এই পোস্টটি লিবিয়া গণজাগরণ ২০১১-এর উপর করা আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ।
মুয়াম্মার গাদ্দাফির মৃত্যুতে লিবিয়ায় প্রায় চার যুগের বেশি সময় ধরে শাসন করা এক শাসকের ইতি ঘটাল। গাদ্দাফির শাসনামল, সে যে ভাবে মারা গেছে এবং লিবিয়ার এক নতুন প্রতিশ্রুতিশীল যাত্রা শুরুর বিষয় নিয়ে সারা বিশ্বের মানুষ তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যক্ত করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার ব্লগাররাও এই ঘটনায় দ্রুত তাদের মতামত প্রদান করেছে।
ভারতীয় সংবাদ পত্রিকা হেডলাইন টুডের সাংবাদিক শিব আরোর, লিবিয়ার বিন জাওয়াদে অবস্থানের ঘটনাটি বর্ণনা করছেন। সে সময়, তিনি আর তার সহকর্মীরা গাদ্দাফির সেনাদের থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দুরে অবস্থান করে নিজেকে বাঁচানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করছিল:
সে রাতে তীব্র শীত পড়েছিল। সারা রাত ধরে বিদ্রোহীরা মাঝে মাঝে এ্যাক-এ্যাক নামক কামান থেকে গোলাবর্ষণ করেছিল। ভূমধ্যসাগরের হওয়া রাতটিকে আরো অস্বস্থিকর এক রাত করে তোলে। আমরা গাড়ী চালিয়ে হাসপাতাল চলে গেলাম এবং ডাক্তার আলতারাকে জিজ্ঞেস করলাম, যদি তার সাধ্যে কুলায়, তাহলে তিনি হাসপাতালে আমাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারবেন কিনা, বিশেষ করে যখন আমরা হোটেল থাকতে চাইনি। তিনি বললেন “কোনভাবে হোটেলে থাকার কথা চিন্তা করবেন না। এটা এখন এখানকার সবচাইতে বিপজ্জনক এলাকা। রাতটা আমাদের সাথে কাটান। আমরা যা খাব, আপনারাও তাই খাবেন। আমরা যেখানে শোব, আপনারাও সেখানে শোবেন। যদি আমাদের মৃত্যুবরণ করতে হয়, তাহলে আমরা একসাথে মৃত্যুবরণ করব। আমরা একটা পরিবার”। আর আসলেই তিনি তা মনে করেন।
শ্রীলংকা থেকে ইন্দ্রজিৎ সামারাজিভা লিখেছেন:
আহ, মুয়াম্মার। একদা বয়স্ক এক আমুদে বিকারগ্রস্ততার মানুষের নমুনা, অনেকটা মারভিন সিলভার মত আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত একজন ব্যক্তি। যদি খুন, দূর্নীতি, সন্ত্রাস এবং সাধারণ ব্যর্থতার বিষয়গুলো বাদ দেওয়া যায়, তাহলে সে এক মজার চরিত্র। জেঙ্গা জেঙ্গা। এখন তিনি মৃত।
আমার নিজের ব্লগে, আমাদের পরিবারের লিবিয়ায় বাস করার ফলে, আমরা গাদ্দাফির শাসনামলের শুরুর সময়কার যে অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলাম, তা উল্লেখ করেছি:
গাদ্দাফির শাসনামলে লিবিয়া কখনো আর আগের মত ছিল না। লিবিয়ার সংবিধান স্থগিত করা হয়। তিনি যা উচ্চারণ করতেন, সাথে সাথে তা কার্যকর হত, কারণ তিনি ছিলেন আইন। তার বক্তব্যকে খণ্ডন করার ক্ষমতা কারো ছিল না। তিনি যা বলতেন, তা যেন পালন করার যোগ্য হয়ে যেত। যেহেতু পশ্চিমা প্রভাবের প্রতি তার বেশ নেতিবাচক মনোভাব ছিল, তাই সেখানকার সকল স্কুল থেকে সকল বিদেশী ভাষায় পড়ালেখা বন্ধ বন্ধ করে দেওয়া হয়। যার ফলে আমার বড় বোনের পড়ালেখায় প্রচণ্ড সমস্যার সৃষ্টি হয়।
পাকিস্তানী ব্লগার কাশিফ আজিজ, চৌরঙ্গী ব্লগে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন যে, আরব বিশ্বের সাম্প্রতিক বিপ্লব তাদের কোথায় নিয়ে যাবে:
আমি সম্প্রতি আরব বিশ্বে যে বিপ্লবের ঢেউ সৃষ্ট হয়েছে, যাকে আরব বসন্ত বলে অভিহিত করা হচ্ছে, সেটাকে আমি বুশের শাসনামলে যে নতুন মধ্যপ্রাচ্যে প্রস্তাবনার সৃষ্টি হয়েছিল সে রকমটা হিসেবে বিবেচনা করছি। এই বিপ্লবের ঢেউ যা কিনা তিউনিশিয়া এবং মিশরের শাসকদের ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে বাহরাইন এবং ইয়েমেনকে কাঁপিয়ে দিয়ে যাচ্ছে এবং তা সিরিয়া নৈরাজ্যের সৃষ্টি করেছে। এদিকে ইতোমধ্যে ইরাককে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। সম্প্রতি লিবিয়ার শাসকের পতন ঘটেছে এবং পাকিস্তান এর নজরে রয়েছে।
এর পরে কে? আর, এই বিশৃঙ্খলা ও হানাহানির শেষ কোথায়?
ইন্দ্রজিৎ তার পোস্টে উপসংহার টেনেছে এভাবে :
প্রভাকরন থেকে বিন লাদেন, সব সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করা হয়েছে এবং তাদের মেরে ফেলা হয়েছে। এই ঘটনায় আমি খুব একটা আনন্দ পাইনি, তবে এটা সম্ভবত মোটামুটি ভালো একটা কাজ, কারণ যুদ্ধ কোনদিন ভালো কোন বিষয় নয়, যখন যুদ্ধ শেষ হয়, তারপর কোন দেশ উন্নত এক ভবিষ্যৎ গড়তে পারে, আমি আশা করি যে গাদ্দাফির মত এক মানুষ কখনো সামনে উঠে আসবে না। তার বদলে আমি আশা করি এই যে আমরা এমন এক সময়ে প্রবেশ করব, যা এ ধরনের নিষ্ঠুর বোধহীন মানুষদের হয় উপড়ে ফেলা হবে অথবা তা কখনোই তাদের শেকড় মেলতে দেবে না। লিবিয়ার ভাগ্য সুপ্রসন্ন হোক। দেশটির জনগণের তা প্রয়োজন।
যখন বিশ্ব লিবিয়ার জন্য প্রার্থনা করছে যাতে তারা নতুন ভাবে সবকিছু শুরু করতে পারে, তখন তারা তাদের প্রতিদিনের জীবনের জন্য যুদ্ধ করেছে। আশা করছি তাদের নতুন প্রজন্ম শান্তির এক নতুন যাত্রা শুরু করতে পারবে।
এই পোস্টটি লিবিয়া গণজাগরণ ২০১১-এর উপর করা আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ।