ইয়েমেনঃ তরুণরা যে জিসিসি চুক্তির বিরোধীতা করছে, সালেহ কি সেই চুক্তিতে স্বাক্ষর করবে

এই প্রবন্ধটি ইয়েমেন বিক্ষোভ ২০১১-এর উপর তৈরি আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ

ইয়েমেনের নাগরিকরা ১০ মাস ধরে অত্যন্ত ধৈর্য্যের সাথে দেশটির রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ত্যাগ করার জন্য অপেক্ষা করে যাচ্ছে। মূলত শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তনের দাবী থেকে এই অন্দোলনের শুরু। পরবর্তীতে শাসকদের নির্দেশে দেশটিতে যখন প্রথম রক্ত ঝরিল, তখন তা শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তনের বদলে সরকার পতনের এক তীব্র আন্দোলনে পরিণত হল।

সালেহ এখন জিসিসির চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে কালক্ষেপণ করছে, এর ফলে ইয়েমেনের নাগরিকরা দারুণ ভাবে এক সঙ্কটে পতিত হয়েছে এবং নিজেদের জীবন দিয়ে তারা এর মূল্য প্রদান করছে। তাদের এখন কঠিন সময় পার করতে হচ্ছে, তাদের এখন ঘরে রান্নার গ্যাস, বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই, গাড়ি চালানোর জ্বালানী তেল এবং বাড়িতে সরবরাহের পানি নেই। আর এখন তারা শাসকদের বাড়তে থাকা নির্মম আক্রমণ এবং ক্রমশ খারাপ হতে থাকা অর্থনীতির শিকার হচ্ছে। আর এর ফলে দেশটিতে উদ্বাস্তু সমস্যা ক্রমে বাড়ছে।

বিশ্ব এখন হাত পা গুটিয়ে বসে বসে এই দৃশ্য দেখছে এবং অপেক্ষা করছে, কখন সালেহ এই চুক্তি করে। এদিকে ইয়েমেনের নাগরিকরা মাসের পর মাস ধরে মৃত্যুর মুখে পতিত হচ্ছে এবং যন্ত্রনা সহ্য করে যাচ্ছে। ইয়েমেনের একটিভিস্টরা এক অনলাইন প্রচারণা শুরু করেছে, এই প্রচারণার মাধ্যমে তারা সারা বিশ্বকে জানাতে চায় যে ইয়েমেনের রাস্তায় মাসের পর মাস ধরে যে সমস্ত নাগরিক এই চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছে, তারা সেই সব নাগরিকদের সাথে আছে।

"No to GCC Deal"

“জিসিসির

#নো টু(২) জিসিসডিল, (জিসিসি নামক চুক্তিকে না বলুন) নামক হ্যাশট্যাগের অধীনে এই প্রচারণা শুরু হয়েছে। এখানে তারা তুলে ধরেছে কেন তারা এই চুক্তি প্রত্যাখান করেছে। একই সাথে তারা “জিসিসি চুক্তিকে না বলুন” নামে ফেসবুকে একটি পাতা তৈরি করেছে।

@ইয়েমেনফর(৪)চেঞ্জ এই সংবাদটি টুইট করেছে যে, জিসিসির প্রস্তাবিত চুক্তি অবশেষে স্বাক্ষরিত হতে যাচ্ছে। এখন এটি অবশ্যম্ভাবী এবং এখন এটি আর তাজা সংবাদ নয়:

#সালেহ, তার ডেপুটির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিকল্পনা সম্বলিত এক চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে। সরকারে এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, # ইয়েমেন#জেএমপি# জিসিসি t.co/b29V0eHj
গতকাল, সোমবার, ২১ নভেম্বর তারিখে রাষ্ট্রপতি আবদুল্লাহ সালেহ তার ডেপুটির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিকল্পনায় চুক্তি স্বাক্ষর করতে রাজি হন

রাষ্ট্রপতি সালেহ-এর বিচারের দাবীতে গত কয়েকদিন ধরে সারা ইয়েমেনে জুড়ে এক ব্যাপক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই ভিডিওটি গতকাল [২১ নভেম্বর] ইব শহরে অনুষ্ঠিত এক ব্যাপক বিক্ষোভের দৃশ্য প্রদর্শন করেছে। [ ভিডিও পোস্ট করেছে ইয়াসের৪৫৬০২৯] :

@সাহথাআলহারাজি, ইয়েমেনের এক সাংবাদিক। ভদ্রমহিলা তার পোস্টে ইয়েমেনের তরুণদের কিছু প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেছেন:

জিসিসির চুক্তি নিয়ে প্রচারণা, #নোটু(২) জিসিসিডিল # ইয়েমেন t.co/Z9flj1Fx

তার এই পোস্টে, আল হারাজি ব্যাখ্যা করেছেন:

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে এই চুক্তি জনতার কাছে পরিষ্কার নয়, এই চুক্তি নিয়ে নাগরিকরা যা বলছে তা হচ্ছে এই যে এই চুক্তি সালেহ-এর দায়মুক্তি ঘটাবে, যদিও ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে আগস্টের মধ্যে দেশটির ২১৯৫ জন নাগরিক নিহত হয়েছে।

অনেকে এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন, যেমনটা @সামাওহাদ্দাহ তার টুইটে প্রশ্ন করেছে:

যখন এই মুহূর্তে সালেহ-এর সেনারা #তাইজ এবং আরহাবে বোমা বর্ষণ করে যাচ্ছে, তখন আমরা কিসের চুক্তির কথা বলে যাচ্ছি? জন্মের আগেই এটি মৃত!#নোটু(২)জিসিসিডিল#ইয়েমেন

@আবজামাল বেদনা প্রকাশ করেছে [আরবী ভাষায়]:

ما يثير إشمئزازي بمبادرة الخليج أنها اتت بطلب من صالح في خضم عاصفه ثوريه كانت على وشك الإطاحه بنظامه …يا للسخافه! #Yemen #No2GCCdeal
উপসাগরীয় দেশগুলোর উদ্যোগের মধ্যে যে বিষয়টি আমাকে ক্ষুব্ধ করেছে, তা হচ্ছে এটি তখন সালেহ-এর এক অনুরোধ হিসেবে এসেছে, যখন বিপ্লবের প্রবল বাতাস তাকে ক্ষমতা থেকে প্রায় উৎখাত করে ফেলতে যাচ্ছে……কি বিচিত্র!

@ইয়েমেনফ্রিভয়েস তার প্রত্যাখানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে:

#নোটু(২)জিসিসিডিল, জিসিসির চুক্তিকে না বলুন, কারণ এটি কেবল সালেহ-এর ক্ষমতা থেকে বিদায় নেবার পন্থা বের করার চুক্তি এবং এটি #ইয়েমেনের জন্য কোন সমাধান নয়।

@ইব্রাহিমআদিল এর সাথে যোগ করেছে [আরবী]:

مازلت أتساءل : كيف اقتنعت المعارضة اليمنية بالشرط الذي يخول لصالح أن يبقى رئيسا فخريا؟
“আমি এখনো বিস্মিত কি ভাবে ইয়েমেনের সরকার বিরোধীদের এই রকম একটা শর্ত মেনে নিতে রাজী করানো সম্ভব, যে শর্তে সালেহ-কে উপাধী ধারী রাষ্ট্রপতি হয়ে থাকার সুযোগ করে দিচ্ছে?”

ইয়েমেনের তরুণরা, জাতিসংঘের এক দ্রুত এবং এক নিশ্চিত সিদ্ধান্ত চাইছে, যা কিনা ইয়েমেনের রক্তপাত বন্ধ করবে এবং এটি তারা চাইছে সালেহ-এর সম্পদ জব্দ করে এবং তাকে আর্ন্তজাতিক অপরাধ আদালতে হস্তান্তরের মাধ্যমে। জুয়ান কোল (@জেআরআইকোল) মধ্য প্রাচ্য বিষয়ক এক বিশেষজ্ঞ, তিনি ইয়েমেনের নোবেল শান্তি পুরষ্কার বিজয়িনী তাওয়াক্কাল কারমান-এর একটি উক্তি উদ্ধৃত করে টুইট করছেন, এই টুইটে বলা হচ্ছে:

#ইয়েমেনে গণতান্ত্রিক বিপ্লবের জন্য এখন পশ্চিমের দেশ সমূহের উচিত #সালেহ-এর সকল সম্পদ জব্দ করে নেওয়া, এবং তাকে আইসিসির কাছে হস্তান্তর করা- তাওয়াক্কাল #কারমান।

তাইজে নারীদের এক ব্যাপক বিক্ষোভ

তাইজে নারীদের এক ব্যাপক বিক্ষোভ, যারা রাষ্ট্রপতি আবদুল্লাহ সালেহ-এর অনুগত বাহিনীর দ্বারা সাধারণ নাগরিকদের উপর সংঘঠিত অপরাধের নিন্দা জানাচ্ছে।.

@ইয়োথইয়েমেন, ফেসবুকের এই পাতা থেকে এই ছবিটি প্রদর্শন করেছে এবং ব্যাখ্যা করছে:

ইয়েমেনের দক্ষিণের শহর তাইজে মঙ্গলবার এক ব্যাপক গণ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রপতি আবদুল্লাহ সালেহ-এর অনুগত বাহিনীর দ্বারা সাধারণ নাগরিকদের উপর সংঘঠিত অপরাধের নিন্দা জানিয়ে এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।

অনেক ইয়েমেনী নাগরিক দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে রাষ্ট্রপতি সালেহ ক্ষমার অযোগ্য। বিশেষ করে বিগত মাসগুলোতে সে যে রক্তপাত ঝরিয়েছে, এর জন্য তার কোন ক্ষমা নেই।

গতকাল সানার রাস্তায় একজন নারী সালেহ-এর বিচার দাবী করে রাস্তায় মার্চ করছে এবং শহীদের রক্তের ও নতুন এক ইয়েমেন গড়ার প্রতি শপথ করছে, এই ভিডিওটি তা প্রদর্শন করেছে। (ভিডিও পোস্ট করেছে পিপিআরইয়েমেন)।

@শাবাদেল টুইট করেছে:

#নোটু(২)জিসিসি ডিল; জিসিসি চুক্তিকে না বলুন, কারণ সালেহ-কে নিরপেক্ষ বিচারের মুখোমুখি না করার মানে শহীদের রক্তের সাথে বেইমানি করা, #সালেহ,#ট্রায়াল#আইসিসি

ইতোমধ্যে তিনবার সালেহ জিসিসি-র এই চুক্তি স্বাক্ষর করা থেকে পিছিয়ে এসেছে, কাজে এখন সবচেয়ে বড় যে প্রশ্নটি রেয়ে গেছে সেটি হচ্ছে এবারো কি সে জিসিসি-এর এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করবে, নাকি করবে না?

অনেক ইয়েমেনী নাগরিকের মত, সম্পাদক @ব্লাকহাউন্ডশেলও বিস্মিত:

সালেহ কি আজ স্বাক্ষর করবে? আমার টাইম লাইনে থাকা সকল ইয়েমেনীর ভাবনা।

এবং অনেকে বিস্মিত যে, সে কি কোন কালে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করবে, সে কি এটাকে সম্মান প্রদর্শন করবে? @রাশেদইয়ামান বলছে:

#ইয়েমেন, সালেহ কি এখন এই চুক্তিকে সম্মান প্রদর্শন করবে?! on.fb.me/trcz8Z #ওয়াইএফ

এই প্রবন্ধটি ইয়েমেন বিক্ষোভ ২০১১-এর উপর তৈরি আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .