কাজাখস্থান: ইন্টারনেট পাইরেসির বিরুদ্ধে লড়াই

ইন্টারনেট নিয়ে কাজাখস্থান এক নতুন কেলেঙ্কারির মধ্যে প্রবেশ করতে যাচ্ছে-এ বার অনলাইনের কপিরাইট বা স্বত্বধিকারী আইন নিয়ে এই ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। এই বিষয়ে দুটি দল তৈরি হয়েছে-একদিকে আছে কাজাখ ইন্টারনেট এসোসিয়েশন, যাদের সমর্থন দিচ্ছে সরকার, আর অন্য দিকে আছে কাজাখস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় দশটি ওয়েবসাইটের একটি গ্রুপ।

২৯ এপ্রিল, ২০১১, আইনজীবী, বিভিন্ন শিল্পের প্রতিনিধি এবং রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের মাঝে এক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় [রুশ ভাষায়], যেখানে পাইরেসি বা নকলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য “তিন আঘাত” নীতি নামক এক পদ্ধতি উপস্থাপন করা হয়:

সোলপান আব্দেরেভা বিচার মন্ত্রণালয়ের মেধাস্বত্ব বিভাগের উপপ্রধান;

Kazakhstan is one of the fastest developing countries from the ex-Soviet republics. Image by Vlad Sokhin, copyright Demotix (11/09/08).

কাজাখস্থান প্রাক্তন সোভিয়েত রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে অন্যতম এক রাষ্ট্র যেটি দ্রুত উন্নতি লাভ করছে। ছবি ভ্লাদ সোখিন-এর, কপিরাইট ডেমোটিক্সের (১১/০৯/০৮).

সম্প্রতি কাজাখস্তানে সেই সমস্ত ওয়েবসাইটের কাজাখ সংস্করণ সৃষ্টি করা হয়েছে যেগুলো পাইরেট চলচ্চিত্র, গেম, সঙ্গীত, এবং সফটওয়্যার নামানো এবং বিনিময় করার উপাদান সরবরাহ করে থাকে।

সাফকাত সাবিরভ, কাজাখস্তানের ইন্টারনেট সংস্থার সভাপতি:

“কাজনেট” (ইন্টারনেটের কাজাখ সংস্করণ) চোরাই জিনিষ, নকল লেখা, সঙ্গীত, ছবি, এবং ভিডিওতে ভরে গেছে, নিঃসন্দেহে যা কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। আমরা ‘তিনটি আঘাত’ পদ্ধতিতে তাদের শাস্তি প্রদান করব। এখানে প্রথম আঘাত হবে নোটিশ জারি করা, দ্বিতীয় আঘাত হবে সতর্ক সঙ্কেত প্রদান এবং তৃতীয় আঘাতটি হবে অপরাধীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের। আমি মনে করি আমাদের এই বাজারের জন্য এটাই সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি।

এই সংবাদটি ব্লগার এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মাঝে এক দারুণ আলোড়নের সৃষ্টি করে। এর পক্ষে এবং বিপক্ষে মতামত তৈরি হতে থাকে। এর স্বপক্ষের মতামত প্রদানকারীরা মতামত প্রদান করেছে।

খ্যাতনামা ব্লগার আশিনা সরকারের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছে [রুশ ভাষায়]:

এই আইন বাজারটিকে বৈধ এবং নিয়মের মাঝে নিয়ে আসবে। যা আগামীতে সবার জন্য আরো অর্থ বয়ে আনবে-যার মধ্যে রয়েছে ওয়েবসাইট-এর মালিক, উপাদান সরবরাহকারী এবং প্রস্তুতুকারী (কন্টেন প্রোভাইডার এবং ডেভলপার)সবার জন্য।

ব্লগার মজগ এর সাথে খানিকটা দ্বিমত পোষণ করেন [রুশ ভাষায়]:

এটা একটা ভয়ানক সমস্যা এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে পৃথিবীর কোন রাষ্ট্র এই বিষয়ে পরিষ্কার কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। এখন পর্যন্ত কোন রাষ্ট্র সকল কিছু দ্রুত ডিজিটাইজ-এর [ সব কিছুকে ডিজিটাল করে তাকে নিজস্ব নিয়ন্ত্রনে আনা] মধ্যে নিয়ে আসতে পারেনি যা কিনা এখনো পুরোপুরি বস্তুগত উপাদানে পরিণত করা সম্ভব হয়নি। পুরোনো আইনকে কেউ সাইবার জগতে কার্যকর করতে পারবে না, যেখানে বস্তুগত উপাদানের মুল্যকে অবস্তুগত উপাদানে পরিণত করা সম্ভব, সেখানে সীমান্তরেখা বলে কিছু থাকে না এবং সেখানে বাস্তবের আইন কাজ করে না।

জেভেকা নোউরভ দেখাচ্ছে যে[রুশ ভাষায়] পাইরেসি-বিশেষ করে টরেন্ট-ট্রাকার্স নামক পাইরেসিকে ধরা আসলে খুব কঠিন:

ইন্টারনেটের “.কেজ” নামক এলাকায় আপনি তাদের কার্যকলাপ বন্ধ করে দিলেন, এর ফলে তার “.অর্গ”, “.নেট” নামক এলাকায় চলে যাবে। বিশ্বজুড়ে এই সমস্যা বিরাজমান এবং এখন পর্যন্ত কেউ এই সমস্যার সমাধান করতে পারেনি।

খায়মান এর সাথে একমত [রুশ ভাষায়]:

“কাজনেট” নকল বা পাইরেট উপাদানের অর্থে টিকে আছে, এটা না ভালো, না মন্দ– এটা হচ্ছে বাস্তবতা। কোন বিকল্প প্রদান না করে যদি একে দমন করতে চায়, তাহলে তা এক রকম স্থবির হয়ে থাকবে।

অনেক ব্লগার দেখাচ্ছে যে ইন্টারনেটের বিশাল প্রকল্পের কোন মালিক এই গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত ছিল না, যা ছিল তাদের সাথে সম্পৃক্ত এক আলোচনা।
মারাত মুল্কু বলছে [রুশ ভাষায়]:

এই গোল টেবিল আলোচনার জন্য আমি আমার নাম নিবন্ধিত করেছিলাম, কিন্তু রাত ৮.০০ টার দিকে মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ কমিটি (ইন্টেলকচুয়াল প্রোপ্রার্টি কমিটি) আমাকে ফোন করে জানায় যে সেখানে আমার অংশগ্রহণকে স্বাগত জানানো হবে না, এমনকি এই বৈঠকের আয়োজকরা আমার আগমনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।

৩০ মে তারিখে, কাজাখস্থানের সেরা সব জনপ্রিয় ওয়েবসাইট তাদের কার্যক্রম শুরু করে [রুশ ভাষায়], তারা সহযোগী সংস্থাগুলোকে একত্রিত করে এবং দেশটির প্রধানমন্ত্রী, সরকার এবং সংসদের কাছে এক খোলা চিঠি পাঠায়:

এই মনোভাব একটা গোলটেবিল বৈঠকের মধ্যে দিয়ে তৈরি হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে তথাকথিত, “তিন আঘাত” নামের পদ্ধতি, যার মধ্যে দিয়ে পাইরেসির বিরুদ্ধে লড়াই করা হবে। এখানে যেমন বিশ্বায়নের বিষয়টি মাথায় নেওয়া হয়নি, তেমনি প্রযুক্তির বর্তমান অবস্থাও ভেবে দেখা হয়নি, যার ফলে পুরো বিষয়টি অসাড় কার্যক্রমে পরিণত হয়েছে।

এখানে স্বাক্ষরকারীরা তাড়াহুড়ো করে নেওয়া এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার এবং তার বদলে দুই বছর মেয়াদী কপিরাইট সংক্রান্ত বিলম্ববনাধিকার আইন চালু করার (মূলত দুই বছর পরে এই আইন কার্যকর করা) দাবী জানায়। তারা এখানে ব্যাখ্যা দিয়েছে যে এতে দেশের জনতা দেশীয় সাইটে প্রবেশ করা বন্ধ করে দেবে এবং তার বদলে তারা জনপ্রিয় বিদেশী সাইটগুলোতে প্রবেশ করা শুরু করবে।
এই চিঠির উপর নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া এসেছে। আর্কহার্ড মনে করে যে [রুশ ভাষায়] যে পাইরেসির বিরুদ্ধে লড়াই করা অর্থহীন:

এমনকি অনেক অদূর ভবিষ্যতে এর বিরুদ্ধে লড়াই করা খুব কঠিন হবে, কারণ কোন কিছু ব্যবহারের বৈধতা যাচাই করার জন্য কারো পক্ষে লক্ষ লক্ষ পাতা দেখা সম্ভব নয়।

ডেনিশ স্ট্রোকভ বিস্মিত [রুশ ভাষায়] কেন?:

কেন ওয়েবসাইট, টরেন্ট-ট্রাকার্স, এবং যারা কন্টেন বা উপাদান শেয়ার করে তাদের উপর এত প্রচণ্ড চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে, যেখানে ইন্টারনেটের বাইরে রাস্তায় দেদারসে পাইরেট ডিভিডি বিক্রি হচ্ছে।

.

রিনাতটি একটা আপত্তি জানিয়েছে [রুশ ভাষায়]:

যাদের কপিরাইট রয়েছে এই আইনটি তাদের পক্ষে।[…] প্রধানমন্ত্রী-এই বিষয়টি থামতে পারবে না, কারণ সে আইনের বিরুদ্ধে যেতে পারবে না। [ এভাবে] যদি এই চিঠির মালিকরা যদি কোন কিছু পরিবর্তন করতে চায়, তাহলে তারা আইন পরিবর্তনের জন্য ওকালতি করতে পারে, অথবা আদালতে নিজের দাবী প্রমাণ করতে পারে। এই অনুরোধটা যেন এমন, যে, “আসুন আমরা আইন অমান্য করি এবং “কাজনেটের” নামে কয়েকটা বছর চুরি করি”, যা ভারী অদ্ভুত শোনায়।

৬ জুন, তারিখে, অতি পরিচিত ব্লগার লারালারকিন এই পরিস্থিতির উপর একটি পর্যালোচনা তৈরি করেছেন [রুশ ভাষায়] এবং বিলম্বনাধিকরণের পক্ষে মত প্রদান করেছেন:

এই ঘটনার মূল যে প্রভাব তৈরি হবে তা হচ্ছে, কাজাখস্থানের নেট ব্যবহারকারীরা অবৈধ কন্টেনের খোঁজে “.কেজ”-এ না ঢুকে বিদেশী ওয়েবসাইটে প্রবেশ করবে। এর ফলে রুশ ওয়েবসাইটগুলো কাজাখ ওয়েবসাইটের চেয়ে বেশি সুবিধা পাবে। এ ভাবে এক নেট পরিষ্কার করার বিষয়টি কাজাখ নেটসমুহের প্রতিযোগিতার মান কমিয়ে দেবে। কাজাখস্থানের টরেন্ট ট্রাকার এবং অনলাইন সিনেমা সে ক্ষেত্রে খুব সহজেই তার দেশের ডোমেইন পাল্টে ফেলবে এবং রাশিয়ার ডোমেইনে গিয়ে আশ্রয় নেবে। এ ভাবে কাজাখাস্থানের বৈধতার বিষয় ব্যবহারকারীদের নিজস্ব সাইট থেকে বের করে দেবে। এদিকে ব্যবহারকারীরা পাইরেট উপাদান ব্যবহার করতে থাকবে, কিন্তু এ ধরনের ওয়েবসাইট গুলোর উপর নজর রাখা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

কাসিক এই মতামতকে সমর্থন করেছে [রুশ ভাষায়]:

আমাদের অবশ্যই সরকারকে জানানো উচিত যে যদি সরকার সকল টরেন্ট-ট্রাকার বন্ধ করে দেয়, সেক্ষেত্রে লোকজন কেবল “কাজনেটে” প্রবেশ করা বন্ধ করব।

পাওয়েলের একমত [রুশ ভাষায়]:

কাজনেট পুরোপুরি এক কৃত্রিম ধারনা। বাস্তবতা হচ্ছে এটা এক স্থানীয় […] একচেটিয়া ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারীর যোগাযোগ কার্যক্রম ব্যবসা। দুই বছর ধরে আইনকে স্থগিত করে রাখার বিষয়টি একবারে বাজে এক বিষয়। এতে তারা আরেকজনের শ্রম এবং উপাদান ব্যবহার করে এই দুই বছর টাকা বানিয়ে যাবে এবং তারা “কাজনেটের” উন্নয়নের নামে সুন্দর শব্দ এবং উদ্দীপনা দিয়ে একে ঢেকে রাখবে।

কুবেকভাকজ পরামর্শ প্রদান করছে [রুশ ভাষায়]:

আপনাদের জানা উচিত যে রাশিয়া এখনো এই সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। আমার মতে এত তাড়াতাড়ি এই আইন তৈরি করাটা বেশ কঠোর পদক্ষেপ। জনতা এবং ওয়েবসাইটের মালিকদের মাঝে এই বিষয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা জরুরী

এই বিষয় নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .