- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

ইরানঃ সবুজ বিক্ষোভ, গণতন্ত্রীকরণ এবং এক বয়স্ক দানব

বিষয়বস্তু: মধ্যপ্রাচ্য ও উ. আ., ইরান, ডিজিটাল অ্যাক্টিভিজম, নাগরিক মাধ্যম, প্রতিবাদ, রাজনীতি

দুই বছর আগে যখন ইরানে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে, সে সময় ইন্টারনেট কেবল তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা পালন করেনি, একই সাথে তা ভারসাম্যপুর্ণ এক বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে আভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের বিকাশে এক উদ্দীপক হিসেবে কাজ করেছে।

দৃশ্যত মনে হচ্ছে, ইরানে ভিন্নমত প্রকাশকারীরা যে দানবটির মুখোমুখি হচ্ছে তা কেবল কোন কিছু বন্ধ করে দেওয়া নয়, এই আন্দোলন যেন অনেক বয়স্ক এবং এর ভেতরে কোন সৃষ্টিশীলতা নেই।

অনলাইনের প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে সংবেদনশীলতা

এ রকম অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে যখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিরোধী নেতাদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছে ও তাদের আঘাত করা হয়েছে এবং এরপর তাদের সংশোধন এবং জনতার মাঝে তাদের নতুন করে অবস্থান তৈরি করার সুযোগের প্রস্তাব করা হয়েছে।

২০০৯ সালে, ইরানের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে প্রাক্তন সংস্কারপস্থী রাষ্ট্রপতি ইরান-ইরাক যুদ্ধে অংশ নেওয়া ইরানী যোদ্ধাদের মাঝে এক বক্তৃতায় জাতীয় মীমাংসার আহ্বান জানান। তিনি নাগরিক এবং দেশটির সর্বোচ্চ নেতাদের আহ্বান জানান যেন তারা একে অপরকে ক্ষমা করে দেয়, এবং এই ঘটনাটি ইন্টারনেটে তার মিত্র এবং শত্রু উভয়ের জন্য এক প্রবল উত্তেজনার সৃষ্টি করে।

সাথে সাথে, ফেসবুকে একটা পাতা [1] সৃষ্টি করা হয়, পরিহাস করে যার নাম দেওয়া হয়, নেতার “[আয়াতোল্লাহ খোমেনির] জনসম্মুখে ক্ষমা প্রর্থনা” এবং খাতামির আহ্বানের নিন্দায় এই পাতা ভরে যায়।

ঘটনাক্রমে তাকে জুনের নির্বাচনের সময় বিবৃতি পাল্টানোর দাবি মেনে নিতে বাধ্য হন, মীমাংসা করার বিষয় থেকে সরে এসে তিনি তার বদলে নাগরিক অধিকারকে স্বীকৃতি দেবার আহ্বান জানান [2]

সংস্কারবাদীদের এই ভাবে পিছিয়ে যাবার ঘটনা নতুন কিছু নয়।

জুন ২০১০-এ, ইজরায়েল এবং ফিলিস্তিনের বিষয়ে সবুজ আন্দোলনের [3] অবস্থান নিয়ে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে [4] প্রভাবশালী সংস্কারপন্থী ধর্মীয় নেতা মোহসেন কাদিভার জানান যে প্রতিবাদকারীরা গাজা এবং লেবাননের বিষয়ে দেশটির শাসকদের অবস্থানকে সমর্থন করে। সে সময় তিনি বলেন যে বিক্ষোভকারীরা একই সাথে স্লোগান দিয়েছিল “গাজা এবং লেবানন!” এবং “ ইরানের জন্য আমাদের জীবন উৎসর্গকৃত”।

অনলাইনেভিডিওর [5] স্রোত এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে, এইসব ভিডিওতে দেখা যায় প্রতিবাদকারীরা আসলে ঠিক এর বিপরীত স্লোগান দিচ্ছিল, তার বলছিল “গাজা কিংবা লেবাননের জন্য নয়!”, “ ইরানের জন্য আমাদের জীবন উৎসর্গকৃত”। এই ঘটনার পর প্রথমে কাদিভার বলেন যে তিনি মিথ্যা বলেছিলেন, কিন্তু দ্রুত তিনি তার অবস্থান থেকে সরে আসেন [6], এবং বলেন যে হ্যাঁ, সেখানে কিছু তরুণ এ ধরনের স্লোগান দিয়েছিল, কিন্তু তিনি তাদের এই কর্মকাণ্ডের অনুমোদন দেননি।

ঘটনাক্রমে সিরিয়ার বিক্ষোভকারীরদের স্লোগানে এর প্রতিধ্বনি পাওয়া যাচ্ছে, যারা একইভাবে স্লোগান দিচ্ছি “ইরান কিংবা হেজবুল্লাহর জন্য নয়!”,

বয়স্ক এক দানব

এখানে এক তিক্ত বাস্তবতা হচ্ছে ২০০৯ সালের বিক্ষোভের সেই উত্তপ্ত দিনগুলো থেকে বিক্ষোভ আন্দোলন সুনিদৃষ্টভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং নাগরিক প্রচার মাধ্যম ব্যবহার করে আসছে। বর্তমানে ইরানের সাইবার একটিভিস্টরা কোন ধরনের সৃষ্টিশীলতা ছাড়া নেটের সেই একই পরিবেশ বারবার তুলে ধরছে।

গত কয়েক বছরে ইরানী সাইবার একটিভিস্ট উৎসাহ এবং বুদ্ধিমত্তার সাথে পশ্চিমের বিভিন্ন সাইট যেমন ফেসবুক, ইউ টিউব , ওয়ার্ডপ্রেস এবং বিভিন্ন ব্লগিং টুলস ব্যবহার করে আসছে। এছাড়া তারা তাদের নিজস্ব প্লাটফর্ম যেমন, বালাতারিন [7]-এর সৃষ্টি করেছে, যা ডিগ, এবং গোইয়ার কথা মনে করিয়ে দেয়। যারা ব্লগিং-এর প্রাক মুহূর্তে ছিল এবং রাজনৈতিক ইয়োলো পেজ হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছিল, সেখানে পরবর্তীতে সংবাদ সংগ্রহ করে রাখা হত এবং রাজনৈতিক আলোচনা করা হত।

২০০৯ সালের সেই সফল বিক্ষোভের দিনগুলো যা সারা বিশ্বের অপলক দৃষ্টি এবং প্রচার মাধ্যমের মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল, তাকে ধরে রাখার জন্য আমরা সফলতার সাথে কিছু উদ্ভাবন বা অনুকরণ করতে পেরেছি কি? পারিনি।

আমি মনে করি যে, আমরা কেবল বার বার একই রকম ইন্টারনেট ভিত্তিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি না, তার সাথে পুরো আন্দোলন তার প্রথম দিকে ইন্টারনেটে যেমন সৃষ্টিশীল ছিল, সে তার সেই সৃষ্টিশীলতা হারিয়ে ফেলছে। বিগত কয়েক দিনের কৌশলের দিকে তাকিয়ে দেখলে মনে হয় যেন ২০০৯ সালে পুনরায় ভ্রমণ করছি। সে পুরোনো কৌশল, কাগজের মুদ্রার উপর স্লোগান লেখা, সেই একই ভাবে ছাদের উপর দেওয়া, “ আল্লাহ আকবর” ধ্বনি।

এর অন্যতম এক কারণ হচ্ছে, বিগত দুই বছরে এর জন্য গণহারে অনেক ইরানী একটিভিস্টকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

মেধা পাচার

আরেকটা সমস্যা হচ্ছে সাইবার জগত হচ্ছে এমন একটা ভঙ্গুর জায়গা যেখানে সাইবার একটিভিস্টদের আটকে রাখার জন্য কোন আঠার (কর্মকাণ্ডের) প্রয়োজন হয় এবং গিক বা সাইবার উন্মাদের একসাথে ফিরে আসে। এই আঠা বাস্তব জগতের কোন কর্মকাণ্ড বা ভার্চুয়াল দুটোই হতে পারে, কিন্তু তা অবশ্যই হতে হবে ইরানীদের জন্য ইরানী একটিভিস্টদের তৈরি করা কার্যক্রম।

রূপকথা? হয়ত। কিন্তু আশা আমাদের সীমানা পেরিয়ে যাবে। এ কারণে সকল বেদনা সত্ত্বেও সবুজ আন্দোলন তার দ্বিতীয় বার্ষিকীকে স্মরণ করছে।