সিরিয়াঃ গ্রেফতারকৃত ব্লগারের প্রকৃত পরিচয় নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে

এই প্রবন্ধটি সিরিয়া বিক্ষোভ ২০১১ সম্বন্ধে আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ

এই সংবাদ সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে যে সোমবার, ৬ জুন, ২০১১-তারিখে সিরিয়ার আমিনা আরাফ নামক ব্লগারকে কর্তৃপক্ষ আটক করেছে, যে “গে গার্ল ইন দামেস্ক” নামে পরিচিত। তবে এই বিষয়ে এক ভয়ানক সন্দেহ দেখা দিয়েছে এই কারণে যে, ছবির মাধ্যমে যাকে আমিনা বলে দাবী করা হচ্ছিল, সেটি আমিনার নয়।

বুধবারে লন্ডনে বাস করা জেলেনা লেসিচ নামক এক ক্রোয়েশিয়ান মহিলা বিবিসি টেলিভিশনকে এক সাক্ষাৎকার দেয়, তাতে সে বলে যে বেশিরভাগ প্রচার মাধ্যমে আমিনার যে ছবি প্রকাশ হয়েছে (এমনকি গ্লোবাল ভয়েসেস-এ এই ছবি ছাপা হয়) সেটি আসলে তার ছবি। এই ছবিটি ফেসবুকের নিজস্ব একাউন্ট থেকে চুরি করা হয়েছে। এখন যেমনটা সাংবাদিক এবং ব্লগাররা আমিনার অনেক অনলাইন পোস্ট বিশ্লেষণ করছে, তখন বিভ্রান্তি আরো বেড়ে যাচ্ছে।

জেলেনা লেসিচ বিবিসির সঙ্গে কথা বলছে (ছবিটি সাক্ষাৎকার প্রদান করা ভিডিও থেকে গ্রহণ করা হয়েছে)।

এর সাথে আরেক বিতর্কিত বিষয় ছিল আমিনার বান্ধবী, যার নাম সান্ড্রা বাগারিয়া, সে ছিল প্রথম দিককার এক ব্যক্তি প্রচার মাধ্যম যার সাথে আমিনার বিষয়ে কথা বলেছিল। শীঘ্রই আবিষ্কার হল যে অন্য অনেকের মত তারও আমিনার সাথে কেবল অনলাইনে যোগাযোগ হয়েছিল। যখন সন্দেহ দেখা দেয় যে সান্ড্রা হয়ত এই বিস্তারিত গল্পের লেখিকা, তখন সে যুক্তরাষ্ট্রে ন্যাশনাল পাবলিক রেডিও-তে এক সাক্ষাৎকার প্রদান করে, সেখানে সে এই গুজব খণ্ডন করে।

জেরুজালেম ভিত্তিক এক ছাত্রী এলিজাবেথ তুসরকভ (@এলইজরায়েল) যে কিনা আমিনার এই তথাকথিত গ্রেফতারের আগ পর্যন্ত আমিনার সাথে যোগাযোগ বজায় রেখেছিল, সে এরপর সান্ড্রার সাথে কথা বলে, এই বিষয়ে সে টুইট করেছে:

@এলইজরায়েল: কিছু প্রচার মাধ্যমের এই ভাবনা সত্বেও # আমিনার অনলাইন বান্ধবীর এই প্রতারণার বিষয়ে কোন ধারণা ছিল না। এই ঘটনায় সে অন্য সবার চেয়ে বিপর্যস্ত।

এছাড়াও প্রশ্ন ছড়িয়ে পড়ছে কেন কেউ একজন সিরিয়ার ব্লগারের গ্রেফতার করা নিয়ে এক ভূয়া সংবাদ প্রকাশ করল, যেখানে জানা আছে যে এ ধরনের গ্রেফতার কথা ছড়িয়ে বিষয় সে দেশটিতে অস্বাভাবিক ঘটনা নয় (এ ব্যপারে আরো তথ্য জানার জন্য থ্রেটেন ভয়েসেস-এর সিরিয়ার পাতা দেখুন)। অন্তত ২০০৭ সাল থেকে আমিনার অনলাইন উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে, বিভিন্ন প্লাটফর্মে তার উপস্থিতির প্রমাণ রয়েছে যার মধ্যে ডেটিং সাইট সমূহ এবং মাই স্পেস অন্তর্ভুক্ত, ব্লগারদের যা আরো বিভ্রান্ত করেছে।

এনপিআর-এর সামাজিক প্রচার মাধ্যমের কৌশল প্রণেতা এন্ডি কারভিন টুইট করেছে:

@একারভিন::আমি এমনটা দেখতে পাচ্ছি না যে এক বছর আগে কেউ অনলাইনে এক ঘুমন্ত জগৎ (কোষ) তৈরি করেছিল যেন কেবল এক অস্থিরতার অপেক্ষায়, যেন এই ঘটনা ঘটবে আর এই বিষয়ে সে ব্লগ করবে। কোথাও একটা সত্য লুকিয়ে আছে।

লিজ হেনরি এক আমেরিকান ব্লগার। সে “শকপাপেট্রি-তে” সারগর্ভ গবেষণা পরিচালনা করে থাকে এবং সেখানে তারা অতীতে বহিষ্কৃত রহস্যজনক ব্লগারদের সাথে আলোচনার ব্যবস্থা করতেন। লিজ হেনরি তার ব্লগে লিখেছেন:

এই ঘটনার ক্ষেত্রে, এত দূর থেকে কি ভাবে আমি এর সম্বন্ধে বলব? আমি আশা করি যে আপনারা বুঝতে পারবেন কেন আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় আমিনার সন্ধানে যেতে চায়। আমি তার উপস্থিতিকে অবিশ্বাস করি না, কারণ সে এক অসাধারণ লেখিকা, যার লেখার মধ্যে নাটকীয়তা এবং ব্যঞ্জনা রয়েছে অথবা তার যৌন সর্ম্পকের বিশদ বিবরণ এবং অথবা তার কার্যক্রমে, উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমি এক মুহুর্তের জন্য রিভারবেন্ড নামক ব্লগারের উপস্থিতিকে সন্দেহ করিনি, যে কিনা এত ঘন ঘন ব্লগ করে এবং সে অনেক লম্বা সময় ধরে বাগদাদ থেকে ব্লগ করেছে এবং তারপর সে মেয়েটি তার পরিবারের সাথে সিরিয়ায় পালিয়ে যায়। কিন্তু আমি সত্যি সত্যি আমিনার ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্য এবং গভীর সূত্রের অনুসন্ধান করতে চাই। কি ভাবে একজন একটিভিস্ট যার জীবন বিপদাপন্ন, সে এই ধরনের গ্রহণযোগ্যতা সরবরাহ করতে পারে? এটা খুব কঠিন এক প্রশ্ন।

ইতোমধ্যে ব্লগ এবং টুইটার জগতে বড় আকারে এক ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে যে, আমিনার পরিচয় নিয়ে অতিরিক্ত আলোচনা হয়ত বা ফ্রেব্রুয়ারি মাস বিক্ষোভ প্রদর্শনের কারনে সিরিয়ায় যে হাজার হাজার মানুষ বন্দী হয়ে আছে তাদের কথা ভুলিয়ে দেবে।

মারিয়াটজে সাচাকে ইউরোপিয়ান সংসদের এক সদস্য, সে টুইট করেছে:

@মারিয়াটজেডি৬:: @মারিয়াটজেডি৬: আমরা যেন সেই সমস্ত হাজার হাজার মানুষের কথা ভুলে না যাই, যেই সমস্ত পরিচয়হীন ব্যক্তিরা বন্দী হয়ে আছে, নিহত হয়েছে অথবা দমনের শিকার#আমিনা

এই প্রবন্ধটি সিরিয়া বিক্ষোভ ২০১১ সম্বন্ধে আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ.

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .