গ্লোবাল ভয়েসেস কে সহায়তাকারী মিল্টন রামিরেজের সাক্ষাৎকার

গ্লোবাল ভয়েসেস এবং গ্লোবাল ভয়েসেস এন স্পেনিওল [স্প্যানিশ ভাষায়] কে সাহায্যকারী যে কয়জন ল্যাটিন আমেরিকান রয়েছেন তার মধ্যে মিল্টন রামিরেজ [স্প্যানিশ ভাষায়] প্রথম দিকের একজন অন্যতম ব্যক্তি। সাক্ষাৎকার প্রদানে প্রথম দিকে কিছুটা শৈথিল্য থাকলেও পরবর্তীতে ছোট আড্ডার মাধ্যমে তিনি আমাদের তাঁর বহুবিধ কর্মকাণ্ড যেমন ইকুয়েডরের ভূমি ও প্রযুক্তি নিয়ে তাঁর কাজের কথা আমাদের জানান।

হ্যালো মিল্টন। আমাদের বলবেন কি যে একজন ইকুয়েডরিয়ানের জন্য নিউ ইয়র্কের জীবন কেমন?

অন্য সবার মত যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসতে আগ্রহী তাঁরা নিউ ইয়র্ক গন্তব্য টির জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকে। ইকুয়েডরিয়ান রাও এর ব্যতিক্রম নয়। ইকুয়েডরিয়ানদের প্রাণকেন্দ্র কুইন্সে, এবং এখানে তাঁদের উপস্থিতি এতটাই বেশি যে, ইকুয়েডরের গৌরবজনক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্যতম ইউনিভার্সিদাদ টেকনিকা পার্টিকুলার দে লোজা [ স্প্যানিশ ভাষায়] –এর শাখা এখানে অবস্থিত। আসলে একজন ইকুয়েডরিয়ান এখানে কি করেন? পেশার বৈচিত্র ব্যাপক এবং ব্যাপক পরিসরে বিস্তৃত। পরিচ্ছন্ন কর্মী, রক্ষণাবেক্ষণকারী, নির্মাণকর্মী, বিভিন্ন ধরণের সরকারি চাকুরে, প্রচার মাধ্যম কর্মী, এবং শিল্পের জন্য দাতব্য প্রতিষ্ঠান কর্মী হিসেবে তাঁরা কর্মরত।

আপনি একজন অধ্যাপক। আপনার কাজ সম্পর্কে আমাদের কিছু বলুন।

ইকুয়েডরে থাকাকালীন আমি অধ্যাপক ছিলাম। কখনোই এটা আমার একমাত্র কাজ ছিল না। আমি সারা দুনিয়ার প্রায় অর্ধেকজুড়ে একজন বিক্রয় প্রতিনিধি ছিলাম এবং এখানে আমার নানাবিধ কাজের অভিজ্ঞতা আছে যেমন বলা যেতে পারে নিউ জার্সির সেইন্ট মেরি উচ্চ বিদ্যালয়ে আমি গণিত ও স্প্যানিশ ভাষার শিক্ষক ছিলাম।

যে কোন ধরণের শিক্ষাদান আমার কাজের অন্তর্ভুক্ত আমার প্রশিক্ষণ সে বিষয় সংক্রান্ত্ত। যেমন ধরুন, বিক্রয় ব্যবস্থাপনা, নিজস্ব ব্যবস্থাপনা এবং মান নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে আমি আমার এ জ্ঞানকে কাজে লাগাতে সক্ষম। কিন্তু বিদ্যালয়ে আমার এ প্রশিক্ষণের বিষয়গুলোকে অত্যন্ত ঘৃণার সাথে দেখা হত এবং সাম্রাজ্যবাদী চিন্তাভাবনা হিসেবে বিবেচনা করা হত। সে দিন থেকে বিষয়টিকে আমি কোনভাবেই মেনে নিতে পারি নি।

আপনি কিভাবে গ্লোবাল ভয়েসেস কে খুঁজে পেলেন এবং অবদান রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন?

সক্রিয়তাবাদীদের মধ্যে যাদের সংস্পর্শে আমি ছিলাম তাঁদের মধ্যে একজন ব্লগিংয়ের বিষয়ে আমাকে জানান। সে সময় থেকে আজ অবধি আমার একটি স্প্যানিশ ব্লগ আছে যাহোক এটাকে নস্টালজিয়ার প্রতি আগ্রহ বলতে পারেন। এভাবেই আমি ইকুয়েডরিয়ান ব্লগ [স্প্যানিশ ভাষায়]-এ হঠাৎ করে লেখা শুরু করি। অন্যান্য ব্লগারদের মতই একদিন আমি গুগুল ঘাটছিলাম, আমার ব্লগের ইংরেজীর একটি লিঙ্ক গ্লোবাল ভয়েসেস অনলাইন(জিভিও) এ দেখে আমি খুবই তৃপ্ত হলাম ।

কিছুদিন পর ডেভিড সাসাকির একটি ই-মেইল পাই। তিনি আমাকে জিভিও-তে লিখতে অনুরোধ করেন। সাসাকির বিষয়ে আমি আমার ব্লগে একটা লেখা লিখেছি। এ নিয়ে আমার কোন সংশয় ছিল না কিন্তু আমি বিস্মিত ছিলাম যে আমার কাজগুলো ইংরেজীতে প্রকাশিত হবে যার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। আমি সুযোগটি লুফে নেই এবং হিসপানিক ব্লগার ইউনিয়ন কে নিয়ে একটি লেখা লিখি। এ ইউনিয়নটি বর্তমানে অস্তিত্বহীন। সেদিন থেকে এখন পর্যন্ত জিভিও তে অবদান রাখা আমার জন্য নিরেট আনন্দের একটা বিষয়।

Milton Ramírez

মিল্টন রামিরেজ

আপনি হলেন সেই স্বল্পসংখ্যক সহায়তাকারীদের একজন যারা লেখক এবং অনুবাদক। জিভির জন্য এ দুটো বিষয়কে কি করে মেলালেন?

আমি মনে করি আমি বিষয়টিকে নিখুঁত ভাবে করি,কিন্তু অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আমি দায়িত্ববোধ থেকে কাজ করি; কারন আমি মনে করি লেখার মাধ্যমে আমি ইকুয়েডরকে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরি, এটা এ কারণে নয় যে ইকুয়েডরে কোন ভাল সাংবাদিক নেই, এটা এ কারণে যে ইংরেজী প্রতিবেদনগুলো কখনো কখনো বিশ্বস্ত সূত্র ছাড়াই মূলত: বিদেশিরা লিখে থাকেন ।

আমার কাছে অনুবাদ শিক্ষণের রূপ ধারণ করে। প্রথমবার যখন আমি অনুবাদ ( পেশাদার ভাবে নয়) শেষ করি তখন এটা আমার কাছে সহজ এবং উপভোগ্য মনে হয়েছিল কিন্তু একই সঙ্গে অনুবাদ আমাকে অন্য সংস্কৃতি সম্পর্কে জানবার সুযোগ তৈরি করে দেয়। এর ফলে অনুবাদের বিষয়বস্তু নির্বাচন করতে আমি খুবই বাছাই করি।

আপনার ব্যক্তিগত ব্লগ এবং অন্যান্য যে সব ব্লগে আপনি ভূমিকা রাখেন সে বিষয়ে আমাদের কিছু বলুন।

অনেকে ব্লগিং কে অপ্রয়োজনীয় কর্মকাণ্ড হিসেবে দেখেন। আমি মনে করি আমার চিন্তা প্রকাশ ও আগ্রহ ওয়েব ব্যবহারকারীদের সাথে শেয়ার করার একটা মাধ্যম হল ব্লগিং। একসময় আমার সবগুলো ব্লগের সংগ্রহ ছিল কিন্তু এখন আমি ভয়েজেস লোজানাস[স্প্যানিশ ভাষায়] –এ প্রদেশে এবং আমার জন্ম শহর লোজা –তে কি ঘটছে সে বিষয়ে লিখি। এছাড়া স্প্যানিশ রিডার্স ব্লগ[ স্প্যানিশ ভাষায়] যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইকুয়েডরের ত্রি দেশীয় তীরবর্তী এলকায় কি ঘটছে সে বিষয়ে লিখে-সেখানে এবং গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি শীর্ষক ব্লগে লিখি। শিক্ষা ও প্রযুক্তি ব্লগে শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ে আমি আমার সন্দেহ ও এর বিরুদ্ধের মতবাদ গুলোর তীব্র ভর্ৎসনা মূলক লেখা লিখি বা লেখার চেষ্টা করি।

প্রযুক্তির প্রতি নিবেদিত প্রাণ ব্লগ: গিকসরুম. কম [স্প্যানিশ ভাষায়] –এর সহযোগী সম্পাদক পদে এক বছরেরও কম সময় ধরে দায়িত্ব পালন করছি। খুব সম্প্রতি এটিইআই ওয়েব নেটওয়ার্কের জন্য এলপোর্টালভোজ.কম [স্প্যানিশ ভাষায়] থেকে আমন্ত্রন পেয়েছি। অন্যান্য সাইট থেকে প্রাপ্ত আমন্ত্রণ গুলোর ধরণ আলাদা, কিন্তু আমার অল্প কিছু সাইটের বিষয়েই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত কেননা আমি একজন খণ্ডকালীন লেখক।

শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রযুক্তির বহুমাত্রিক ব্যবহারকে আপনি কিভাবে দেখেন বিশেষতঃ ল্যাটিন আমেরিকার দিক থেকে?

ল্যাটিন আমেরিকাতে কি ঘটছে সে বিষয়ে আমি আমার মতকে তুলে ধরার জন্য পর্যাপ্ত ফাউন্ডেশনের সহায়তা পেতে আগ্রহী কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমার জ্ঞান আমার পরিবেশ তথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেন্দ্রিক। এখন এটা আমাকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে সমালোচনা করা থেকে বিরত রাখতে পারবেনা।
ঐতিহাসিকভাবে ল্যাটিন আমেরিকার দেশসমূহের মধ্যে কেবলমাত্র আর্জেন্টিনারই রয়েছে স্বতন্ত্র শিক্ষা উপকরণ যারা এ বিষয়ে প্রাথমিক উদাহরণ চান তাঁরা এ লেখাগুলো পড়তে পারেন তিসকার লারা [স্প্যানিশ ভাষায়], রোজা মারিনা তোরেস [স্প্যানিশ ভাষায়] অথবা দিয়েগো লিয়েল [স্প্যানিশ ভাষায়]।
অনেক প্রচেষ্টা সত্বেও আমার দেশ ইউনেস্কো ও প্রগতির জন্য জোট থেকে স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে পারে নি। এটা শুধুমাত্র দুটো উপকরণকেই গৌরবান্বিত করেছে এবং আমাদের বিদ্যালয়গুলোর প্রযুক্তি সম্পর্কিত সমস্যাগুলোর জাদুময়ী নিরাময় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে: একটা হলো প্রজেক্টর আর অন্যটা পাওয়ার পয়েন্ট স্লাইডস।

আমাদের শিক্ষানুরাগীরা এখনো বিশ্বাস করেন যে প্রযুক্তি হল মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের চাপিয়ে দেওয়া জিনিস। এটাই বাস্তবতা। প্রযুক্তি এবং পাঠক্রম হচ্ছে মাধ্যম। শিক্ষানুরাগী হলেন তারাই যারা জীবনের মেলবন্ধন ঘটান। এক কথায় বলতে গেলে প্রাথমিক বিদ্যালয়,উচ্চ বিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চ প্রযুক্তির পরিচয় না ঘটিয়ে দেওয়াটা একটা পাপ।

সমস্যাটা হল পর্যাপ্ত অর্থায়নের অভাব এবং বিশ্বের নানা প্রান্তের সমস্যাগুলোকে ঢেকে রাখার মধ্যে। এ কেন্দ্রগুলোতে প্রযুক্তির ব্যবহার চরমভাবে সীমাবদ্ধ এবং কোন কোন ক্ষেত্রে সম্পূর্ণরূপে নাই বললেই চলে।

লোজার বিষয়ে বলি, আপনি আপনার বাড়ীর সবচেয়ে কি বেশি মনে করেন ?

অনেক কিছুই। আমার পরিবার, আমার বন্ধু-বান্ধব এবং লোজাতে আমার শিক্ষাগত যোগাযোগ। সংখ্যাগুলো আপেক্ষিক কিন্তু আপনি যদি ইকুয়েডরিয়ান এবং ল্যাটিন আমেরিকার অর্থনৈতিক গতি প্রবাহ লক্ষ্য করেন তবে দেখবেন লোজাতে গত তিন বছর আগে পর্যটন খাতে ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে বর্তমানে যা নিশ্চিতভাবেই আগের তুলনায় অনেক বেশি।

দক্ষিণ ইকুয়েডরের এই ছোট্ট শহরটা অনেক লেখক, শিল্পী এবং সংগীতজ্ঞের জন্মস্থান। এটা বহুবিধ উচ্চতর শিক্ষার কেন্দ্রও বটে যেমন ইউটিপিএল, লোজার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, সালভাদর বাসতামান্তে সেলি কনজারভেটরী অব মিউজিক অন্যতম। ভাল বক্তা, লোজার জনগণের ভাল মনের জন্য এ শহর কেবলমাত্র ইকুয়েডরের জনগণেরই নয় বরং সারা দুনিয়ার মানুষের বিদ্যাপীঠের জন্য আকর্ষনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে।

ইকুয়েডর,প্রযুক্তি এবং শিক্ষা সম্পর্কিত বিষয় ছাড়া আর কোন বিষয়ে আপনি আগ্রহী ?

আমি কখনোই লেখালেখি নিয়ে ভাবি নি। এমনকি ছাত্রাবস্থায় ও আমি লেখালেখি নিয়ে ভাবিনি। আমি কখনো কোন বই প্রকাশ করিনি। খুব কম লোকই আছেন যারা লেখার কৌশলকে বিপণনযোগ্য করতে পারেন।তাই আমি শুধু আমার অবসর সময়েই লিখি।

অবসরে আমি প্রচুর পড়তে পছন্দ করি। প্রথাগত পদ্ধতির ছাপানো বই পড়তে পছন্দ করি।আইনের বই পড়তে আমার ভালো লাগে এবং দ্বিতীয় পেশা হিসেবে আইন পেশাকেই আমি বেছে নিতে চাই। আমি ব্যবসা ব্যবস্থাপনার বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছি এবং কাজ করেছি আমি খুব ছোটবেলা থেকেই একজন সেলসম্যান। আমি মানুষকে সেবা দিতে পছন্দ করি (অর্থের জন্য)। কে জানে হয়তো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে অন্যান্য দেশের জনগণ যারা বাণিজ্য করতে আগ্রহী হয়ত এটা তাঁদের জন্য একটা যোগসূত্র হিসেবে কাজ করবে।

আপনি কি আর কিছু বলতে চান?

একটু মজা করে বলি আমি যখন প্রথম এ দেশে নিউইয়র্কে আসি এটা তখনকার ঘটনা। আমি লোজার বিখ্যাত বিদ্যালয় বার্নার্ডো ভালদিভিসিও তে ইংরেজী শিখেছিলাম। আমি আমার কর্মক্ষেত্রে প্রায়শই “শুভ রাত্রি” শব্দটি শুনতাম এবং এক রাতে আমার অস্থায়ী কর্মক্ষেত্রে এ দুটো শব্দ যখন আমি আমেরিকানদের সাথে প্রায়ই বারবার ব্যবহার করছিলাম তখন তাঁরা মুচকি হাসছিল আর পরস্পরের দিকে তাকাচ্ছিল। আমি অবাক হয়ে ভাবছিলাম যে আমি খারাপ কিছু করেছি কিনা। অবশ্যই। আমি একটি বিদায় সম্ভাষণকে স্বাগত সম্ভাষণ হিসেবে ব্যবহার করেছিলাম। আমার প্রকৃত সম্ভাষণ “শুভ বিকেল” ব্যবহার করা উচিত ছিল। এখন আমি আর এ ভুল করি না।

ধন্যবাদ মিল্টন।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .