ভারতঃ সন্ত্রাসের ঘটনার পর মুম্বাইয়ের আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা

এমনটা নয় যে মুম্বাই এই প্রথম কোন সন্ত্রাসী হামলার শিকার হল। ক্রমশ বাড়তে থাকা ভারতে এই বিশাল নগর ১৯৯৩ সাল থেকে বেশ কয়েক বার বোমা হামলার শিকার হয়েছে এবং বিশেষ করে ২০০৮ সালে মুম্বাইয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার স্মৃতি বিশ্ববাসী, বিশেষ করে ভারতীয় অনেকর মনে এখনো তাজা।

বুধবার, ১৩ জুলাই, ২০১১ প্রায় সন্ধ্যা ৭.০০ টার সময়, জ্যাভিয়ার বাজার, অপেরা হাউজ এবং দাদর-এ, তিনটি বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়, এর সবগুলো ছিল জনাকীর্ণ এলাকায়। জ্যাভিয়ার বাজার দক্ষিণ মুম্বাইয়ের এক অন্যতম ব্যস্ত বাজার। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত সংবাদে জানা গেছে যে, এই ঘটনায় অন্তত ২১ জন ব্যক্তি নিহত হয়েছে এবং অজস্র মানুষ আহত হয়েছে। নাগরিকদের উপর পরিচালিত এই সন্ত্রাসী হামলার কারণে সারা মুম্বাই জুড়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারী করা হয়েছে।

দাদর এলাকার ডি’সিলভা হাই স্কুলের কাছে যে এলাকায় বোমা বিস্ফোরিত হয়েছে, মুম্বাই পুলিশ সেই এলাকাটি পরীক্ষা করছে। ছবি প্রদীপ পালিওয়ালের। কপিরাইট ডেমোটিক্সের। ১৩ জুলাই,২০১১

এখন পর্যন্ত কোন সংগঠন আজকের এই বোমা হামলার দায দায়িত্ব স্বীকার করেনি। এই ঘটনার পর দ্রুতই সামাজিক প্রচার মাধ্যম সেই একই রকম ব্যস্ত হয়ে উঠে, যেমনটা নেট নাগরিকরা, ২০০৮ সালের ঘটনায় ব্যস্ত হয়ে উঠেছিল। দিনা মেহতার মত টুইটারকারী এই ঘটনায় নিয়মিত তাজা সংবাদ প্রদান করে গিয়েছে এবং কি ভাবে হামলায় আহত ব্যক্তিদের সাহায্য করতে হবে, সে তথ্য জানিয়েছে। এই বারের বোমা হামলায় আমরা কিছু নেট নাগরিকদের কাজ থেকে আরো সংগঠিত এক প্রচেষ্টা লক্ষ্য করলাম।

@দিনা: মুম্বাই-এর বোমা হামলায় সাহায্যের জন্য একটি তালিকা (স্প্রেডশিট) করা হয়। সারা শহর জুড়ে যে সব ব্যক্তি সাহায্য করতে ইচ্ছুক তাদের তালিকা একটি উন্মুক্ত ডক-এ (ডকুমেন্ট)https://spreadsheets.google.com/spreadsheet/lv?hl=en_US&key=tE-okpwwYgQavia5opgZSEA&toomany=trueরাখা হয়েছে #মুম্বাইব্লাষ্ট

উপরের টুইটারের এই ডকুমেন্টের শিরোনাম “ মুম্বাইয়ের সাহায্যের প্রয়োজন,” এটা দৃশ্যমান হওয়া শুরু করে নিতিন সাগরের টুইটে। এর সাথে আরো কয়েকজন মুম্বাইয়ের বাসিন্দাদের জন্য সাহায্যের জন্য যোগাযোগের নাম্বার এবং অন্য সব সব তথ্য সরবরাহ করেছে। আর তারা যে ধরনের সাহায্য করতে পারে সে ধরনের সাহায্যের তালিকা একত্রিত করেছে। এক ঘণ্টার মধ্যে অনলাইনে মৃত এবং আহতদের তালিকা তৈরি করা হয়। ব্লাডএইড টুইটারের মাধ্যমে রক্ত দেবার আহ্বান সবখানে ছড়িয়ে দিয়েছে।

উশাহিদি ভিত্তিক একটি ক্রাউড সোর্সিং সাইট মুম্বাই ইউনাইটস অনলআইনে স্থাপন করা হয়। উইকিপিডিয়ার পাতায় সব সময় তাজা সংবাদ যোগ করা হচ্ছিল। মূল ধারার প্রচার মাধ্যমও তাদের নিজস্ব উপায়ে ক্রাউড সোর্সিং করেছে,ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, দি গার্ডিয়ান এবং রয়টার্সলাইভ ব্লগ করেছে, এবং মিড ডে সরাসরি টুইট করেছিল।

বোমা বিস্ফোরণে আহত একজনকে জেজে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি প্রদিপ পালিওয়ালের। কপিরাইট ডেমেটিক্সের,১৩ জুলাই,২০১১

কিছু ছবির কারণে জনতা আতঙ্কিত হয়ে উঠে, যে সব ছবি অনলাইনে ছবি প্রচারিত হয়েছিল।

আনন্দরাইটস:#মুম্বাইব্লাস্ট-এর আতঙ্ক ধরানো কিছু ছবি দেখলাম। বেদনাদায়ক। যদি আপনি মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকেন তাহলে কেবল ক্লিক করুন। http://bit.ly/qRopPX + http://bit.ly/ohA1of

এই ঘটনার পর কিছু গুজবের জন্ম হয়, কিন্তু নেট নাগরিকরা তা দ্রুত প্রশমিত করে।

পিওভি-তে হারিনি কালামুর টেলিভিশনে প্রচারিত সংবাদের সমালোচনা করেন:

যখন এর জন্য সাহায্যের আহ্বান করা হল, সে সময় আমরা আলাপ করছিলাম এবং চলচ্চিত্র, জীবন এবং জীবনের অন্য বিষয়ে মগ্ন ছিলাম। মুম্বাইয়ের তিনটি বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায়। এরপর সবাই টেলিভিশনে চোখ রাখা শুরু করে। কয়েকজন ব্যক্তি-‘যারা সাংবাদিক’ তারা আর্ত চিৎকার এবং গর্জন করছিল, উপস্থাপকরা উল্লাসধ্বনি দিচ্ছিল (তিনটি টিভি চ্যানেল-তাদের আচরণ)। প্রত্যক্ষদর্শীরা একটি চক্রের ভুমিকা পালন করছিল। তৃতীয়বারের মত জেকেডি একেবারে সঠিকভাবে প্রত্যক্ষ্যদর্শীর ভাষায় সবকিছু উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়, এবং এরপর সে (জেকেডি) একটি গুরুত্বপুর্ণ প্রশ্ন করে-এই সব আজে বাজে সংবাদের বদলে, কেন তারা ঠিক কোন জায়গায় বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে তা জানাচ্ছে না। কোথায় বোমা বিস্ফোরিত হয়েছে, দাদর-এর কোন এলাকায়, জ্যাভিয়ার বাজার-এর কোনখানে, কোন জায়গায়??

হারিনি কালামুর-এর সাথে যোগ করেছে:

যদি আমরা এমন এক সমাজে বাস করি যা খোলামেলা এবং প্রায় উন্মুক্ত- তার জন্য একটা মূল্য প্রদান করতে হবে- কারণ সবসময় এমন একদল লোককে পাওয়া যাবে, যারা আঘাতের মাধ্যমে আবার সব কিছুকে আগের মত স্বাভাবিক জায়গায় ফিরিয়ে আনা এবং গতিশীলতকে (স্পিরিট) নষ্ট করে ফেলতে চাইবে।

এবং লেখিকা সঙ্কটকালীন ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে একটি ভালো দিক দেখতে পাচ্ছেন:

অবশ্যই এই ঘটনায় প্রশ্ন তৈরি হবে এবং তার উত্তর প্রদান করা হবে। তবে এই ঘটনায়-একসাথে থুথু নিক্ষেপ না করে, সবার ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন।

ডেথ এন্ডস ফানদিলিপ ডি সোউজা নামের আরেক ব্লগার বর্ণনা করেন, কি ভাবে বিস্ফোরণের শোরগোলের মাঝেও মুম্বাইয়ের জীবন স্বাভাবিক ভাবে চলছিল।

টুইটারে ঘটনার সাথে সাথে আসা (রিয়াল টাইম) প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে (#মুম্বাইব্লাষ্ট) হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করুন। এছাড়াও আপনারা টুইটের উপর তৈরি করা কোলাজ কাহিনীপড়তে পারেন, যেগুলো সংগ্রহ করেছে গ্লোবাল ভয়েসেস-এর লেখক এস্টেরিস মাসুরাস, যে কিনা গ্রীসের থিসালোনোকিতে বাস করে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .