মলদোভাঃ লীগা ইসলামিকা এবং (ন্যূনতম) ধর্মীয় সহনশীলতা

এই বসন্তের শুরুতে মলদোভায় ইসলামিক লীগ (লীগা ইসলামিকা) নামক দলটি আনুষ্ঠানিক ভাবে নাম নিবন্ধন করেছে [ইংরেজী ভাষায় লিখিত], বেশ কয়েকবছর ধরে চেষ্টার পর তারা এই অধিকার লাভ করল [এখানে উল্লেখিত লিঙ্কগুলো ছাড়া, সকল লিঙ্ক রোমানিয়ান ভাষার]।

মলদোভায় মুসলমানরা সংখ্যা লঘিষ্ট জাতি, দেশটির ৪ মিলিয়ন (৪০ লক্ষ) নাগরিকের মধ্যে মুসলমানদের সংখ্যা ১৭,০০০ হাজার জন। মলদোভিয়ার মোট জনসংখ্যার ৯৫ শতাংশ অর্থোডক্স খ্রীষ্টান এবং মে, ২০১১-এর সাম্প্রতিক জনমত জরিপ অনুসারে দেশটির ৮২ শতাংশ জনগোষ্ঠীর চার্চের উপর সর্বোচ্চ বিশ্বাস আছে (যেমন, সামরিক বাহিনীর উপর-৫০ শতাংশের; স্থানীয় সরকারের প্রতি-৪৭ শতাংশের; জাতীয় সরকারের-২৩ শতাংশের)।

মলদোভার অর্থোডক্স চার্চ সরকারকে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার এবং ধর্মীয় আইনকে (লীগা কালটেলর) পুনঃবিবেচনার পরামর্শ প্রদান করেছে, এর আগে যেন বিষয়টি নিয়ে জনগোষ্ঠীর বিষয়টি বিবেচনা করা হয়। এই ঘটনার উপর সমাজে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া এসেছে, রাজনীতিবিদেরা ঘোষণা দিয়েছে যে লীগা নামক দলটির এই নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি একটি ঈশ্বর নিন্দার (ব্লাসফেমী) বিষয় এবং তা ‘সমাজের ক্ষেত্রে সংস্কার বয়ে আনতে পারে‘। যাজকরা বিবৃতি প্রদান করেছে যে এই ঘটনাটি “রাষ্ট্রীয় ধর্মকে হীন করার নামান্তর” এবং মলদোভায় যে “অর্থোডক্স বিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে তার প্রতি অপমান”, এদিকে ধর্মীয় প্রতিবাদকারীরা ঘন্টা এবং ক্রুশ নিয়ে মলদোভার রাজধানী চিসিনায়ুর কেন্দ্রস্থল প্রদক্ষিণ করে। তারা তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করে (এখানে তার ছবি ), এই শোভাযাত্রার শেষ হয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির মধ্যে দিয়ে, যিনি প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছেন যে তিনি বিষয়টি দেখবেন।
ব্লগার নিকু পপেস্কু এই যুক্তি নিয়ে হাজির হয়েছে, তিনি যুদ্ধ করছেন মূল যে “মিথ্যা বিবৃতি’ তার সাথে, যা তার বির্তকের সাথে ছড়িয়ে পড়েছিল।
মিথ্যা যুক্তি ১: “সৌদি আরবে কতগুলো চার্চ রয়েছে যে আমরা মলদোভায় মসজিদ গড়তে দেব”।

তিনি যুক্তি প্রদান করেন:

আমি চাই না যে মলদোভা এক অর্থে সৌদি আরবের মত সীমাবদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত হোক। আমি চাই মলদোভায় নারীরা গাড়ী চালাতে পারবে, তারা বাইরে যেতে পারবে, এবং মলদোভায় চার্চ রাষ্ট্র থেকে আলাদ হবে। যে সমস্ত লোকেরা সৌদি আরবকে নকল করতে চায়, তারা দেশের মঙ্গল চায় না।

তিনি সিরিয়া এবং মিশরের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের উদাহারণ টেনে এনেছেন, যে দুটি দেশের প্রায় ১০ শতাংশ নাগরিক খ্রিষ্টান এবং সে সব দেশে চার্চ গুলো পুরোমাত্রায় তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।

এটা সত্যি প্রশংসার যোগ্য যে মলদোভিয়ার নাগরিকদের সিরিয়া বা মিশরীয় সরকারের চেয়ে সহনশীলতা বেশী। এই দুটি দেশের সরকার কতৃত্বশালী সরকার, যারা গত মাসে তাদের নিজেদের জনতাকে খুন করেছে, কিন্তু একই সাথে তারা খ্রিষ্টান সম্প্রদায়কে স্বীকৃতি প্রদান করেছে এবং অনেক সময় উগ্রবাদী মুসলিমের হাত থেকে রক্ষা চার্চ সমূহকে রক্ষা করেছে।

মিথ্যা যুক্তি ২:: “ইসলাম এই দেশের ইতিহাস আর ঐতিহ্যের সাথে যায় যায় না এবং সংখ্যাগরিষ্ট মানুষ তাদের স্বীকৃতির বিপক্ষে “(?)।

আমি এর সাথে দ্বিমত পোষণ করি। আমি বিশ্বাস করি যে মলদোভায় সংখ্যা লঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করে, যার মধ্যে মুসলমানরাও রয়েছে; এবং যে সমস্ত রাষ্ট্রে খ্রিষ্টান রাষ্ট্র নয়, যেমন সিরিয়া এবং চীন, তারা সংখ্যালঘু খিষ্টান সম্প্রদায়ের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করে থাকে।

মিথ্যা যুক্তি ৩:: “মুসলিমরা সন্ত্রাসী”

আসুন আমরা গুরুত্বের সাথে ভাবি। কেউ কি আসলে বিশ্বাস করে যে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর জন্য মৌলবাদী মুসলমানদের নিজেদের নাম আইনগত ভাবে নিবন্ধন করার দরকার আছে কি? বিষয়টি যেন এমন ১১ সেপ্টেম্বরের হামলা চালানোর আগে বিন লাদেন যুক্তরাষ্ট্রে মসজিদ বানানোর নিবন্ধন করতে চাইছেন। পুরো বিষয়টি অবাস্তব।

এবং ধর্মের সাথে সন্ত্রাসবাদ/চরমপন্থার সম্পর্ক খানিকটা জটিল। মধ্যপ্রাচ্য হচ্ছে এক জটিল এলাকা যেখানকার মুসলিম, ইহুদি, খিষ্টান, সকল সম্প্রদায় বেশ কিছু অপরাধ করেছে।

মিথ্যা যুক্তি ৪: : “স্টেফান সেল মারে” [ইংরেজী ভাষায়] এবং আমাদের পুর্ব পুরুষরা মুসলমান/ তুর্কিদের সাথে লড়াই করেছে এবং আমরা তাদের এই এলাকায় বৈধ হতে দেব না।

ঐতিহাসিক যুক্তি এখানে প্রাসঙ্গিক নয়। এবং মলদোভা যদি রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করত, তাহলে কি আমরা রাশিয়ার চার্চকে নিষিদ্ধ করতাম?

পপেস্কু উপসংহার টেনেছেঃ

অন্য ধর্ম যে চিন্তার কথা বলছে মালদোভার চার্চকে এই চিন্তার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হচ্ছে এই সব বিষয় প্রদর্শন করে যে তারা উন্নত, নাগরিকদের সাথে তারা বাস করে, তাদের যাজকরা বুদ্ধিমান, শিক্ষিত এবং কম দুর্নীতিগ্রস্ত, ইত্যাদি। ঐতিহাসিকভাবে মলদোভার উপর আসা চাপ নয়, তাকে তার বর্তমান বাস্তবতায় নিরপেক্ষ হতে হবে।

আরেকজন ব্লগার ভ্লাদ কুবারাকভ এই বিতর্ককে সামনে টেনে এনেছেন [রোমানিয়ান ভাষায়] যে মুসলমানদের আইনী প্রক্রিয়ার বাইরে রেখে দিলে কেবল তা কেবল দেশটির ধর্মীয় পরিবেশকে খারাপের দিকে নিয়ে যাবে না, একই সাথে তা বাইরের বন্ধুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র সমুহের সাথে উত্তেজনার সৃষ্টি করতে পারে।

এটা একটা জানা তথ্য যে ইজরায়েল, রাশিয়া, আর্মেনিয়া অথবা আজারবাইযান এই বিষয়ে সংবেদনশীল, কি ভাবে তাদের দেশের সংখ্যালঘুর সাথে কি ধরনের আচরণ করা হয়। আমরা ধারণা করতে পারি মলদোভায় ইসলামিক লিগ হয়ত ভবিষ্যতে বাকু অথবা মস্কোর সাথে চিসিনায়ু-এর সম্পর্কের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করতে পারে।

কুবেরাকভ উপসংহার টেনেছে:

আমরা বিশ্বাস করি যে বৈধ এক প্রক্রিয়ার মধ্যে একটি মুসলিম সম্প্রদায় এবং সমাজের সাথে তাদের যুক্ত হয়ে থাকা একজনের কাছে অনেক পছন্দের বিষয় হবে যা কিনা তার নিজের দায়িত্বে চলবে, এই সম্প্রদায় একই সাথে সকল প্রকার সংযুক্তকরণ এবং মুসলিম মৌলবাদীদের এক সহজ শিকার হতে পারে।

ভ্লাদা চিওবানু বিষয়টি ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না [রোমানিয়ান ভাষায়]:

যখন দেশের বাইরে এত জন মলদোভিয়ান থাকে, এবং অনেক চার্চের এবং অর্থোডক্স যাজকরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের দায়িত্ব পালন করতে যাবে, সেখানে কি আমরা ধর্মের প্রতীক, ক্রুশ ছাড়া যাব এবং অন্যদের স্বাধীনতা উপভোগ করতে দিব না।

মলদোভিয়া চার্চের থাম্বনেইল ছবি ফ্লিকার ব্যবহারকারী গট্টরম ফ্লাটাবো-এর (সিসি বাই ২.০)

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .