থাইল্যান্ডের বন্যা বিপর্যয়

থাইল্যন্ডের বিগত ৫০ বছরের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় মৃতের সংখ্যা ৫০০-তে এসে ঠেকেছে। সরকারি কর্মকর্তারা বলছে যে দেশটির ২৫ টি প্রদেশ এখনো বন্যাক্রান্ত। এই বন্যায় দেশটির ১০ লক্ষ পরিবার আক্রান্ত হয়েছে এবং বন্যার ফলে দেশটির ৪৪ লক্ষ একর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ব্যাঙ্ককের গভর্ণর জানাচ্ছে যে শহরের ৪৭০টি এলাকা বন্যার পানিতে আক্রান্ত হয়েছে এবং অনেকে এলাকার নাগরিকদের সেই সমস্ত এলাকা ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নীচে একটি মানচিত্র রয়েছে যেখানে থাইল্যান্ডের বন্যা চিহ্নিত এলাকাসমুহ উল্লেখ করা হয়েছে।

সুথিচাই ইয়ুন বন্যা এবং থাইল্যান্ডের বৌদ্ধ উপাসনালয় এবং সন্ন্যাসীদের উপর তার প্রভাব নিয়ে লিখেছেন:

বন্যার এই সময়টা বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা সম্মিলিত ভাবে বন্যার পানি বাড়ার মত বিষয়টিকে মোকাবেলা করার জন্য জোরেশোরে নেমে পড়েন। এই বন্যায় বেশ কিছু উপাসনালয় আক্রান্ত হয় এবং দূর্গম এলাকার সন্ন্যাসীরা প্রতিদিন খাবারের সঙ্কটে ভুগছে। যেহেতু বন্যা বেশীর ভাগ প্রদেশে হানা দিয়েছিল, তাই স্থানীয় বাসিন্দারা তাদেরকে সেই ভিক্ষান্ন প্রদান করতে পারছিল না, যা দিয়ে তারা প্রতিদিনের অন্নের ব্যবস্থা করতে সক্ষম।

দি থাইল্যান্ড লাইফ বন্যার বেশ কিছু ছবি পোস্ট করেছে:

আজ বিকেলে আমি আমার ক্যামেরা নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম এবং দেখতে চাইলাম যে, আমরা সুত্থিসানের বাসিন্দারা এই বিষয়ে কতটা সচেতন। দেখে বোঝা গেল যে বন্যার পানি ভালোভাবে প্রধান সড়কে এসে পৌঁছছে, তবে পানি বৃদ্ধির গতি এখন আর এতটা তীব্র নয় যে তা শহরকে আরো ডুবিয়ে দেবে। তবে দেখা যাচ্ছে বন্যা বেশ কিছু ছোট ছোট রাস্তাকে পুরোপুরি ডুবিয়ে দিয়েছে, যেমনটা আপনারা ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন।

দি থাইল্যান্ড লাইফের ব্লগ থেকে নেওয়া।

ল্যাডপ্রাও৬৪ সংবাদ প্রদান করেছে যে বন্যাক্রান্ত এলাকার পরিস্থিতির অপরিবর্তিত রয়েছে:

আমাদের দৃষ্টিতে, আজকেও বন্যা পরিস্থিতি তেমন একটা পাল্টায়নি। যে সমস্ত এলাকা বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে, এখনো তা পানি বন্দী অবস্থায় রয়েছে, যদিও আরো খানিকটা এলাকায় বন্যার পানি ছড়িয়ে পড়েছে। লাডপ্রাও নামক রাস্তায় যে পানি জমে আছে, তার সরার নাম নেই। যেমনটা আমি এর আগে উল্লেখ করেছি, দাবী করা হচ্ছে যে নীচের সুড়ঙ্গ পথ দিয়ে পানি অপসারিত হচ্ছে।

বন্যায় আক্রান্ত কয়েকটা প্রদেশ বেশ খানিকটা উত্তরে অবস্থিত, যার মধ্যে পাথুম থানিও অর্ন্তুভুক্ত, এবং এখন বলা হচ্ছে যে সেখানে বন্যার পানি খানিকটা কমেছে। আর এ রকম সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে যে সেখানকার জীবনযাত্রা আগামী দশদিনের মধ্যে ক্রমশ স্বাভাবিক হয়ে আসবে, যদিও এটাকে অনেকটা ধারণার মত মনে হচ্ছে।

নীচে এক মোটর সাইকেল আরোহীর একটি ভিডিও রয়েছে, যে বন্যার পানির মধ্যে রাস্তায় চলাচল করতে সক্ষম হয়েছে:

টুইটার ব্যবহারকারী @থানোনজিকে, সরকারের ত্রাণ তৎপরতার সমালোচনা করছেন:

@থানোনজিকে:৬. কেবল মাত্র মধ্যবিত্ত শ্রেণীর নাগরিকরা বন্যা বিষয়ক তখ্যের জন্য ইন্টারনেট প্রবেশ করার ক্ষমতা রাখে। সাধারণ নাগরিকরা বন্যা পরিস্থিতি সম্বন্ধে কোন ধারনাই পাচ্ছে না।

@থানোনজিকে: ৭. সরকারের কোন ধারণা নেই যে কোন কোন এলাকাকে বন্যার হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। সরকার, নাগরিকদের বদলে কারখানা রক্ষায় মনোযোগ প্রদান করেছে।

@থানোনজিকে: যে সমস্ত এলাকা বন্যায় আক্রান্ত হতে যাচ্ছে সেখান থেকে নাগরিকদের অপসারণে সরকারের কার্যক্রম, তার দুর্বল ত্রাণ তৎপরতার প্রমাণ।

ব্রুনাইয়ের একজন ব্লগার একটি ভিডিও তৈরি করেছে, তাতে তিনি বন্যার্তদের জন্য আরো সাহায্যের আহবান জানিয়েছেন।
নীচে প্রাতঃকৃত্য [পায়খানা] সারার এক বস্তার (জুডনাক ব্যাগ) ছবি রয়েছে যা মূলত আশ্রয় কেন্দ্রের স্বাস্থ্যবিধি এবং পয়ঃনিস্কাশন সমস্যার সমাধানের উদ্দেশ্য তৈরি করা হয়েছে:

জুডনাক ব্যাগ আসলে কি এবং এই ব্যাগ তৈরিতে ফেসবুকের ভুমিকা কি?

“জুড নাক” ব্যাগ হচ্ছে এক ধরনের ব্যাগ। ১৭ অক্টোবর ২০১১-এ ফেসবুকের অপরিচিত এক দল ব্যক্তি মিলে এই প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করেছিল। এই মঙ্গলবারে আমরা এক বন্ধুকে আবিষ্কার করলাম যার একটি কারাখানা রয়েছে যে কারখানায় জৈব পচনশীল উপাদান তৈরি হয়, যে কিনা তার এই সব উপাদান দিয়ে আমাদের জন্য একটা ব্যাগ তৈরি করে দিতে পারে। বৃহস্পতিবারের মধ্যে আমরা চুলালোংকর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের কাছ থেকে ডিজাইন করার জন্য পলি এবং টন নামক উপাদান পেলাম। শুক্রবারের মধ্যে আমরা প্রাথমিক পর্যায়ের জন্য ২০, ০০০ ব্যাগ তৈরি করলাম। আর এই পুরো প্রক্রিয়াটি এমন একদল লোক সম্পন্ন করল, যারা এর আগে নিজেরা পরস্পরকে প্রায় চিনত না। যারা এখানে অর্থ এবং শ্রম প্রদান করল, যা আমরা সঠিক সময়টাতে পেলাম। যখন দেশটি বিগত ৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ বন্যার মুখোমুখি হয়েছে, সেই মুহুর্তে এই প্রকল্প বন্যায় আক্রান্ত বেশীর ভাগ মানুষের সাহয্যে আসবে, তখন আমরা এই ধরনের ব্যাগ তৈরিতে উতসাহিত হয়েছি এবং আশা করি আমরা যত দ্রুত সম্ভব তা বিতরণ করতে পারব।

#থাইফ্লাড নামক হ্যাশট্যাগ এখনো থাইল্যান্ডের বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করার এক বিশ্বাসযোগ্য উপাদান:

@টান_নেটওয়ার্ক :গণ স্বাস্থ্য বিভাগ বন্যার সময় জনগণকে বরফ দিয়ে তৈরি খাবার বা ঠাণ্ডা পানীয় খেতে সতর্ক করছে। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে বরফের দিয়ে তৈরি খাবার এবং পানীয় দূষিত হয়ে আছে।

@এমসিওটি _এইএনজি : ব্যাংককের অর্ধেক ট্যাক্সি উধাও হয়ে গেছে। বন্যার কারণে ১০০,০০০ গাড়ীর মধ্যে সাধারণত ৬০,০০০ গাড়ি চলাচল করছে। এলপিজি, এনভিজি গ্যাস স্টেশন সব বন্ধ হয়ে আছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .