এই প্রবন্ধটি মিশর বিপ্লব ২০১১ সম্বন্ধে আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ।
২৮ মে, ২০১১ তারিখে মিশর গাজা স্ট্রিপের মাঝে রাফা নামের সীমান্ত খুলে দেয়, ধারণা করা হয়েছিল তা স্থায়ী ভাবে খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে শীঘ্রই ফিলিস্তিনিরা আবিষ্কার করল যে এই সীমান্ত দিয়ে কতজন মানুষ চলাচল করতে পারবে মিশর তার সংখ্যা সীমাবদ্ধ করে ফেলেছে এবং এর ফলে হাজার হাজার মানুষ অপেক্ষা করতে করতে হতাশ হয়ে পড়ছে। এক সপ্তাহ পরে মিশর সরকার আবার এই সীমান্ত বন্ধ করে দেয়, “মূলত সংস্কার কাজের জন্য” তারা এটি বন্ধ করে দেয়।
এখনো ইজরায়েলের অবরোধে মধ্যে বসবাস করা গাজার ব্লগাররা এই কারণে ক্ষুব্ধ যে মিশর চলাচলের স্বাধীনতার বিষয়ে যে প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছিল তা বাস্তবায়িত হয়নি। সামিহা এলয়ানের মায়ের জরুরী চিকিৎসার জন্য মিশরে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে:
গাজা স্ট্রিপ এবং মিশরের মাঝে সীমান্ত খুলে দেবার আনুষ্ঠানিক সংবাদে এখানে বাস করা সকলেই খুব খুশি হয়েছিল, আমিও কম খুশি হইনি। এটা ছিল এক অনেক বড় ধরনের এক মুক্তির সংবাদ। এমনকি এই অসাধারণ সংবাদের দুইদিন পরে চলাচলের উপর সীমাবদ্ধতা আরোপ করার পরেও তা এক দারুণ বিষয়। এটা শুনে হাঁফ ছেড়ে বাঁচা গিয়েছিল, কিন্তু এটা তাদের জন্য নয়, যদি সে ৪০০ ভ্রমণকারীর মধ্যে একজন হয়, যাদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে অথবা যাদের প্রবেশের অধিকার অস্বীকার করা হচ্ছে, অথবা যাদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আমি উপলব্ধি করতে পারি অপেক্ষার পালাটা কত কঠিন। কতটা বেদনাদায়ক! কতটা যন্ত্রণাদায়ক! কিন্তু আমরা যারা ফিলিস্তিনি, তাদের ভাগ্যে অপেক্ষার পালা যেন আজীবনের জন্য লেখা রয়েছে।

রাফা সীমান্তের গেটের কাছে ফিলিস্তিনি নাগরিকরা এক শোভাযাত্রা অংশ নেয়। ছবি আশরাফ আমরার, কপিরাইট ডেমোটিক্সের (২৮/০৫/১১)
স্লিপপ্লেস ইন গাজা নামক ব্লগে, নাদির নিজে এই সীমান্ত এলাকা ভ্রমণের বিষয় সম্বন্ধে লিখেছে:
২ জুন, ২০১১-তে, আমি প্রথমবারের মত এই সীমান্তে গিয়ে হাজির হলাম। গেটের সামনে গিয়ে আক্ষরিক অর্থে উত্তেজনায় লাফিয়ে উঠলাম এই কারণে যে আমি অবশেষে সীমান্ত এলাকা কেমন তা আমার নিজের চোখে দেখতে পেলাম। এই গেটের সামনে একদল নিরাপত্তা রক্ষী দাঁড়িয়ে ছিল এবং এটা ছিল বিশাল এক গেট এবং এই গেটে বাইরে অনেক মানুষ অপেক্ষা করছিল, তাদের কেউ কেউ হয় বন্ধু নতুবা তাদের আত্মীয়র আগমনের অপেক্ষায় ছিল, অথবা কোন ভ্রমণকারীর অপেক্ষায় ছিল, যারা তাদের ব্যাগ ট্যাক্সির কাছে নিয়ে যেতে চাইছিল, এটা তাদের রুটি রুজির এটা একটা মাধ্যম।
আমি প্রখর রৌদ্রের নীচে প্রায় ২০ মিনিট অপেক্ষা করলাম, যাতে সেখানকার নিরাপত্তা প্রহরীরা আমাকে ভেতের প্রবেশ করতে দেয়, অনেক বছর পর এখানে প্রথমবারের মত আগমনের ফলে মানুষের কেমন অনুভুতি হয় আমি তার স্বাক্ষী হলাম। যখন অনেকদিন পর প্রিয় মানুষের সাথে কারো, দেখা হচ্ছে, তখন তারা এক অপরকে তীব্রভাবে জড়িয়ে ধরছে, একে অপরের গাল চুম্বন করছে, এবং যে বিষয়টি সবচেয়ে হৃদয় ছুঁয়ে যাচ্ছে, তা হল আনন্দ অশ্রু, যখন আমি এ রকম কোন দৃশ্যের সম্মুখীন হচ্ছিলাম, আমি অনেক কিছু অনুভব করতে পারছিলাম।
যখন আমরা গেটে প্রবেশ করলাম, তখন আমরা বের হয়ে যাবার গেট [বর্হিগমন বিভাগ] ব্যবহার করার জন্য একটা ট্যাক্সি নিলাম, সেখানে আমি দারুণ এক উত্তেজনার সাথে প্রবেশ করলাম। আমি চারদিকে তাকালাম এবং দেখতে পেলাম ক্লান্ত একদল মানুষ, যাদের মুখ বিবর্ণ এবং তারা আশাহত। তখন সময় ছিল বিকেল চারটে এবং সন্ধ্যা ৬ টার সময় সীমান্ত এলাকা বন্ধ হয়ে যায়। শিশু, বৃদ্ধ এবং বৃদ্ধার সেখানে উপস্থিত।
সেখানে উপস্থিত জনতার মধ্যে প্রায় সকল বয়সের মানুষ ছিল। আমি তাদের কয়েকজনের সাথে কথা বললাম, সেখানে কি ঘটছে এবং কেন এখনো তারা বর্হিগমন কেন্দ্রে অবস্থান করছে সে সম্বন্ধে প্রশ্ন করলাম। সবশেষে আমি এই সিদ্ধান্তে আসলাম যে, মিশরীয় কর্তৃপক্ষ আসলে দিনে ৩৫০-৪০০ জনের বেশী মানুষকে এই সীমান্ত দিয়ে দিয়ে পার হতে দেবে না।
ওলা আনান লিখেছে:
النقطة التانية انو موضوع الترميم كله على بعضه مش منطقي !
লায়লা এল হাদ্দাদ, এই ভিডিওটি পোস্ট করেছেঃ
একদল ফিলিস্তিনি একটিভিস্ট-এর তোলা এই চমৎকার ভিডিও রাফা সীমান্ত খুলে দেবার সে বহুল আলোচিত ঘটনার দৃশ্য প্রদর্শন করেছে, যা তৃতীয় দিনে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সামিহা এলয়ান-এর কাছে ফিরে আসা যাক, যে এর সাথে যুক্ত করেছে:
গত বছর, আমাকে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিল, আমি কি এমন কোন সময়ের কথা স্মরণ করতে পারি, যখন আমাদের উপর চলাচলের উপর কোন নিষেধাজ্ঞা ছিল না, অথবা কোন ধরনের বিধি নিষেধ ছড়াই আমরা যে কোন এলাকায় ঘুড়ে বেড়াতে পেরেছি। “না” শব্দটি মুখ দিয়ে বের হতে আমার খুব একটা বেশী সময় লাগেনি। আমি এখনো স্মরণ করতে পারি, আমার চাচার আমাদের বাসায় আগমনের কারনে তা উদযাপন করা দিনগুলোর কথা, যখন কেউ এক বা দুই-দিনের জন্য গাজায় ভ্রমণ করতে আসলে তাদের জন্য ভুঁড়ি ভোজের আয়োজন করা হত, যখন তাদের ফিরে যাবার জন্য তিন দিনের প্রচেষ্টা হীন এক বিজয় যাত্রা উদযাপন করা হত, তখন আমরা আলোচনা করতাম কি ভাবে মিশর, ইজরায়েল এবং ফিলিস্তিনিরা, ফিলিস্তিনি ভ্রমণকারীদের সাথে কি রকম আচরণ করে।
যদি আমাকে এখন আবার ঠিক সেই প্রশ্নটি করা হয়, তাহলে একাকী এক কক্ষের মাঝে একটা ব্যাগ তৈরি রেখে, তার দিকে তাকিয়ে, এখনো আমার উত্তর হবে: না।
এই প্রবন্ধটি মিশর বিপ্লব ২০১১ সম্বন্ধে আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ।