- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

ইন্দোনেশিয়া: সৌদি আরবে গৃহকর্মীর শিরচ্ছেদের ঘটনায় ক্ষোভ

বিষয়বস্তু: পূর্ব এশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, আইন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, দেশান্তর ও অভিবাসন, নাগরিক মাধ্যম, শ্রম

যখন সংবাদ পাওয়া যায় যে ইন্দোনেশিয়া, পশ্চিম জাভার ৫৪ বছর বয়স্ক এক অভিবাসী গৃহকর্মী রুয়াতিকে [1] সৌদি আরবে,শিরচ্ছেদের [2] মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়েছে, তখন ইন্দোনেশিয়ায় এই ব্যাপারে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। গত মাসে এই ঘটনা ঘটে। বাড়ীর মালিককে খুন করার দায়ে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। রুয়াতি দাবী করেছিল যে উক্ত ব্যক্তি তাকে যৌন নিপীড়ন করেছিল।

সৌদি সরকারের এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানানো [3] ছাড়াও ইন্দোনেশিয়া এই ঘটনার পর সৌদি আরবে গৃহকর্মী পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে। অভিবাসী শ্রমিক এবং গৃহকর্মীদের নিরাপত্তা বিধানসহ নতুন চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত দেশটি আর সৌদি আরবে কোন কর্মী পাঠাবে না।

এই ঘটনার উপর আসা ব্লগ জগৎের কিছু প্রতিক্রিয়া এখানে প্রদান করা হল। পিপি [4] প্রশ্ন করছে, কেন বাবা-মা তাদের মেয়েকে আরেকটি দেশে কাজ করতে পাঠায়:

Ruyati was beheaded on June 18. [5]

১৮ জুন তারিখে, শিরচ্ছেদের মাধ্যমে রুয়াতির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়

লোকজন কিছু জিজ্ঞেস করার আগে এই প্রশ্নের উত্থাপন ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র “ইন্দোনেশীয় পুরুষদের জীবনে কি এমন ঘটেছে যে, যার ফলে তারা ঘরের মেয়েদের সৌদি আরবে পাঠাচ্ছে? এই দেশটি হচ্ছে এমন এক দেশ, যেখানে ছেলে এবং মেয়ে একসাথে কাজ করতে পারে না। আমরা আমাদের মেয়েদের এমন এক দেশে পাঠাচ্ছি, যেখানে তারা তাদের মালিকদের সাথে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। সেটি এমন এক দেশ, যেখানে মেয়েদেরকে জোর করে “যথাযথ স্থানে” রাখা হয়, সেখানে আমাদের নারীদের ‘যথাযথ মর্যাদা’ প্রদান করা হবে না। এখন, আমরা যখন তা জানি, সে ক্ষেত্রে আমরা কি করছি?

ইন্দোনেশিয়ার এক নারীর শিরচ্ছেদের কাহিনী প্রকাশ হয়ে পড়লে এই টুইটটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে:

কেন এমন এক দেশে সবাই হজ্জ করতে যায়, যেখানে মানুষকে পশুর মত শাস্তি দেওয়া হয়?

ইয়ুকি [6] উপরের বক্তব্যের যে স্বর, তার সাথে একমত নয়:

পবিত্র নগরী কোনটি হবে তা বেছে নেবার আমার কোন অধিকার নেই। আর সেখানে যাওয়ার ব্যাপারে কোন প্রতিবন্ধকতা তৈরি করারও আমার কোন অধিকার নেই। এভাবে সরকারের আইন এবং ধর্মীয় উদ্দেশ্যে যাত্রা করা হজ্জের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা, যেন অনেকটা ক্যালকুলাস এবং গাধার মধ্যে হারিয়ে যাওয়া সূত্র আবিষ্কার করা। লেখিকা যে ভাবে ভাবছে, যদি সে ভাবে ভাবি, তাহলে ভাবতে হবে, যুক্তরাষ্ট্র বিরোধীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা ম্যাকডোনাল্ড বা স্টারবাকসে যাবে না [জনপ্রিয় খাবারের দোকান], অথবা যারা ইহুদি বিদ্বেষী তারা সবাই আর মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ব্যবহার না করে, তার বদলে তারা মার্সিডিজ বেঞ্চ কিনবে, কারণ তারা মনে করে যে বিল গেটস একজন ইহুদী।

মাল্টিব্রান্ড আশা করে যে [7] অভিবাসী কর্মীদের অধিকার রক্ষায় সরকার আরো কঠোর মনোভাব প্রদর্শন করবে:

যে সব কর্মী বিদেশে কাজ করে তাদের প্রতি আমাদের সরকার এখন আরো অনেক বেশি গুরুত্বের সাথে মনোযোগ প্রদান করবে। যেমন, বিদেশের সরকারে সাথে এমন চুক্তি করবে, যার মধ্যে দিয়ে সে দেশের সরকার আমাদের শ্রমিকদের কঠোর নিরাপত্তা প্রদান করবে। সরকার বিদেশে পাঠানোর আগে কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদান এবং দক্ষতা বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিত করবে। এর সকল কিছু প্রয়োজনীয়, কারণ আমাদের কর্মীরা বিদেশ থেকে টাকা পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিতে এক বিশাল অবদান রাখছে।

কলসন [8] শিরচ্ছেদের মত শাস্তির নিন্দা করেছে:

মানবাধিকার আইনের মধ্যে যে সব শাস্তির বিধান রয়েছে, সেই অনুসারে দোষীকে শাস্তি প্রদান করা উচিত।

তবে সে দেশটি একটা বাজে শাসন ব্যবস্থার দেশ, সেখানে মরুভূমির এক সংস্কৃতি প্রচলিত, যারা নারীদের প্রতি ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে থাকে, সংখ্যালঘুদের প্রতি যাদের আচরণ ঘৃণ্য এবং সেখানে সেকেলে নিষ্ঠুর এক বিচার ব্যবস্থা বিদ্যমান।

দেশটির জনতা এর চেয়ে ভালো কিছু পাবার যোগ্য- আরব বিপ্লবের বসন্তের ছোঁয়ায় এখন তা পাওয়ার কথা।

বিশ্বের সকল সভ্য দেশের সরকারের উচিত এই শাস্তির বিরুদ্ধে জোরালো এবং পরিষ্কার কণ্ঠে নিন্দা জানানো। সৌদি আরবের আইন সমূহকে আধুনিক করার জন্য সকলের দেশটির উপর রাজনৈতিক চাপ প্রদান করা উচিত।

(দুর্ভাগ্যজনক ভাবে সকলেই নিরব রয়েছে: সৌদি আরব পুঁজিতান্ত্রিক দেশসমূহে তেলের সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে এবং মুসলমান দেশসমূহের উপর তার ধর্মীয় নিয়ন্ত্রণ বজায় রয়েছে)।

আনস্পান সৌদি কর্মকর্তাদের ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়টি [9] পরিষ্কার করছে। একজনের মাথা কেটে ফেলার কারণে নয়, বরঞ্চ সময় মত সংবাদটি ইন্দোনেশিয়ার সরকারে কাছে না জানানোর কারণে তারা ক্ষমা চেয়েছে:

এমন এক সংবাদ শিরোনাম যা বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে: শিরচ্ছেদের সংবাদ সময়মত না দিতে পারার কারণে সৌদি সরকার ক্ষমা চেয়েছেন, গৃহকর্মীটির শিরচ্ছেদ করার কারণে নয়। মূল সমস্যাটি হচ্ছে শিরচ্ছেদ, এখানে কূটনৈতিক পর্যায়ে কারো সাথে যোগাযোগের অভাব নামক বিষয়টি সমস্যা নয়।

জ্যাক লাটো [10] রাষ্ট্রপতির আচরণে হতাশ হয়েছে, এখানে রাষ্ট্রপতি অভিবাসী কর্মীদের কল্যাণের বিষয়টি তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে:

একটি প্রতিজ্ঞা আসলে একটি প্রতিশ্রুতি। এ কারণে যখন এই ধরনের প্রতিশ্রুতি কোন সামন্ততান্ত্রিক কর্তৃপক্ষ, যেমন ইন্দোনেশিয়ার সরকারের কাছ থেকে আসে, তখন বিষয়টি যতক্ষণ না প্রমাণ হয়, ততক্ষণ প্রশ্নবোধক হয়ে থাকে। বিশেষ করে গরীব অভিবাসী অনেক কর্মী বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে নিজেদের অসহায় অবস্থায় আবিষ্কার করে। আমাদের রাষ্ট্রপতি সুসিলো বামবাং ইয়োধোয়ানোর জোরালো প্রতিশ্রুতির কথা শুনে তারা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।