ফিলিপাইনসঃ টোকাই নামক টিকটিকি ধরার উন্মাদনা

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ফিলিপাইনে টোকাই নামক টিকটিকি ধরার এক উন্মাদনা দেখা দেয়। টোকাই নামক টিকটিকি স্থানীয় ভাষায় বলে “টুকো”। এ ভাবে উন্মাদের মত টিকটিকি ধরার কারণ হচ্ছে সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে অনলাইনে এই সরীসৃপ প্রজাতির প্রাণীকে চড়া দামে কিনে নেওয়া হচ্ছে। সে সময় থেকে এই টিকটিকি ধরা শুরু হয় যখন গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে এই প্রাণীর অ্যাজমা এবং এইচআইভি/এইডস রোগ নিরাময়ের ক্ষমতা রয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে এক বিবৃতি জারী করেছে। এতে তারা জনতাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে এই গুজবের কোন ভিত্তি নেই।

এখন লোকজ চিকিৎসা হিসেবে এইডস এবং অ্যাজমা প্রতিরোধে টিকটিকির ব্যবহার করা হচ্ছে এবং এটি স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের (ডিওএইচ) জন্য এক ভয়াবহ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন কোন ভিত্তি নেই যে টিকটিকির কোন উপাদান এইডসের মত রোগের উপশম করতে পারে অথবা অ্যাজমার যে সব জটিলতা সেগুলোকে কমিয়ে দিতে পারে। যার ফলে কোন রোগের জন্য টিকটিকির ব্যবহারের আমরা পরামর্শ প্রদান করতে পারি না।

সংসদ সদস্য মানি ভিলার শঙ্কিত যে এ ভাবে পাগলের মত টিকটিকি ধরতে থাকলে এক দিন দেশ থেকে টিকটিকি বিলুপ্ত হয়ে যাবে:

যদিও টিকটিকিকে একেবারে বিলুপ্ত, বিলুপ্তপ্রায় অথবা ঝুঁকির মধ্যে থাকা প্রাণী হিসেবে চিহ্নিত করা হয় না, কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণ ধরার ফলে এটি এখন ভয়াবহ এক বিপন্ন বা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাওয়া প্রাণীর তালিকায় পড়তে যাচ্ছে।

ছবিটি গাইকো কুজিনকুন-এর ফ্লিকার পাতা থেকে ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্স এট্রিবিউশন ২.০ জেনেরিক-এর অধীনে নেওয়া হয়েছে। (সিসি বাই ২.০)

সেবু এবং ডাভাও জার্নি-এর এক বন্ধু যে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে টিকটিকি খুঁজতে শুরু করেছিল:

কয়েক মাস আগে আমি দাভাওতে এক রেডিওর অনুষ্ঠানে টিকটিকি বিষয়ক উন্মাদনার কথা প্রথম শুনেছিলাম। যেখানে উপস্থাপক ১০,০০০ থেকে ২০,০০০ পেসোতে বিক্রি হবার মত এক ভূয়া গল্প উপস্থাপন করেছিল। সে যা বলেছিল আমি তা প্রায় বিশ্বাস করেছিলাম। এরপরে ঘটনাক্রমে আমি আরো শুনলাম যে এটা নাকি সত্যি। বেশ কিছু বন্ধু আমাকে এই বিষয়ে বলল যে, রাতারাতি বড়লোক হয়ে যাবার আশায় তারা হন্যে হয়ে টিকটিকি খুঁজে বেড়াচ্ছে।

ওয়াকিং নিউজপেপার, একজন জীববিজ্ঞানী। তিনি এই ভাবে অর্থের বিনিময়ে টিকটিকি ধরার বিষয়টিকে প্রত্যাখান করেছে। প্রত্যাখান করেছে:

তাহলে ঠিক আছে, একটা টিকটিকি যদি ধরার বিষয় তাহলে তা সহজ এবং দ্রুত ধরা যায় এবং তা পাওয়াও সম্ভব, আর এতে অনলাইনে নগদ কিছু মিলবে। এ রকম কিছু ঘটার সম্ভাবনা থাকলে আমি এ ভাবে শিক্ষা দেওয়া বন্ধ করে দিতাম এবং জঙ্গলে চলে যেতাম এবং বাকি জীবন টিকটিকি ধরে কাটাতাম। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে টিকটিকি আমাদের বন্ধু-এই আমি যে কিনা এক প্রাণী বিজ্ঞানী তার জন্য তো বটে, টিকটিকি বাণিজ্যের উপাদান নয়।

ইন্টারনেটে টিকটিকি কেনাবেচার বিষয়টি ইতোমধ্যে ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়েছে। টিজেএসডেইলি উল্লেখ করেছেন যে অনেক ফিলিপাইনি এখনো এই বিষয়ে সচেতন যে অনলাইনের টিকটিকি ক্রেতারা আসলে ভুয়া:

এই ভাবে টিকটিকি নিয়ে প্রতারণা যে একটি ভুয়া বিষয় তা উপলব্ধি করার লক্ষ লক্ষ কারণ রয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে বেশীর ভাগ ফিলিপাইনি এই বিষয়ে জ্ঞাত নয় যে ইন্টারনেটে ভুয়া সংবাদ সৃষ্টিকারীরা এই ভাবে সংবাদ ছড়িয়ে দেবার কাজটা করে।

এই ব্লগার একই সাথে একটি ওয়েবসাইটের স্ক্রিনশট প্রদর্শন করেছে, যেখানে একটি জীবন্ত টিকটিকির জন্য অবিশ্বাস্য মূল্য তালিকা প্রদান করা হয়েছে:

টোকাই নামের টিকটিকির মূল্যে এখন লক্ষ পেসোতে এসে দাঁড়িয়েছে

আওয়ার ফিলিপাইন ট্রি আশা করছে যে ‘যারা টিকটিকি ধরতে চায়’ তারা টিকটিকির গোপন আস্তানা থেকে টিকটিকি খুঁজে বের করতে পারবে না:

সম্ভবত টুকো নামক উন্মাদনা উক্ত প্রদেশের অল্প কিছু ফিলিপিনো ব্যাবসায়ীর মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। আমি আশা করি যে টুকো সেখানে বাস করতে থাকবে যেখানে তারা বাস করে এবং এই সব শিকারী (শোষকদের) একটা কঠিন সময় উপহার দেবে। টিকটিকি যেন তাদের কঠিন সময় উপহার দেয়, তাদের পাতলা চামড়া ছাড়িয়ে নেবার আগে পর্যন্ত!

এটা কেবল মাত্র আমার ব্যক্তিগত মতামত , আমি এমন কোন ব্যক্তিকে পাইনি যে চড়া মূল্যে টিকটিকি বিক্রি করতে সক্ষম হয়েছে:

এটা কি আসলে সত্য? আমার অজস্র বন্ধু “টুকো” ধরায় ব্যস্ত , কিন্তু তাদের মধ্যে কেউ প্রমাণ দেখাতে পারেনি যে, সত্যিকার অর্থে কোন কোটিপতি ক্রেতা রয়েছে অথবা অন্তত এমন কোন পরিচিত বন্ধু পাইনি যে এ রকম কোন মূল্যে অনন্ত একটি টিকটিকি বিক্রি করতে সক্ষম হয়েছে।

একটি পূর্ণ বয়স্ক টিকটিকির জন্য এক লক্ষ পেসো মুল্যের ক্ষেত্রে আমি ভাবতে পারি না যে, তাদের যে কোন একটা দিয়ে এইডস বা ক্যান্সারের চিকিৎসা করা সম্ভব…যদি তা সত্যি হয়। অথবা যদি এটা সত্যি না হয়, তাহলে এটা কি সম্ভব যে কেউ একজন এই ভুয়া উন্মাদনাকে অনেকের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছে?

মাই লাইফ ইন সেবু এই ভাবে টিকটিকি ধরার থেকে অনেক দুরে থাকতে পছন্দ করছ:

ব্যক্তিগত ভাবে, এমনকি ১০০ পেসোর বিনিময়েও আমি ধরি না বা কিনি না। এই সব টিকটিকি দেখে এখনো আমি ভয় পাই এবং মশা মারার কারণে আমি টিকটিকির প্রশংসা এবং শ্রদ্ধা করি। এই সরীসৃপ ধরার জন্য কাউকে আমি আমর ঘরে ঢুকতে দেব না। টিকটিকি বিক্রি করে কেউ একজন হয়ত অনেক টাকা আয় করতে পারে, কিন্তু আমি যে পেশায় রয়েছি, সেই পেশায় থাকতে চাই;)

টোকেহ সাবাহ ফিলিপাইনে টিকটিকি ধরার উন্মাদনা নিয়ে ১০টি কাহিনী পোস্ট করেছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .