৮ জুন, ২০১১ তারিখে করাচিতে পাকিস্তানী রেঞ্জার্স নামক বাহিনীর এক নিরাপত্তা রক্ষী খুব কাছ থেকে ১৯ বছরের এক তরুণকে গুলি করে মেরে ফেলে। প্রাথমিক সংবাদে দাবী করা হয় যে সশ্রস্ত্র এই তরুণ, উক্ত নিরাপত্তা রক্ষীর উপর হামলা চালাতে যাচ্ছিল এবং ঘটনাক্রমে তাকে খুন করা হয়। তবে এই ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরে পাকিস্তানের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে একটি ভিডিও ফুটেজ প্রদর্শিত হতে থাকে যাতে দেখা যায় যে উক্ত তরুণ নিরস্ত্র অবস্থায় ছিল।
চুপ ব্লগ-এর কালসুম এই সংবাদটি প্রদান করে:
বুধবারে, সংবাদ মাধ্যমগুলো সংবাদ প্রদান করতে থাকে যে বিচার বর্হিভুত ভাবে একজন তরুণকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছে। করাচীর বেনজীর পার্কে এই ঘটনা ঘটে। এক্সপেস অনুসারে উক্ত তরুণকে “ছিনতাইকারী” বা এক “ডাকাত” সন্দেহ আটক করা হয়, পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে, পরে পুলিশ তাকে রেঞ্জার্সের উক্ত রক্ষীর হাতে সমর্পণ করে। উক্ত রক্ষী এরপর তাকে পার্কের এক কোনায় নিয়ে যায় এবং উক্ত তরুণের অনুনয় সত্ত্বেও, তার পেটে গুলি করে। সংবাদে জানা গেছে উক্ত তরুণ ছিল এক ম্যাট্রিক (সম্পাদকীয় ভাষ্যঃ এসএসসি সমমানের)-পরীক্ষার্থী এবং সে ছিল সামা টেলিভিশনের সাংবাদিকের ভাই। ঘটনাস্থলে উক্ত তরুণের মৃত্যু ঘটে।

রেঞ্জার্স কর্মকর্তার এক কুশপুত্তলিকার ফাঁসী প্রদান, সরফরাজ খাঁ নামের এক তরুণের বিচার বর্হিভূত হত্যাকাণ্ডের দাবীতে বিক্ষোভের সময় এই দৃশ্য দেখা যায়। ছবি আইয়ুব মোহাম্মদের। কপিরাইট ডেমোটিক্সের(১১/০৬/২০১১)।
ডাঃ আওয়াব আলভী তার নিজস্ব ব্লগ টিথ মায়েস্ত্র-তে এভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করে :
যখন আমি আমাদের সংসদীয় এক আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, যারা ন্যায়ের অংশীদার, তাদের একজনের দ্বারা সরফরাজ খাঁ কে খুন হতে দেখলাম, তখন যেন পৃথিবী আমার উপর ভেঙ্গে পড়ল, প্রায় দশ সেকেন্ডের মধ্যে। ঘটনাক্রমে সরফরাজ খাঁকে রেঞ্জার্সের একটি চেকপয়েন্টে তুলে দেওয়া হয়, যেটি করাচীর বোট বেসিন এলাকার ধারে বেনজীর ভুট্টো পার্কের কাছে অবস্থিত। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে সে এক পরিবারকে জিম্মি করে রেখেছিল। এই দুই জনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। এরপর অভিযুক্ত ব্যক্তিটি ক্রুদ্ধ সৈনিকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে। উক্ত তরুণ অনুরোধ করতে থাকে যেন সৈনিকটি তার বন্দুক নিচু করে-এই তরুণের পেটের নীচের অংশে সৈনিক দুটি গুলি করে। এর মাধ্যমে এই ঘটনার পরিসমাপ্তি ঘটে। এরপর সৈনিকটি তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে যায় এবং সম্ভবত কয়েক ঘণ্টা ধরে রক্ত ক্ষরণের ফলে সরফরাজ ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে?
টিব্রেক.পাক এ ইয়াসির আম্মার তার এই প্রতিক্রিয়াটি টুইট করেছে:
কেবল মাত্র সামা টেলিভিশনে এই ঘটনার দৃশ্য দেখলাম এবং আমার মনে হল যেন আমি বমি করে ফেলব। এখন করাচীতে এই ঘটনা ঘটল, বেলুচিস্তানে যে সব বিচার বর্হিভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে সে সবের কথা কল্পনা করছি।
যখন এই ঘটনার রহস্য উন্মোচন হল, তখন টুইটার ব্যবহারকারীরা প্রশ্ন করতে শুরু করল যে, পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি কি এই ঘটনার বিরুদ্ধে সুয়োমটো আইন জারী করবেন।

করাচীতে জ্বালানী তেলের সংকটে সৃষ্ট জনতার প্রতিবাদের সময় রেঞ্জার্সের সেনার এক মোটর সাইকেল আরোহীকে পেটাচ্ছে। ছবি পিপিআই ইমেজ-এর। কপিরাইট ডেমোটিক্স-এর (২৮/০২/২০১১)
যে সৈনিকটি গুলি করে, এই ঘটনার দুই মাস পরে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়। সেখানে উপস্থিত অবশিষ্ট কর্মকর্তা, যারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে, তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। এই রায়ের ব্যাপারে ব্লগজগৎ (ব্লগস্ফেয়ার) মিশ্র প্রতিক্রিয়া প্রদান করেছে।
জায়নাব ইমাম এই বিচারের রায় সম্বন্ধে প্রশংসার সাথে এই শব্দগুলো উচ্চারণ করেছে:
১২ আগস্টে এক ইতিহাস রচিত হল। সংসদ দ্বারা সৃষ্ট আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর এক সৈনিক, যে গণ আদালতে বিচারের মুখোমুখি হয়, তাকে করাচীর এক বিচার বর্হিভূত হত্যাকাণ্ডের দায়ে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। এই করাচী নামের শহরটি ১০,০০০ রেঞ্জার্সের পাহারায় বাস করে। এই রায় কেবল এক অবৈধ হত্যাকাণ্ডকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করল না, তার সাথে এটি ঘোষণা করল যে এই কাজ হচ্ছে এক ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, এমনকি যদিও তা নিরাপত্তা কর্মীর দ্বারা সংঘঠিত হয়। সন্ত্রাস বিরোধী আদালত “ একটি আইনগত দৃষ্টান্ত” স্থাপন করল ।
নিউজলাইন ব্লগেকাসিফ.এন চৌধুরী এক পোস্ট লিখছেন, যার শিরোনাম “দুটি খুনের কাহিনীঃ সম-অধিকার সম্পন্ন এক ন্যায়বিচারের সন্ধানে”। এখানে তিনি সরফরাজ শাহ এবং পাঞ্জাবের গভর্নর সালমান তাসিরের হত্যাকাণ্ডের বিচারের রায়ের তুলনা করেছেন। সরফরাজ-এর ক্ষেত্রে রায় প্রদান করা হয়েছে আর সালমান তাসিরের বিচারের ক্ষেত্রে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে।চৌধুরী ন্যায়বিচার সাধনে যে বৈষম্যের সৃষ্টি হয়েছে সে ব্যাপারে প্রশ্ন করেছে :
এই দুটি হত্যাকাণ্ড আমাদের এই সমানে এই বাস্তবতাকে তুলে ধরছে যে, যতদিন দেশটির এই অবস্থা বজায় থাকবে, ততদিন বিচার ব্যবস্থা কখনো স্বাধীন হতে পারবে না। পাকিস্তানের সংবিধানে যে সকল নাগরিকের সমান অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হয়েছে, তা সব সময় প্রায় এক বায়বীয় বুদ্বুদ হিসেবে থেকে যাবে। যদি আরো বেশী সংখ্যক পাকিস্তানী জনাব তাসিরের সৃষ্ট সাহসী কর্মের উদাহরণে অনুপ্রাণিত হয়, একমাত্র তাহলে পাকিস্তানে স্বাধীন এবং ন্যায়নিষ্ঠ বিচার বিভাগ তৈরি করা সম্ভব।