- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

সিঙ্গাপুর: সামাজিক মাধ্যম, যুবসমাজ ও নির্বাচন

বিষয়বস্তু: পূর্ব এশিয়া, সিঙ্গাপুর, ডিজিটাল অ্যাক্টিভিজম, নাগরিক মাধ্যম, নির্বাচন, প্রচার মাধ্যম ও সাংবাদিকতা, প্রযুক্তি, যুবা, রাজনীতি, সরকার

সিঙ্গাপুরের আগামী জাতীয় নির্বাচনে [1] যুবসম্প্রদায়ের ভোট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। একারণেই রাজনৈতিক দলগুলো [2] ইন্টারনেটে পুরোদমে তাদের প্রচারাভিযান চালাচ্ছে।

পিপল অ্যাকশন পার্টি (পিএপি [3]), যারা ১৯৫৯ সাল থেকে ক্ষমতায় আছে, আশা করা হচ্ছে বিভিন্ন বিরোধীদলের কাছ থেকে এবার তারা তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পরবে। সিঙ্গাপুরে সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০০৬ সালে।

নিচে আহমাদের তৈরি সমাবেশস্থলের [4] একটি গুগল ম্যাপ দেয়া হলো:


在較大的地圖上查看 সিঙ্গাপুর সাধারণ নির্বাচন ২০১১ এর সমাবেশস্থলের একটি গুগল ম্যাপ [5]

আরোন কোহ বললেন ‘ফোরস্কোয়ার চেক ইন’ [6] নির্বাচনের সমাবেশের জন্য কেন এত তাৎপর্যপূর্ণ:

ওয়ার্কার্স পার্টি (ডব্লিউপি) দেখল যে নির্বাচনী প্রচারণার প্রথম দিনই সমাবেশ স্থলে সবচেয়ে বেশি ফোরস্কোয়ার চেকইন হয়েছে।

এখন ফোরস্কোয়ার চেকইন কেন এতো তাৎপর্যপূর্ণ? কারণ ওই চেকইনগুলো যারা করেছে তারা অবশ্যই ইন্টারনেট সংযোগসহ স্মার্টফোন ব্যবহারকারী। এর মাধ্যমে এই দাঁড়ালো যে তারা স্মার্টফোন গুলোকে তথ্যের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে ব্যবহার করে।

যেখানে আশা করা হচ্ছে এ বছর যুবসম্প্রদায়ের ভোটই হবে “অনিশ্চিত ভোট” এবং যেখানে ৮৭ টির মধ্যে ৮২ টি আসনেই লড়াই হবে, সেখানে রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের অনলাইন কৌশল নির্ধারণ করা অত্যন্ত জরুরী – যাতে তারা এই ভোটারদের কাছে বার্তা ঠিকমত পৌঁছাতে পারে, এমনকি পাঁচ বছর পর পরবর্তী নির্বাচনেও এটা কাজে দিবে।

ততদিনে হয়তো প্রশ্নটা হবে কোত্থেকে তারা সংবাদ পেল সেটা না বরং কিভাবে পেল সেটা।

ইওনিং ব্রেড বিশ্লেষণ করছে মূলধারার সংবাদপত্রগুলো [7] নির্বাচনী প্রচারণা কিভাবে ধারণ করছে

…বর্তমান যুগে সর্বময় বিস্তৃত সেলফোন ক্যামেরা ও ত্বরিত সম্প্রচার মাধ্যমগুলো টুইটার বা ফেইসবুকের মতো ব্লগসাইট থেকে এগিয়ে, সেখানে সনাতনি সম্পাদকীয় ধারা এখন আর প্রযোজ্য নয়।

বেশিরভাগ সংবাদপত্রই এসব ছবি ছাপবে না, কেউ ছাপলেও তা বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পরবে।

ডিজিটাল যুগের বাসিন্দারা মূলধারার মাধ্যমকে পাত্তা দিতে চান না। এভাবে তাচ্ছিল্য করা অনুচিত।

সেদিন হয়ত আর নেই যখন সংবাদপত্রগুলো লজ্জাজনকভাবে সংবাদ বিকৃত করে বা পিএপি-কে প্রাধান্য দিয়ে সংবাদ ছাপত, তথাপি সূক্ষ্ম কিছু উপায়ে ক্ষমতাসীন দলের অনুকূলে আলোচনা করা সম্ভব।

ফ্ল্যানোরোজ আদমশুমারি উপাত্ত [8] ব্যবহার করে যুবসম্প্রদায়ের ভোটের তাৎপর্য নির্ণয় করেছেন:

আমি পন্ডিত নই এবং আমার আধ্যাত্মিক ক্ষমতাও নেই যা দিয়ে আমি জনগণের আবেগ বুঝবো। আমার কাছে যা আছে তা হলো আদমশুমারি উপাত্ত ও একটি বিশ্বাস যে অল্পবয়সীরা স্বাভাবিকভাবেই চায় পরিবর্তন আর বয়স্করা চায় স্থিতাবস্থা।

সিঙ্গাপুরের যেসব নাগরিক ২০০০ সালে চল্লিশোর্ধ ছিল তারা এখন পঞ্চাশোর্ধ। মৃত্যুহারের কারণে একেক অঞ্চলের মোট জনগোষ্ঠীর মাত্র কিয়দংশ তারা। অপরদিকে সেসব নাগরিক যারা ২০০০ সালে ছিল ১০ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে তাদের বয়স এখন ২০ থেকে ২৯ বছর এবং সেটা ভোট দেবার জন্য উপযুক্ত বয়স।

…বেশিরভাগ জায়গাতেই ২০০০ সালের তুলনায় তারা সমষ্টিগতভাবে এখন মোট জনসংখ্যার একটি বৃহৎ অংশ।

আরন নঙ তরুন প্রজন্মকে দেখছেন অননুমেয় [9] ও অতুষ্ট হিসেবে:

নতুন প্রজন্মের সিঙ্গাপুরিয়ানরা বলতে গেলে এক ভিন্ন প্রজাতি। রাজনৈতিকভাবে তাদের সন্তুষ্ট করা মোটেও সহজ নয়। নতুন প্রজন্মের সিঙ্গাপুরিয়ানরা বাস্তবিকভাবে অনেক বেশি শিক্ষিত ও স্বাধীনচেতা এবং তারা তাদের পিতামাতার চেয়ে সরকারের কাছ থেকে বেশিকিছু দাবি করে।

সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে নতুন প্রজন্মের সিঙ্গাপুরিয়ানরা তাদের পিতামাতার মতো পিএপি-এর উপর নির্ভর করতে রাজি না, পিএপি ১৯৫৯ সালে ব্রিটিশদের হাত থেকে নিজ-সরকার লাভের পর থেকে শাসন করে আসছে। অনলাইন প্লাটফর্মগুলোতে তাদের বক্তব্য জোরালো ও পরিষ্কার, কারণ এখানেই তারা ইন্টারনেটের সাথে বেড়ে উঠেছে।

নতুন প্রজন্মের সিঙ্গাপুরিয়ানরা সম্ভবত তাদের পিতামাতার চাইতে অনেক বেশি অননুমেয় এবং রাজনৈতিক নেতাদের এটা খুঁজে বের করা উচিৎ কিভাবে তাদেরকে প্রণোদিত করা যায়, তাদের সাথে যুক্ত হওয়া যায় এবং কিভাবে তাদের ভোট পাওয়া যায় কারণ পরের নির্বাচনে তাদের ভোট সংখ্যা হবে অধিক।


ও শি হং
যুবসমাজের রাজনৈতিক শিক্ষার ব্যাপারে [10] সংশয় প্রকাশ করেছেন:

বিস্মিত হবার কিছু নেই যে সিঙ্গাপুরিয়ান বাচ্চারা রাজনৈতিকভাবে অজ্ঞ ও অনবহিত। আরো সুনির্দিষ্ট ও স্পষ্টভাবে বললে, আমার সন্দেহ হয় যে সাধারণ সিঙ্গাপুরিয়ান বাচ্চাদেরকে রাজনৈতিকভাবে অবজ্ঞা করা হয় ও তাদেরকে ছেঁড়ে দেয়া হয় ঘরোয়া আলাপ, সংবাদপত্র ব্লগ ইত্যাদি থেকে শেখার জন্য। আমি এটা বলছি কারণ সিঙ্গাপুরিয়ান শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে “গণতন্ত্র কি?” এর উত্তর—যদি তারা আদৌও দিতে পারে—চিন্তা করতেই শিউরে উঠি।

দ্য সাতে ক্লাব প্রথম সপ্তাহের প্রচারণা [11] নিয়ে একটি প্রতিবেদন পেশ করে:

পাঁচটি দলেরই সমাবেশের মাধ্যমে বেশ ঐকান্তিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয়। ডব্লিউপি-এর হুয়াগং সমাবেশে সমবেত হয় সবচেয়ে বেশি, আনুমানিক প্রায় ৬০০০০ থেকে ৭০০০০ মানুষ।

ইতোমধ্যে নতুন গড়ে ওঠা রিফর্ম পার্টিও তাদের প্রথম সমাবেশ করে ওয়েস্ট কোস্ট জিআরসি-তে, যা মাঝারিমানের হলেও প্রায় ৫০০০ থেকে ৮০০০ জনের একটি সম্মানজনক জনতা আকর্ষণ করে।

ক্ষমতাসীন পিএপি-এর সমাবেশ শুরু করে উপ-প্রধান মন্ত্রী টিও চী হিয়ানের দূর্গ পাসির রিসপুঙ্গোল জিআরসি-তে। অপরদিকে এনএসপি ও এসডিপি তাদের সমাবেশ করে যথাক্রমে মেরিন প্যারাড জিআরসি ও হলান্ড-বুকিত তিমাহ জিআরসি-তে।

বিরোধী দল ওয়ার্কার্স পার্টি সবচেয়ে বড় সমাবেশ জড়ো করলেও তা তাদের অধিক ভোটপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে পারে না। সিঙ্গাপুর ইলেকশন ওয়াচ কারণটাও [12] বলে দিচ্ছে:

২৯ এপ্রিল যখন আমি পিএপি এর সমাবেশে যাই তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছি। আমি কয়েকজনের সাথে কথা বলেছি যারা ডব্লিউপি-এর কট্টর সমর্থক। তারা যা বলল তা দু:চিন্তার বিষয়: প্রতি ৬ জনের মধ্যে ২ জন পিএপি কে ভোট দিবে, তিনজন অনিশ্চিত, বাকি একজন ভোটটি নষ্ট করতে চায়। বিস্ময়কর হলেও সত্যি।

ইন দ্য বিগিনিং ওয়াজ দ্য লোগোস বিরোধি প্রার্থীদের বক্তৃতার ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত [13] করেছে এভাবে:

আমার ধারণা যা সবচেয়ে মুগ্ধ করেছে তা হলো শিশুদের বেড়ে ওঠার জন্য আবাসন, অর্থনীতি ও পরিবেশের উপর জোর দেয়া। যদি আবাসন ও জীবনযাত্রার খরচ অত্যধিক হয় এবং কর্মস্থলে কাজ শেষ করার পর একজনের কাছে বাচ্চা পরিচর্যা ও লালনের জন্য সময় না থাকে তাহলে নিশ্চিতভাবে দেশের বিপর্যয় ঘটবে।

দ্য অনলাইন সিটিজেন [14], সিঙ্গাপুর পলিটিকস [15]ড্যারেন সোহ [16] ওয়েবসাইটগুরোতে নির্বাচনী প্রচারণার ছবি ও ভিডিও রয়েছে।

এছাড়াও গ্লোবাল ভয়েসেস সিঙাপুর জেনারেল ইলেকশন পোর্টাল [17], দ্য সিঙাপুর ডেইল [18], সিঙাপুর সার্ফ [19]জিই ২০১১ মিডিয়া [20] এই সাইটগুলো দেখার পরামর্শ দিচ্ছে।