সিরিয়া: বিপ্লব এবং অর্থনীতি

এই প্রবন্ধটি সিরিয়া বিক্ষোভ ২০১১ সম্বন্ধে আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ

এই শুক্রবার ছিল সিরিয়ার বিক্ষোভ শুরু হবার ১০০তম দিন। এখন এখানে প্রতি শুক্রবার বিক্ষোভ করা প্রায় এক রীতিতে পরিণত হয়েছে।

এই ১০০ দিন ধরে দেশটির অর্থনীতি স্থবির হয়ে আছে। কোন ধরনের বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড নেই এবং লক্ষণ দেখে মনে হচ্ছে না আগামী পর্যটন মৌসুম খুব একটা ভালো যাবে। এ ছাড়াও হাজার হাজার শঙ্কিত সিরীয় নাগরিক তাদের সঞ্চয় সিরীয় পাউন্ডকে হয় মার্কিন ডলার অথবা ইউরোতে রূপান্তরিত করে ফেলছে, যার ফলে সিরীয় পাউন্ডের উপর প্রচণ্ড চাপ পড়ছে।

Syrian pounds. Image by Flickr user shellfish (CC BY-NC-ND 2.0).

সিরীয় পাউন্ড। ছবি ফ্লিকার ব্যবহারকারী শেলফিস (সিসি বাই-এনসি-এনডি ২.০)।

ঘটনাক্রমে এপ্রিল মাসের শুরুর ৪৮ ঘণ্টায় মধ্যে সিরীয় পাউন্ডের ১০ শতাংশ অবমূল্যায়ন ঘটে, এর ফলে এক শঙ্কা দেখা দিয়েছে যে তার আরো ব্যাপক অবমূল্যায়ন হতে যাচ্ছে।

পতনের হুমকি?

সিরিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন পর্যন্ত দেশের মুদ্রাকে ভয়াবহ ভাবে অবমূল্যায়নের হাত থেকে সফল ভাবে রক্ষা করে যাচ্ছে। কিন্তু যখন মার্চে রাষ্ট্রপতি তার প্রথম ভাষণে কিছু নতুন পরিমাপক, যার মধ্যে ছিল বেতন বৃদ্ধি এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে উত্তোলন করার তেলের উপর ভর্তুকির প্রদানের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া, এবং আয়ের উপর বিশেষ কোন কর না আরোপ করার কথা ঘোষণা করলেন, তখন অনেকে এই সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করছে যে, দেশটি হয়ত দেউলিয়া হতে যাচ্ছে।

এমনকি বিরোধী নাগরিকদের অনেকে এই লক্ষ্যে কঠোর পরিশ্রম করছে। তাদের যুক্তি হচ্ছে অর্থনৈতিক পতন এই অঞ্চলের জন্য এক ভয়াবহ আঘাত হয়ে আসবে, এবং এর ফলে সকলে বিপক্ষে চলে যাবে। তবে অন্যরা এই ঘটনায় খুবই হতাশ। সিরিয়ার ব্লগার নাফসাইলেন্স এ রকম এক যুক্তি প্রদান করেছে:

সত্যি কথা বলতে কি, আমি ঠিক জানি না, অর্থনৈতিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ার ঘটনা, কি ভাবে বিরোধীদেরও সাহায্য করতে পারে। যদি এই শাসক বিক্ষোভের মুখে টিকে থাকার মত শক্তিশালী হয়, তা হলে তা পরবর্তী আরেকটি সমস্যা তৈরি করবে। বাজারের অস্থিরতা এবং তার পতন, কোন শাসকের পতন নিশ্চিত করে না। আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয় মুগাবে এবং সাদ্দাম হোসেন উভয়ে এবং আরো অনেকে এই ধরনের ঘটনায় টিকে ছিল। বিশেষত মুগাবে দেখিয়েছিল যে তার দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা আর ঠিক করার মত জায়গায় না থাকা সত্ত্বে, তা তার ক্ষমতাকে আরো শক্তিশালী করার পথে কোন বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।

সিরিয়ার অর্থনীতিবিদ এবং অধ্যাপক জোশুয়া লিন্ডের সিরিয়া কমেন্ট-এর প্রায়শ অতিথি লেখক হয়ে আসা এহসানি সিরিয়ার অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে আসা এই সব প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেছে:

অর্থনৈতিক দুরবস্থাকে ডেকে আনা এবং দেশের দেউলিয়া হয়ে যাওয়া বাস্তবে এক বিপদ কি ?
এবং লিরার বিষয়ে যতদুর বলা যায়, দেশের বাইরে থেকে দেশের অর্থকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় কি? সরকারে না থেকে কৌশলগত ভাবে লিরার উপর চাপ প্রয়োগ করা যায় কি?

অর্থনীতির প্রধান চ্যালেঞ্জগুলোর বিষয়ে তিনি বলেন:

সিরিয়ার অর্থনীতির সীমাব্ধতা দু'টি স্তরে বিদ্যমান:

  • ভর্তুকির প্রদানের কারণে সরকারের প্রচুর ব্যয় এবং অল্প আয়কর ধার্য করার কারণে ক্রমাগত বেসরকারি খাতকে রক্তাক্ত করা। এর ফলে বাজেটে যে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে, সেই ঘাটতি বাজেট মোকাবেলা করা সরকারের জন্য এক প্রধান চ্যালেঞ্জ।
  • তুলনামূলক কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং এর সাথে কর্মসংস্থান সৃষ্টি। অভ্যন্তরীণ ক্রয় ক্ষমতা ৭-৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধিকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে খুবই দুর্বল যে হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করলে আগামী দিনগুলোতে যথেষ্ট পরিমাণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। সরকারে অর্থনৈতিক অবস্থা এখন এমন এক পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যে, সে আর ব্যয় বা বিনিয়োগ করার মত অবস্থায় নেই। এর ফলে বিষয়টি বিনিয়োগকারী এবং রপ্তানির উপর নির্ভর করছে। যখন কাঠমো নির্মাণ এবং মূলধনের বিষয়টি সামনে চলে আসে, সেই ক্ষেত্রে সিরিয়া এখন অনেক পিছনে পড়ে আছে, যার ফলে পণ্য এবং সেবা বাইরে রপ্তানি করার ক্ষেত্রে বিশ্ব অর্থনীতির সাথে পাল্লা দেওয়া এবং তার সাথে সমান তালে চলা দেশটির জন্য প্রায় অসম্ভব। এর জন্য দরকার বিনিয়োগ। রাজনৈতিক কারণে বিদেশী বিনিয়োগের পরিমাণ খুব ধীর গতির। এই বিষয়টি পরিবর্তনের জন্য খানিকটা সময় প্রয়োজন। দেশীয় বিনিয়োগকারীরা লম্বা সময়ের জন্য বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেবার মত ঝুঁকির ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট সংস্কার দেখতে চাইবে। সম্ভাব্য বিনিয়োগে উৎসাহ প্রদানের জন্য সুনিদৃষ্ট উৎসাহ প্রদান কম অথবা লাল ফিতার দৌরাত্ম খুব বেশী। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আইনগত বাঁধা অপসারণের জন্য খুব সরকার সামান্য কাজ করেছে।
  • তবে কিছ কিছু ধারাভাষ্যকার এই সমস্যার ক্ষেত্রে আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছে। এহসানির লেখার প্রতি উত্তরে হোয়াই ডিসকাসসেইস লিখেছে:

    শেয়ার কেনার এখনই সবচেয়ে ভালো সময়! আমি এখনই তা করব। যখন ইউরোর ক্রমশ অবমূল্যায়ন ঘটছে তখন ব্যাংক এর জন্য ৯ শতাংশ প্রদান করবে। এটা কেবল একটা ভাবনা।
    পশ্চিমা দেশগুলোর বিপরীতে, সিরিয়া কখনোই নিজস্ব উপায়ের বাইরে জীবন ধারণ করেনি। এর ব্যতিক্রম হচ্ছে কিছু সিরীয় নাগরিক যারা পশ্চিমা রীতিতে চলে। সাধারণত সিরীয় নাগরিক মিতব্যয়ী এবং ভোক্তা বাদের মত এক দুষ্টচক্রে আবদ্ধ নয়।
    আগামী বছরগুলোতে সিরিয়ার পরিস্থিতি গ্রিস অথবা স্পেন অথবা পর্তুগালের চেয়ে খারাপ হবে না। আপনি কি মনে করেন?

    এই প্রবন্ধটি সিরিয়া বিক্ষোভ ২০১১ সম্বন্ধে আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ

    আলোচনা শুরু করুন

    লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

    নীতিমালা

    • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .