বাহরাইনঃ বিরোধী নেতাদের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে

এই প্রবন্ধটি বাহরাইনের প্রতিবাদ বিক্ষোভ ২০১১-এর উপর করা আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ .

আজ বাহরাইনের ব্লগার আলি আবদুল ইমামকে তার অনুপস্থিতিতে ১৫ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।

দু মাস আগে, বাহরাইনের এক সামরিক আদালত এক পুলিশ হত্যার অভিযোগে চারজন ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে, তবে এই রায়ের বিরুদ্ধে বিবাদীরা আবেদন করলে দু জনের মৃত্যুদণ্ড রদ করা হয়। সারা বিশ্ব জুড়ে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় উঠে, বিশেষ করে মানবাধিকার দলগুলো এর কঠোর নিন্দা করেছে।

সামরিক আদালত বা বাহরাইনে যাকে জাতীয় নিরাপত্তা আদালত বলে অভিহিত করা হয় আজ তার আরেকটি সিদ্ধান্ত বিরোধীদের জন্য এক আঘাত হয়ে আসে। আজ এই আদালত দেশটি ২১ জন বিরোধী নেতাকে কারাদণ্ড প্রদান করেছে।এদের মধ্যে ৮ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাদান করা হয়েছে, যাদের মধ্যে প্রখ্যাত মানবাধিকার একটিভিস্ট আবদুল্লাহ হাজি খোয়াজাও রয়েছে। তার কন্যা মারিয়াম (@মারিয়ামআলখোয়াজা) এই কারাদণ্ড এবং আদালতে আবদুল্লাহর প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে টুইট করেছে:

@মারিয়ামআলখোয়াজা: আলখোয়াজাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে, এবং তিনি বলেছেন, লোকজন সবসময় তাদের পথ অনুসরণ করবে, সে সময় তাকে প্রহার করা হয় এবং আদালত চত্বর থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

এছাড়াও টুইটে মারিয়ম তার বোন জয়নাবের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরে, যে দুমাস আগে তার বন্দী পিতা এবং স্বামীর জন্য অনশন পালন করছিল:

@মারিয়ামআলখোয়াজা : জয়নাব আলখোয়াজা (@এ্যাংরিআরাবিয়া) জোরে জোরে আওয়াজ করছিল ” আল্লাহু আকবার” ( আল্লাহ মহান!), যখন এই রায় ঘোষণা করা হয় তখন সে এই কথাগুলো বলতে থাকে এবং এর জন্য তাকে গ্রেফতার করা হয়।

২১ জনকে কারাদণ্ড প্রদানের বিষয়টি অনেক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে এবং এর ফলে লোকজন বাহরাইনের শাসকদের তীব্র সমালোচনা করছে, কারণ তারা এর আগে জাতীয় এক আলোচনার আহ্বান জানিয়েছিল। এই দেশটি এক ব্যাপক বিক্ষোভের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, যার সূত্রপাত হয়েছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি তারিখ থেকে।

ফরেন পলিসি পত্রিকার ম্যানেজিং এডিটর ব্লাক হউনশেল (@ব্লাকহউনশেল ) হচ্ছে প্রথম ব্যক্তি যে সরকার বিরোধী এই সব ব্যক্তিদের কারাদণ্ড প্রদানের মত দুর্ভাগ্যের বিষয় এবং জাতীয় এক আলোচনার আহ্বান নিয়ে নিয়ে টুইট করে। হউনশেল ওয়াদ দলের যুক্ত-প্রধান ইব্রাহিম শরিফের কথা উল্লেখ করেন, যাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে, উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন:

@ব্লাকহউনশেল:পর্যলোচনার জন্য: বাহরাইনের শাসন কর্তারা আল-ওয়াদ দলটিকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানাচ্ছে, আবার একদিকে এর অন্যতম এক নেতাকে পাঁচ বছরের জন্য জেলে পাঠাচ্ছে।

সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কার্ল ব্লিডট (@কার্লব্লিডট ) তার প্রতিক্রিয়া প্রদান করেছে:

@কার্লব্লিডট : বাহরাইনের আটজন একটিভিস্টকে আজীবন কারাবাস প্রদান করা হয়েছে, এটা কোন ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এর বিরুদ্ধে আপীল করা হবে। সত্যিকারের এক জাতীয় আলোচনার প্রয়োজন।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রখ্যাত কলাম লেখক সুলতান আল কাশেমী (@SultanAlQassemi) বাহরাইনের বিরোধীদের এই সংকটের বিষয়ে বেশ কিছু মন্তব্য করেছে, এবং সে জানাচ্ছে কি ভাবে তারা এখনো শক্তিশালী। সে বলছে:

@ সুলতান আল কাশেমী: ফ্রেবুয়ারি মাসে দেশটির সরকার বিরোধীরা ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী দল, যারা দেশটির রাজনৈতিক ভবিষ্যতকে একটা আকার দিতে সক্ষম ছিল। আজকের দিনেও তা করা খুব বেশি কঠিন হবে না।

বাহরাইন থেকে মোহাম্মাদ আসোর (@ মোহাম্মাদআসোর ) এক হতাশ স্বরে টুইট করেছে, সে বলছে, যে ভাবে এ দেশের শাসক, বিরোধীদের প্রতি আচরণ করছে তা হতাশাজনক। ঠিক রায় ঘোষণার পরই পরই সে এই টুইট করে। সে বলছে:

@মোহাম্মাদআসোর: আমি কোন আলোচনায় আশ্বস্ত হচ্ছি না, যতক্ষণ আমাদের দেশের সন্তানরা জেলে থাকবে। কেবল বড় বড় নাম নয়, সকলের ক্ষেত্রে এই দাবি করছি।

বাহরাইন থেকে লেখক আলি আলসায়িদ আরেকটি টুইট করেছেন।(@ আলিআলসায়িদ), এবার সে প্রচণ্ড ক্ষোভ এবং হতাশা নিয়ে টুইট করেছে:

@ আলিআলসায়িদ: দেখ, বলেছিলাম না, সবকিছু ঠিক আছে, বাহরাইনের সবকিছু সুন্দর এবং গোলাপের মত মসৃণ। এখন সেই বদমাইশ গোল টেবিলে বস এবং আমাদের সাথে কথা বল

মিশরীয় ব্লগার এবং মানবাধিকার কর্মী রামি রাউফ (@ রামিরাউফ ) হচ্ছে সেই সব মিশরীয়দের মধ্যে অন্যতম, যারা বাহরাইনের আদালতের শাস্তি প্রদানের ঘটনায় টুইট করেছে। তিনি এরপর বাহরাইনের ঘটনার বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে সেখানকার সম্প্রদায়গত বিভাজনকারীদের উপর সমালোচনা মূলক মন্তব্য করেন:

@রামিরাউফ: আমি মানবাধিকার দলগুলোর সাথে একমত নই যে, বাহরাইনের সমস্যা শিয়া বনাম সুন্নি সমস্যা। আমি মনে করি সেখানকার সমস্যা হচ্ছে বিরোধীতাকারী বনাম শাসক সমস্যা।

আরেকজন মিশরীয় ব্লগার তারক আমার (@জিয়াআর৩৩এনডাটা) যেভাবে লোকজন সিরিয়ার বিষয় নিয়ে মাতামাতি করছে এবং বাহরাইনের বিষয়ের প্রতি কম মনোযোগ প্রাদন করেছে সে বিষয়ে মন্তব্য করেছে, সে লিখেছে:

@জিয়াআর৩৩এনডাটা : এই কথা বলার জন্য আপনারা আমাকে হয়ত ঘৃণা করতে পারেন, কিন্তু কখনো কখনো আমার মনে হয় সিরিয়ার প্রতি বেশি গুরুত্ব প্রদান করা হচ্ছে এবং বাহরাইনকে সে ভাবে গুরুত্ব প্রদান করা হচ্ছে না।

বৃটিশ ব্লগার এবং পিএইচডির ছাত্র মার্ক ওয়েন জোনস (@মার্কওয়েনজোনস ) বাহরাইনের বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য সামরিক আদালত ব্যবহার করা প্রসঙ্গে টুইট করেছে, এটি এমন একটা বিষয় যা মিশরের মত দেশেও ঘটেছিল, ২৫ জানুয়ারি নামক বিপ্লবের পরে:

@মার্কওয়েনজোনস : রাজনৈতিক কারণে সামরিক আদালতে বেসামরিক নাগরিকদের শাস্তি প্রদানের কারণে মানুষ বিচার প্রক্রিয়ার উপর আস্থা হারিয়ে ফেলবে।

ব্লগার আলি আবদুল ইমামকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে , তবে তার অনুপস্থিতিতে এই শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। যেমনটা বাহরাইনের সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস (@বাহরাইনরাইটস) টুইট করেছে:

@বাহরাইনরাইটস : ব্লগার আলি @আবদুলইমামকে তার অনুপস্থিতে ১৫ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। গত বছর সে ছয় মাস জেলে কাটায়, সে সময় তার উপর অত্যাচার করা হয়। # বাহরাইন http://ow.ly/5nwOU

আসমা দারউয়িশ (@এগারটুবিফ্রি) হচ্ছে গ্রেফতার হওয়া মোহাম্মদ দারউয়িশ এর বোন, যে তার ভাইয়ের জন্য অনশন ধর্মঘট পালন করেছিল, আদালতের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে এবং সে সময় বন্দীদের কেমন দেখাচ্ছিল, আসমা সে সব বিষয়ে বেশ কিছু টুইট করেছে:

@এগারটুবিফ্রি: আমরা এক বন্ধুর বক্তব্য থেকে উদ্ধৃতি করছি, যে আদালত কক্ষে উপস্থিত ছিল: সকলকে খুব আলাদা রকম দেখাচ্ছিল, মুসাইমা এবং আল খোয়াজাকে আরো বেশি আলাদা দেখাচ্ছিল। তবে সবাই মানসিক ভাবে বেশ শক্তিশালী ছিল।

মানবাধিকার কর্মী নাবিল রাজাব (@নাবিলরাজাব) আজকে আদালতে যা ঘটেছে যে বিষয়ে টুইট করেছে এবং সেই দৃশ্য ধারণ করেছে যা তার নিজের ভাষায় “জঘন্য”, রজব লিখেছে:

قام العساكر في المحكمة بعمل مقزز وهوبتقبيل بعضهم البعض وتقديم التبريكات في قاعة المحكمة وامام الاهالي على الحكم الصادر على النشطاء
@নাবিলরাজব: আদালতে উপস্থিত সৈনিকের এক জঘন্য কাজ করে। রায়ের সময় তারা একে অপরকে চুম্বন করে এবং অভিনন্দন জানায়। আর তারা গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের পরিবারের সামনে এই কাজটি করে। এই সব পরিবার এই সমস্ত ঘৃণ্য কাজের বিপক্ষে।

এই প্রবন্ধটি বাহরাইনের প্রতিবাদ বিক্ষোভ ২০১১-এর উপর করা আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ .

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .