- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

ফিলিপাইনস: রাজবন্দী অনলাইনে কারা দিনলিপি লিখছেন

বিষয়বস্তু: পূর্ব এশিয়া, ফিলিপাইনস, ডিজিটাল অ্যাক্টিভিজম, নাগরিক মাধ্যম, প্রতিবাদ, মানবাধিকার, যুদ্ধ এবং সংঘর্ষ, রাজনীতি, শিল্প ও সংস্কৃতি

ফিলিপিনো কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অন্তরীণ একজন ফিলিপিনো শিল্পী, সাংবাদিক এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী তাঁর কারা জীবনের অভিজ্ঞতা এবং এর প্রভাবের বিষয়ে একটি ব্লগ তৈরি করেছেন। তাঁর পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, সহ-শিল্পীবৃন্দ, লেখকগণ এবং সুশীল সমাজের সমর্থকেরাও তাঁর মুক্তির দাবীতে নেট প্রচারণা শুরু করেছেন।

২০১১ সালের ১৩ফেব্রুয়ারি পূর্ব ফিলিপাইনসের সামার দ্বীপের সান জর্জ শহরের দিকে এরিকসন আকোস্টা যখন যন্ত্র চালিত নৌকায় করে যাচ্ছিলেন তখন তাঁকে দেশের সশস্ত্র বাহিনী গ্রেফতার করে [1]। মজার বিষয় হল ল্যাপটপ নিয়ে দেশের প্রান্তে ঘুরে বেড়ানোর অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকারীদের দাবী তিনি আন্ডারগ্রাউন্ড কমিউনিস্ট আন্দোলনের একজন শীর্ষ নেতা। যাহোক এটা আর হাস্যকর বিষয় নয়।

বিগত গ্লোরিয়া ম্যাকাপাগাল-আরোয়োর শাসনামলে ঐ এলাকায় ১২৬ টি বিচার বর্হিভূত হত্যাকাণ্ড এবং ২৭ জন ব্যক্তি নিখোঁজ হন। গ্রেফতার হওয়ার সময় আকোস্টা ঐ এলাকার মানবাধিকার পরিস্থিতি [2] নিয়ে লিখছিলেন।

সেনাসদস্যরা আকোস্টাকে কৌশলগত জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং তাঁর বিরুদ্ধে অবৈধ বিস্ফোরক রাখার অভিযোগ আনে। সুশীল সমাজের দল, লেখক, শিল্পী, তাঁর পরিবার এবং বন্ধু- বান্ধবেরা তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে এবং তাঁর নিঃশর্ত, দ্রুত মুক্তি দাবী করেন।

সামারের কালবায়গ শহরের উপ – প্রাদেশিক কারাগারে তাঁকে অন্তরীণ রাখা হয়েছে। মানবাধিকার বিষয়ে সহায়তাকারী কারাপাতান [3]- এর মতে, ডিসেম্বর ৩০, ২০১০ থেকে ফিলিপাইনসের কারাগারে অন্তরীণ থাকা ৩৫৩ জন রাজবন্দীর সঙ্গে যুক্ত হওয়া আকোস্টা আরও একজন রাজবন্দী।

মার্কোসের স্বৈরতন্ত্রের সময় থেকে অদ্যাবধি দেশের সকল রাজবন্দীর মুক্তির দাবীর পক্ষে প্রচারণা নৈমিত্তিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান, সম্পদের সুষম বন্টনের জন্য যে সব সামাজিক সক্রিয়তাবাদীরা কাজ করছেন তাঁদের অপদস্থ করা, অন্তরীণ রাখা এমনকি হত্যা করা ক্ষমতাসীন দলের দীর্ঘদিনের অনুশীলনে পরিনত হয়েছে।

এরিকসন আকোস্টার মুক্তি সংক্রান্ত প্রচারণায় একটা নতুন বিষয় যুক্ত হয়েছে আর তা হল তাঁর মুক্তির দাবীতে ব্যাপক মাত্রায় অনলাইন হাতিয়ারগুলোর সৃষ্টিশীল ব্যবহার। ইতালীয় দার্শনিক আন্তোনিও গ্রামসী ছাড়া নোটস্ক্যান প্রকাশের জন্য আর কে প্রায় তিন দশক পর্যন্ত অপেক্ষা করবে, এরিকসন আকোস্টার নিজস্ব কারা রোজনামচা নিয়মিত অনলাইনে আকোস্টাপ্রিজনডায়েরি.ব্লগপোস্ট.কম [4]-এ পোস্ট করা হয়।

গত ১৩এপ্রিলে [5] জেল হাউজ ব্লগ-এ কারাগারে আকোস্টার অভিজ্ঞতার কথা তাঁর লেখনী থেকে তুলে ধরা হয়:

আমি মনে করি আমার বর্তমান কারা জীবনে আমি এখনো ঠিকমত অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারিনি। দিনের বেলা লেখা আমার কাছে প্রায় অসম্ভব বলে মনে হয়। সেলের ভিতর তাপমাত্রা স্রেফ দুর্বিষহ- এখানকার সেলে কোন সিলিং নেই, একমাত্র জানালাটি এক বর্গফুটের চাইতেও ছোট আর আমার টারিমাটি (tarima) ঠিক দুটো কাঠ কয়লার বিরতিহীন চুলার ঠিক পাশেই। বাইরের কোলাহল অত্যন্ত উত্তেজিত- কখনো প্রাণবন্ত,কখনো তীব্র। ১২ জন কাসোকার( সহ কারাবন্দীর) সঙ্গে শ্বাসরুদ্ধকর, শীর্ণ জায়গায় বসবাস সত্যিই দুর্বিষহ।

অথবা গত ১৭ এপ্রিলে তাঁর লেখা [6]:

এখানে কারবন্দীদের কাছে অনেক অর্থে দালাও (দেখতে আসা), হানজিন(বাতাস) এবং প্রত্যাশা প্রায় সমার্থক।

পরিদর্শন এলাকা বা দালাওয়ান সাধারণ সেলের প্রায় তিনগুণ প্রশস্ত। এ স্থানটি পর্যায়ক্রমিক ভাবে পাহানগিনান হিসেবে কাজ করে। সপ্তাহে একদিন প্রত্যেক সেলের গড়ে প্রায় ১২ জন সহ কারাবন্দী বা সেলমেটেদের এখানে কয়েক ঘণ্টার জন্য ঘোরাঘুরির সুযোগ দেওয়া হয়। এর উদ্দেশ্য হল কয়েদিদের একটু দম ফেলার সুযোগ করে দেওয়া- তাজা বাতাস নয়, স্রেফ বাতাস। সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৩ টার মধ্যকাল সময়ে কারাকক্ষের ভিতরে চরমভাবে অক্সিজেনের অভাব ঘটে। তাই সাপ্তাহিক পাহানগীন এ প্রতিক্ষিত আরাম করার সুযোগের জন্য কারাবন্দীরা নির্ধারিত দালাও এর মতই উত্তেজনায় উন্মুখ হয়ে থাকে।

এ ব্লগে আকোস্টার কারা অভিজ্ঞতা [7]র প্রতিফলন ঘটেছে:

আমার অবৈধ গ্রেফতার এ কারারুদ্ধ করার আগে আমার দীর্ঘকাল এই ধারনাই ছিল যে আমি ইতোমধ্যেই অস্পষ্টতার আধারে হারিয়ে গেছি। পরিণত হয়েছি সমাজ বিচ্ছিন্ন একজন মানুষ হিসেবে। এতে করে সংশ্লিষ্টদের জন্য তৈরি হয়েছে একটা ফলাফল: যেমন- সামন্তবাদ, ফ্যাসিবাদ বিরোধী এবং গ্রামাঞ্চলে দরিদ্র কৃষকদের সমবায়ী আন্দোলন ও কৃষি শ্রমিকদের জন্য সার্বক্ষণিক কাজ করতে পারা ।

কারও নিকটতম ও পরিচিত পরিপ্রেক্ষিত থেকে উন্মূল হয়ে যাওয়া হচ্ছে আসলে একটি গুরুত্বপূর্ণ আত্মত্যাগ। এই আত্মত্যাগের একটা রোমান্টিক দিকও আছে। একজন কবি হিসেবে অনিবার্যভাবে আমি বঞ্চিত হব না বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত এবং নগ্নপদ শিশুদের পার্থিব দৃশ্যাবলি এবং ঝিঁঝিঁ পোকার কলধ্বনি থেকে। আত্ম বিশ্লেষ ও আত্ম অনুগমনের সেই মুহূর্তগুলো অবশ্য আসবে যখন মনে হবে কোন না কোনভাবে আমি কবিতাতে বলবো।

কারাগারে বসে আকোস্টার লেখা কবিতাগুলো সেই প্রিজন ব্লগ [4]- এ পোস্ট করা হয়েছে।

অনলাইনে কারা রোজনামচা লেখা ছাড়াও আকোস্টাকে মুক্ত করার আন্দোলনের সংগঠকরা একটা অনলাইন দরখাস্ত [8]করেছেন। তাঁরা আকোস্টাকে মুক্ত করার দাবীতে ফেসবুক পাতা [9] খুলেছেন যা ৭৮৮ জন তাঁদের পছন্দের অন্তর্ভূক্ত করেছে।

ফ্রিআকোস্টা.ব্লগপোস্ট.কম [10] ব্লগের বিবৃতি, মন্তব্য আর অন্যান্য লেখাগুলো দেখলে বোঝা যায় যে আকোস্টাকে মুক্ত করার আন্দোলনে দিন দিন নতুন নতুন সদস্য যোগ দিচ্ছেন। ফিলিপাইনে আকোস্টাকে মুক্ত করার লড়াই এবং অন্যান্য রাজবন্দীদের মুক্তির লড়াই অব্যাহত আছে।