সিঙাপুরের মিডিয় কর্প, থাইল্যান্ডের দি নেশন, এবং মালয়েশিয়ার বেরিতা হারিয়ান-সবগুলো নিজ নিজ দেশের প্রধান পত্রিকা-তারা সবাই জাপানের ভূমিকম্প/সুনামি নিয়ে সংবেদনশীল প্রবন্ধ লেখার কারণে জনতার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে বাধ্য হয়।
জাপানের ভূমিকম্পের কয়েক ঘন্টা পরে মিডিয়াকর্প বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে এক ইমেইল পাঠায়, যা ইন্টারনেটে প্রকাশ হয়ে পড়ে।
জাপানের সুনামির বিষয়ে তাজা সংবাদ পাওয়ার জন্য চ্যানেল নিউজ এশিয়ার সংবাদের সাথে থাকুন।
চ্যানেল নিউজএশিয়া: ভয়াবহ এক ভূমিকম্পের পরপরই এক ভয়ানক সুনামি আঘাত হানে।
আজ দুপুরের শুরুতে জাপানে ৮.৮ মাত্রার এক প্রচণ্ড ভূমিকম্প আঘাত হানে, যার ফলে শক্তিশালী সুনামির সৃষ্টি হয়, যা উপকূলীয় শহরের রাস্তাগুলোকে তছনছ করে ফেলে। সপ্তাহান্তের এই সান্ধ্য সংবাদের নিজের বিজ্ঞাপন প্রদানের জন্য জায়গা বিজ্ঞাপন স্পট বুক করে ফেলুন, বিশেষ করে যখন এই টিভি চ্যানেল জাপানের বিপর্যয়ের উপর দর্শকদের বিশেষ সংবাদ প্রদান করতে যাচ্ছে, যার সাথে আজ রাতে এই বিষয়ে বাড়তি সংবাদ প্রদান করা হবে।
…. দ্রুত আপনারা আমাদের বিক্রয় প্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ করুন!”
টিভি চ্যানেল নিউজএশিয়ার মানিক মিডিয়াকর্প, যারা সিঙাপুরে প্রভাবশালী এক প্রতিষ্ঠান। এই বিতর্কিত ইমেইল জনসম্মুখে প্রকাশ হয়ে পড়লে, প্রতিষ্ঠানের বিপণন এবং বিক্রয় পরিকল্পনার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জনাব. এডউইন খো এই লিখিত ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
“যদি আমরা পরিস্থিতির প্রতি অসংবেদনশীল আচরণ করে থাকি, সেক্ষেত্রে আমরা নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করছি। এখন কর্মীরা এ ধরনের পরিস্থিতির ক্ষেত্রে আরো সর্তক; আশা করি যে জনতা আমাদের ক্ষমা করবে এবং আমরা এই অত্যন্ত দুভার্গ্যজনক ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের প্রতি আমাদের মনোযোগ এবং প্রচেষ্টা বজায় রাখতে পারব”।
দি নেশন, থাইল্যান্ডের এক ইংরেজি দৈনিক, তারা জাপানের ভূমিকম্প/সুনামির পরপরই গ্রিম রিপারকে উপস্থাপন করে এই কার্টুনটি প্রকাশ করে।
যখন পাঠকরা এই কার্টুনের বিষয়ে অভিযোগ করে তখন পত্রিকাটি তাদের এই কার্টুনের ক্ষমা প্রার্থনা করে।
অতিরক্তি ঈর্ষাকাতর এক চিত্রণের মাধ্যমে মঙ্গলবারের পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পাদকীয় কার্টুন অনেকের কাছে যথাযথ বলে মনে হয়নি বা সেটিকে অসংবেদনশীল মনে হয়েছে। সেখানে দেখানো হয়েছে সুনামি হচ্ছে এক ধরনের ঘাতক ঢেউ এবং তা জাপানের সাথে যুক্ত, এই কার্টুনের জন্য আমরা আন্তরিকতার সাথে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
দি নেশন আন্তরিকতার সাথে ক্ষমা প্রার্থনা করছে এই কারণে যে এই কার্টুন, যা শিল্পীর অন্য সব কাজের সাথে প্রকাশিত হয়েছে, তা বেশ কিছু পাঠককে আঘাত করেছে। শিল্পী তার এ ধরনের বেশ কিছু কাজের মাধ্যমে জাপানের ভূমিকম্প এবং সুনামির শিকার ব্যক্তিদের জন্য তার শোক প্রদর্শন করছে।
দি নেশন তার সম্পাদকীয় পাতায় সবসময় মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে উৎসাহ প্রদান করে। তবে, প্রত্যেকটি আলাদা বিষয়, একটি অন্যটির থেকে প্রকৃতিতে ভিন্ন এবং আমরা প্রত্যেকটির আলাদা ভাবে গুরুত্ব দেবার প্রতিজ্ঞা করছি, পুরোপুরি নৈতিকতা এবং পেশাদারিত্বের সাথে।
এছাড়াও কার্টুন শিল্পী স্টেপফও এই ঘটনায় (স্টেফান পেরেই), ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।
১৫ মার্চ মঙ্গলবারে দি নেশন পত্রিকায় প্রকাশিত কার্টুনের জনক হিসেবে আমি আন্তরিকতার সাথে দি নেশন পত্রিকার সকল পাঠকদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি, বিশেষ করে যে সমস্ত জাপানী এই পত্রিকা পাঠ করেন তাদের কাছে, যদি এই কার্টুনটি তাদের আহত করে থাকে, তাহলে এর জন্য ক্ষমা চাইছি।
যে কোন ভাবে এই আঘাতের ঘটনা ছিল সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত, যেমনটা আমি সবসময় চেষ্টা করেছি, যে কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কার্টুন আকার সময় সতর্ক থাকতে। শুক্রবার সুনামি সংঘটিত হবার পর আমি বিশেষ এই কার্টুনটি তাড়াহুড়া করে এঁকেছি এবং আমরা সে সময় সম্পূর্ন বেদনাদায়ক চিত্রটির ব্যাপারে সচেতন ছিলাম না। গ্রিম রিপারকে ততটা হাস্যরসাত্মক চরিত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয় না এবং প্রায়শই তাকে পশ্চিমে সম্পাদকীয় কার্টুন হিসেবে ব্যবহার করা হয়, বিশেষত যখন কোন বেদনাদায়ক ঘটনায় জীবনহানি ঘটে। কিন্তু আমি অনেক একমত যে এই এই ঘটনায় এই কার্টুনটি যথাযথ ছিল না এবং এই ক্ষেত্রে আরো সহনশীল কিছু ব্যবহার করা যেত।
এই কার্টুনটি যা মালয়েশিয়ার সংবাদপত্র বেরিতা হারিয়ানে প্রকাশিত হয়েছিল। এটি জাপানের টিভি আইকন আলট্রাম্যানকে নিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। এই কার্টুন প্রকাশিত হবার সাথে সাথে তা ইন্টারনেটে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে।
এই পত্রিকার ই-পেপার, তার সামাজিক নেটওয়ার্ক সাইটে এর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে।
“বেরিতা মিনগুতে যে কার্টুন প্রকাশিত হয়েছে তার জন্য আমরা ক্ষমা প্রার্থনা করছি। জাপান এবং জাপানের জনগণ যে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে, তা নিয়ে আমাদের রসিকতা করার কোন ইচ্ছা ছিল না।
বাস্তবতা হচ্ছে, তাদের এই দুর্ভোগের সময় আমরা তাদের প্রতি প্রচণ্ড সহানুভূতিশীল এবং জাপানী জনতার সাথে এই দুর্ভাগ্য ভাগাভাগি করে নিতে চাই।“
এই কার্টুনের নিন্দা জানিয়ে মালয়েশিয়ার নেট নাগরিকরা (নেটিজেনরা ) একটি দরখাস্ত উপস্থাপন করেছে। মালয়েশিয়ার ব্লগার ইউনির্ভাসেল মনে করেন যে কেবল ক্ষমা প্রার্থনা যথেষ্ট নয়।
যখন অন্য সব দেশ এই সংবাদটি দেখবে তখন তারা আমাদের সম্বন্ধে কি ভাববে?! বিস্বাদ পূর্ণ এক সংবাদ এবং পুরোপুরি বেদনায়দায়ক!! মানুষজনের দুর্ভাগ্য নিয়ে মজা করা মোটেও মজাদার বিষয় নয় এবং এই বিষয়টি আমাদের এক নির্বোধ ভাঁড়ে পরিণত করেছে।
একটি ক্ষমা প্রার্থনা এই ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়। ভূল কাজ করার ক্ষেত্রে দায়িত্ব কি ভাবে নিতে হয় তা জনতাকে শিখতে হবে এবং সব সময় নিজেকে রক্ষা করা চলা চলবে না। এটা বেশ বড় ধরনের এক ভুল; এটা জাপানী জনগণকে অপমান করা এবং একই সাথে তা সমগ্র জাতীর জন্য লজ্জা বয়ে আনা।
সিঙাপুরের “তাও অফ তেওইজম” মিডিয়াকর্প যে ভাবে ক্ষমা চেয়েছে তাতে সন্তোষ্ট নন।
এটা এক বেদনাদায়ক, সুযোগ সন্ধানী এবং দাবীর সাপেক্ষে তৈরি করা ইমেইল, যা তাদের বিপণন দলের অনুমোদন সাপেক্ষে পাঠানো হয়েছে এবং তারা যা করতে পারে তার সাপেক্ষে এটাই তাদের সেরা ক্ষমা প্রার্থনা? আপনারা সম্ভবত এর জন্য এক অধস্তন কর্মীকে ঝামেলায় ফেলবেন, যেখানে বাস্তবতা হচ্ছে এই ধরনের ইমেইল কি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমোদন ছাড়া বাইরে যেতে পারে? আমি বিশ্বাস করতে পারি না যে এ রকম এক ইমেইল ব্যবস্থাপনা কমিটি কোন রকম যাচাই না করে বাইরে পাঠাতে পারে? এর জন্য কি তাদের ব্যবস্থাপকদের দায়ী করা উচিত নয় কি? অন্য দেশে হলে, এর জন্য দায়িত্বে থাকা ম্যানেজরকে তার পদ থেকে এক ধাপ নীচে নামিয়ে দেওয়া হত অথবা তাকে বরখাস্ত করা হত, কিন্তু যেহেতু এটা উচ্চ শ্রেণীর এক প্রতিষ্ঠান এবং প্রভাবশালী কোম্পানি মিডিয়াকর্প, এর ফলে একমাত্র যে কর্মকাণ্ড গ্রহণ করা হয়েছে সেটি হচ্ছে “ কর্মীদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাউন্সেলিং করা?” এটা কি ধরনের এক অসভ্যতা??
লাইফ ইন রুরাল থাইল্যান্ড উল্লেখ করছে যে অতীতে, সংবাদপত্র সম্পাদক এই রকম ঘটনায় এত দ্রুত ক্ষমা প্রার্থনা করত না।
আমি মনে করি লোকজন কার্টুন নামক শব্দে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। অনেকে মনে করে সকল কার্টুন আসলে মজার হতে হবে। তারা তা নয়। একটি কার্টুন আকা অনেক সময় একই সাথে বর্তমান পাবলিক ফিগার বা বিষয়ের প্রতীক হতে পারে।
যে বিষয়টি আমি জানি, তা হচ্ছে সংবাদপত্রের সকল কাজে আপনি সকলকে খুশি করতে পারবেন না, কোনদিন না। আজকের দিনের সম্পাদকরা খুব দ্রুত ক্ষমা প্রার্থনা করে ফেলে এবং এর মাধ্যমে তারা রাজনীতিবীদ এবং সামাজিক বিষয়ের উপর মন্তব্যকারীদের দ্রুত কিছু করার বাতিক-কে উৎসাহ প্রদান করে। আমাদের সময়ে আমরা যদি আবিষ্কার করতাম যে আমরা কেবল ভুল তথ্য প্রদান করেছি, তখনই আমরা কেবল ক্ষমা চাইতাম। যে দুটি প্রত্রিকার নাম আমি উল্লেখ করলাম, সেখানে আমি কোন ভুল তথ্য পাইনি, তারা কেবল ভিন্নভাবে তথ্য উপস্থাপন করেছে- কিন্তু আসলেই কি সেগুলো এতটা অসংবেদনশীল ছিল?
দি লস্ট বয়, দি নেশন-এর সমালোচনা করছে।
দি নেশনের প্রায়শই সমালোচনা করা হয়, আমি নিয়মিত ডাব্লিউটিএফএস-এর কিছু সাইটে প্রবেশ করি, মূলত ফুবার-লেডেন-এর ওয়েব সাইটে কাগজটির মূল্যায়ন করে থাকে, কিন্তু আমি মনে করি না যে জাতীর চারিত্রিক সরলতা সমন্ধে কোন কিছু কখনো আমাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেনি, যেমনটা গতকালের এই সম্পাদকীয় কার্টুনটি করেছে।