অ্যান্ডি কারভিনের সাথে সাক্ষাৎকার

এ পর্যন্ত ৪০,০০০ এর বেশী টুইটার অনুসারী আর বিভিন্ন স্থানীয় সংবাদের নিবেদিত টুইটার বার্তা নিয়ে অ্যান্ডি কারভিন টুইটারে প্রথম পছন্দে পরিণত হয়েছেন বিশেষ করে মধ্য প্রাচ্য আর উত্তর আফ্রিকার সংবাদের জন্য। এনপিআর কৌশলবিদ কারভিন সামাজিক মিডিয়া আর টুইটারকে নির্দিষ্ট এক ধরনে সমাগত করেছেন বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ সময়ের রিপোর্টিং এর প্লাটফর্ম হিসাবে

গ্লোবাল ভয়েসেস এর প্রথম দিকের একজন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে আমাদের কাজ কারভিনের কাজে অজ্ঞাত কিছু না, আর দীর্ঘদিন ধরে তিনি নাগরিক সাংবাদিকতার উপকারিতা দেখেছেন। গত ফেব্রুয়ারীতে ইথান জুকারম্যানের সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি জোর দিয়েছিলেন “স্থানীয় মানুষকে দিয়ে তাদের গল্প বলানো বিশেষ করে যখন তারা সেই ঘটনাতে অংশগ্রহণ করেন।”

এই সাক্ষাৎকার গ্লোবাল ভয়েসেস মধ্যপ্রাচ্য আর উত্তর আফ্রিকার স্বেচ্ছাসেবকদলের সদস্যদের প্রশ্ন দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।

আপনি টুইটারের বার্তা সংগ্রহে কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করেন, এবং আপনার মতে টুইটারে কি এখনও নেই?

এখন পর্যন্ত আমি গতানুগতিক প্রযুক্তিগুলো, যেমন টুইটডেক, টুইটার সার্চ ইত্যাদি ব্যবহার করি। যতক্ষণ পর্যন্ত আমার ধারণা থাকে যে আমি কি খুঁজছি আর কেন খুঁজছি, এইসব প্রযুক্তিগুলো আসলে তেমন গুরুত্বপূর্ণ থাকে না আর কারন আমি নিজেই আমার কাজগুলোকে সাজাই। তবে বলতে গেলে আমার কিছু প্রযুক্তি হাতে পেলে ভাল হয়, যেমন যেগুলো আমার কাছে পাঠানো ক্রমবর্ধমান ব্যক্তিগত টু্ইটার বার্তাগুলো সামলাতে সাহায্য করবে বিশেষ করে যখন আলাদা করা কঠিন হয় – যে কেউ নতুন কোন তথ্য দিচ্ছে না আমার সাথে আলাপ করতে চাচ্ছে।

গতানুগতিক মিডিয়াতে সামাজিক মিডিয়া নিয়ে কাভারেজ বেড়েই চলেছে, এ পরিপ্রেক্ষিতে আপনি কি সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে নতুন কোন ধারা দেখতে পাচ্ছেন, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক সংবাদের ক্ষেত্রে?

আমি মনে করি তাৎক্ষণিক সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে সামাজিক মিডিয়ার কাভারেজ বেশ ভাল বিশেষ করে যখন বড় বড় সংবাদ মাধ্যমগুলোর পক্ষেও সম্ভব হয় না সংবাদের আশায় বিশ্বের সব কোনায় তাদের সংবাদদাতাকে বসিয়ে রাখতে। ২০০৪ সালের সুনামির সময় মালদ্বীপ বা আন্দামানে মিডিয়ার সাংবাদিক ছিল না। কিন্তু নাগরিক সাংবাদিকদের কাছ থেকে সংবাদ সংগ্রহ করা সেই সময় গুরুত্বপূর্ণ ছিল। টুইটার এবং ইউটিউবের মত প্রচার সাইটগুলোর জন্যে এখন সম্ভব বিশ্বের যে কোন অংশের সংবাদ সম্পর্কে জানা যদি সেখানে ইন্টারনেট থাকে। এবং আপনি যদি সাহায্য চান, আপনি অবাক হবেন সেইসব স্থান থেকে কতজন আপনাকে সাহায্য করার জন্যে তৈরি থাকে।

Photo of Andy Carvin by Jamie Reinsch

আমরা দেখেছি আপনাকে তিউনিশিয়া, মিশর, লিবিয়া, বাহরাইন আর সিরিয়ার সংঘাত নিয়ে রিপোর্ট করতে। আপনি প্রায় মর্মস্পর্শী ছবি আর ভিডিও তুলে ধরেন। আপনার কি কখনো অতিরঞ্জিত বা ক্লান্ত মনে হয় এমন হৃদয় বিদারক ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে?

অবশ্যই, মাঝে মাঝে এটা খুব কঠিন হয়, বিশেষ করে যখন বাচ্চাদের আহত হওয়ার ভিডিও বা গল্প থাকে। আমার ছোট দুইটা বাচ্চা আছে আর ওদের বয়সী বাচ্চাকে যখন আমি ক্রসফায়ারের মধ্যে পড়তে দেখি, আমি খুবই বিচলিত হই। তাছাড়া টুইটারে লাইভ টুইট করা মানুষকে যখন আক্রান্ত হতে দেখেন, তাহলে আপনি আসলেই বিচলিত হবেন, কারন তখন আপনার মাথায় একটা চিত্র তৈরি করতে হবে যে ওখানে কি ঘটছে আর এটা মাঝেমাঝে বাস্তবের থেকে বেশী প্রকট হয়। কিন্তু আমি শিখেছি কখন আমার ল্যাপটপ বা আইফোন থেকে সরে যেতে হবে। যে কাজ আমি করতে চাই না তা হলো নি:শেষ হয়ে হাল ছেড়ে দেয়া, কিন্তু আমি এটা শীঘ্রই হতে দেখছি না।

আমরা ধারনা করছি যে আপনি দায়িত্বের তাড়না থেকে যা করেন তা করে যাচ্ছেন-এটা কোথা থেকে এসেছে? এটা কি এই কাজ করার ফল, নাকি অন্য দিক থেকে?

সঠিকভাবে বলা কঠিন। এটার একটা অংশ হলো যে আমি সংবাদের খোরাক খুঁজি, আর স্থানীয় সংবাদ আমি কাছ থেকে দেখবো কারন এটি বিশ্বের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এতো বছর ধরে আমি অনলাইন দুর্যোগে সাড়া দেবার কাজ করেছি, যার মধ্যে আছে ৯/১১, হারিকেন ক্যাট্রিনা আর হাইতির ভূমিকম্প। তাই আমি নিশ্চিত আমার ভিতরে জোরালো চাহিদা আছে এই ধরনের পরিস্থিতিতে সাক্ষী থাকার জন্য।

মিশর আর বাহরাইনে, মোটামুটি সহজ ছিল টুইটার ব্যবহারকারীদের খুঁজে পাওয়া আর তাদের মতামত নেওয়া। লিবিয়া আর ইয়েমেনে, উদাহরণ স্বরুপ, এটা আরো বেশী কঠিন। কম সক্রিয় দেশ থেকে আপনি কি করে সমর্থ হন সামাজিক মিডিয়ার বিষয় খুঁজে পেতে?

এটা বেশ কঠিন ছিল। দুই দেশে কাউকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনতাম না, তাই আমি শুরু করেছিলাম যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বাইরের গোত্রে লোক খোঁজা আমার ব্যক্তিগত নেটওয়ার্ক দিয়ে। তাড়াতাড়ি আমি দেখতে পেলাম যে কিছু মানুষ আছে যারা আমার সাথে কথা বলতে চাচ্ছে আর আমাকে ধারনা দিতে চাচ্ছে যে প্রত্যেক দেশে অনলাইনে মূল খেলোয়াড় কারা। বিষয়বস্তু পাওয়ার ব্যাপারে, এটা আপনি যা ভাবছেন তার থেকে সহজ। ফেসবুক ছবি আর ভিডিও স্বর্ণখনি, যেমন ইউটিউব। আপনাকে শুধু জানতে হবে কোথায় দেখতে হবে।

আপনি যেমন বলেছেন, কিছু দেশে সূত্র পাওয়া কঠিন, আর আমাদের মাঝে মাঝে দ্বিতীয় সূত্রের উপরে নির্ভর করতে হয়। আপনি কি বিশ্বাস করেন যে আপনার সূত্রের অবস্থান তাদের বিশ্বস্ততার উপরে প্রভাব ফেলে? কতো বেশী আপনি এমন দেশের ব্যাপারে রিপোর্ট কভার করেন সেই দেশের বাইরে অবস্থিত ব্যবহারকারীদের দ্বারা?

নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ, বেশীরভাগ লিবিয়াবাসী যাদের আমি টুইটারে অনুসরন করেছি তারা লিবিয়াতে নেই, কারন বেশীরভাগ যারা লিবিয়াতে আছেন তাদের ইন্টারনেট সংযোগ কেটে দেয়া হয়েছিল। তারা তাদের স্বজনকে ফোনে জানিয়েছেন আশেপাশে থাকা মানুষের কাছ থেকে খবর সংগ্রহ করে। অবশ্য তার মানে এটা দ্বিতীয় স্তরের তথ্য, তাই এই ব্যাপারে আমাকে আর একটু সজাগ হতে হয়, কিন্তু আমি বেশ অবাক হয়েছি যে সাধারণ ভাবে তাদের তথ্য কতো সঠিক হয়। আর এটা অস্বাভাবিক না যে প্রবাসীরা বিক্ষোভকে অংশগ্রহণ করেন না, কারন তারা ইতোমধ্যেই দেশের বাইরে আছে। তারা এমন অবস্থানে আছেন যে অনেক তথ্য আর মতামত দিতে পারেন নির্ভয়ে যেহেতু তারা বাড়ির এতো দূরে আছেন।

যে পরিমাণ তথ্য আপনি একই সময়ে নিয়ে কাজ করেন, কোন বিষয়কে আপনি গুরুত্ব দেন আমাদের সবার কাছে প্রচারের ক্ষেত্রে তথ্য নির্বাচন করার ক্ষেত্রে?

এটা আসলেই ক্ষেত্র বিশেষে আলাদা হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি আমি জানি যে বড় কিছু একটা ঘটছে, যেমন পুলিশ বিক্ষোভকারীদের উপরে গুলি করছে, আমি চেষ্টা করবো ওই ঘটনার প্রাথমিক তথ্য বা চিত্র পেতে। মানুষ যখন ক্ষুব্ধ আর মানসিকভাবে দুর্বল থাকে, আমি তখন আবার তাদের বার্তা পুন: টুইট করে তাদেরকে একত্রে রাখার চেষ্টা করবো, তাদের গল্প প্রায় একজন মৌখিক ঐতিহাসিকের মতো রাখার চেষ্টা করবো। আর তারপরে আমি যখন ভালো কিছু পাব, সবার সাথে সেটা ভাগ করবো। কিন্তু সম্ভবত সব থেকে গুরুত্বপূর্ন যে কাজ আমি করি সেটা হলো যে তথ্যের ব্যাপারে আমি সন্দিহান সেটাকে পুন:টুইট করা আর মানুষের কাছে অনুরোধ করা আমাকে সেটার সত্যতা যাচাইয়ে সাহায্য করার জন্য। সব ধরনের মানুষ তখন সাড়া দেয় আর আমাকে সাহায্য করে বাস্তবকে গল্প থেকে পৃথক করতে, কারন এতো মানুষ আমাকে টুইটারে অনুসরন করেন যারা হয় ওই এলাকার বা ওই বিষয়ের বিশেষজ্ঞ।

আপনার টুইটারের ব্যবহার আমাদের দেখা নতুন কিছু। আপনি যখন টুইট আর পুন:টুইট করছেন, আপনি কি কখনো চিন্তা করেছেন আপনার টুইট বার্তাগুলোর মাধ্যমে ধারাবর্ণনা তৈরি করার?

একেবারে ঠিক। আপনারা যদি দেখেন আমি কিভাবে তিউনিশিয়ার ব্যাপারে টুইট করেছি, আমি এটাকে ধারা বর্ণনার অংশ হিসেবে দেখেছি, বুয়াজিজ এর আত্মহত্যা থেকে বেন আলির দেশ থেকে পলায়ন। আমি ধারনা করতে চেয়েছি ঘটনার মূল বিষয়টি কি আর বাড়তে থাকা উদ্বেগকে ধরার চেষ্টা করি যেমন তা ঘটছে। আমি স্টোরিফাই ব্যবহার করেছি এগুলো সংগ্রহ করতে। তার পর থেকে লাগাতার অনেক দেশে বিদ্রোহ হচ্ছে আর আমি চেষ্টা করছি যথাসাধ্য করতে, এটা লক্ষ্য রেখে যে প্রতিটি দেশে যা ঘটছে তাতে মানবিক একটা চেহারা যাতে থাকে।

ভাষার বাধা আপনি কি করে পার করেন? আপনি কি অন্যের ভাষান্তরের উপরে নির্ভর করেন নাকি যান্ত্রিক অনুবাদ ব্যবহার করেন (নাকি দুইটাই)?

লেখার জন্য যান্ত্রিক ভাষান্তর ব্যবহার করি, যার ফলে সাধারণত আমি বুঝতে পারি যে মূলত কি বলা হচ্ছে। যদি ভিডিও বা এমন কিছু হয়, আমি আমার টুইটার অনুসারীদের সাহায্য চাই। আমার অনুরোধের ২০ মিনিটের মধ্যে আমি কোন রকম একটা অনুবাদ পাই, আর প্রায় স্বেচ্ছাসেবীরা একত্র হয়ে আর একটু ভালো ভাষান্তর দেন আর ভিডিওর ক্যাপশন দেন। দারুন লাগে যে মানুষ তাদের সময় আর জ্ঞানের ব্যাপারে কতো উদার; তাদের সাহায্য ছাড়া আমি যা করছি তা করতে পারতাম না।

আপনি কি কখনো অবাক হয়েছেন আপনার লাইভ টুইটিং এর প্রতি সাড়া দেখে?

আমি অপ্রস্তুত হই যদি বিখ্যাত কেউ আমাকে পূন:টুইট করেন, যেমন জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত ইউএন রাইস, বা এনএফএল খেলোয়ার চাদ ওচোচিনকো। কিন্তু সব থেকে ভালো জিনিষ হলো যে আমার টুইটার অনুসারীরা চায় আমি সফল হই, আর আমার মঙ্গল নিয়ে চিন্তিত। তারা আমাকে মনে করিয়ে দেয় শোয়ার কথা, কিছু খাওয়ার কথা, পরিবারের সাথে সময় অতিবাহিত করার কথা। তারা আমাকে গ্রথিত রাখে।

আর অবশ্য আমরা সবাই জানতে চাই যে গ্লোবাল ভয়েসেস এর ব্যাপারে আপনি কি ভাবেন?

আসলে অনেক আগে ২০০৪ সালে আমি গ্লোবাল ভয়েসেস এর প্রথম দিকের অংশগ্রহণকারী ছিলাম:

https://globalvoicesonline.org/author/andycarvin/

তখন আমি অনেক ভ্রমণ করছিলাম, তাই গ্লোবাল ভয়েসেস দারুন একটা মাধ্যম ছিল আমার ব্লগ পোস্ট, পডকাস্ট আর ভিডিও দেখানোর জন্য। এটা আমার প্রাথমিক সূত্র ছিল অনলাইন গোত্রকে বিশ্বব্যাপী লক্ষ্য করে দেখার তখন থেকে। আমি হয়তো আজকে যা করছি তা করতাম না যদি না গ্লোবাল ভয়েসেস এর জন্য যেহেতু তিউনিশিয়া আর মিশরের আমার প্রথম দিকের কিছু যোগাযোগ আমি জিভি সমাজের লোকের মাধ্যমে করেছি।

ধন্যবাদ অ্যান্ডি কারভিন।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .