তিউনিশিয়া: ধর্মনিরপেক্ষতা বিষয়ে ব্লগারদের বিতর্ক

এ পোস্ট টি তিউনিশিয়া বিপ্লব ২০১১ সংক্রান্ত বিশেষ কাভারেজের অংশ

যদিও তিউনিশিয়া মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ এবং দেশটির সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে, তারপরেও মুসলিম বিশ্বের মধ্যে তিউনিশীয় সমাজ হচ্ছে একটি অন্যতম প্রধান সেকুলার বা ধর্ম নিরপেক্ষ সমাজ।

রাষ্ট্রপতি হাবিব বারগু্ইয়ার অধীনে স্বাধীনতালাভের আগেই এই ধর্ম নিরপেক্ষতার আন্দোলন শুরু হয়েছিল। হাবীব হচ্ছেন আরব বিশ্বের একজন শীর্ষস্থানীয় প্রধান ধর্মনিরপেক্ষ নেতা। ‘ব্যক্তিগত মর্যাদা আইন’ বা (Personal Status Law ) “লো কোড দু স্ট্যাটাট পারসোনেল”(ফরাসী ভাষায়) প্রনয়ণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন। এ আইনে প্রধানতঃ নারীদের রক্ষা ও তাঁদের অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। হাবিব বারগুইয়ার উত্তরসূরী জিনে আল আবেদীন বেন আলী তাঁর ২৩ বছরব্যাপী শাসনামলে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখেন।

ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে বিক্ষোভ। ছবি নাওয়াত এর সৌজন্যে

যাহোক, যে সব তিউনিশীয় স্বাধীন ভাবে বিভিন্ন ধর্মীয় কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করতে চায় সে সব তিউনিশীয় এবং অন্যান্য ইসলামী রাজনৈতিক দল ও নেতাদের তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হন বেন আলি (বর্তমানে বহিস্কৃত)এবং বারগুইয়া ।

গত পঞ্চাশ বছরে মহিলাদের মাথায় আচ্ছাদন পরিধান করা নিষিদ্ধ ছিল এবং মসজিদে নামাজ আদায়কারীদের বিষয়ে গোপন পুলিশ নজরদারি করতো। অন্য কথায় বলতে হয়, সে সময় ধর্ম নিরপেক্ষতা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা শুধুমাত্র তাঁদের জন্যই প্রযোজ্য ছিল যারা ধর্ম পালন করতেন না,কিন্তু যারা ধর্ম পালন করতেন তাঁদের সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখা হত।

বিপ্লবের পর ধর্মনিরপেক্ষতা এবং ইসলামের অবস্থান সামাজিক প্রচার মাধ্যম ও তিউনেশীয় ব্লগগুলোতে উত্তপ্ত বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
‘তিউনিশিয়াজাত’ ধর্মনিরপেক্ষতা:

একজন তিউনিশীয় ব্লগার লিবার্তে কনডিশনেল হলেন “ধর্ম নিরপেক্ষ তিউনিশিয়ার সমর্থক কিন্তু সে ধর্ম নিরপেক্ষতা হতে হবে তিউনিশীয় ধরণের। লিবার্তে কনডিশনেল ব্যখ্যা করেন [আরবি ভাষায়]:

تونس الغد من اولوياتها ضمان الحريات الشخصية لكل المواطنين كل انسان حر في معتقداته و له الحرية المطلقة في ممارستها … لذا فالتونس العلمانيه هي الضمان و الكفيل الوحيد لهذه الحريات ! العلمانية نعم و لكن لا و ألف لا لإستنساخ الأمثلة و تطبيقها حرفيا و بكل “بهامة” (سامحوني في الكلمة) تونس و كما سبق صنعت ثورتها دون الإستناد في ذلك لأي إديولوجية الثورة التونسية فريده من نوعها الثورة التونسية صنعت مفهوما جديدا لمعنى الثورة فهي ثورة سلمية لا قائد له … فعلى الثورة إكمال مسارها و صنع مفاهيم جديدة .و من اهم المفاهيم التي يجب ان تكون تونسية بحته هو مفهوم اللائيكية

সকল নাগরিকের ব্যক্তি স্বাধীনতা নিশ্চিত করা আগামীর তিউনিশিয়ার অন্যতম অগ্রাধিকার। প্রত্যেক স্বতন্ত্র ব্যক্তি তাঁর বিশ্বাসের ক্ষেত্রে স্বাধীন এবং বিশ্বাস পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন… তাই ধর্মনিরপেক্ষ তিউনিসিয়া কেবলমাত্র সেই স্বাধীনতারই নিশ্চয়তা দেয়। ধর্ম নিরপেক্ষতার জন্য হ্যা। আর কোন গোজামিল উদাহরণ এবং আক্ষরিক অর্থে “চরম মূর্খতা” (শব্দটির জন্য আমাকে ক্ষমা করবেন)র জন্য না। কোন ধরণের মতাদর্শ ছাড়াই তিউনিসিয়া বিপ্লব সম্পন্ন করেছে। তিউনিসিয়ার বিপ্লব এক অনবদ্য বিপ্লব। এটা “ বিপ্লবের” এক নতুন সংজ্ঞা তৈরি করেছে, যা শান্তিপূর্ণ ও নেতৃত্ববিহীন।(…) এ বিপ্লবকে এগিয়ে নিতে হবে এবং নতুন ধারণা সৃষ্টি করতে হবে। প্রধান ধারণাগুলোর অন্যতম হল ধর্মনিরপেক্ষতা সম্পর্কে তিউনিশীয় ধারণা।

সেলিম তিউনিশিয় ধর্ম নিরপেক্ষতা বিষয়ে কথা বলেন। তিনি লিখেন [ফরাসী]:

Pour que la liberté des uns n’entrave pas celle des autres, parlons de la démocratie. Ou soyons plus précis et parlons de la « laïcité ». Non pas la laïcité française ou turque, mais notre laïcité en tant que tunisiens.

গণতন্ত্র বিষয়ে আমাদের কথা বলা উচিত। কারন কারো একজনের স্বাধীনতা যেন অন্যদের সমস্যা তৈরি করতে না পারে। আরো পরিষ্কার করে বলতে গেলে ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বলতে হয়। আমরা ফরাসী কিংবা তুরস্ক ধাঁচের ধর্ম নিরপেক্ষতা চাই না আমরা তিউনিশীয় ধরণের নিজস্ব ধর্ম নিরপেক্ষতা চাই।

“ধর্ম নিরপেক্ষ তিউনিসিয়া” বিষয়ে তিনি আরো বলেন:

C’est une Tunisie qui ne donnerait pas à un politicien le droit de diriger le pays au nom de la volonté de Dieu. La religion ferait partie de la vie privée.

Ainsi, d’un côté, les lois ne sont pas une interprétation des textes religieux, afin de garantir l’égalité entre tous les citoyens quelles que soient leurs croyances.

Et de l’autre côté, les lois ne peuvent pas interdire à un croyant de pratiquer sa religion.

Le port de voile à titre d’exemple ne peut pas être interdit dans une Tunisie laïque.

তিউনিশিয়ায় ঈশ্বরের ইচ্ছার নামে নেতাদের দেশ পরিচালনা করতে দেওয়া উচিত নয়। ধর্ম ব্যক্তির ব্যক্তিগত জীবনের অংশ হবে।

এছাড়া আইন ধর্মীয় গ্রন্থের ব্যাখ্যার উৎসজাত হবে না। আইন নাগরিকের বিশ্বাস নির্বিশেষে মানের নিশ্চয়তা প্রদান করবে।

একই সঙ্গে আইন কাউকে ধর্ম পালনে বিরত করতে পারবে না। উদাহরণ স্বরুপ বলা যায়, ধর্ম নিরপেক্ষ তিউনিশিয়ায় মাথার আচ্ছাদন ব্যবহার আইন দ্বারা নিষিদ্ধ হবে না।

বিভক্ত তিউনিশিয়া:

ধর্ম নিরপেক্ষতা বিষয়ে বিতর্ক তিউনিশিয়াকে স্পষ্ট দুটো ভাগে বিভক্ত করেছে। একদল লাইসিজম (laicism) কে ব্যক্তি অধিকার ও ব্যক্তি স্বাধীনতার একমাত্র গ্যারান্টি বলে মনে করছেন অপরদিকে অন্যরা ইসলামিক তিউনিসিয়ার আত্মপরিচয়ে লাইসিজমকে হুমকি বলে মনে করছেন।

আমানে লিখেন [ফরাসী]:

La laïcité […] est une idéologie dangereuse dont les conséquences implicites conduit à une destruction massive de l'identité Islamique de notre Tunisie et la rupture complète avec son passé islamique.

লাইসিজম একটি ভয়ংকর চিন্তাধারা,যা গোপনে গোপনে আমাদের তিউনিসিয়ার ইসলামিক পরিচয়ের ব্যাপক ধ্বংস ডেকে আনবে এবং আগের পুরোনো ইসলামিক ঐতিহ্যের সাথে সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছেদ ঘটাবে।

প্রাইমাভেরা যোগ করেন [ফরাসী]:

Mes amis si votre laïcité ne signifiait que : liberté, égalité, respect et tolérance alors il n'y a pas plus laïque que l'islam (…)le principe fondamental de la laïcité (vous le connaissez bien) c'est de séparer l'Etat de la Religion, c'est-à-dire vous passer des lois divines et inventer les vôtres humaines avec toutes les imperfections et les défauts…

বন্ধুরা, যদি তোমাদের লাইসিজম কেবলমাত্র স্বাধীনতা, সমতা, সম্মানবোধ এবং সহনশীলতা বুঝায় তা হলে তো ইসলামের চাইতে লাইস( laic) আর কিছুই হতে পারে না।(…)। লাইসিজমের মূলনীতি হল রাষ্ট্রকে ধর্ম থেকে আলাদা করা, তারমানে তোমরা ঐশ্বরিক আইন বাদ দিয়ে মানব সৃষ্ট ভুলে ভরা আইন প্রতিষ্ঠা করতে চাও…
Banner reads: "United, Islamists and Seculars. We are all Tunisians". Photo by Afef Abrougui from Flickr, used with permission.

ঐকবদ্ধ, ইসলামিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ। আমরা সবাই তিউনিসিয়- একজন তরুণ প্রতিবাদকারীর বার্তা। ছবি আফেফ আবরুজি ফ্লিকার থেকে অনুমোদন নিয়ে।

গ্রুপ ব্লগ নাওয়াত-এর ব্লগার হেদি আত্তিয়া বলেন[ফরাসী]:

A propos de la laïcité, elle est à la fois diabolisée par ses adversaires et idéalisée par plusieurs de ses partisans. Personnellement je me considère comme étant un laïc dans le sens où je souhaite une société où toutes les religions et toutes les tendances puissent vivre librement sans que personne n’impose à l’autre son point de vue ou sa manière de vivre.

ধর্মনিরপেক্ষতার বিপক্ষে যারা তাঁরা ধর্মরিপেক্ষতাকে ধ্বংশ করে এবং বিষয়টিকে মূর্তিপূজায় পরিণত করে। আমি নিজেকে একজন লাইক(Laic) বলে মনে করি।সেটা এ অর্থে যে আমি এমন একটা সমাজ ব্যবস্থার সন্ধান করি যেখানে কারও কোন মতামত বা জীবন প্রণালীকে প্রভাবিত বা বিঘ্নিত না করে সকল ধর্ম ও আদর্শের মানুষ সহাবস্থান করতে পারে।

জুরিস্ট তিউনিসে মনে করেন এ বিতর্ক উত্তর আফ্রিকান এ দেশটিকে গভীর ভাবে বিভক্ত করেছে:

Le débat qui devrait être un débat autour du concept d’Etat à choisir est vite devenu un débat d’accusation: Les laïques sont accusés d’être anti-islamistes (voir même athées), les anti laïcité sont accusés d’être des extrémistes et anti-liberté!!!

Pire et encore plus dangereux et inquiétant, on a le sentiment que le débat se déroule entre Pro Nahdha et Anti Nahdha excluant par la même tout le reste des composantes de ce pays.

Plus catastrophique: une grande ignorance règne à propos du concept même de laïcité.

অচিরেই পরস্পরকে অভিযুক্ত করার বিতর্কে পরিণত হয়েছে। যেমন- ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা একে ইসলাম বিরোধী (এমনকি নাস্তিকতাবাদ) হিসেবে বিষয়টিকে চিহ্নিত করছেন অপরদিকে লাইসিস্ট বিরোধীরা (anti-laicists) একে সণ্ত্রাসবাদী বা মুক্ত চিন্তার প্রতিপক্ষ হিসেবে বিষয়টিকে বিবেচনা করছেন!!!

এর চেয়েও ভয়ানক, আরও মারাত্বক এবং অস্বস্তিকর বিষয় আমাদের মধ্যে এমন ধারণার জন্ম দিয়েছে যে বিতর্কটি নাধা(আর) পন্থী ও এর বিরোধীদের একটা বিষয়।এতে করে দেশের অন্যান্য দলগুলোকে বিতর্কের অংশ হিসেবে বাদ দেওয়া হয়েছে।(নাধা তিউনিসিয়ার একটি ইসলামী দল। বেন আলির শাষনামলে দলটি নিষিদ্ধ করা হয়।)

এর চাইতেও ক্ষতিকর: “লাইসিজম” সম্পর্কে ব্যাপক অজ্ঞতা।

এ পোস্ট টি তিউনিসিয়া বিপ্লব ২০১১ সংক্রান্ত বিশেষ কাভারেজের অংশ

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .