তিউনিসিয়া: আরও বিক্ষোভ, আরও পুলিশী সহিংসতা

আমাদের এ পোস্ট টি তিউনিসিয়া বিপ্লব ২০১১- সংক্রান্ত বিশেষ কাভারেজের অংশ

তিউনিসিয়াতে গত সোমবার (১৫ আগস্ট) আশু সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নেমে আসে। তাদের দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও “বিপ্লবে শহীদ”দের হত্যাকান্ডে জড়িত খুনিদের বিচারের কাঠগড়ায় আনতে সক্ষম এমন এক স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা গঠন।

হোসনী মুবারাক তিউনিসিয় বিচার ব্যবস্থায় বিচার দাবি করেছেন। ছবি- নাওয়াতের সৌজন্যে।

হোসনী মুবারাক তিউনিসিয় বিচার ব্যবস্থায় বিচার দাবি করেছেন। ছবি- নাওয়াতের সৌজন্যে।

তিউনিসিয়ার স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রাক্তন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সামির ফেরিয়ানীর আশু মুক্তি দাবি করেন। তিউনিসিয় সংবাদপত্রে দুটি চিঠি প্রকাশের পর গত ২৯ মে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। চিঠি দুটিতে দাবি করা হয় তিউনিসিয় বিপ্লবের সময় শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের হত্যার জন্য স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ দায়ী ।

“জনগণ এ শাসনামলের পতন চায়” ও “জনগণ আবারও বিপ্লব চায়” -বিক্ষোভকারীরা এমন দাবি ও জানায়।

@মুরাদমুনিফ টুইট করেন:

স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা, প্রচার মাধ্যমের স্বাধীনতা এবং আইন মেনে চলা পুলিশের দাবিতে #তিউনিসিয়ার জনগণ বিক্ষোভ করছে। #মানিফতিউনিস #১৫ আউট

সোমবার তিউনিসিয়ার প্রাণকেন্দ্রে একই সময়ে তিনটি বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে একটি বিক্ষোভ তিউনিসিয় শ্রমিক ইউনিয়ন (ইউজিটিটি)-এর নেতৃত্ববিহীনভাবে সংগঠিত হয়। এ বিক্ষোভটি ছিল স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিকটবর্তী বিখ্যাত হাবিব বরগুইবার এভিন্যু অভিমুখী।

ব্লগার বাসেম বোগেরা বিক্ষোভের ভিডিওচিত্র ইউটিউবে তুলে ধরেন:

বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করেছে একজন বিক্ষোভকারী কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করলে পুলিশও পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানায়।

@ওয়েসিমসারা: la fete commence à l'aveniue RT @sameh_b: URGENT : Lacrymo devant le MI ça y est!!! #ManifTunis

হাবিব বরগুইবা এভেন্যুতে পার্টি শুরু হয়েছে রিটুইট @সামেহ_বি:তাজা খবর: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে কাঁদানে গ্যাস!!! #মানিফতিউনিস

@নেজেক: Tir de lacremo à partir des minivan et voiture #maniftunis

গাড়ি ও মিনিভ্যান থেকে কাদানে গ্যাস ছোড়া হচ্ছে #মানিফতিউনিস

বিক্ষোভকারীরা পাথর ছুঁড়ে জবাব দিচ্ছে। খবর পাওয়া যাচ্ছে পুলিশও বিক্ষোভকারীদের দিকে পাথর ছুঁড়ে মারছে।

@আরোয়াবেনসালাহ: En ce moment: Affrontements entre policiers et manifestants Avenue de Carthage #ManifTunis

ঠিক এ মুহূর্তে: কার্থেজ এভেন্যুতে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ #মানিফতিউনিস

@এফডিটিএল_অফিসিয়েল: les jeunes partent et reviennent et la police frappe avec des pierres #ManifTunis #15aout “Source: un militant #Ettakatol sur place “

তরুণেরা আগুপিছু করছে আর পুলিশ তাদের দিকে পাথর নিক্ষেপ করছে। #মানিফতিউনিস #১৫ আউট
“উৎস”: (রাজনৈতিক দল) #এত্তাকাকোলের একজন সক্রিয় কর্মী

এ ইউটিউব ভিডিওতে দেখা যায় তিউনিসের প্রাণকেন্দ্রে পুলিশ ছত্রভঙ্গের উদ্দেশ্যে একজন বেসামরিক লোককে হেঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে, পেটাচ্ছে:

http://www.youtube.com/watch?v=ojJlTMz1aio&feature=player_embedded

বিপ্লব পরবর্তী তিউনিসিয়ায় পুলিশ কর্তৃক বিক্ষোভকারীদের নির্মমভাবে ছত্রভঙ্গ করার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। গত মাসে কসবা চত্বরে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের জমায়েত নিরস্ত করতে নিরাপত্তা বাহিনী কাঁদানে গ্যাস ও লাঠি ব্যবহার করে। কসবা চত্বর তিউনিসের প্রাণকেন্দ্র অবস্থিত এবং বিক্ষোভের মূলকেন্দ্র। কসবার ঘটনার সাথে গতকালের ঘটনার পার্থক্য হল সোমবারের প্রতিবাদ বেশি বিক্ষোভকারীকে আকৃষ্ট করে এবং জনতার আরো বেশি সহমর্মীতা ও সমর্থন লাভ করে।

বর্বরতার এ নজির তিউনিসিয়দের পুরোনো অভ্যাসকে মনে করিয়ে দেয়। পুলিশী দমণের এ বিষয়টি তিউনিসিয় নেটিজেন ও ব্লগারদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। এখানে কিছু টুইটার প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হল:

@ইয়াসলিটি: Police partout, Justice nulle part !! #maniftunis

@ইয়াসলিটি: সর্বত্রই পুলিশ,কোথাও বিচার নেই

@মেদআলিচেবান্নী: Dans ce pays, il faudrait seulement manifester pour le Gouvernement.Toute autre contestation sera réprimée! Vous nous faites haïr le Pays.

@মেদআলিচেবান্নী: এ দেশে আপনি শুধু সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে পারেন, অন্য যে কোন ধরনের প্রতিবাদকেই দমন করা হবে। আপনারা আমাদের জন্য দেশটিকে ঘৃণীত করেছেন!

@ওয়ার্ল্ডওয়াইডআইজ: La #Tunisie, un pays pris en otage par ses propres policiers #tunismanif

@ওয়ার্ল্ডওয়াইডআইজ: তিউনিসিয়া হল এমন একটি দেশ যা নিজেই তার পুলিশ দ্বারা অবরুদ্ধ

@ওয়েসিমসারা: Tous Simplement : القمع متواصل وزارة الإرهاب لم تصلها الثورة بعد

@ওয়েসিমসারা: শ্রেফ দমন চলছে, বিপ্লব এখনও সন্ত্রাসবাদ মন্ত্রণালয়ের কাছেও পৌঁছতে পারেনি

প্রতিবাদ আন্দোলন শুধুমাত্র রাজধানীতেই নয়,বরং তা ছড়িয়ে পড়েছে তিউনিসিয়ার অন্যান্য প্রদেশেও । অন্যান্য প্রদেশে উত্থাপিত দাবিগুলো একই, সেখানে স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার দাবি ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী বেজি সাইদ সেবসি-এর পদত্যাগের দাবিও উচ্চারিত হয়েছে।

এ ইউটিউবে দেখা যায় বেজা প্রদেশে (তিউনিসিয়ার উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল) জনতা শ্লোগান দিচ্ছে “জনগণ চায় স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা”, “ জনতা বর্তমান স্বৈর শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে” এবং “জনতা শহীদের রক্তের প্রতি বিশ্বস্ত”:

http://www.youtube.com/watch?v=q6TWds0_KC4&feature=player_embedded

গতকাল (১‌৬ আগস্ট) ভোয়া দ্যু পিপুল (জনতার কণ্ঠস্বর) নামে ফেসবুক পাতার প্রতিবেদনে বলা হয় পুলিশ তিউনিসিয় শ্রমিক ইউনিয়ন (ইউজিটিটি) চত্বরে বিক্ষোভকারীদের জমায়েত নিষিদ্ধ করেছে:

ليوم البوليس يغلق بطحاء الإتحاد العام التونسي للشغل ممارسات ارهابية قمعية، بإختصار بن علي مازال موجود في تونس.

সন্ত্রাসী ও সহিংস কার্য কলাপের জন্য আজ পুলিশ ইউজিটিটি চত্বর বন্ধ করে দিয়েছে।সংক্ষেপে বলতে হয় বেন আলি এখনও আছেন।
পুলিশ জনগণকে জমায়েত হতে বাধা দিচ্ছে।

পুলিশ জনগণকে জমায়েত হতে বাধা দিচ্ছে। ছবি- ফেসবুক পাতা ভোয়া দ্যু পিপ্যুল থেকে।

বিক্ষোভকারীরা যে আন্দোলন থেকে পিছপা হবেনা এ গল্পগুলো সে কথাই বলে, আর আগামী দিনগুলো আরও বেশি বিক্ষোভের জন্ম দিবে।

আমাদের এ পোস্ট টি তিউনিসিয়া বিপ্লব ২০১১-সংক্রান্ত বিশেষ কাভারেজের অংশ

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .