আল জাজিরা নেটওয়ার্কের ডিরেক্টর জেনারেল ওয়াধা খানফার আজ তার পদত্যাগের কথা ঘোষণা করেছেন। তার এই ঘোষণা সামাজিক প্রচার মাধ্যম সাইট টুইটারে এক উত্তেজনার সৃষ্টি করে। ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভুত এই সাংবাদিক, যিনি আট বছর এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান ছিলেন, তার বদলে এখন কাতারের রাজ পরিবারের এক সদস্য শেখ আহমেদ বিন জসিম আল থানি উক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন।
টুইটারে, খানফার তার প্রোফাইলের বায়োডাটা বা জীবন বৃত্তান্ত পরিবর্তন করে ফেলছেন, সেখানে এখন লেখা আছে “আল জাজিরা নেটওয়ার্কের প্রাক্তন প্রধান”। এখানে তিনি তার পদত্যাগের কারণ বর্ণনা করেন।
@খানফারডব্লিউ: আট বছর ধরে আল জাজিরাকে এগিয়ে নিয়ে যাবার কাজটি করার পর, আমি এই মাত্র ঘোষণা প্রদান করলাম যে, আমি এখান থেকে বিদায় নিচ্ছি।
এবং তিনি আরো বলছেন:
@খানফারডাব্লিউ: আট বছর ধরে একটি প্রতিষ্ঠানকে নেতৃত্ব প্রদান করা অনেক লম্বা এক সময়। নবায়ন এবং পরিবর্তন সবসময় এক উত্তম বিষয়।
এর সাথে আরো তিনি যোগ করেন:
@খানফারডাব্লিউ: কেন আমি পদত্যাগ করেছি সে বিষয়ে যে সব গুজব শোনা যাচ্ছে, তাতে আমি বেশ আমোদ লাভ করছি#হোয়াটডুইউথিঙ্ক? 🙂
ওইসব গুজবের মধ্যে রয়েছে যে তিনি সিআইএর একজন এজেন্ট। আবার গুজব রয়েছে যে আলোড়ন সৃষ্টিকারী সাইট উইকিলিকস জনসম্মুখে যুক্তরাষ্ট্রের যে সব কূটনৈতিক নথি প্রকাশ করেছে, তার কারণে তাকে পদত্যাগ করতে হয়েছে।
জেইনোবিয়া, যিনি ইজিপশিয়ান ক্রনিকলস পরিচালনা করেন, তিনি মন্তব্য করেছেন:
যদিও খানফার এই তার বিদায় অনুষ্ঠানে এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছে যে, তিনি বেশ কিছুদিন ধরে পদত্যাগ করার কথা বিবেচনা করছিলেন, তারপরেও অনেকে তার এই পদত্যাগের পেছনে উইকিলিকসের সম্প্রতি প্রকাশিত নথির বিষয়কে যুক্ত করেছে। ফাঁস হয়ে যাওয়া নথির মাধ্যমে জানা যায়, ২০০৫ সালে দোহাতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গোয়েন্দা বিভাগ ডিআইএ-এর (ডিফেন্স ডিপার্টমেন্ট ইন্টিলিজেন্স এজেন্সি) কর্মকর্তারদের সাথে তার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
নথি: #০৫দোহা১৭৬৫ (Cable ref.id : #05DOHA1765)-এর মাধ্যমে জানা গেছে যে ১৯ অক্টোবর, ২০০৫ তারিখে সে সময়ের আল জাজিরা নেটওয়ার্কের ম্যানেজিং ডিরেক্টর খানফার এবং সিআইএ-এর কয়েকজন কর্মকর্তার মধ্যে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জানা যায় সে সময় সিআইএর উক্ত কর্মকর্তারা জানান যে, তারা আল জাজিরা.নেট ওয়েব সাইটের কর্মকাণ্ডে খুশি নয় এবং বিশ্বাস করে যে এটি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি আক্রমণাত্মক। উক্ত কর্মকর্তাদের কাছে আল জাজিরা নেটওয়ার্ক এবং ওয়েবসাইটের মাসিক কার্যক্রমের রিপোর্ট ছিল। অভিযোগ রয়েছে যে খাফনার তাদের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছিল, এর ভাষাকে পরিশীলিত করা হবে এবং যে সবের বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে, সে সব অপসারিত করা হবে।
এ ছাড়া যে সমস্ত নথিতে খানফারের ঘটনাবলির উল্লেখ রয়েছে জেইনোবিয়া তার এক লিঙ্ক সরবরাহ করেছে।
এছাড়া সিরিয়ার প্রচার মাধ্যমের খানফারের পদত্যাগ দাবী করার কারণ রয়েছে। ফরেন পলিসির সম্পাদক ব্লেক হাউনশেল, যার বাস কাতারের দোহাতে, তিনি উল্লেখ করেছেন:
@ব্লেকহাউনশেল:সিরিয়ার প্রচার মাধ্যম এই খবরকে লুফে নিয়েছে –> আরটি @রালাফ: #সিরিয়ার বিষয়ে বানোয়াট খবর প্রচার করার কারণে আল জাজিরার প্রধান পদত্যাগ করেছে”।
সৌদি আরবের কিং সাউদ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক যোগাযোগ বিভাগের অধ্যাপক আহমেদ বিন রাশিদ বিন সাইদ, এই ব্যাখ্যাকে হাস্যকর মনে করেন:
@লাভলিবার্টি :#আসাদ টিভির সংবাদে হাসার জন্য খানিকটা সময় বেছে নিন।#আল জাজিরার ডিরেক্টর ওয়াধা খানফার #সিরিয়া, #লিবিয়া এবং #ইয়েমেনের ঘটনাবলির ক্ষেত্রে বানোয়াট সংবাদ প্রদান করার কারণে পদত্যাগ করেছে।
দৃশ্যত আল জাজিরার সাথে ইসলামপন্থীদের যোগসূত্রের কারণেও খানফার চাপের মধ্যে পড়ে যান ।
হাউনশেল উল্লেখ করেছেন:
@ব্লেকহাউনশেল:আরব উদার নৈতিক মনোভাব সম্পন্ন ব্যক্তিদের মাঝে, আল-জাজিরার সমালোচকেরা মনে করতেন যে @খানফারের অধীনে এই প্রতিষ্ঠানটি জোরাল ভাবে পুরোপুরি ইসলামিক মনোভাবের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল।
লিবিয়ার টুইটার ব্যবহারকারী লিবিয়ান এন্ড প্রাউড উত্তর দিচ্ছে:
@লিবিয়ানএন্ডপ্রাউড: আমি উদারপন্থী নই, আমি কেবল ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি দেখতে চাই, কিন্তু লিবিয়ার ক্ষেত্রে আল জাজিরার ৯০ শতাংশ ধারাভাষ্যকার ছিল মুসলিম ব্রাদারহুডের।
মিশরের দি বিগ ফারাওয়ের ক্ষেত্রে, খানফারের বিদায় এক আশার বাণী বয়ে আনছে:
@দিবিগফারাও: আল জাজিরার নতুন ব্যবস্থাপনা পরিষদের কাছে আমি যে বিষয়টি আশা করব, সেটি হচ্ছে বিশেষ করে ইসলামপন্থীদের নামে কোন রাজনৈতিক বিষয়কে গ্রহণ না করা।
এদিকে লেবাননের প্রচার মাধ্যম ব্যক্তিত্ব অক্টাভিয়া নাসর টুইট করেছে:
@অক্টাভিয়ানাসর: এক কৌতূহল উদ্দীপক সময়ে অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ সংবাদ! ->, #আলজাজিরা নেটওয়ার্কের প্রধান ওয়াধা খানফার পদত্যাগ করেছে। আরটি @হালমুস্তাফা
লেবাননের নাগরিক দিজাকো, যে কিনা লন্ডন থেকে টুইট করে, সে উক্ত টেলিভিশন চ্যানেলের প্রধান হিসেবে কাতারের রাজ পরিবারের একজনের নিযুক্তির ঘটনায় খুশি নয়:
@দিজাকো:আল জাজিরা এখন আনুষ্ঠানিক ভাবে “রাষ্ট্রীয় টিভি” চ্যানেলে পরিণত হয়েছে। সকল স্বাধীনতা গোল্লায় যাক।