- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

সিরিয়া: সিরিয়ার জন্য ব্লগ দিবস

বিষয়বস্তু: মধ্যপ্রাচ্য ও উ. আ., সিরিয়া, ডিজিটাল অ্যাক্টিভিজম, নাগরিক মাধ্যম, প্রতিবাদ, বাক স্বাধীনতা, রাজনীতি

এই প্রবন্ধটি সিরিয়া প্রতিবাদ বিক্ষোভ সম্বন্ধে আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ। [1]

সিরিয়ায় বিক্ষোভ তার পদচিহ্ন রাখার পর আজকের দিনটি (২৪ জুন,২০১১) তার ১০০তম দিন। বিক্ষোভ শুরু হবার ১০০ দিনের মাঝে ১৪০০ জনের বেশী নাগরিক নিহত হয়েছে এবং রাষ্ট্রপতি তিনবার ভাষণ প্রদান করেছে, এদিকে আন্দোলন এখনো পূর্ণ মাত্রায় বিরাজমান। এই শুক্রবারটিকে “সবকিছুকে অবৈধ ঘোষণা করার শুক্রবার হিসেবে” অভিহিত করা হয়েছে:

এই দিনটিকে চিহ্নিত করার জন্য সিরিয়া এবং অন্যান্য এলাকার ব্লগাররা ব্লগে এবং টুইটারে এক প্রচারণা চালু করেছে। তারা একে সিরিয়ার জন্য একটা ব্লগ লেখার দিন নামে অভিহিত করেছে। এতে সকল ব্লগারকে #ব্লগফর (৪) সিরিয়া নামে তাদের প্রবন্ধ পোস্ট করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। এখানে কিছু নির্বাচিত প্রবন্ধ তুলে ধরা হল।

সিরীয় ব্লগার সুরিইয়েহ সিরিয়ায় কাটানো তার শৈশবের স্মৃতি এবং আজকের দিনের বিপ্লবের শিশুদের [2] নিয়ে ব্লগ করেছে।

ওই সমস্ত শিশু… তাদের কারণে, আমরা রাজনীতি নিয়ে কথা বলছি! তাদের কারণে, আমরা যুক্তি এবং একে অন্যে অশ্রু মোচন করছি, এবং একে অন্যের নাম ধরে ডাকা বন্ধ করেছি এবং একে অন্যের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ আনছি। তাদের কারণে আমারা এক ব্যাপক মত প্রদর্শন এবং বিতর্কে লিপ্ত হয়েছি। তাদের কারণে আমাদের বিশ্ব তার মসৃণতার দিগন্ত হারিয়েছে এবং এক বিশালতার মাঝে পতিত হয়েছে: বিশাল এক ভীতি এবং বিশাল এক মুল্য প্রদানের। তাদের কারণে আমরা আমাদের সময়ের বাইরে জোর করে – উদাসীনতাকে সম্মান করতে বাধ্য হচ্ছি। এক রক্তাক্ত ট্যাগ।

ফিলিস্তিনি একটিভিস্ট এবং ব্লগার আবির কোপ্তি লিখেছে যে, কোন ফিলিস্তিনি তার স্বাধীনতা উপভোগ করতে পারে না, যদি তা অন্য জাতীর রক্ত প্রদানের মধ্যে দিয়ে অর্জিত হয়। ভদ্রমহিলা আরো লিখেছে [3]:

الشعوب العربية أكثر وطنية من زعمائها، ففي تونس ومصر تعالت الهتافات لأجل فلسطين وصدحت الميادين ب “الشعب يريد تحرير فلسطين” وفي بنغازي رفع علم فلسطين في ساحة التحرير منذ اليوم الأول لتحريرها من القذافي، بماذا يختلف الشعب السوري؟ أليس هو ذات الشعب الذي علمه حزب البعث العروبة والوطنية في المدارس؟
আরব জনতা তাদের নেতাদের চেয়ে অনেক বেশী দেশ প্রেমিক। মিশর এবং তিউনিশিয়ায় তাদের ফিলিস্তিনের জন্য আওয়াজ তোলে, “জনতা ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা চায়”, তা আরবের সকল উন্মুক্ত চত্বরে প্রতিধ্বনিত হয়”। যখন লিবিয়ায় বেনগাজি নামক শহর গাদ্দাফির দখল মুক্ত হল, তার প্রথম দিন থেকে সেখানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়ছে। সিরীয় জনতা কি ভাবে তার থেকে আলাদা হয়? তারা কি সেই একই জনতা নয়, যারা বাথ পার্টি এবং স্কুলে আরব জাতীয়তাবাদ এবং স্বদেশ প্রেম শিক্ষা লাভ করে নি?

তিউনিশিয়ার ব্লগার সারাহও সিরীয় জনতার প্রতি তার একাত্মতা প্রকাশ করেছে [4]:

Un président qui massacre son peuple parce qu'il a osé lui demander de partir, parce qu'il a osé lui réclamer sa liberté, c'est ce qui se passe en Syrie aujourd'hui et c'est ce qui se passe dans toute dictature. En Tunisie, on en sait quelque chose, et c'est pour cela, que nous tunisiens, sommes de tout coeur avec les syriens qui se battent chaque jour pour leur liberté et pour leur dignité. Et il l'auront un jour, ils paieront le prix fort mais ils l'auront. J'y crois.

একজন রাষ্ট্রপতি তার নাগরিকদের উপর গণহত্যা চালায় কারণ তারা সেই রাষ্ট্রপতির বিদায় দাবী করে, কারণ তারা তাদের স্বাধীনতা দাবী করার মত সাহস প্রদর্শন করে, এটাই আজকের সিরিয়ার বাস্তবতা এবং এই ঘটনা প্রতিটি স্বৈরশাসকের এলাকায় ঘটছে। আমরা জানি তিউনিশিয়ায় এ রকম ঘটনা ঘটেছে এবং এ কারণে আমরা তিউনিশীয় জনতা সর্বান্তকরণে সিরীয় জনগণের এই চলমান স্বাধীনতা এবং মর্যাদা লাভের আন্দোলনে তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করছি। আর একদিন তারা তা আদায় করে ছাড়বে; এর জন্য তাদের অনেক মুল্য দিতে হবে, কিন্তু তারা তা অর্জন করে ছাড়বে। আর আমি তা বিশ্বাস করি।

সিরিয়ার ব্লগ মুম্মারজিয়েহ, অথবা যা সিরীয় “নির্মাতা” ব্লগ, লিখেছে [5]:

ثورة تونس صعقتنا! ثورة مصر عطتنا أمل كبير، والمشاعر القومية اللي كان البعث مكرّهنا فيهن اكتشفنا أنّها فعلاً موجودة، وأنو النظام ما بدّو أنو فعلاً نتعاطف مع بعض كشعوب، بدّو نتشارك بغريزة القطيع بس. وكل قطيع على جنب الله يخليك!
তিউনিশিয়ার বিপ্লব আমাদের বিস্মিত করেছে। মিশরীয় বিপ্লব আমাদের এক বিশাল আশা দিয়েছে। এবং আমরা আবিষ্কার করলাম এক আরব জাতীয়তাবাদ, যা কিনা বাথ পার্টি জোর করে ত্যাগ করানোর চেষ্টা করছে। আমরা আবিষ্কার করলাম যে শাসকরা চায় না, আমরা এক দেশের জনতা অন্য দেশের জনতার প্রতি সহানুভূতিশীল হই। তারা চায় যেন আমরা এক দলবদ্ধ সাধারণ মানসিকতা পোষণ করি, এবং শুধু যেন সেটাই পোষণ করি। প্রত্যেকটা দল যেন আলাদা নিজস্ব মানসিকতায় চলে।

লুমা এক সিরীয় ব্লগার যে লন্ডনে বাস করে, সে সিরিয়ার ঘটনাবলীর উপর তার অনুভূতি প্রকাশের [6] ক্ষেত্রে আজকের দিনটি বেছে নিয়েছে।

বিগত তিন মাসে তিনটি ভিন্ন সিরিয়া সামনে এসে হাজির হয়েছে। একটি সিরিয়া যা আপনারা আল জাজিরার দেখতে পাচ্ছেন, আরেকটি সিরিয়া যা আদদুনিয়া টিভিতে দেখতে পাচ্ছেন এবং সত্যিকারের সিরিয়া নামের দেশটি যা আমি এ মাসের শুরুতে ভ্রমণ করেছি এবং আমার সংক্ষিপ্ত সময়ের বেশীর ভাগ সময় আমি জনতার কথা শুনেছি এবং তাদের যা বলার ছিল, প্রতিদিনের ঘটনা এবং বিগত তিন মাস তার কিসের মধ্যে দিয়ে গেছে তা শুনে কাটিয়েছি।

তাহলে এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই তিনটি সিরিয়ার মধ্যে কোন সিরিয়া সত্যিকারের সিরিয়া? কারা আসলে কি দাবি করছে এবং কে কাদের উপর গুলি চালাচ্ছে? দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এই ঘটনায় প্রথমদিকে যারা নিহত হয়েছে, সত্য হচ্ছে সেটি, যাকে অনুসরণ করছে এক কারণ এবং ভিন্নতার সাথে কথা বলার যোগ্যতা, আর এ সবের কারণে ভবিষ্যৎ-এর সিরিয়া হতে যাচ্ছে এমন এক সিরিয়া, যার কোন রকমে অস্তিত্ব নেই।

ব্লগার ফিউরিয়াস সিরিয়ান নামক ভদ্রমহিলা তার পুত্র সন্তানের জন্য এক চিঠি লেখার কাজ বেছে নিয়েছেন, যা ভবিষ্যৎ-এর কেউ একজন পাঠ করবে:

তুমি হয়ত এই বিষয়টিকে স্মরণ করতে পারবে না, কিন্তু যখন তোমাকে আমি আমার বাহুতে ধরে রেখেছিলাম তখন তুমি ছিল এক সপ্তাহের এক শিশু, তোমায় নিয়ে শোবার ঘরে সমানে পেছেনে হাঁটাহাঁটি করেছি, আমার চোখ বেয়ে তখন এক তরুণী মেয়ের মত অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল, সে সময় আমি জোরে জোরে চিৎকার দিচ্ছিলাম, “জনতা এই শাসকের অপসারণ চায়”।

প্রথম দিন আমি তোমাকে সিরীয় নামে ডেকেছিলাম। কিন্তু এই দিনটি ছিল সেই দিন, যে দিন সব কিছু পাল্টে গিয়েছিল, এবং এখন সবকিছু বদলে যাচ্ছে, এবং জীবন যাকে আমরা যেভাবে জানতাম, তা আর কখনো আগের মত থাকবে না।

এবং সবশেষে ব্লগার নাফসাইলেন্স “#ব্লগ৪সিরিয়া নামক প্রচারণার মাধ্যমে সিরিয়া এবং সকল সিরীয় নাগরিকের জন্য” একটি কবিতা উৎসর্গ করেছে

ও আমার সিরিয়া
তুমি কেমন অনুভব কর
যখন তুমি তোমার সন্তানদের হারাও
কি ভাবে মোকাবেলা কর
বিশাল বেদনাকে
পুরোনো পাগলামিকে
তোমার উপর চেপে বসা ক্ষমতাধর ব্যক্তিটিকে
খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে ঝগড়া করা এক গৃহস্থালীকে
এবং অনেক দিন ধরে তার উপেক্ষা করে যাওয়া শোককে
এক তরুণী নারীর মুখ
যা তোমার খুব প্রিয়
কপালে যার এক প্রশ্নের রেখা:
কেন?
কেন এত দেরী হচ্ছে?

এই প্রবন্ধটি সিরিয়া প্রতিবাদ বিক্ষোভ সম্বন্ধে আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ। [1]