২০০৮ সালের সংসদ নির্বানের পর থেকে নেপাল ক্রমাগত ক্ষমতার পালাবদল চলছে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিষয়ে জনমত বিভক্ত হয়ে আছে-মাওবাদী দলটি দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে আর্বিভুত হয়েছে, কিন্তু তারা একক সংখ্যাগরিষ্ঠাতা লাভের ধারে কাছেও যেতে পারেনি। প্রথাগত প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল যেমন নেপালি কংগ্রেস, নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি (ইউনাইটেড মার্কসিস্ট এন্ড লেলিনিস্ট) (ইউএমএল) সীমত সংখ্যা আসন লাভ করেছে এবং আঞ্চলিক দলগুলো মাত্র কয়েকটি আসন লাভ করেছে।
আর এর ফলে দেশটিতে বিগত ৪ বছরে তিনজন প্রধানমন্ত্রী হয়েছে এবং নতুন সংবিধানের যে প্রতিশ্রুতি ছিল, তা মনে হচ্ছে সুদুরপারহত এক বিষয়।
স্থায়ী নেতৃত্বের অভাব এবং দলগুলোরে মধ্যে সব সময় দ্বন্দ্ব লেগে থাকা, নেপালের নবীন গণতন্ত্রের উপর প্রভাব সৃষ্টি করেছে এবং দেশটিতে আরো একবার এক নতুন নেতার আগমন ঘটেছে। মাওবাদী দলের শীর্ষ এক নেতা ড:বাবুরাম ভট্ররাই গত সপ্তাহে নেপালের ৩৪তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছে। ড: বাবুরাম ভট্টরাই এর নির্বাচনের বিষয়ে ইউনাইটেডে উই ব্লগ ফর ডেমোক্র্যাটিক নেপাল মন্তব্য করেছে এবং উল্লেখ করেছে যে বিগত নেতাদের বিভিন্ন রাজনৈতিক মাধ্যম থেকে তিনি সর্মথন লাভ করেছেন:
বাবুরাম ভট্টরাই বিভক্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক অঙ্গনের সমর্থন লাভ করেছেন মূলত প্রধানমন্ত্রী প্রচন্ডের সময় অর্থমন্ত্রী হিসেবে তার কৃতিত্বপুর্ণ ভুমিকা এবং তার উদার, বুদ্ধিবৃত্তিক চরিত্রের জন্য, যা কিনা তাকে প্রচার মাধ্যম এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণীর প্রিয়প্রাত্রে পরিণত করেছে।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার এই নির্বাচিত হবার সংবাদ টুইটারেও বেশ ইতিবাচক অনুভূতির মধ্যে দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে। আকার পোস্ট-এ অনিল ঘিমির নেপালের টুইটার ব্যবহারকারীদের প্রতিক্রিয়া একত্রিত করেছে।
অর্থমন্ত্রী হিসেবে কাজ করা সময়, ডঃ বাবুরাম নিম্নবিত্ত নেপালী জনতার মাঝে নিজের অবস্থান শক্ত করে তোলেন, যখন তিনি সিদ্ধান্ত নেন তিনি বিলাসবহুল দামী বিদেশী গাড়ীর পরিবর্তে কম দামী নেপালের তৈরি গাড়ীতে তিনি যাতায়াত করবেন।
সাংবাদিক বেঞ্জামিন গ্রাহাম তার ব্লগে উল্লেখ করেছে:
এ রকম এক সাধারণ ( সাভ বা স্পোর্টস ইউটিলিটি কার, স্টেশণ ওয়াগান টাইপের গাড়ি) গাড়ি আর কখনো কারো এতটা মনোযোগ আকর্ষণ করেনি, যেমনটা এই চার দরজার মুস্টাং ম্যাক্স গাড়ি করেছিল। যখন সেটি সোমবার নেপালের রাজধানী কাঠমন্ডুর রাস্তায় দেখা যায়। আর এই গাড়িতে করে নেপালের নতুন প্রধানমন্ত্রী ডঃ বাবুরাম ভট্টরাই তার যাত্রা শুরু করেছে, যিনি তার শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেবার জন্য নেপালের তৈরি গাড়ী বেছে নেন। তার নতুন অফিস, নেপালের সংসদ ভবন সিংহ দরবারে এই শপথ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। ভট্টরাই তার পরিবহণের জন্য গাড়ী বেছে নেবার ক্ষেত্রে নেপালের প্রধানমন্ত্রীরদের দীর্ঘ সময় ধরে প্রচলিত যে ঐতিহ্য, তা ভঙ্গ করেছেন। এর আগের প্রধানমন্ত্রীরা সাধারণত দামী এবং বিদেশী বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার করত।
তার এই বিচক্ষণতার সাথে বেছে নেওয়া গাড়ি (সাভ), যা কিনা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বিহীন এবং পাওয়ার উইন্ড ( চাবি দিয়ে জানালার কাচ উঠানো নামানো) ও শক্তিশালী বুলেট প্রুফ ব্যবস্থাযুক্ত নয়, এই গাড়ি রাস্তায় উপস্থিত কৌতুহলী জনতার মনোযোগ আকর্ষণ করে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এক আলোচনার ঝড় তোলে।
তবে সকলেই এতটা উল্লসিত নয়, জাতিসংঘের প্রাক্তন এ্যাসিটেন্ট সেক্রেটারি জেনারেল এবং নেপালের ও অন্যতম বুদ্ধিজীবী কুল চন্দ্র গৌতম বলেছেন যে ভট্টরাই-এর নিজস্ব নিতিতে অনড় থাকা, সরকারের আত্মবিশ্বাস তৈরিতে উৎসাহ যোগাবে না।
কিন্তু ভট্টরাই একই সাথে শক্ত এবং কঠোর এক নীতি মেনে চলেন। যদিও তিনি সম্প্রতি নিজেকে প্রগতিশীল এবং মধ্যপন্থী নেতা হিসবে তুলে ধরছেন যে কিনা শান্তি, গণতন্ত্র এবং সংবিধানের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছে। তিনি ইউসিপিন-মাওবাদী দলের বেশীর ভাগ কঠোর মনোভাব সম্পন্ন নেতাদের সাথে কৌশলগত মিত্রতা করতে দ্বিধা করেননি। দলের এই কঠোর মনোভাব সম্পন্ন নেতাদের হাত থেকে তিনি নিজেকে মুক্ত করতে পারবেন কিনা এবং নিজস্ব লেনিনবাদ নামক মতবাদকে সুযোগ মত তুলে ধরতে পারবেন কিনা, এর উপর তার সাফল্য নির্ভর করছে এবং আর কিছু ক্ষেত্রে এর সাথে যোগ করে বলা যায়, এর উপর দেশের ভবিষ্যৎ দিক নির্দেশনা নির্ভর করেছে।
মাওবাদী বিদ্রোহের সময় যে সমস্ত অপরাধ সংঘটিত হয়েছে সে গুলো নতুন প্রধানমন্ত্রীকে তাড়া করে করে ফিরতে পারে।নেপালনিউজ.কম সংবাদ প্রদান করেছে যে বিদ্রোহের সময় সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে মাওবাদী দল যে গণ ক্ষমা ঘোষণার প্রস্তাব করেছে উল্লেখ যোগ্য একদল মানবাধিকার একটিভিস্ট এবং বুদ্ধিজীবী তার নিন্দা জানিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে :
মাওবাদী বিদ্রোহের সময় সংঘঠিত যে সমস্ত অপরাধের বিষয়ে আদালতে মামলা চলছে, সে সব মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া এবং আদালতে যারা দোষী সব্যস্ত হয়েছে তাদের বিষয়ে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করার প্রস্তাবের আমরা নিন্দা জানাই। মাওবাদীদের এই প্রস্তাব, শান্তি চুক্তির আওতায় যে সকল জাতীয় দায়িত্বের কথা বলে হয়েছে, অন্তর্বর্তিকালিন সংবিধান এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের পরিপন্থী। দলের ১৩ জন সদস্য স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই কথা বলে হয়েছে।
এতে কোন সন্দেহ নেই যে নতুন প্রধানমন্ত্রী কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হবেন। কিন্তু কিছু জনপ্রিয় চাল চেলে তিনি নিজের দক্ষতাকে প্রদর্শন করলেন। যদি তিনি তার ক্ষমতার অংশীদার দল এবং নিজে দলের কঠোর মনোভাব সম্পন্ন নেতাদের খুশি রাখতে পারেন এবং সরকারের মধ্যে যদি কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারেন, তাহলে তিনি হয়ত হতাশার যে চক্র, তা ভেঙ্গে ফেলতে সক্ষম হবেন।