প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা এবং তার রাজনৈতিক দল ফিউ থাই পার্টি নির্বাচনী প্রচারণার সময় যে প্রতিশ্রুতি প্রদান করে, এই প্রতিশ্রুতি অনুসারে দেশটির বর্তমান নূন্যতম মজুরী দৈনিক ১৬০ বাথ থেকে বাড়িয়ে ৩০০ বাথের (১০ মার্কিন ডলার) সমান করা হবে। ইতোমধ্যে ঘোষণা প্রদান করা হয়েছে যে এই মজুরী বৃদ্ধির বিষয়টি আগামী বছর থেকে কার্যকর হবে, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ডিগ্রী লাভ করা সদ্য চাকুরী গ্রহণ করা ব্যাক্তি যে নতুন বেতন লাভ করবে (১৫,০০০ বাথ বা ৫০০ মার্কিন ডলার বেতন পাবে) তা এই বছরের অক্টোবর মাস থেকে কার্যকর হবে।
যেমনটা ধারনা করা হয়েছিল, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রস্তাবিত এই নূন্যতম মজুরী বৃদ্ধির বিষয়টির বিরোধীতা করেছে। সরকার, বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিশ্চিত করেছে, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এই মজুরী সংস্কারের আগে তাদের সাথে আলোচনায় বসবে। এখানে এই বিষয়ে ব্লগারদের কিছু প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হল:
এন্ড্রু স্পুনার, নূন্যতম মজুরী প্রদানের বিষয়টি ঠিক করার আগে আরো গবেষণার আহ্বান জানিয়েছে।
আমরা যা দেখতে পাচ্ছি তা হচ্ছে প্রমাণের দ্বারা সৃষ্টি বিতর্কের বদলে একটা ঘটনা প্রত্যক্ষ করা, যেটি থাইল্যান্ডের নূন্যতম মজুরী বৃদ্ধির সুবিধা এবং তার ফলে সম্ভাব্য সমস্যা কি ধরনের হতে পারে সেই বিষয়ে, যা যথাযথ মজুরী বৃদ্ধির এক শেষ সীমানা। এক উন্মুক্ত স্বর, সমাজের সবচেয়ে গরীব সম্প্রদায়ের জন্য যা ভালো তা স্থাপন করার পরিবর্তে জনপ্রিয়তার মাধ্যমে নির্বাচিত এক সরকারকে উপেক্ষা করতে আগ্রহী ( এরা কি সেই একই জনতা নয়, যারা যে কোন সময় সুযোগ যে কোন মূল্যে “জাতীয় ঐক্য” নিয়ে আওয়াজ তোলে?)।
প্রাচিতাই -এ হ্যারিসন জর্জ এই বিতর্কের মূল বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
নূন্যতম মজুরী কি অর্থনীতির সর্বনিম্ন স্তরে থাকা গরীব জনগোষ্ঠীর ব্যায় ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলবে কিনা তা আরেকটি বিষয়, কিন্তু আমরা যা পেলাম তা হচ্ছে ফিউ থাই পার্টি মজুরী বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছিল এবং কেবল উপরওয়ালা জানে, তাদের কতটা পুঁজিবাদী কর্মচারী রয়েছে, যার ফলে তারা অবশ্যই জানবে যে তারা নিজেদের কিসের মধ্যে ফেলে দিচ্ছে।
তাহলে তা পালন করুন
এখনই
সুথিচাই ইয়ুন নতুন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্কটের বিষয়টি উল্লেখ করেছে। নির্বাচনে জয়ের জন্য সে জনপ্রিয় নীতি (ওয়াদা প্রদান) ব্যবহার করেছে।
:
এখানে সেই সব প্রস্তাবিত বিষয়, যা পালন করা যাবে না:
১. চালের জন্য প্রদান করা প্রতিশ্রুতি, যা ধান উৎপাদনের জন্য প্রতি টনে ২০,০০০ বাথ পর্যন্ত ভর্তুকি প্রদান করার সেই পুরোনো প্রতিশ্রুতি।২. দক্ষ শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরী ৩০০ বাথে বৃদ্ধি করা এবং সদ্য স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করে চাকুরিতে যোগদান করা কর্মীদের বেতন জানুয়ারী ২০১২-এর মধ্যে ১৫,০০০বাথে পরিণত করা।
৩. কর্পোরেট ট্যাক্স ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৩ শতাংশ করা।
৪. প্রাথম ১ আপ (ফার্স্ট গ্রেড বা প্রাথমিক পর্যায় ) শ্রেণী থেকে সকল ছাত্রদের জন্য ট্যাবলেট কম্পিউটার প্রদান করা
৫. লম্বা সময়ের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ভূমিতে একটা সেতু স্থাপন,
কিন্তু এগুলো ছিল নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি, তাই নয় কি? এখন তারা এই সঙ্কট থেকে কি ভাবে বের হয়ে আসবে, যা একজন রাজনীতিবিদের দায়িত্ব যে কিনা নির্বাচনে জয়ের জন্য জনপ্রিয়তা অর্জনের নীতিসমূহ ব্যবহার করেছে, এটি জানা সত্বেও যে বাস্তবে এই সব নীতি প্রয়োগ করা সম্ভব নয়।
দেনিয়োজোফিসারান, স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে ইংলাক যেন তার প্রতিশ্রুতি পালন করে:
নির্বাচনী প্রচারণার সময় ইংলাক ছিল এক মিষ্টি আম, যা কিনা থাইল্যান্ডের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ এলাকার লক্ষ লক্ষ “ঘরোয়া মাছিকে” আকৃষ্ট করেছে। এখন সংসদীয় আসন সংখ্যা বিবেচনায় আপনি আপনার প্রতিশ্রুতি পালন করুন! সারা দেশে শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরী ৩০০ বাথ করুন, এখন সংসদে আপনার ৩০০ সাংসদ রয়েছে। আপনারা এখন ঝড় তুলতে পারেন, পারেন না কি?!
ডেমোক্র্যাটিক ভয়েসস অফ বার্মার আইয়ে নাই থাইল্যান্ড যে ৪০ লক্ষ অভিবাসী শ্রমিক রয়েছে তাদের উপর ন্যূনতম মজুরী বৃদ্ধির প্রভাব কি হবে তাই নিয়ে লিখেছে। থাইল্যান্ডের বিদেশী শ্রমিকের ৮০ শতাংশ বার্মার নাগরিক।
কো আইয়ে এক সমাজ সেবা কর্মী (কমিউনিটি ওয়ার্কার) যে কিনা থাই সীমান্তের শহর মায়ে সোট-এর অভিবাসীদের সাহায্য করে থাকে। সে বলছে যে “ এই মজুরী কাঠামোর বিষয়টি অভিবাসী কর্মীদের কাছে বেশ আনন্দদায়ক শোনাচ্ছে” তবে বর্তমানে যে নূন্যতম মজুরী কাঠামো রয়েছে, তারা সেটিও খুব কম সময় পেয়ে থাকে।
সে এর সাথে যোগ করেছে, এখন আরো অনেক বেশী কোম্পানী অভিবাসী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে শ্রম আইনের প্রয়োগ না থাকার সুবিধা গ্রহণ করবে। অভিবাসী শ্রমিকদের বেশীরভাগই অদক্ষ শ্রমযুক্ত শিল্পে কাজ করে, যারা প্রায়শই থাই শ্রমিকদের মত কাজের পরিবেশ পায় না।