মুক্ত জীবন যাপন করত#বীনা
@সাদ_হারুন: তার বাহুতে আইএসআই কথা বলছে, কিন্ত, ছবিটা একেবারে যাচ্ছেতাই। #বীনা
এমটিভি ইন্ডিয়া এই ঘটনায় টুইটারে রসিকতা করেছে:
@চাচিচ্যাটারস:#বীনা যতই নিজেকে উন্মুক্ত করুক না কেন, সে নিজেকে এক অতীব বাজে আইএসআই-এর কর্মী হিসেবে প্রমাণ করবে।
@রিজভিকো: #বীনা এবং তার সবুজ সম্পদ (শরীর)। যাই হোক। আমি তার নিজেকে প্রকাশ করার স্বাধীনতায় বিশ্বাসী, যা অনেকের হজম করার সাহস নেই।twitpic.com/7peytv
এই পুরো ঘটনার পর, বীনার পিতা তাকে ত্যাজ্য করেছে:
@ইমপ্যাসোনেড_ পাক : পিতা কাপুরুষ, কন্যা সাহসী। কি এক পরিহাসের বিষয়, পিতা কন্যাকে তার সম্পদ থেকে মুক্ত করে দিল (ত্যাজ করল) আর কন্যা নিজের সম্পদ উন্মুক্ত করল।#বীনা মালিক.
ব্লগার সামি শাহ পুরো ঘটনার সারাংশ তৈরি করেছে এভাবে :
@সামিশাহ ঠিক আছে, নিঃসন্দেহে বলা যায় বীনা মালিকের ছবি ভুয়া নয়। এখন যদি আমাকে ক্ষমা করেন, তাহলে আমি এসব ছবি আরো ভাল ভাবে যাচাই করে দেখতে চাই।