ফিলিপাইনসঃ ক্যাম্পাস অবরোধের সময় সৃষ্টিশীল প্রতিবাদ

গত সপ্তাহে ফিলিপাইনসের জাতীয় শিক্ষা বাজেট হ্রাসের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী ক্যাম্পাস সমূহ অবরোধের সময় অনলাইনের উপাদান ব্যবহারের মাধ্যমে কিছু স্বতঃস্ফূর্ত ও সৃজনশীল কর্মকাণ্ড দৃশ্যমান হয়, যা মূলত হাজার হাজার নাগরিককে তাদের শিক্ষার অধিকার রক্ষায় সংগঠিত করার কাজে ব্যবহার হয়। ১৯-২৩ সেপ্টেম্বর,২০১১-এ হাজার হাজার তরুণ এক ব্যাপক বিক্ষোভে অংশ নেবার জন্য রাস্তায় জড়ো হয়, যে আন্দোলনের প্রতি তাদের শিক্ষক এবং সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের সমর্থন রয়েছে।

Protest, Philippines. Photo: Victor Villanueva

বিক্ষোভ, ফিলিপাইনস। ছবি ভিক্টোর ভিলানুয়েভা

ছাত্ররা সৃজনশীল বিক্ষোভের এক উপায় বের করেছে যার দ্বারা তারা রাষ্ট্রপতি নোইনোই একুইনোর শিক্ষা এবং সামাজ সেবা খাতে রাষ্ট্রীয় ভর্তুকি কমিয়ে আনার বিষয়টির প্রতিবাদ করেছে। সম্ভবত এটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ প্লানকিন (শুয়ে পড়া/এক ধরনের খেলা) প্রতিবাদ- যা রাষ্ট্রপতি প্রাসাদে যাবার আগে মেন্দোইলা সেতুর কাছে অনুষ্ঠিত হয়:

Planking protest, Philippines.

প্লানকিন প্রতিবাদ, ফিলিপাইনস

এছাড়াও “নিশ্চল জনতা“, (ফ্রিজ মব) নামক প্রতিবাদের আয়োজন করা হয়, যেখানে একটিভিস্টরা হঠাৎ একটি ব্যস্ত স্কুলের লবি বা করিডোর-এ নিশ্চল হয়ে যায়, এই ঘটনা আশেপাশের পথিকদের মাঝে কৌতূহলের সৃষ্টি করে। অন্য ছাত্রদের ক্লাশ ত্যাগ করে আরো বড় বিক্ষোভে যোগদান করা করানোর আহ্বান জানানোর জন্য এটি করা হয়।

http://www.youtube.com/watch?v=RPTjIHYUrY4&feature=player_embedded

ফিলিপাইনের ডিলিমান বিশ্ববিদ্যালয়ে, ক্যাম্পাস ধর্মঘট কর্মকাণ্ডের মধ্যে “বাজেটকাটটুর” ( হ্রাসকৃত বাজেটে ভ্রমণ) নামের ফ্যাশন শো নামক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় । ব্লগ ড্রিমারস ডিজিজ-এ ডেনিস চান এই সংগঠিত শোভাযাত্রার কর্মকাণ্ডের বর্ণনা করেছে:

বাজেট কাটটুর-এর সবটাই ছিল বস্ত্র বিনির্মাণ সম্বন্ধীয়, আমরা সবাই বাজেট কর্তন বিরোধী লোগো আঁকা শার্ট পরেছিলাম এবং আমরা সেই শার্ট কেটে ফেলেছিলাম।

ডেনিসে, যে ফিলিপাইনসের এক বিশ্ববিদ্যলয়ের পোশাক প্রযুক্তির উপর লেখাপড়া করেছে। সে এই স্টাইলিশ স্লোগান লেখা টি শার্ট পরা নিজের ছবি তার ব্লগে পোস্ট করেছে:

ইউপি ভ্যাস ম্যানেজমেন্ট কলেজের ছাত্র পরিষদ ইতিমধ্যে এক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে, যাকে তারা বলছে “ব্লাকবোর্ড প্রচারণা“। স্টুডেন্টস কাউন্সিল অফিসাররা তাদের ক্যাম্পাসের চারদিকে হেঁটে সহকর্মী ছাত্র, শিক্ষক ও স্কুল কর্মচারীদের একটা ছোট ব্লাকবোর্ডের মধ্যে বাজেট কর্তনের বিরুদ্ধে একটা বার্তা লিখতে উৎসাহ প্রদান করেছে এবং বার্তার সাথে তাদের ছবি তুলেছে:

এছাড়াও তার ফেসবুকে, কালো ফেসবুক ছবি ( ব্লাক ফেসবুক পিকচার) নামক এক প্রচারণার উদ্যোগ নিয়েছে যেখানে শিক্ষার্থীরা, ছাত্র এবং অন্য সব ফেসবুক ব্যবহারকারীদের উৎসাহ প্রদান করছে যেন সপ্তাহব্যাপী ক্যাম্পাস অবরোধের সময় তারা তাদের ফেসবুকের ছবি কালো করে রাখে:

ফেসবুকের কালো ছবি নামক প্রচারণা হচ্ছে প্রশাসক এবং অর্থনীতি পরিকল্পনাবিদের প্রতি আমাদের মনোভাবের প্রকাশ যে, আমরা ম্যানেজমেন্ট কলেজের ছাত্ররা শিক্ষা খাতে তাদের বিনিয়োগে সন্তুষ্ট নই। এছাড়াও সমাজ সেবা খাতে সামান্য অর্থ প্রদান করার ব্যাপারে আমরা, ইস্কোলারস এনজি বায়ান ( এ জাতীর ছাত্ররা‌) , যে অসস্তুষ্ট, এর মাধ্যমে আমরা তাও বুঝিয়ে দিলাম।

অনলাইনে ফেসবুকের আরেকটি প্রচারণা তদের সমর্থকদের গ্রুপের নাম পরিবর্তন করে সেটিকে “ [নাম],বাজেট কর্তন বিরোধীতাকারী” গ্রুপ হিসেবে অভিহিত করতে উৎসাহ জানাচ্ছে “

ভার্চুয়াল বিশ্বের তরুণদের বিক্ষোভ এবং আদর্শবাদ থেকে অনেক দুরে, এই সব অনলাইন কার্যক্রমের বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল বাস্তব জগতের রাস্তায় যে সত্যিকারের বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তাতে অংশগ্রহণে উত্সাহ বৃদ্ধি করা। এই বিষয়ে বলা যায়, পার্টিকালারড, সমাবেশ তাঁর অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে ব্লগ করেছে এবং দেখিয়েছে কিভাবে আক্ষরিক অর্থে ফেসবুক, বিক্ষোভে তার যোগদানে এক ভূমিকা রেখেছে। :

Gabi na noon. Ika-22 ng Setyembre, isang Miyerkules. Nag-post ng status ang isa kong bagong kaibigan sa Facebook tungkol sa pinakabagong budget cut ng administrasyong Aquino. Sang-ayon naman ako sa pinost niya, kaya ni-like ko. Mamaya-maya, nag-comment siya na “Lahat ng nag-like nito, dapat samahan ako mag-strike bukas! LOL.”

সেদিন তখন প্রায় সন্ধ্যা। ২২ সেপ্টেম্বর, বুধবার-এ, ফেসবুকে .আমার এক নতুন বন্ধুর ওয়ালে একুইনো সরকারে সর্বশেষ বাজেট কর্তন সম্পর্কে একটি স্ট্যাটাস পোস্ট করতে দেখি। .আমি তার পোস্টের সাথে একমত ছিলাম, তাই আমি তা পছন্দ করি। খানিক পরে সে মন্তব্য করে ” যারা এটি পছন্দ করেছে, তাদের আগামীকালের ধর্মঘটে আমার সাথে যোগদান করা উচিত! দারুণ…”

“১৯ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর নামক সপ্তাহব্যাপী চলা ধর্মঘট শুরুর এক মাস আগে, ছাত্ররা ফেসবুকে একটি গ্রুপ তৈরি করেছিল যার নাম “কিলোস না লাবান সা বাজেট কাট” ( বাজেট কর্তনের বিরুদ্ধে আইন)। তার প্রথম ১২ ঘন্টার এই গ্রুপে ৩০০০ ফেসবুক ব্যবহারকারী যোগদান করে, বর্তমানে এই গ্রুপের ৯০০০ এর অধিক সদস্য রয়েছে এবং অনলাইন প্রচারকেন্দ্র হিসাবে এটি সাম্প্রতিকতম তথ্য ও তাজা সংবাদ প্রদান করে থাকে।

ধারাবাহিক ভাবে চলতে থাকা বেকারত্ব, নিম্ন মজুরি, শিক্ষার ব্যয় বৃদ্ধি, এবং শিক্ষা খাতে বাজেট হ্রাস, আর এর ফলে ফিলিপাইনের তরুণদের আন্দোলনের এক দীর্ঘ এবং বর্ণীল ইতিহাস তৈরি হয়েছে।

তারা ৬০ এবং ৭০ এর দশকের শুরুতে জাতীয়তাবাদী গণ আন্দোলনের পুনরুত্থান নেতৃত্বে প্রদান করে যা পরবর্তীতে ১৯৭০-এর প্রথম চার মাসের দশ হাজার লোকের এক তীব্র আন্দোলনের রুপ নেয়। তরুণরা এই আন্দোলনের একেবারে পুরো ভাগে ছিল, যে আন্দোলন ১৯৮৬ সালে স্বৈরাচারী মার্কোস এবং ২০০১ সালে এস্ত্রাদা সরকারের পতন ঘটায়।

তারা সবসময় জাতীয় রাজনীতিতে এক সক্রিয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে এবং বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার সমাধানে হস্তক্ষেপ করেছে, বিশেষত ক্রমশ খারাপ হতে থাকা সমস্যা যখন বিশ্ব অর্থনীতির সাথে যুক্ত। ইন্টারনেটের মাধ্যম এই সব প্রতিবাদী ঐতিহ্যকে এক নতুন রুপ প্রদানের সুযোগ দিয়েছে, যখন তরুণ একটিভিস্টরা তার উপাদান ব্যবহার করছে অফলাইনে বা বাস্তব জগতের প্রতিবাদী কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের উৎসাহ বৃদ্ধিতে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .