- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

মায়ানমারঃ ইন্টারএ্যাকটিভ কারা মানচিত্র

বিষয়বস্তু: পূর্ব এশিয়া, মায়ানমার (বার্মা), নাগরিক মাধ্যম, প্রচার মাধ্যম ও সাংবাদিকতা, প্রতিবাদ, মানবাধিকার, রাজনীতি, সরকার

মায়ানমারের একটি ইন্টারএ্যাকটিভ কারা মানচিত্র [1] তৈরি করা হয়েছে ‘ বার্মার ভিডিও সাংবাদিকদের মুক্ত কর [2] নামক প্রচারণায় সাহায্য করার জন্য। এই মানচিত্র মায়ানমারের ৪৩টি কারাগারের অবস্থান চিহ্নিত করে এবং এদের সর্ম্পকে বিস্তারিত বর্ণনা প্রদান করে।

বার্মাতে ৪৩ টি কারাগার এবং প্রায় ১০০-এর মত শ্রম শিবির রয়েছে। এই সমস্ত জেলের পরিবেশ খুবই জঘন্য- এখানকার বন্দীরা নিয়মিতভাবে কর্মকর্তাদের হাতে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে নিগৃহীত হয়। এখানে ওষুধ দুষ্প্রাপ্য এবং ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত বন্দী রাখার বিষয়টি অতি এক সাধারণ ঘটনা। বেশিরভাগ রাজনৈতিক বন্দীদের রেঙ্গুনের ইনসেন নামক কারাগারে রাখা হয়েছে। যদিও তাদের অনেককে পরিবারের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে শত শত মাইল দূরে দুর্গম এলাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়, যেখানে তারা বৈরী পরিবেশ এবং ম্যালেরিয়ার সাথে যুদ্ধ করতে বাধ্য হয় ।

[1]

মায়ানমারের কারা মানচিত্র

ইনসেন কুখ্যাতি অর্জন করেছে মায়ানমারের প্রখ্যাত সব রাজনৈতিক বন্দীদের কারণে, যাদের মুলত এই কারাগারে রাখা হয়।

ইনসেন নামক কারাগারকে বার্মার “সবচেয়ে অন্ধকার অংশ” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এটি বার্মার নীচের অংশের (দক্ষিণে) রেঙ্গুন জেলায় অবস্থিত। এখানে প্রায় ৯০০০ থেকে ১০,০০০ বন্দী রয়েছে, যার মধ্যে ৩০০ জন রাজবন্দী। আর এতজন বন্দির জন্য মাত্র ৩ জন ডাক্তার রয়েছে। এটা বার্মার সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্বলিত একটা কারাগার, যেখানে অং সান সুকিকে বন্দী করে রাখা হয়েছিল।

[3]

ইনসেন নামক কারাগার

ইনসেন কারাগারে যে ৩০০ রাজনৈতিক বন্দী আছে [4], সামান্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে তাদের অনেক দীর্ঘ সময়ের জন্য কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।

এখানে রাজনৈতিক কারাবন্দীদের মধ্যে ২২৫ জন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী, ১১ জন সংসদ সদস্য, ১২ জন আইনজীবী, ৮ জন ডাক্তার, ১৫৭ জন নারী এবং প্রায় ৩০ জনের মত প্রচার মাধ্যম কর্মী রয়েছে। বার্মায় ১৪ বছরের মত অল্প বয়স্কদের যেমন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়, তেমনি প্রচারপত্র বিলি করার মত সামান্য অপরাধেও কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। ভয়াবহ এক ষড়যন্ত্রের অভিযোগে শান স্টেটস পিস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান সো তেনকে ১০৬ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে

এই ওয়েবে সাইটে একই সাথে প্রাক্তন রাজবন্দীদের সাক্ষ্য রয়েছে, যারা অত্যন্ত সাহসের সাথে তাদের কারা জীবনের অভিজ্ঞতা জানিয়েছে করেছে।ওআই মোয়ে [5] ছিলেন এমন একজন বন্দী, যার উপর অত্যাচার করা হয়েছে।

একবার আমার পায়ে লোহার শিকল পড়িয়ে দেওয়া, এবং তারা সাত মাস পর্যন্ত তা আর খুলেনি। এই শিকলের ওজন ছিল প্রায় ১০ কিলো, আর তা আমার শরীরে একটা অংশে পরিণত হয়েছিল। অন্য সময়ে অনেককে কারাকক্ষের যে লোহার দরজা তা দিনে চার ঘণ্টা ধরে সাফ করতে হত। সকাল ৮-১০ টা এবং দুপুর ২-৪ টা পর্যন্ত তা সাফ করতে হত। এটা ছিল শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার। কিন্তু যদি আপনি তা করতে অস্বীকার করেন, তাহলে আপনাকে প্রহার করা হবে। এখানে আরেকটি শাস্তি হল প্লাস্টিকের ব্যাগে করে মাছি ধরা, যদি আপনি তা ধরতে ব্যার্থ হন, তাহলে তারা আপনাকে প্রহার করবে এবং শিকলে বেঁধে রাখবে।

[6]

ডেমোক্রেটিক ভয়েস অফ বার্মা (ডিভিবি) নামক সংগঠনের ১৭ জন ভিডিও সাংবাদিক [7] কারাগারে বন্দী। সম্প্রতিহ্লা হ্লা উইন [8] নামের এক ভিডিও সাংবাদিককে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আমদানী/রপ্তানী আইনের মাধ্যমে তাকে আটক করা হয়, কারণ ভদ্রমহিলা যে মোটর সাইকেল ব্যবহার করছিল তার কোন নিবন্ধন ছিল না। এদিকে তার কারাদণ্ডের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০ বছর করা হয়েছে।

প্রথমে তাকে সাত বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়, এই দণ্ডের শুরুর প্রথম সপ্তাহে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং ঘটনাক্রমে সে স্বীকার করে নেয় যে সে ডিভিএ-এর এক সাংবাদিক। ২০ ডিসেম্বর ২০০৯-এ ইলেকট্রনিক্স আইনে তার শাস্তির মেয়াদ বাড়িয়ে ২০ বছর করা হয়। এই আইনের মাধ্যমে দেশটির সামরিক সরকারের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য ক্ষতিকর বিবেচনা করা হয় ইন্টারনেট থেকে এমন ডাটা উঠানো (আপলোড) বা নেট থেকে (ডাউনলোড) করা নিষিদ্ধ। প্রায়শই ভিডিও সাংবাদিকদের বন্দী করার জন্য শাসকেরা এই আইন ব্যবহার করে। তাকে আরো ২০ বছর কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে এবং তাকে কোন আইনজীবীর সহায়তা নিতে দেওয়া হয়নি।

এক বিক্ষোভ কর্মসূচি [9] যা আগামী সপ্তাহে থাইল্যান্ডের বার্মিজ দূতাবাসের সমানে অনুষ্ঠিত হবে, সেখানে তার মুক্তির দাবী জানানো হবে।