গত বছর, সংবাদে বর্ণনা করা হয় যে, সে বছরের বন্যা দেশটির কয়েক যুগের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ এক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। কিন্তু এ বছরের বন্যা পরিস্থিতি তার চেয়ে খারাপ আকার ধারন করেছে। বেশীর ভাগ প্রদেশ বন্যায় আক্রান্ত, বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধ তাদের বন্যা প্রতিরোধ ক্ষমতা সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেছে এবং দেশটির প্রধান শিল্পাঞ্চল পুরোপুরি বন্যায় ডুবে আছে। দেশটির বিপর্যয় কেন্দ্র বলছে ইতোমধ্যে তারা ১০০,০০০ ফোন পেয়েছে, যাদের বেশীর ভাগই বন্যার সর্বশেষ সংবাদ জানতে চেয়ে ফোন করেছে।
বন্যা পরিস্থিতি সম্বন্ধে আনুষ্ঠানিক যে সব তথ্য প্রদান করা হয়েছে, তাতে যে সমস্ত সড়ক বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে তা চিহ্নিত করা এবং প্রধান প্রধান বাঁধের প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পর্কে সংবাদ প্রদান করা হয়েছে:
১৮ টি প্রদেশের ৭৫ টি প্রধান মহাসড়ক বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে এবং এই সমস্ত রাস্তা চলাচলের অনুপোযোগী। ২৯ টি প্রদেশের ১৯২ টি গ্রামীণ সড়ক দিয়ে চলাচল করা সম্ভব নয় এবং উত্তরের ১৮ টি রেল চলাচল ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে।
প্রধান প্রধান সব বাঁধের বন্যা প্রতিরোধ ক্ষমতার বর্তমান অবস্থা:
-ভূমিবল বাঁধ বিপদসীমার ৯৯ শতাংশের মধ্যে অবস্থান করছে
-সিরিকিত বাঁধ তার বিপদসীমার ১০০ শতাংশের মধ্যে অবস্থান করছে
-কাওয়ে নোই বাঁধ বিপদসীমার ১০০ শতাংশের মধ্যে অবস্থান করছে
-পাসাক বাঁধ বিপদসীমার ১০০ শতাংশের মধ্যে অবস্থান করছে
-উবানরাট বাঁধ ( খোন কিয়েন প্রদেশ) বিপদসীমার ১২০ শতাংশের মধ্যে অবস্থান করছে
-লামপো বাঁধ বিপদসীমার ৯৯ শতাংশের মধ্যে অবস্থান করছে
বন্যার পানি ক্রমশ বাড়তে থাকার কারণে বাঁধে আটকে থাকা মাত্রাতিরিক্ত পানি ছেড়ে দিতে হচ্ছে। ব্যাংকক পণ্ডিত প্রশ্ন করছে কেন বাঁধে আটকে থাকা পানি আরো আগে ছেড়ে দেওয়া হল না:
এখানে পানি ছেড়ে দেবার ব্যাপারে দেরী করা হয়েছে এবং যখন বাঁধে পানির স্তর সমান হয়ে যায়, তখন হঠাৎ করে তারা আগস্ট মাসে প্রচুর পানি ছেড়ে দেওয়া শুরু করে। কেন জমে থাকা পানি আরো আগে ছেড়ে দেওয়া হল না।
আমার কি এই বিষয়ে কোন ব্যাখ্যা পাব যে কেন শুকনো মৌসুমে অল্প পানি ছাড়া হচ্ছে, আরলে বাঁধ ভর্তি করে এমন ভাবে পানি সংরক্ষণ করা হচ্ছে যাতে বর্ষা মৌসুমে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ পানি একবারে ছেড়ে দিতে হয়। আর এই কাজটি করা হচ্ছে এমন এক সময়, যখন ইতোমধ্যে বন্যা শুরু হয়ে গেছে?
এর আগের গ্লোবাল ভয়েসেস–এর এক পোস্টে কিছু অনলাইন মানচিত্র তুলে ধরা হয়, যেগুলো বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছিল। গুগল ক্রাইসিস রেসপন্স পাতা অন্য সব প্রয়োজনীয় লিঙ্ক এবং ওয়েব পাতা যুক্ত করে, যেগুলো বন্যা সম্বন্ধে তথ্য প্রদান করছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, নিচে বেশ কিছু বন্যা আক্রান্ত এলাকার মানচিত্র রয়েছে:
নীচে আশ্রয় কেন্দ্রের এক মানচিত্র:
জাতিসংঘ প্রশিক্ষণ এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান অথবা ইউনিটার ( ইউনাইটেড ন্যাশনাল ইনিষ্টিটিউট অফ ট্রেনিং এন্ড রিসার্চ) সংবাদ প্রদান করেছে যে, বন্যার পানি থাইল্যান্ডের নাখন নাওয়াক-এর উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা মূলত ভূউপগ্রহের তথ্যের মাধ্যমে জানা গেছে। আরেকটি মানচিত্র নির্দেশ করছে সেই সমস্ত উপদ্রুত এলাকা, যেখানে বালিরবস্তা ফেলা জরুরী:
এই বিষয়ে প্রাসঙ্গিক হ্যাশট্যাগ সমূহ হচ্ছে #বিকেকেফ্লাড #থাইফ্ল্যাডইএনজি#থাইফ্ল্যাড। এখানে আসা কিছু সংবাদ এবং প্রতিক্রিয়া।
@গ্রেটএএমএম: ভাবছি, যদি এই সমস্ত হৃদয় বান স্বেচ্ছাসেবকরা না থাকত, তাহলে এখন বিকেকে-এর ক্ষেত্রে কি ঘটত? কি ভাবে এই সরকার বিষয়টি মোকাবেলা করবে??#থাইফ্লাডিএনজি।
@নুমনিম: আশা করি যে কিছু মানুষ অন্য মানুষের উদ্বেগের বিষয়ে চিন্তা করবে এবং তারা সবসময় নিজেকে সবার আগে রাখবে না।
@ওয়ারামন : বন্যার কারণে এখন ৫০০,০০০ জন শ্রমিক কর্মহীন এবং সকল কারখানা বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
@জর্জবিকেকে: ব্যাংককের কাছে বন্যা চলে আসার ফলে তা বিশ্বের ২৫ শতাংশ হার্ড ডিস্ক উৎপাদন ক্ষমতাকে স্থগিত করে ফেলেছে।
@তুলসাথিত: আরটি @ভিন_ এনটি : এফআরওসি-এর তথ্য অনুসারে নাভা নাকরন শিল্প এলাকার ১০০ শতাংশ এলাকা বন্যায় আক্রান্ত।
সরকারের যে প্রকৃত পরিস্থিতি তুলে ধরা প্রয়োজন, একটি ফোরামে পোস্ট করা লেখায় জর্জ সেই কথাটি তুলে ধরেছে:
শত শত স্বেচ্ছাসেবককে সাথে নিয়ে থাইল্যান্ডের সামরিক বাহিনী নাভা নাকারন-এ এক ব্যাপক উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে। কিন্তু বিপদের মাত্রার কারণে ঝুকি প্রচণ্ড। আজ রাতে পূর্ব ব্যাংককের চারটি জেলা এক হাটু পানির নীচে তলিয়ে গেছে যা আকারে প্রায় সিঙ্গাপুরের দ্বিগুণ। কিন্তু অস্থায়ী ভাবে নির্মিত মাটির বাঁধগুলো ভেঙ্গে পড়ে তাহলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে পড়বে।
আমি সরকারের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছি। তিনি আমাকে বলেছেন, পরিস্থিতি এখন জটিল। তিনি বিভিন্ন তথ্য দেখেছেন, কিন্তু সরকার বলছে, লোকজন যাতে “আতঙ্কিত না হয়ে পড়ে” সেই কারণে সরকার তা এখনই প্রকাশ করতে চায় না। তবে তিনি বলেন, আমি মনে করি লোকেদের আগে থাকতে সতর্ক করা প্রয়োজন।
টুইট ইয়োরসেলফ থাই বন্যার ব্যাপারে আরো সঠিক তথ্য চান:
এখানে একটি বিষয় রয়েছে, এর বিপদের সঠিক মাত্রা পরিমাপ করা ছাড়াও, এই বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে একটি বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে যে এই বন্যা বাস্তবে কোন পর্যায়ে রয়েছে। নানা দিক থেকে বিভিন্ন রকমের বিভ্রান্তিকর তথ্য আসছে। কেবল সামাজিক প্রচার মাধ্যম নয়, সরকারের বিভিন্ন বিভাগ থেকেও বিভ্রান্তমূলক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এখন বোঝা মুশকিল আমরা সবাই কতটা সঠিক তথ্য পাচ্ছি।