দক্ষিণ কোরিয়া: যে সব কূটনীতিবিদেরা ইংরেজিতে কথা বলতে পারে না

১৩ সেপ্টম্বর ২০১১-এ, এই বিষয়টি উন্মোচিত হয়ে পড়ে যে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতি দশজন কূটনীতিবিদ-এর মধ্যে চারজনের “ইংরেজী ভাষায় কূটনৈতিক পর্যায়ে কাজ চালানোর মত” যথাযথ জ্ঞান নেই। এর ফলে পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তাদের দক্ষতা নিয়ে জনতার মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

মন্ত্রণালয় নিজেই নিজেকে বিব্রত করার ঘটনা এই প্রথম নয়। ফেব্রুয়ারি, ২০১১-এ আবিস্কার হয় যে, আনুষ্ঠানিক বাণিজ্য চুক্তির ইংরেজী অনুবাদের মধ্যে শত শত ভুল রয়েছে। সেপ্টেম্বর ২০১০-এ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়, যখন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে যে যথাযথ প্রক্রিয়া গ্রহণ না করে, তার কন্যাকে মন্ত্রনালয়ের জন্য বিশেষ ভাবে চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। মার্চ ২০১১-এ, সাংহাইয়ের কনস্যুলেট জেনারেল অফিসের প্রধানের নামে বেশ কয়েকটি বিবাহ বর্হিভূত প্রেমের কেলেঙ্কারি প্রকাশ পায়, যা জাতিকে বিস্মিত করে। সর্বশেষ এই ঘটনায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অস্বস্তিকর “প্রেম মন্ত্রনালয়” নামক খেতাব অর্জন করে এবং একই সাথে বেশ কিছু বিশেষ নথি এবং সরকারের করা চুক্তিপত্র ফাঁস হয়ে যাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। .

Image of Korean National Assembly Building. Photo by author (CC - BY - 2.0).

কোরিয়ার জাতীয় সংসদ ভবন, ছবি লেখিকার (সিসি- বাই- ২.০)

মন্ত্রণালয়ের কেলেঙ্কারি

সাম্প্রতিক এই তথ্য উন্মোচনের ঘটনায় জনতার সন্দেহ আরো বেড়ে গেছে যে, এই মন্ত্রণালয়ে চাকুরী পাবার ক্ষেত্রে, দক্ষতা নয়, যোগাযোগ প্রয়োজন।

মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব নথি অনুসারে, যা এক নীতি নির্ধারক আবিস্কার করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে মাত্র ১.৬ শতাংশ কূটনীতিবিদ কোন ধরনের জড়তা ছাড়াই ইংরেজীতে কথা বলতে এবং তারা সঠিক ভাবে কূটনৈতিক নথি লিখতে পারে। এদিকে ২৬ শতাংশ কর্মকর্তাকে মুল্যায়ন করা হয়েছে এভাবে যে, তাদের লেখা পাঠ করার জন্য পাঠকদের বাড়তি মনোযোগ প্রদান করতে হয়। ব্যাকরণ গত ভুল এবং দুর্বল শব্দ বেছে নেবার কারনে তাদের লেখা উপলব্ধি করা অনেক সময় কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

এই ক্ষেত্রে প্রায় ১২ শতাংশ কর্মকর্তা সবচেয়ে বাজে ফল অর্জন করেছে। তাদের বাক্য গঠন এবং শব্দ বেছে নেবার ক্ষেত্রে মারাত্মক ত্রুটি লক্ষ্য করা গেছে। তাদের লেখাতে অজস্র ভুল পাওয়া যায়, যেমনটা তারা ভুল শব্দ এবং বাক্য দিয়ে তাদের লেখা তৈরি করে।

এছাড়াও যে ২৬ জন দক্ষিন কোরীয় কূটনীতিবিদ মাতৃভাষা ইংরেজ নয় এমন দেশসমূহে কাজ করছেন, তাদের কেউ সেই দেশের মাতৃভাষায় কথা বলতে পারেন না।

অনলাইনে প্রতিক্রিয়া

অনলাইনে পাবলিক ফোরাম, ব্লগস এবং টুইটার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় ভরে গেছে। এন্থনী জি. কিম বিদ্রুপাত্মক ভাবে টুইট করেছে [কোরীয় ভাষায়] :

외교관들 영어 못하는게 문제될 이유가 없다 그 사람들 해외나오면 주업무가 골프인데 영어 쓸 일이 뭐가있나

কূটনীতিবিদদের ইংরেজি জ্ঞানের এই ভয়াবহ অবস্থা আদতে কোন সমস্যা নয়। তদের প্রধান কাজ হচ্ছে গলফ খেলা। তাদের ইংরাজি ভাষা ব্যবহারের কোন প্রয়োজন নেই।

নোহ জীন (@নোহনোহনোহ) টুইট করেছে [ কোরীয় ভাষায়]

이러니 FTA에서 번역 오류 몇백개 있어도 문제인식 못하고. (태만에 의한) 과실로 매국할 수도 있겠음

এ কারণে তারা এফটিএ (ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্টে বা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি] এর চুক্তির অনুবাদে যে শত শত ভুল ছিল, তা ধরতে সক্ষম হয়নি। তারা জানে না যে তারা আসলে কি করেছে ( তাদের দুর্বল ভাষা জ্ঞানের কারণে)। এতে তারা ভুলক্রমে দেশের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে।

জন কিম (@ফরলিগাসি) টুইট করেছে [কোরীয় ভাষায়] :

외교관도 유창한 영어는 1%대인데, 영어 잘 하는 사람은 다 회사에 취직한거죠?

কেবল মাত্রে ১ শতাংশ শীর্ষ কূটনীতিবিদ অনর্গল ইংরেজিতে কথা বলতে পারে ( দ্রুত পরিশুদ্ধ ইংরেজিতে অনর্গল কথা বলার ক্ষেত্রে বাকিদের কি অবস্থা?)। তাদের অবশ্যই কোম্পানী চাকুরী প্রদান করবে (সরকারি চাকুরির বদলে)।

দক্ষিণ কোরিয়ার অন্যতম এক প্রভাবশালী ব্লগার আই এম পিটার, কূটনীতিবিদদের গলফ খেলার প্রতি ভালবাসা এবং নিয়মিত কাজের বাইরে যে সব বিষয়ের প্রতি তাদের মনোযোগ, সে সব বিষয়ে বিস্তারিতভাবে [কোরীয় ভাষায়] বর্ণনা প্রদান করেছেন :

해외 주재 외교관을 어디에서 가장 쉽게 볼 수 있는지 아십니까? 바로 한인회 주최 XX 골프 대회가 열리는 골프장에서 제일 많이 모습을 나타냅니다. 이들에게 골프는 말 그대로 한인사회와 끈끈한 (?) 정을 나누며 한인 사회 발전에 이바지한다는 허울 좋은 명분이 있습니다. 경기고 동창회 주회 골프대회, 서울대 동문 골프대회, 한인회장배 골프대회,해병 전우회 골프대회 등 등 헤아릴 수 없는 많은 골프대회에 빠짐없이 참가를 합니다.

কাজে, আমরা সেই সমস্ত কূটনীতিবিদদের সহজে কোথায় পেতে পারি? গলফ খেলার মাঠ ছাড়া আর কোথায়, সাধারণত বিদেশের মাটিতে গলফ খেলার ব্যবস্থা সেখানকার কোরীয় গ্রুপগুলো করে থাকে। তারা গলফের প্রতি তাদের ভালবাসার প্রমাণ করে গলফ বিষয়ক যে সব সাহায্য তা গ্রহণ করে, যা তাদের স্বদেশী কোরীয়দের সাথে এক সম্পর্ক এবং বন্ধনে আবদ্ধ করে এবং এ ভাবে তারা বিদেশের মাটিতে কোরীয় সম্প্রদায়ের যত্ন নেয়। কিন্তু সেখানে অজস্র গলফ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়, যেমন একটা হয়ত কিয়ুঙ্গি হাই স্কুল অ্যালমনাই আয়োজিত গলফ প্রতিযোগিতা, তো আরেকটা সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অ্যালমনাই অ্যাসোসিয়েশন-এর, তেমনি আরেকটা হয়ত প্রাক্তন নৌসেনারা আয়োজন করেছে… ইত্যাদি সব প্রতিযোগিতায় চলতে থাকে এবং তারা কখনো কোন প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকে না।

대한민국 정치인, 특히 여권 실세가 해외에 나가면 가관입니다. 영사관 직원이 총출동해서 여행코스, 식사 코스, 도시락 메뉴, 술 자리 등 사신단을 맞이하듯 극진한 대접을 합니다. 이들이 정치인을 잘 모시는 이유는 더 좋은 자리로 가기 위한 아부가 가장 큰 목적이고, 대접을 소홀히 받고 간 국회의원들이 외교통상부 국감에서 딴지를 걸까 봐 미연에 방지하는 차원입니다.

যখন কোন কোরীয় রাজনীতিবিদ, বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের শক্তিশালী কোন সদস্য বিদেশ ভ্রমণ করতে যায়, তখন সেখানকার কূটনীতিবিদেরা এমন সব দৃশ্যের অবতারণা করে, যা বেশ পীড়াদায়ক। দূতাবাসের সকলে আগত অতিথিদের স্বাগত জানাতে বের হয়ে যায় এবং তারা এক সুন্দর ভ্রমণ আর ভোজনের পরিকল্পনা নিয়ে হাজির হয়। এমনকি তারা কি ধরনের লাঞ্চ বক্স বেছে নেওয়া হবে এবং কোন পানশালা ভালো তা পছন্দ করে ফেলে, যেন তারা কোন দলকে স্বাগত জানাচ্ছে, তার পশ্চাদ্দেশ চুম্বনের এই কাজটি করে যাতে তারা আরো উচ্চ পদে পদোন্নতি পেতে পারে, এর এ সবের ফলে কোন নীতি নির্ধারক তাদের প্রতি আর খারাপ আচরণ করতে পারবে না। কারণ ওইসব নীতি নির্ধারকরা পরে শুনানিতে তাদের আক্রমণ করতে পারে।

ব্লগার মুজিগে ব্যাঙ্গাত্মকভাবে মন্তব্য করেছে [কোরীয় ভাষায়] যে এটা একটা বাজে প্রহসন:

정말 한국엔 그렇게 인재가 없는걸까? 가장 중요한 외교를 책임지는 사람들을 일반인들보다 영어실력이 떨어지는 사람들로 대부분 채용해야만 하는 어떤 숨은 사정이 있는걸까? 국가안에서는 초등학생,심지어 유치원생들까지 영어교육으로 몰아대 영어광풍에 휩쌓이게 하면서 정작 영어가 필요한 외국에 나갈땐 자랑스러운 한국말을 널리 알리겠다는 깊은 뜻의 정책일까? 영어가 정작 쓰여야 할 국가적인 외교에는 쓰이지 못하고 엄한 국민들만 들볶아 대는듯.

আমাদের মাঝে কি মেধাবী কেউ নেই? ( যদি আমাদের মাঝে যোগ্য লোক থেকে থাকে) তাহলে, গোপন কোন কারণ রয়েছে কি, যার ফলে মন্ত্রণালয় এমন ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়েছে যাদের ইংরেজী জ্ঞান সাধারণ কোরীয় নাগরিকদের চেয়ে খারাপ? সমস্ত ছাত্রদের, প্রাথমিক বিদ্যালয়, এমনকি নার্সারির শিশুদের ইংরেজী শেখার উপর চাপ প্রয়োগ করে, সরকার সারা দেশকে ইংরেজী উন্মাদনার একটি দেশে পরিণত করেছে। কিন্তু যখন দেশটি এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় যে অনর্গল ইংরেজিতে কথা বলার লোক প্রয়োজন, তখন কি হঠাৎ তার নীতি পাল্টে, ইংরেজী শেখার বদলে, ‘বিদেশে কোরিয়ান ভাষা ছড়িয়ে দেবার’ নীতি গ্রহণ করে? বাস্তবে? যদি তার কূটনৈতিক পর্যায়ে ইংরেজী ভাষাকে যথাযথভাবে ব্যবহার না করে, তাহলে কেন তারা সেই সব নাগরিকদের উপর ইংরেজী শেখার জন্য চাপ প্রয়োগ করেছে, যাদের জন্য তা প্রাসঙ্গিক নয়।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .