ক্যাম্বোডিয়াঃ ব্লগের এক প্রবন্ধ খুনের তদন্তের দ্বার উন্মোচন করেছে

নম পেন পোস্টের এক প্রবন্ধ অনুসারে মালয়েশিয়ায় এক ক্যাম্বোডিয় গৃহকর্মীর মৃত্যুর বিষয়ে মালয়েশিয়ায় অবস্থিত ক্যাম্বোডিয় দূতাবাস এক তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে। আর এ কাজে দূতাবাসকে সাহায্য করেছে মালয়েশীয় পুলিশ বিভাগ।

এই গৃহকর্মীর খালাকে শ্রমিক নিয়োগ কোম্পানী এ্যাপটেসে এন্ড সি রিসোর্স কোম্পানী লিমিটেড জানায় যে তার ১৯ বছরের ভাগ্নি মালয়েশিয়ায় নিউমোনিয়ায় ভুগে মারা গেছে। তবে ক্যাম্বোডিয়া থেকে মালয়েশিয়ায় যাবার আগে তার যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছিল। তাতে দেখা গেছে যে তার শারীরিক অবস্থা ছিল একেবারে চমৎকার ।

এখন অভিযোগ উঠেছে যে তাকে হয়ত হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। খেমারাইজেশন নামক ওয়েবসাইট এই বিষয়ে একগুচ্ছ সংবাদ প্রকাশ করার পর এই অভিযোগ তীব্র হয়। এই সাইট এক নামহীন ব্যক্তির ইমেইল প্রকাশ করে এবং তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়। এই মেইলে উক্ত ব্যক্তি সংবাদ প্রদান করে যে এই গৃহকর্মী তার মালিকের দ্বারা নিপীড়িত হয়েছিল।

অধিকার আন্দোলনকারী কর্মী এবং রাজনীতিবিদরা এই ঘটনাকে দ্রুত গ্রহণ করে এবং এই ঘটনায় তারা এক যাথাযথ তদন্তের আবেদন জানায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উক্ত পত্র প্রেরক খেমারাইজেশনের কাছে লিখেছিলঃ

আপনাদের ওয়েবসাইটের ব্লগে (খেমারাইজেশন) প্রকাশিত “খেমারাইশেন.ব্লগপোস্ট.কম)-“এক প্রবন্ধের মাধ্যমে সর্তক করে দেওয়ার ফলে মালয়েশীয়ায় অবস্থিত দূতাবাস ক্যাম্বোডিয় এক গৃহকর্মীকে রক্ষা করেছে” নামক প্রবন্ধ পাঠ করেছি, যা ২৩ মার্চ ২০১১-এ প্রকাশিত হয়। আমরা সম্প্রতি এক ক্যাম্বোডিয়ার গৃহকর্মীর মৃত্যুর ঘটনা আপনাদের নজরে আনতে চাই। আমরা সন্দেহ করছি যে উক্ত গৃহকর্মীর উপর ক্রমাগত শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার চালানোর ফলে তার মৃত্যু ঘটেছে। আর এই কাজটি করেছে তার মালিক।

উক্ত মৃত গৃহকর্মীকে যে সব সময় পেটানো হত এবং তার উপর নিপীড়ন চালানো হত, স্থানীয় প্রতিবেশীরা এই ঘটনার স্বাক্ষী এবং অনেকবার প্রতিবেশী অন্য গৃহকর্মীদের কাছে মেয়েটি সাহায্যের জন্য আবেদন জানিয়েছিল। তার মৃত্যুর আগের দিন সে একটা বার্তা লেখে, তাতে সে লিখেছিল, যদি কোন উপযুক্ত কারণ ছাড়া আমার মৃত্যু ঘটে তাহলে যেন দয়া করে ক্যাম্বোডিয়ায় আমার চাচার কাছে খবর দেওয়া হয়।

সংসদ সদস্য মু সচুয়া এই কিশোরী গৃহকর্মীর মৃত্যুর ঘটনা তদন্তের ব্রত গ্রহণ করেছেন।

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে খেমারাইজেশন এর আগে মালয়েশিয়ায় এক গৃহকর্মীর উপর তার মালিক কতৃক সংঘঠিত অত্যাচারের ঘটনায় সফলতার সাথে কর্তৃপক্ষকে সেই বিষয়ে তদন্ত করতে বাধ্য করে। কেবল নিপীড়নের ঘটনার উপর একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করা ছাড়াও খেমারাইজেশন তার পাঠকদের কাছে একটি ইমেইল পাঠিয়েছে, যেখানে তারা তাদের পাঠকদের উৎসাহ প্রদান করেছে তার যেন মালয়েশীয় দূতাবাসে এই বিষয়ে একটি চিঠি প্রদান করে।

 

কারাম এশিয়া, কারাম ক্যাম্বোডিয়া এবং তেনাগানিতা মিলে যৌথভাবে প্রস্তুত করা ২০১১ রিপোর্ট, যার শিরোনাম “বাস্তবতা যাচাইঃ সারা এশিয়া জুড়ে অভিবাসী কর্মীদের নাগরিক অধিকার এবং আইনী অধিকার” অনুসারে মালয়েশিয়ায় প্রায় ৪০,০০০ এর মত ক্যাম্বোডিয় গৃহকর্মী রয়েছে, যাদের মধ্যে প্রায় ৫১.৭ শতাংশ নারী। গৃহকর্মীরা সধারণ যে সব ঘরোয়া নির্যাতনের শিকার হয় এই রিপোর্টে সে সবের কিছু কিছু তুলে ধরেছে।

  • অভিবাসী কর্মীর সাথে ক্যাম্বোডিয়ার শ্রমিক পাঠানো প্রতিষ্ঠানের যে সব চুক্তি হয়, তাতে দেখা যায় বেশির ভাগ সময় দেখা দেয় যে চুক্তি আর কাজের পরিবেশের মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য। এতে দেখা যায় চুক্তির তুলনায় শ্রমিক কম বেতন পায় এবং দেশ ছেড়ে যাবার আগে তারা যে ঋণচুক্তির দ্বারা আবদ্ধ হয়, তা শ্রমিকের অজানা থেকে যায়।
  • শ্রমিকদের কাজে নিয়োগ প্রদান করা কোম্পানীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আটকে রাখা।
  • মিথ্যা তথ্য দিয়ে অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের কাজে পাঠানো
  • মজুরী প্রদান না করা
  • অনিয়মিত বেতন ( অভিবাসী গৃহকর্মীদের চুক্তির মেয়াদ শেষে বেতন দেওয়া হয়)
  • অনেক দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করা
  • ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব
  • অতিরিক্ত দায়িত্ব এবং কাজ
  • কোন ছুটি না থাকা
  • ব্যক্তিগত জীবন বলে কিছু না থাকা
  • মৌখিক নিপীড়ন
  • যৌন নিপীড়ন
  • শারীরিক নিপীড়ন
  • ব্যক্তিগত কাগজপত্র জব্দ করে নেওয়া

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .