সাকসিত সিয়াসাবুত এর প্রাপ্ত তথ্যানুসারে বন্যার পানি সরে যাবার সাথে সাথে থাইল্যান্ডের বন্যা পরিস্থিতির ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে, কিন্তু বন্যার কারণে এখন মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬০০ জন পার হয়ে গেছে:
মনে হচ্ছে বন্যার ক্ষেত্রে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, তা প্রায় শেষ হবার পথে এবং পানির স্রোত এখন ধীরে ধীরে কমে আসছে। কিন্তু দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে এখনো বন্যার পানি খুব ধীর গতিতে সরে যাচ্ছে। বন্যার পানি সরে যেতে শুরু করার সাথে সাথে ব্যাংককের জীবন যাত্রা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসছে। তবে বন্যা আক্রান্ত অনেক এলাকায় বাস করা নাগরিকদের ভোগান্তি এখনো চলছে। এখনো অনেক জায়গায় প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে বন্যার পানি ভেতরে প্রবেশ করার চেষ্টা করছে এবং মৃতের সংখ্যা এখন ৬০০ ছাড়িয়ে গেছে।
লাডপ্রাও০৬৪ একই সাথে খেয়াল করেছেন যে অনেক জায়গায় জীবন ক্রমশ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে:
যদিও অনেক ব্যাংককের আশেপাশের অনেক এলাকার নাগরিকদের বাসাগৃহ এবং অফিস বন্যায় ডুবে যাবার কারণে এখনো তার সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে আছে। এই শহরের আরো উত্তর এবং শহরের ভেতরের অনেক এলাকা এখনো বন্যার পানির নীচে। আমাদের এই ছোট্ট এলাকা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক আসছে। শনিবার আমরা কেন্দ্রীয় লাডাপ্রাও এলাকায় গিয়েছিলাম। এর ঠিক দু দিন আগে এটি আবার চালু হয়- এবং সেখানে যেতে আমাদের তেমন কোন সমস্যায় পড়তে হয়নি। এসসিবি প্লাজার কাছে কিছু পানি জমে ছিল, কিন্তু সেখানকার রাস্তার বাইরের দিকে অংশ (সাইড লেন) গাড়ি চলাচলের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছিল, কিন্তু ভেতরের দিককার সারিটিকে (লেনে) সম্ভবত বিশেষ প্রয়োজনে আলাদা করে রাখা হয়েছিল।
এদিকে দেখা যাচ্ছে, যে সমস্ত এলাকায় পানিতে ডুবে গিয়েছিল, পানি সরে যাবার পর সেখানে কাদা জমে আছে। আর এই পুরো এলাকা খানিকটা নোংরা দেখাচ্ছে।
মৃতের সংখ্যা এবং সম্পত্তি ও উপরিকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতির হিসেবে এই বন্যা বিগত পাঁচ দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ ধরে যে বন্যার মত এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে দেশটির বেশীর ভাগ প্রদেশকে আক্রান্ত করে রাখে, যার মধ্যে দেশটির রাজধানী ব্যাংককও রয়েছে, দেখা গেছে সেই বন্যায় নাগরিকরা টিকে থাকার জন্য বেশ কিছু সৃষ্টিশীল উপায় উদ্ভাবন করেছে।
থাই ফ্লাড হ্যাকস-এর একটি টাম্বলার একাউন্ট রয়েছে। তিনি এখানে বন্যায় টিকে থাকার জন্য সাধারণ নাগরিকদের উদ্ভাবিত বেশ কিছু কৌতূহলী যন্ত্রপাতি এবং উপায় একত্রিত করেছেন। এই সব নাগরিকরা বন্যায় টিকে থাকার জন্য এই সমস্ত বিষয় উদ্ভাবন করে। এর উদাহরণ নীচে একটি বিশেষ কৌশলে তৈরি করা নৌকার ছবি প্রদান করা হল, যা প্লাস্টিকের গামলা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
বন্যায় আক্রান্ত ভবনে গাড়ি রাখাতে গিয়ে শঙ্কা অনুভব করছেন? নীচে কিছু বিশেষ ভাবে মোটর সাইকেল রাখার জায়গা তৈরি করা হয়েছে:
এবং এই সমস্ত কার ব্যাগ এই গাড়িগুলোকে রক্ষা করবে:
নীচে পানির বোতল দিয়ে বেডালের জন্য জীবন রক্ষাকারী এক জামা (ভেস্ট) বানানো হয়েছে:
থাইল্যান্ডের একটি উভচর যাত্রীবাহী ট্রাক, দেখে মনে হচ্ছে এটা বন্যাক্রান্ত এলাকার রাস্তায় চলার জন্য তৈরি:
বিশ্ববিদ্যালয় সমূহ এমন নতুন যন্ত্র আবিষ্কার করার ক্ষেত্রে সাহায্য করছে যা বন্যার সময় জীবন রক্ষা করতে সাহায্য করবে। এর এক জনপ্রিয় উদাহরণ হচ্ছে ফ্লাডডাক, যা বন্যার সময় পানিতে বিদ্যুৎ ছড়িয়ে পড়েছে কিনা তার সতর্কতা সঙ্কেত প্রদান করবে:
ক্লারিক আফ্রিকা বেশ কিছু ক্রাউডসোর্সিং এপ্লিকেশন চিহ্নিত করেছে যা এলাকার বাসিন্দাদের প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করবে। এর একটা উদাহরন হচ্ছে ‘আমার গৃহ কি বন্যায় আক্রান্ত?’ (ইজ মাই হাউজ ফ্লাডেড) নামক ওয়েব সাইট। এখানে ব্যংককের যে সমস্ত বাসিন্দা তাদের ঘর ছেড়ে চলে গেছে, তার যদি নিজ নিজ ঠিকানা এখানে পোস্ট করে, তাহলে তার বাড়ির আশে পাশের বন্যা পরিস্থিতি সম্বন্ধে এই সাইট জানিয়ে দেবে।”
এখানে একটি কুকুর উদ্ধার এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের কাহিনী রয়েছে, যারা বন্যায় আটকে পড়া কুকুরের অনুসন্ধান এবং সাহায্য করেছে:
আমরা বেশ কিছু খালি গৃহ এবং গ্যারাজে বেশ কয়েকটি কুকুর পেয়েছি, যারা ভেসে থাকা গাড়ির উপর অবস্থান করছিল। আর এটাই প্রমাণ দিচ্ছিল, যে তারা কয়েক দিন ধরে কোন খাবার পায়নি। এই সমস্ত কুকুরগুলো আতঙ্কিত অবস্থায় ছিল। আমাদের উদ্ধার দলের নেট ও খালি হাতে এই সমস্ত কুকুরগুলোকে ধরতে বেশ অসুবিধা হচ্ছিল।
এ ছাড়াও আমরা বেশ কিছু কুকুর ছানা পেলাম, যেগুলো ভেসে থাকা একগাদা আবর্জনার উপর আশ্রয় নিয়েছিল। এই সমস্ত ছানারা আমাদের দেখে দারুণ উৎফুল্ল হয়ে উঠেছিল এবং সাথে সাথে আমাদের নৌকা লক্ষ্য করে ঝাঁপিয়ে পড়ে, যেখানে তারা খাবার এবং আদর উপভোগ করে। তাদের মা কাছে এক গভীর পানিতে অবস্থান করছিল এবং সেও আতঙ্কিত ছিল। অবশেষে একই সাথে শেষ পর্যন্ত আমরা মাকেও উদ্ধার করতে সক্ষম হই।