বাংলাদেশের অনেক নেট নাগরিক ক্ষোভে ফেটে পড়ে, যখন বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মত অন্যান্য একটিভিস্টদের সাথে দেশটির ব্লগার এবং অনলাইন একটিভিস্টদের গ্রেফতার করা হয়। সম্প্রতি গভীর সমুদ্রে তেল গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ জ্বালানী উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠান কনকোফিলিপসের উৎপাদন বন্টন চুক্তির (প্রোডাকশন শেয়ারিং কনট্র্যাক্ট বা পিএসসি) প্রতিবাদে আহ্বান করা হরতালের সময় তাদের গ্রেফতার করা হয়।
![743995 [640x480]](https://globalvoicesonline.org/wp-content/uploads/2011/07/743995-640x480.jpg)
জাতীয় তেল, গ্যাস, খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ডাকা ৬ ঘণ্টার এক সাধারণ ধর্মঘটের সময় পুলিশের সাথে হরতালকারীদের সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। কমিটি সরকারের সাথে কনকোফিলিপসের করা গভীর সমুদ্র থেকে তেল গ্যাস উত্তোলনের জন্য করা চুক্তির প্রতিবাদে এই হরতালের আহ্বান করেছিল। ছবি শুভ্রা কান্তি দাসের। কপিরাইট ডেমোটিক্সের। ৩১ জুলাই, ২০১১
জাতীয় তেল, গ্যাস, খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি আজ সারা দেশে আধা বেলার এক হরতাল ডেকেছে। এটি মূলত বাম-ধারার নাগরিক সমাজের একটি দল। এই হরতালের কারণে ঢাকা দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ব্যহত হয়। হরতালের কারণে ঢাকার বেশিরভাগ দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং স্কুল বন্ধ ছিল এবং রাস্তায় খুব সামান্য যান চলাচল করতে দেখা যায়। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের নির্দয়ভাবে পিটিয়েছে এবং তারা গণহারে বিক্ষোভকারীদের গ্রেফতার করে। বিখ্যাত ফোটো সাংবাদিক এবং ব্লগার শহিদুল আলম তার ব্লগে সারা দিনের পরিস্থিতির তাজা সংবাদ প্রদান করেছেন ( এর সাথে তিনি ঘটনাবলীর ছবিও তুলে ধরেছেন):
ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শী নাসরিন সিরাজের সংবাদ:
আনু মুহাম্মদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং তেল, গ্যাস জ্বালানী এবং বন্দর-রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক। আজ (৩ জুলাই) তাকে ভোর ৬.৩৫ টার সময় পল্টন থেকে গ্রেফতার করা হয়। সে সময় তিনি হরতালের কার্যক্রমের জন্য জাতীয় কমিটির অন্য একটিভিস্টদের সাথে যোগ দেবার জন্য হেটে বাংলাদেশে কমিউনিস্ট পার্টির অফিসে যাচ্ছিলেন। অন্তত ৪০ জন দাঙ্গা পুলিশ সামনে এগিয়ে আসে, তাকে ঘিরে ধরে এবং গাড়িতে (প্রিজন ভ্যানে) উঠিয়ে নিয়ে যায়। গ্রেফতারের সময় তিনি কোন রকম বাঁধা দেবার চেষ্টা করেননি।[..]
আজ, ভোরবেলা থেকে জাতীয় কমিটির একটিভিস্টদের গ্রেফতার করা শুরু করে। প্রথমে ৫.৪৫ মিনিটে পল্টন থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়ন-এর নেতাকে গ্রফতার করা হয়। ভোর থেকে তোপখানা রোড এবং পল্টনে অবস্থিত সকল বাম দলের অফিস পুলিশ ঘিরে রাখে। জাতীয় কমিটির প্রায় সকল নেতা এখন পুলিশের হাতে বন্দী।
তাজা সংবাদ: এরপর নাসরিন সিরাজকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।
বাংলাদেশের ব্লগাররা অনলাইন এবং অনলাইনের বাইরে এই জ্বালানী চুক্তির বিরোধিতায় অংশ নিয়েছে। হরতালের সমর্থনে গতকাল বেশ কিছু ব্লগার এক শোভাযাত্রা বের করে, যা এই ভিডিওতে দেখা যাবে। অন্যমনস্ক শরৎ ব্লগারদের প্রতিবাদের এই সব ছবি পোস্ট করেছে এবং লিখেছে:
ব্লগের টোকাইরা দলে দলে হাজির হইছিল বিকালে। তাগোরে কেউ পয়সা দেয় নাই। আপ্যায়নও করে নাই। নিজে নিজেই আইছে। সমাবেশ করছে, সংহতি জানাইছে। একজন ব্লগারের সাথে থাকে ১০০ ভার্চুয়াল ব্লগার। কারো কারো সাথে থাকে আরো বেশি। কেউ কারও চেয়ে আগাইয়া বা পিছাইয়া নাই..সমান্তরাল।
ব্লগার এবং গ্লোবাল ভয়েসেস-বাংলার অনুবাদক কৌশিক সামহয়্যারইন.নেটের ব্লগে আজকের হরতাল সম্বন্ধে তাজা সংবাদ প্রদান করেছেন [বাংলায়]:
আপনারা জানেন বাংলা ব্লগের খ্যাতিমান ব্লগার দিনমজুর নামে মূলত তিনজন তরুন প্রকৌশলী লিখে থাকেন যাদের মধ্যে অন্যতম অনুপম সৈকত শান্ত। তেল-গ্যাস নিয়ে তার বিশ্লেষণধর্মী লেখা আমাদের অনেক চরম সত্যের মুখোমুখি করেছে। একটু আগে প্রখ্যাত এই ব্লগার কনোকো ফিলিপসের সাথে অন্যায্য চুক্তির প্রতিবাদ করতে গিয়ে গ্রেফতার হলেন। এখন তিনি শাহবাগ থানায় আছেন।
![744187 [640x480]](https://globalvoicesonline.org/wp-content/uploads/2011/07/744187-640x480.jpg)
বন্দী বহন করা গাড়ির ভেতরে বন্দী এক প্রতিবাদকারী। ছবি শুভ্রা কান্তি দাস-এর। কপিরাইট ডেমোটিক্সের। জুলাই ৩, ২০১১
বাংলা ব্লগোস্ফিয়ারের ইতিহাসে প্রথম কোনো ব্লগার গ্রেফতার হলেন। শান্তর গ্রেফতারের তীব্র প্রতিবাদ জানাই। একজন শান্তকে গ্রেফতার করে আন্দোলন স্তিমিত করা যাবে না – বাংলা ব্লগোস্ফিয়ার এখন অনেক সমৃদ্ধ এবং প্রায় সবাই সোচ্চার এই দমন-পীড়ন আর দেশ বিক্রির চুক্তির বিরুদ্ধে।
স্থানীয় এক টিভি চ্যানেল সংবাদ প্রদান করেছে যে হরতালের সময় ২৪ জন ব্লগারকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, যতদূর জানা গেছে তাদের মধ্যে ২৩ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। গুজব ছড়িয়ে পড়েছে যে গ্রেফতার কৃত বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হচ্ছে। আজকের এই দিনটিতে ব্লগার/একটিভিস্টদের গ্রেফতার হবার সংবাদ বিভিন্ন ব্লগিং প্লাটফর্ম দখল করে রাখে। অনেক ব্লগার, যেমন চতুর্মাত্রিক এর অয়ন ছবি সহ ঘটনার প্রত্যক্ষ বর্ণনা প্রদান করেছে ।
ব্লগার জোবায়েন সন্ধি লিখেছে:কনোকোফিলিপস চুক্তি বিরোধী আন্দোলনে দেশের অনলাইন কমিউনিটির যুক্ত হওয়া চলমান আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। অনেকে অপবাদ দিয়ে বলেন ব্লগাররা মনিটরের সামনে বসে অলস সময় কাটায়। কিন্তু তাদের বক্তব্যকে মিথ্যা প্রমাণ করে ব্লগাররা দেখিয়ে দিল প্রয়োজনে তারা রাজপথেও যুদ্ধ করতে সক্ষম। এই আন্দোলন সমগ্র অনলাইন বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে এবং অনলাইনের সংগ্রামে সকলে অংশ নিবেন এটাও প্রত্যাশা করছি।
বর্তমান শাসক ও বিরোধী উভয় দলই সাম্রাজ্যবাদ ও তাদের বিদেশী প্রভুদের পা লেহনে সিদ্ধহস্ত এটা প্রমাণ হলো এবার। ব্লগারদের উচিত এইসব ‘দেশপ্রেমিক’ নেতাদের স্বরূপ উন্মোচনের পাশাপাশি জনগণকে সঠিক পথে অগ্রসর হওয়ার পথ নির্দেশ ও প্রেরণা দেয়া
আমরা বন্ধুতে -তে ভাস্কর একই আবেগের প্রতিধ্বনি করেছে:
আজকের হরতাল আওয়ামি-বিএনপি'র ক্ষমতালিপ্সু রাজনীতিবিদদের প্রতি হুশিয়ারী।
উন্মোচন নামক ব্লগিং প্লাটফর্মে মাহফুজ জুয়েল আজকের এই বিক্ষোভে এক আশা দেখতে পাচ্ছেন:
আধাজ্বর নিয়ে সকাল থেকে আমিও পল্টনে ছিলাম আজকের আধাবেলা হরতালে। [..] হরতাল যখন শেষ হলো দেখলাম পুরো দেশের যন্ত্রণা আমার মাথায় চলে এসেছে। চোখে ঝাপসা দেখছি, কিন্তু এই ঝাপসা চোখেও দেখছি আশার আলো। মানুষ জেগেছে। দেশপ্রেমিক জেগেছে। জাতির বিবেক জেগে উঠছে। জেগে উঠছে সময়ের সাহসী সন্তানেরা!
এই বিতর্কের উপর সংগৃহিত এক গুচ্ছ ব্লগ পোস্ট [বাংলায়] এখানে পাবেন, যা পোস্ট করেছে হাসিব।
ভাস্করের মাধ্যমে প্রাপ্ত তাজা সংবাদ: দিনমজুরকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।